Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৮ম পর্ব


নিঝুমের আজ কাঁথার ভেতর থেকে বের হতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না। খুব আলসেমি করতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ ক্লাসে যেতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা। একদম কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে মন চাচ্ছে। শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে একা একাই নানা কিছু নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে। মনে মনে ছোট্ট একটা ঘর, তাতে অল্প কিছু আসবাব,
এলোমেলো হাওয়ায় উড়তে থাকা পর্দা, পাখির কিচির মিচির ডাক সবকিছু নিঝুমকে কেমন নেশাগ্রস্থ করে দিচ্ছিল। ঘরকন্যা করার শখটা আসলে মেয়েদের জন্মজাত। সেজন্য নিজের সংসার না পাওয়া পর্যন্ত পুতুলের সংসারটাকেই নিজের মনে করে খেলে বোধহয় মেয়েরা।

পাশ ফিরে শোয় নিঝুম।

হি হি...ওর নিজের সংসার! একটা কাপড়ও তো ভালো করে ধুতে পারেনা ও এখনও।  আসলে আম্মু ঠিকই ভাবে, ওকে দিয়ে সংসার হবে তো? না কি আস্ত একটা সঙ সেজে বসে থাকবে নিঝুম।

অরণ্যর কথাগুলো নিঝুমকে যেন স্বপ্নের দেশে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কি ভীষন লোভী হয়ে গেছে নিঝুম এই অল্প কদিনেই। অরণ্যর স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে ওকেও পেয়ে বসছে। সকালে, রাতে একটা করে উইশ যেন ওর পাওনা এখন প্রতিদিন... ফোনের ওপাশ থেকে।

" উফফ "

জোরে বুক ভরে শ্বাস নেয় নিঝুম। অরণ্যকে মনে করলেই এই এক সমস্যা হচ্ছে এখন, উত্তাল হয়ে উঠে ওর অনুভূতির রাজ্য।

"এই আপু, মা নাস্তা খেতে ডাকছে," আশু জোরে জোরে দরজা ধাক্কায় আর চিৎকার করে।

"আস্তে দরজা ভাঙ্গিস না, আসছি আমি।"

কাঁথাটা শেষ পর্যন্ত মাথা থেকে সরাতেই হলো নিঝুমকে। উঠেই ফোনটা চেক করলো। কিন্তু সর্বনাশ... এগারটা ম্যাসেজ হোয়াটসঅ্যাপে।

"গুড মর্নিং...."

"জান কি করো?"

"ঝুম? "

"বউ উত্তর দাওনা কেন?"

"ঝুম তুমি কি এখনও ঘুমাচ্ছ?"

"রুমঝুম ঝুমঝুম... "

"ঝুম এত কেন ঘুমাচ্ছ... এখন তো অলরেডি ছয়টা বাজে।"

"আমার সারারাত ঘুমই হলোনা আর তুমি কি সুন্দর ঘুমাচ্ছ। কখন উঠবা লেজি বোন? "

"বউ উঠ না, আমি তো আজ সারাদিন তোমার সাথে কথাই বলতে পারব না। আজ মিটিং আছে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ, একটার পর একটা একটা চলবে।"

"আটটা বাজে.... ঝুম?"

"ওকে, বউ তুমি আরাম করে ঘুমাও। আমি রাতে কথা বলার চেষ্টা করব। বাই...।"

নিঝুম হেসে ফেলল মেসেজ গুলো পড়ে। কিন্তু তার পরেই মনটা খারাপ হলো খুব। সারাদিন ব্যাস্ত থাকলে তো একবারও কথা হবে না আজ। আর মিটিং মানে তো..। ইশশসস কেন যে এত ঘুমাচ্ছিল ও। এই বৃষ্টি বৃষ্টি আবহাওয়াটাই দায়ী। এখন কি করবে নিঝুম? সারাদিন একদম একটা কথাও না! ধুরর....  সুন্দর সকালটা একদম পানসে হয়ে গেল ওর কাছে।

অদীয়াকে ফোন করে জানাল আজ বাইরে বেরুবে না। বৃষ্টি বেশ জোরে হচ্ছে। নিঝুমের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। ওরা একবার মামার বাসায় গিয়েছিল, সিলেটে। ওখানে এক চা বাগানের ম্যানেজারের সাথে খুব ভাল পরিচয় ছিল মামার। তো নিঝুমরা গেলে, ওদের নিয়ে মামা ওই ম্যানেজারের বাসায় বেড়াতে গেলেন । দুপুরে খাবার খাওয়ার পর খুব জোরে বৃষ্টি  হয়েছিল। নিঝুমের খুব ভাল লেগেছিল তখন। ওই বাসার ছাদের একটা অংশে টিনের শেড ছিল। কি সুন্দর শব্দ হচ্ছিল। আর যখন মেঘ ডাকছিল, মনে হচ্ছিল পুরো আকাশটাই যেন ওর সামনে ভেঙে পড়বে। নিঝুম দৌড়ে গিয়ে ওর বাবাকে জাপটে ধরে ছিল ভয়ে। স্মৃতিটা কেমন দোল খেয়ে গেল নিঝুমের মনে... আবারও মনে পড়লো আজ আর অরণ্যর সাথে কথা বলা সম্ভব না। বর্ষার আকাশের মতোই মুখ ভার হয়ে এল নিঝুমের মনের আকাশটিরও।

হলুদ আর সাদা মেশানো সুতি একটা থ্রিপিস পরল নিঝুম।  একদম হলদে পাখি দেখাচ্ছে ওকে। নিজেই নিজেকে দেখে হাসল ও। নাস্তা খাওয়ার জন্য দরজার দিকে এগুতেই হাতে রাখা মোবাইলটায় আলো জ্বলা নিভা শুরু হলো। তাড়াতাড়ি লকটা খুলে ফোনটা কানে চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে কাঙ্ক্ষিত স্বরটা ভেসে এল...

"হ্যালো... ঝুম।"

"আপনি! আপনার না মিটিং?"

"মিটিং তো চলছে। আমি একটু বাইরে যাওয়ার কথা বলে বের হয়েছি।"

"আপনি মিটিং রেখে বাইরে যাবেন! কোথায় যাবেন এখন?"

"আরে বোকা..... বাইরে মানে ওয়াশরুমে যাবো বলে বের হয়েছি।"

"ওহ্ " বলেই জিভ কাটল নিঝুম। বোধ বুদ্ধি সব লোপ পাচ্ছে ওর। " সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি।"

"বুঝলে কি করতে? " শয়তানি একটা হাসি দিল অরণ্য।

"হুহ্... মানে?"

"মানে কিছু না, তুমি থাকলে খুব ভাল হতো। আমার আবার গোসলের আগে প্রায়ই টাওয়েল ফেলে যাওয়ার অভ্যাস আছে। তুমি থাকলে এগিয়ে দিতে পারতে," অরণ্য হাসছে।

নিঝুমও হেসে ফেলল,"এতো হাসার কিছু নেই আর আমি থাকলে তোয়াল বেডে রেখে রুমের দরজা আটকে রেখে বের হয়ে আসতাম।আপনার খুশি হওয়ার মত কিছু ঘটত না আর আপনি তো এখন অফিসে।"

"কি আনরোমান্টিক বউ," অরণ্য দুঃখিত ভঙ্গিতে বলল। "অরণ্য তোর জীবনটার কোন দামই নেইরে কারও কাছে... একটা তোয়াল পর্যন্ত তুই ডিসার্ভ করিস না।"

অরণ্যর কথায় এবার খিলখিল করে হেসে উঠল নিঝুম। লোকটা যে কি নাটক করতে পারে, ফাজিল নাম্বার ওয়ান।

অরণ্য চুপ করে নিঝুমের হাসিটা উপভোগ করল। এই হাসিটা আজকের জন্য ওর ভালো থাকার খোরাক।

ওপাশ থেকে কোন শব্দ নেই দেখে নিঝুমও হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। কিন্তু অরণ্য ওপাশে আছে বুঝতে পারছে নিঝুম। নাক মুখ কেমন লালচে হয়ে আসে নিঝুমের। দুজনেই ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে। নিঃশব্দে কেমন একটা অদ্ভুত উপায়ে দুজনের মধ্যেই যেন ভাষার আদান প্রদান ঘটছে। দুজনেই সেটা নিঃশব্দে উপভোগও করছে। হঠাৎ দূর থেকে কেউ একজন অরণ্যকে ডাকল।

"ঝুম এখন রাখি কেমন.. আমার দশ মিনিট শেষ হয়ে গেছে। এখন যেয়ে লম্বা একখানা বক্তৃতা দিতে হবে। কাল, পরশু দুদিন একদম দৌড়ের উপর থাকব। কথা বলা হবে না হয়ত ঠিকমতো। ফোন এখন বন্ধ করব, কখন যে খুলব জানিনা। তুমি ঠিকমত নিজের যত্ন করো কেমন? আর আমার কথায় বা আচরনে বিরক্ত হলে, প্লিজ  তুমি ওটা মনে রেখনা। আমার আচরন আজকাল আমার নিজের কাছেই খুব দুর্বোধ্য লাগছে। কখন যে লিমিট ক্রস করে ফেলছি বুঝিতে পারছি না। কাল বোধহয় কিছুটা করেছি... সরি।"

"আ.. আপনি এমন কথা বলছেন কেন?" নিঝুমের কান্না পেল। অরণ্য এতো ভারি কথা বলছে কেন? এরচেয়ে তো দুষ্টুমি ঢের ভালো ছিলো।

"আসলে এটা আমারই অপারগতা। আমিই তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারছিনা। মনে হচ্ছে আমি দূরে গেলেই তুমি আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাবে," শেষের দিকে অরণ্যর গলাটা কেমন ভারি হয়ে আসল।

মুহুর্তটা এমন যে কথা বলা অনাবশ্যক, নিঝুমও কেমন চুপ মেরে গেল।

অরণ্যর কথাগুলোতে প্রথমে দুষ্টুমির ছোঁয়া ছিল, কিন্তু পরের কথাগুলো শুনে বুকের ভেতরে কেমন ভেঙ্গেচুরে যেতে লাগল নিঝুমের। মুহুর্তেই সব কেমন ঘষা কাচের মতো ঝাপসা হয়ে আসতে লাগলো।

"ঝুম " অরণ্য খুব গাঢ় স্বরে নিঝুমকে ডাকল।
" আমি যদি কখনও হারিয়ে যাই তুমি কি কাঁদবে?"

ব্যাস, নিঝুমের সারাটা দিন মাটি করে দিয়ে ছেলেটা ফোনটা কেটে দিল।

এর চেয়ে বড় শাস্তি কি হয় একটা মানুষের জন্য? পর মুহূর্তেই নিঝুম দুহাতের তালুতে নিজের মুখটা লুকাল। আসলে কতক্ষন ইঁদুর বিড়াল খেলবে ও নিজের সাথে। আর ও নিজের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারছেনা। অরণ্যর ভালোবাসার ফাঁদে আটকে গেছে ও। এখন অরণ্য ওকে সরিয়ে দিলেও নিঝুমের আর সরার উপায় নেই। বুকের ভেতরের ফাঁকা জায়গাটা কখন যেন নতুন পলি পড়ে ভরাট হয়ে গিয়েছে। অন্য কোনো নাম ওখানে আর প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ নেই।

সারাটা দিন নিঝুমের কাটল আচ্ছন্নতার মধ্যে। কি করলে শান্তি হবে? করবে না জেনেও পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর পর নিজের মোবাইল চেক করেছে ও আজ। যদি সময় পায়, যদি ওকে কিছু বলার থাকে অরণ্যর। সারাদিন..  যদি অরণ্যর ফোন আসে করে করে... নিঝুমের দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। কিন্তু না... কোনো লক্ষনই নেই। কারও জন্যও অপেক্ষা করা যে এত বিভীষিকাময় জানা ছিল না নিঝুমের। ভেতরের অস্থিরতা বার বার ওর চোখদুটোকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল উষ্ণ নোনাজলে।

আশুর চোখে ব্যাপারটা ধরা পড়েছে কিন্তু ও না দেখার ভান করে সরে গেল। সব সময় সব কিছু দেখতে নেই, বারনও করতে নেই। এগুলো নিঝুম আর অরণ্যর জন্য বিয়ের আগের বিশেষ কিছু স্মৃতি। থাক এগুলো ওদের স্মৃতির খাতায় বন্দী হয়ে। বহু বছর পর যখন ওরা কেউ এই মুহূর্ত গুলোর স্মৃতিচারন করবে তখন যেন এক চিলতে রোদের মত ওদের মুখগুলোও হেসে উঠে। কথাটা ভাবতে গিয়ে কেন যেন আশুর চোখ থেকেও টুপ করে এক ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল।

নিঝুমকে খুব ভালোবাসে আশু। ওর বড়ো আপুটা একটু বেশি সহজ সরল। মানুষের চালাকি গুলোও ধরতে পারে খুব কম আর এটাই ওর একটা ভয়। অরণ্যকে এমনি আশুর খুব পছন্দ হয়েছে। শুধু অরণ্য নয় ওর গোটা পরিবারটিকেই। নিঝুমকে ওরা সবাই যেন খুব ভালোবাসে এটাই আশুর চাওয়া। একদিম সময় করে অরণ্যকে এই আবদারটা করতে চায় আশু।

মোবাইলটা অন করত গিয়ে অরণ্যর মনে পড়ল, সেই কতক্ষণ আগে ঝুমের সাথে কথা হয়েছিল। তাড়াতাড়ি কল লিস্ট চেক করল। একবারও কি ওকে মনে করে ফোন দিয়েছিল মেয়েটা। না...  মনটা খারাপ হলো অরন্যর। এক বারও না। অবশ্য ও ব্যাস্ত ছিল সারাদিন। সেটা ও নিঝুমকে বলেছেও। কিন্তু তারপরও ও কেমন আছে জানার জন্যও তো অন্তত একটা ফোন দিতে পারত। পচা বউ কোথাকার।

গাড়িতে বসে ড্রাইভারকে বাসার দিকে যেতে বলল অরণ্য। এই কয়দিন ওর খুব দৌড়াদৌড়ি আছে। তবে এর কিছু লাভও আছে। সামনে একটা প্রমোশনের ব্যাপার আছে। সেটা হাতছাড়া করতে চাইছে না ও। তবে প্রমোশন হলে ট্রান্সফারেরও একটা ব্যাপার আছে। তখন খুব সম্ভবত ঢাকার বাইরে চলে যেতে হবে ওকে। তখন নিঝুম ওর সঙ্গে যাবে তো?

নিঝুমের এখন মনে হচ্ছে হাত পা ছড়িয়ে বসে কাঁদে । পচা একটা লোক। সারাদিনে একবার মাত্র ফোনে কথা হয়েছে, আজকে একবারও দেখে নাই নিঝুম ওকে। এখন ও কি করবে? ঘুম তো আসছে না। রাত বারোটা বাজে প্রায়। এখনও কি বাসায় ফিরে নাই? নিঝুম ফোন দিবে দিবে করেও আবার ফোন রেখে দেয়। যদি বিরক্ত হয় অরণ্য... যদি বকে!

গাড়িতে বসে নিঝুমকে ফোন দিতে গিয়েও আবার রেখে দেয় অরণ্য।

"না এখন ড্রাইভার আছে। আগে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেই তারপর ফোন দিব," অরণ্য ফোনটা রেখে দিল পকেটে।

নিঝুম না পেরে শেষ পর্যন্ত আশুর রুমে আসল।

" আশু.. আপুন... একটু হেল্প করনা.. প্লিজ।"

" আমি আর হেল্প? " আশু বুঝেনি প্রথমে। বড়পু ওকে আপুন ডাকছে মানে তোয়াজ সেই লেভেলে চলছে কিন্তু ব্যাপারখানা কি?

"হু... তুই। মানে অয়নকে একটা ফোন দেনা..  অরণ্য বাসায় ফিরল কিনা?"

কথাটা বলে আশুর দিকে তাকাতেই লজ্জা পেল নিঝুম। আশু চোখ মুখ সব এমন করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যে মনে হচ্ছে ও বাংলা নয় হিব্রু ভাষায় কথা বলছে।

" আচ্ছা থাক লাগবে না," বলেই নিজের রুমে চলে আসল নিঝুম। ঘোড়ার ডিম লোক একটা। ওর জীবনটা একেবারে ভাজা ভাজা করে তবে ছাড়বে এই লোক।

এখন তো অনেক বাজে। এখন একবার ফোন দেখি । যদি না ধরে তাহলে আর দ্বিতীয়বার করব না। নিঝুম ফোনটা হাতে নিয়ে কল করতে যাবে কিন্তু তার আগেই ফোনটা যাদুর বাক্সের মতো বেজে উঠল। নিঝুম এক সেকেন্ড দেরি না করে ফোনটা রিসিভ করল।

"হ্যলো ঝুম " অরণ্য ফোন দিয়ে হ্যালো হ্যালো করছে । কিন্তু এপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।

"ঝুম কি হয়েছে? কথা বলছনা কেন? আমার কিন্তু খুব টেনশন হচ্ছে," অরণ্য টেনশনে মাথার পেছনের চুল টানতে লাগল। ওর এই এক স্বভাব আছে ছোটবেলা থেকে। টেনশন হলেই খালি চুল টানে। নিঝুম একেবারে টু শব্দও করল না। ফোন কানে চেপে বসে আছে।

"ঝুম কথা না বললে আমি কিন্তু এক্ষুনি তোমার বাসায় চলে আসবো। সারাদিন এমনি আজকে  কথা বলতে পারিনি, আমার মন মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে। " অরণ্যর এবার একটু রাগ হলো। ও বুঝতে পারছে ওপাশে নিঝুমই। কিন্তু তা হলে কথা কেন বলছে না। ওদের মধ্যে তো আজ কোনো কথা কাটাকাটি  হয়নি। তাহলে?

"এত ভয় না দেখিয়ে বরং চলে আসতেন, বুঝতাম কেমন  মিস  করলেন।" নিঝুমের কথায় কেমন অভিমান। ব্যাপার কি? আর নিজে থেকে ওকে যেতে বলছে, কিছু একটা তো হয়ছে
নিশ্চিত।

"আমার বউটার কি মন খারাপ? "

"কে বলেছে মন খারাপ? আমি তো খুব ভাল আছি," নিঝুম মুখ গোমড়া করে বলল।

"হ্যাঁ খুব বুঝতে পারছি।"

অরণ্য মাথা নেড়ে লম্বা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ঝুমের কোন কারনে মন খারাপ।

"আপনি কি এখন বাসায়?" নিঝুম জানতে চাইলো। "ডিনার হয়েছে? "

"এই তো মাত্র ফিরলাম। এখন খাব। তুমি খেয়েছ?" অরণ্য নিঝুমের প্রশ্নে একটু খুশি হলো। যাক নিঝুম ওর কথা একটু আধটু করে হলেও ভাবে তাহলে।

নিঝুম চুপ করে রইল। ওর আসলে কিছু খেতে ভাল লাগছিল না। তাই আর নিচে খেতে যায়নি। মা অবশ্য প্লেটে করে খাবার ওর রুমে পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওর খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।  খাবার তাই ঢেকে রেখে দিয়েছে।

"না খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না,আপনি খান,"বলেই ফোনটা কেটে দিল নিঝুম। আজ সকালে ঠিক এমন করেই অরণ্য ওর ফোন কেটেছিল। এবার বোঝ কেমন লাগে।

খাবার খেয়েই আবার ফোন করল অরণ্য। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে নিঝুম কোনো কারনে ওর উপরে খুব রাগ হয়েছে। নিঝুম সারারাতে আর এক বারও ওর ফোন ধরল না। অরণ্য কয়েকবার চেষ্টা করে ঘুমিয়ে পড়ল। ও আজ অনেক পরিশ্রান্ত। তাছাড়া আগের রাত নির্ঘুম কেটেছে মোটামুটি। আজ বিছানায় গা ঠেকাতেই একবারে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল ও।

সকালে উঠে আজ অয়নকে সাথে নিয়ে জগিংয়ে বেরুল অরণ্য। দুজনেই ওরা নিয়মিত জগিং করে প্রায় এক ঘন্টার মতো। আজ রমনার দিকে গিয়েছিল ওরা। হেটে ফিরে আসার সময় অরণ্যর মনে হলো কেউ ওদের ফলো করছে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করেও কাউকে ট্রেস করতে পারলনা ও। কিন্তু ভিতরটা কেমন খুঁতখুঁত করতেই থাকল ওর।

"কিরে ভাইয়া কি ভাবছিস? ঝুমির কথা? " অয়ন চোখ নাচাতেই অরণ্য ওর পিঠে জোরে একটা ঘুষি মারল।

"উহহ... কিরে তুই। ওই ঝুনঝুনির জন্য তুই আমায় মারলি? দেখিস তোর ঘরে তিন চারটা ঝুনঝুনি হবে। সব গুলো তোর চুল টেনে ছিড়ে তোকে ভিন ডিজেলের ভাই বানিয়ে দিবে," হা হা করে নিজেই নিজের কথায় হাসতে লাগল অয়ন।

"হোক... আমার ঝুনঝুনি গুলোর কাছে তাদের  চাচুর চুলও গুলোও খুব টেস্টি লাগবে, আমি শিওর। "

অরণ্যর কথায় অয়ন সাথে সাথে নিজের চুলগুলো  হাত দিয়ে একটু ঠিক করে নিল। এতো এক ভয়ংকর কথা। ভাইয়া যা বলল, তাতে তো এ বছর ভাইয়ার বিয়ে হলে সামনের বছর থেকেই একটা করে ঝুনঝুনি পয়দা হবে। আর তার পরের বছর যদি আরেকটা ঝুনঝুনি আসে, আর তার পরেরটা হলে তো বাইরে যাওয়ার সময় আম্মু ওর কোলেই পুচকিটাকে দিবে। অয়নের  চুল তো তাহলে ডেফিনিটলি শেষ। না ভাইয়ার এত্তগুলো ঝুনঝুনির দরকার নাই। দুটো হলেই পারফেক্ট। ওরা স্বামী-স্ত্রী দুজনে নিয়ে ঘুরবে। অয়ন মাঝে মাঝে কোলে নিবে।

বাসার ফিরেই নিঝুমকে কল করল অরণ্য।

এবার ফোনটা ধরল নিঝুম।

"সরি... আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।" নিঝুমের মনটা এখনও ভার। কিন্তু কেন সেটা ও নিজেই বুঝতে পারছেনা। অরণ্য কালকে এমন কিছু করেনি যে ওর অভিমান হতে  পারে। কিন্তু ওর হচ্ছে এবং ভালই রাগ হচ্ছে। খুব অসম্ভব রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে সব টেনেটুনে ছিড়ে ফেলে দেয়। আসলে ওর অরণ্যকে ভয়নক দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাসার সবাই যদি জেনে যায় যে ওরা বাইরে প্রতিদিন দেখা করে তাহলে ব্যাপারটা খুব বিশ্রী হয়ে যাবে। বিশেষ করে অরণ্যর রেপুটেশনের একটা ব্যাপার আছে। অরণ্য ওদের বাসার বড়ো জামাই। ওর নামে কোনো দুর্নাম হলে, সেটা নিয়ে ওদের পরিবারে খুব তুলকালাম হবে আর নিঝুম সেটা একদমই চায় না।

কিন্তু অরণ্যকে একভাবে কয়দিন না দেখে ও থাকবে কি করে? আর তার চেয়েও বড়ো সমস্যা হলো সেটা অরন্যকে ও নিজে মুখ ফুটে বলবে কি করে?

"ইটস ওকে ঝুম। আমিও ক্লান্ত ছিলাম অনেক। আমিও এজন্য আর খুব বেশি বার ফোন দেইনি, " অরন্য বিষন্নভাবে হাসল।

"ওহ... এখন কেমন আছেন? " নিঝুম কেন যেন আজ কথা খুঁজে পাচ্ছেনা। কালই তো কতকিছু বলতে চেয়েছিল আর আজ শুধু কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে আসতে চাইছে।

"আজ আর মিটিং নেই?" আর কিছু না পেয়ে শেষ পর্যন্ত এটাই জিজ্ঞেস করল নিঝুম।

"আছে তো। কিন্তু আমার একটা মাত্র বউ, তার মন খারাপ হলে আমি কাজ করব কি করে? আমার একটা সুইট স্মাইল চাই আমার জান এর কাছ থেকে। "

অরণ্যর কথাগুলো নিঝুমের জন্য একেবারে টনিকের মতো কাজ করল। সকাল থেকে কেমন একটা সংকোচ ওকে আটকে ধরছিল। সেটা এক মুহূর্তে বাঁধনহারা হয়ে গেল। নিজের অজান্তেই ফিক করে হেসে উঠল ও।

"আরে... আরে সে কি?  এত দেখছি মেঘ না চাইতেই জল। এত মিষ্টি আমি এখন রাখি কোথায়?" অরণ্যর কথায় যেন জলতরঙ্গের ফোয়ারা ছুটল ফোনের ওপাশে। অরণ্য বুক ভরে শ্বাস নিল। এই মেয়েটাকে দুঃখিত হওয়া একদম মানায় না। অরণ্য ওকে এক মুহূর্তের জন্যও দুঃখী দেখতে চায়না, এই রকমই উচ্ছল, প্রানবন্ত একটা প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াক নিঝুম ওর পুরোটা জীবন জুড়ে।

অফিসে ঢুকতে ঢুকতে শেষবারের মত কল করল অরণ্য নিঝুমকে।

"একটা অনুরোধ ছিল। করব?" ইতস্তত ভাবে জিজ্ঞেস করল নিঝুম।

অরণ্য একটু অবাক হলো। ওকে কি এমন বলবে নিঝুম যে এরকম ইতস্তত করছে। আগে কারও সাথে প্রেম ট্রেম ছিল নাকি? এক্সের নাম বলবে!

"করব?" নিঝুম আবারও জিজ্ঞেস করলে অরন্য হেসে হ্যাঁ বলল। কিন্তু বুকে কেমন যেন দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে। মনে হলো নিঝুম যেই কোনো ছেলের নাম বলবে, অমনি অরণ্য কেঁদে ফেলবে।

কিন্তু সকল আশঙ্কার অবসান ঘটিয়ে মহারানী জিজ্ঞেস করলেন, "অরণ্য রাতে বাসায় যাওয়ার আগে একবার ওর সাথে দেখা করতে পারবে কিনা? "

অরণ্যর এত আনন্দ হচ্ছিল যে, মনে মনে কয়েকটা ডিগবাজি খেয়ে নিল ছোটবেলার মতো।

"একশবার কিন্তু অনেক রাত হবে যে সোনা।"

অরণ্য সত্যি কথাটাই বলল। আজ কালকের চেয়ে বেশি রাত হবে।

"অসুবিধা নাই কিন্তু আপনি অবশ্যই আসবেন, প্লিজ।"

নিঝুম এবার খুব অনুনয়ের সুরেই কথাটা বলল।

"ওকে... ডীল ফাইনাল। কিন্তু আমাকে কি আজকেও পাইপ বাইতে হবে?"

অরণ্যর প্রশ্নে নিঝুম হেসে ফেলল।

"না..  না প্লিজ,আজ সোজা মেইন গেট দিয়ে ঢুকবেন।"

নিঝুমের উত্তরে অরণ্য বেশ অবাক হলো। কিন্তু আর কিছু বলল না। দেখা যাক কি আছে কপালে।

"তাহলে রাতে দেখা হবে। "

"জি "

"ঝুম... "

"জি "

"একটা কথা... "

"জি"

"আমাকে ভালোবাসো?"

"জি.. না..না...মানে না..  না মানে... " নিঝুম বোকার মতো জি আর না এর মধ্যে হাবুডুবু খেতে লাগলো। কোন উত্তরই আসলে ওর মনোপুত হলো না।

উদ্ধার করতে শেষ পর্যন্ত অরণ্যই এগিয়ে এলো..

" আচ্ছা আমি কি বাইরে থেকে খেয়ে আসবো?"

"এমা..  না। আমি  বাসায় খাবার ব্যাবস্থা করব। "

"ওকে... কিন্তু একটা সমস্যা আছে যে....."

"কি?"

"আমি কিন্তু  নিজে হাত দিয়ে ভাত মেখে খেতে পারিনা। "

চলবে......

গল্পটি ভাল লাগলে ছোট্ট স্টার বাটনটি চেপে ভোট দিন। কমেন্টে আপনার অনুভূতি আমাকে জানান, ধন্যবাদ।

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro