Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৭ম পর্ব

"কি ব্যাপার তোমরা কাঁদছ কেন?" কেউ একজন জানালার কাঁচটা ভাল করে সরিয়ে জানালার ফ্রেমে বসে পড়ল ধপ করে।

" আ.. আপনি? ", স্বরটা পরিচিত হওয়ায় নিঝুম আর আশু প্রায় একসাথে চমকে উঠল জানালার দিকে তাকিয়ে।

"সরি.. সামনে দিয়ে এটা নিয়ে আসলে প্রবলেম হতে পারে, তাই এখান দিয়েই আসলাম। আমার কিন্তু অন্য কোন ইনটেনশন নেই। আবার খারাপ ছেলে মনে করোনা আমাকে।"

অরণ্য একহাতে শার্টের ময়লাগুলো ঝারতে ঝারতে বলল। " কিন্তু তোমাদের পাইপে এত ময়লা হবে বুঝতে পারিনি।"

নিঝুম হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলনা। অরণ্য পাইপ বেয়ে উপরে উঠে এসেছে! এই লোক কি পাগল? বিকেল থেকে ওকে একবার দেখার জন্য নিঝুম মরে যাচ্ছে আর এই লোক.. একটা যা ইচ্ছা তাই । নিঝুম খুব ভাল করে বুঝতে পারছে, ও জেনে বুঝে আগুনে লাফ দিতে যাচ্ছে পিপীলিকার মতো। কথায় আছে না,  পিপীলিকার পাখা হয় মরিবার তরে।

নিঝুম যে কখন আশুকে ছেড়ে অরণ্যর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারেনি ও নিজেও। অরণ্য যখন জিজ্ঞেস করল," কি হয়েছে ঝুম, এমন ভাবে দেখছ কেন? "

নিঝুমের মনে হলো এই মুহুর্তে আকাশের চাঁদ হাতে পেলেও ওর এতটা আনন্দ হবেনা। আনন্দে বুকের ভেতর যেন হাতুরি পেটা শুরু হয়ে গেছে। চোখের পানি আগের চেয়েও দ্বিগুন গতিতে পড়ছে। কিছু বোঝার আগেই অরণ্যর বুকে ঝাপিয়ে পড়ল ও। অরণ্যর কিছু হয়নি, ওর অরণ্য সুস্থ আছে। অরণ্যকে ছুঁতে পেরেও যেন শান্তি হচ্ছিল না নিঝুমের।

অরণ্য এরকম ঘটনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না। আর সেটা যদি হয় নিঝুমের কাছ থেকে, তাহলে তো একেবারেই অবিশ্বাস্য।

নিঝুম দুহাত দিয়ে ওকে জাপটে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তাও সেটা আবার ওর ছোট বোন আশুর সামনে। হঠাত অ্যালার্মের মতো কিছু একটা অরণ্যকে সতর্ক করে তোলে।

এ বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো? কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি তো? কিছু একটা তো হয়েছে। তা না হলে দুইবোন একসাথে এরকম গলা ধরে কাঁদবে কেন?

ইশশ...  তখন ওরকম হুট করে রাগ করে চলে যাওয়াটা একদমই উচিৎ হয়নি অরণ্যর। কিন্তু কি করবে, শালা এই রাগটাই ওকে ডোবাবে। রাগ হলে কেন যেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ও।নিজেকে একদমই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।

"ঝুম, সোনা কি হয়েছে? তুমি কাঁদছ কেন বলতো? " অরণ্য নরম গলায় জিজ্ঞেস করল। অরণ্যর হাত  নিজের অজান্তেই ততক্ষণে নিঝুমের মাথায় চলে গেছে। এই মেয়ে কাঁদছে কেন? এমনিতেই  আজকের সন্ধ্যাটা খুব খারাপ গেছে ওর। রাগ হয়ে বের হয়ে গিয়েও যদি একটুও শান্তি পাওয়া যেত। উল্টো কষ্ট করে বাঁদরের মতো ঝুলতে হলো। অবশ্য এসবের ট্রেনিং ওর আছে। কিন্তু চোর ধরা আর প্রেয়সীর মান ভাঙানো দুটোতে বিস্তর ফারাক আছে। আর অরণ্যর মনে হচ্ছে চোর ধরাই সহজ বেশি। বাহবার সাথে সরকার উল্টো পয়সা দেয়। আর এদিকে তো অরণ্য টাকা পয়সা ঢেলেও কোন  কায়দা করতে পারছে না।

কি একখান বউ কপালে জুটল। এত ভালোবেসে উপহার দিচ্ছে আর এই মেয়ে সেটা নেবেনা। সহ্য হয়!  টাকা গুলো একদম জলে গেল।

অরণ্যর প্রশ্নে নিঝুমের বুকে কি অদ্ভুত একটা মিষ্টি অনুভূতি ছড়িয়ে পড়তে লাগল। অরণ্য এরকম করে ডাকলে তো ওর মরে যেতে ইচ্ছে হয় সুখে। কিন্তু বিকেলে কি একটা পচা ব্যবহার করল ওর সাথে। কি ভীষন কান্না  পাচ্ছিল নিঝুমের। অরণ্যর বুকের মধ্যে লুকিয়ে ওর শার্টের গন্ধটা নাকে যেতেই বুভুক্ষের মতো নাকটা আরো জোরে চেপে ধরল নিঝুম।

নিঝুমের মুখের সামনে এসে পড়া চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিল অরণ্য। কেঁদে কেটে মেয়েটার চুলগুলোও একেবারে ভিজে  গিয়েছে।

কিন্তু এখন নিঝুমকে এভাবে নিজের বুকের মধ্যে পাওয়াটা একটা স্বপ্ন নাতো? না মানে ভীষন একটা যুদ্ধ চলছিলো তো মনে মনে দুজনেরই।

জড়িয়ে ধরতে গিয়ে কখন যে নিঝুমের চুলের রাজ্যে নাক গুঁজে দিয়েছে অরণ্য.... বুঝতেই পারেনি।

আশুর খুক খুক কাশিতে দুজনেরই হুশ হলো। ছিটকে দুজনেই দুদিকে সরে দাঁড়াল। নিঝুমের শুধু মুখ নয়, পুরো শরীরেই মনে হচ্ছে রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। লজ্জায় বেচারি কারও দিকে মুখই তুলতে পারলনা। মনে হচ্ছে ও এইমাত্র সসের সাগর থেকে ডুব দিয়ে এসেছে। নিঝুমের অবস্থা দেখে আশুর সাথে সাথে অরণ্যও হেসে ফেলল।

শেষ পর্যন্ত ঐ হাসির উৎসবে নিঝুমও যোগ না দিয়ে পারলনা।

"জিজু.... আপনি কোথায় ছিলেন এতক্ষণ বলুন তো? কি অবস্থা সবার টেনশনে... আমার আপু তো কাঁদতে কাঁদতে শেষ। ফিট হয়নি তাই বেশি।"

আশুর কথায় অরণ্য মুচকি হেসে নিঝুমের দিকে তাকাল। নিঝুম এমনিতেই লজ্জায় লাল হয়ে আছে। অরণ্যর ভ্রু নাচান দেখে সেটা আরও একশ গুন বাড়ল। আশু ওকে একেবারে ডোবাবে। এই মেয়ের মুখ এতবড় আলগা জানা ছিল না ওর। কি লজ্জা....

আশু ওদের অবস্থা দেখে এখান থেকে বের হয়ে যাওয়াই সমীচীন মনে করল। ওর বড় বোন যে কতটা নরম সেটা আশু খুব ভাল করেই জানে।  আপুর শখের কান্নাকাটি এখনও বাকি আছে... জিজু বসে বসে সেগুলো সামলাক। আশু এখন এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচে। অবশ্য বায়স্কোপটা মন্দ লাগছিল না। জুটিও দারুন। কিন্তু তারপরও আপুর কথা ভেবে বের হয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিল আশু। আপু বেচারি ও থাকলে একটা কথাও বলতে পারবে না।

"আমি যাচ্ছি। আব্বু আম্মুকে কি জিজুর খবরটা বলব? বলব যে, জিজু তোকে ফোন করেছে।" আশু খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথাগুলো জিজ্ঞেস করল, না... কোনো দুষ্টুমির ছোঁয়া নেই তাতে। নিঝুম সায় দিল। এটুকু না বললে রাতে বাসার কেউ ঘুমাতে পারবে না।

অরণ্য নিজের হাতের তালুতে জোরের সাথে একটা ফু দিল। লোহার পাইপটা থেকে জানালার কার্নিশে এসে দাঁড়াতে খুব কষ্ট হয়েছে ওর, হাত দুটো জ্বলছে । শাড়ির প্যাকেটটা ওর শার্টের ভেতরে ঢুকিয়ে এনেছে... বোতাম খুলে সাধের শাড়িখানা বের করল অরণ্য, প্যাকেটটা বিছানার উপর রাখল।

নিঝুম একবার অরণ্যর দিকে তাকিয়ে আর মাথা তুলতে পারছেনা। কি একটা ভয়ংকর কাজ করে ফেলেছে ও উত্তেজনায় আবার। আসলে মাথা সুস্থ ভাবে কাজ করছিল না, অরণ্যও ফোন ধরছিল না... নিঝুমের ইচ্ছে হচ্ছিল রাস্তায় বেরিয়ে অরণ্যকে খোঁজে। কিন্তু ওকে তো এভাবে কেউ বের হতে দিবেনা। আর এত বড়ো ঢাকা শহরে কাউকে এভাবে খুঁজে বের করাও চাট্টিখানি  কথা না।

আসলে ওভাবে হুট করে না দেখলে জীবনেও নিঝুম, অরণ্যকে এভাবে জড়িয়ে ধরত না। কি বিচ্ছিরি একটা কান্ড হয়ে গেল। তাও আবার আশুর সামনে। নিঝুম এখন কি করে এই লোকের সাথে কথা বলবে? আর অরণ্য সেই তখন থেকে শুধু মুখ টিপে হেসেই যাচ্ছে। খুব মজা পাচ্ছে ওকে এরকম হেনস্থা করতে পেরে। পাঁজি লোক একটা, মনে হচ্ছে একটা ঘুষি মেরে ফেলে দেয় নিঝুম ওকে। 

"আমি কি তোমার বিছানায় একটু বসব ঝুম?  খুব কষ্ট হয়ে গেছে পাইপ থেকে জানালায় আসতে।"

অরণ্য জিজ্ঞেস করে আর দাঁড়াল না, বসেই পড়ল।

নিঝুম এতটা সময় খেয়াল করেনি। কিন্তু এখন বাক্সটার দিকে চোখ পড়তেই ওর চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল। বিছানার উপর তো  দুপুরের সেই শাড়ির প্যাকেটটা রাখা। ইয়া আল্লাহ, এই লোক এখনও ওটা সাথে নিয়ে ঘুরছে?

"আপনি এখনও ওটা নিয়ে ঘুরছেন! "

কথাটা জিজ্ঞেস করেই মনে মনে নিজেকে একটা গালি দিল নিঝুম। কি দরকার ছিল এই কথা তোলার? এই শাড়ি নিয়েই দুপুরে এক দফা ভ্যাজাল হয়েছে। আবার এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা হওয়ার কথা মনে হতেই, বুকটা ধুকপুক করে উঠলো ওর। অরণ্য যদি আবার হারিয়ে যায়? না না এই শাড়ি ও রেখে দিবে এখন। এটা নিয়ে আর কোনো কথা বলারই দরকার নেই।

অরণ্য বোধহয় নিঝুমের মুখের দিকেই তাকিয়েছিল। তা না হলে তাড়াতাড়ি ওর হাতটা ধরে নিয়ে ওকে নিজের পাশে বসতে বলত না।

" আবার কি হলো, আমার সোনা বউয়ের? আরে আমি তো এখন তোমার কাছে আছি তাই না? "

নিঝুমের মনে হলো, ওর সমস্ত স্বত্তা জুড়ে অরণ্য নামের ভাইরাসটা নিজের সাম্রাজ্য বানিয়ে নিয়েছে। ওর সমস্তটাই এখন অরণ্যের দখলে। নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছেগুলি সেখানে আর  খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। অরণ্যর সাথে সাথে সমস্ত প্রকৃতিও ওকে নিয়ে খেলছে। নিজের উপরই খুব রাগ হলো নিঝুমের। বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান কোথাকার। একদিনেই পরের কথা শুনে নাচছে!

"ও বউ "

অরণ্যর ডাকে নিঝুম কেমন শিউরে উঠল। অরণ্য এমন করে কেন ডাকে? ওর সমস্তটা কাঁপতে থাকে এই ডাক শুনলে আর এই লোক সেটা বুঝে আর মজা নেয়, খুব খুব খারাপ একটা লোক। লোকটা বোধহয় পাথরের তৈরি। একটুও ভালবাসে না ওকে। তাই ওকে এত এত কস্ট দিয়ে মজা পায়।

"ঝুম...। "

এইবার নিঝুম আর চুপ থাকতে পারেনা। খুব রাগ হচ্ছে ওর। কেন অরণ্য এতক্ষণ ওর ফোন ধরেনি? আবার  বলে জান। এদিকে ওকে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করেছিল। ওর উপর দিয়ে এতক্ষণ কি যাচ্ছিল লোকটা জানে? একটা শাড়ি নেয়নি বলে এত শাস্তি? কাল মার্কেটে গিয়ে এক বস্তা শাড়ি যদি ও না কিনিয়েছে অরণ্যকে দিয়ে... কতো ভালোবাসা ঔ দেখবে।

"আপনি আমার সাথে একদম কথা বলবেন না। একদম একটা শব্দও না। আমি আপনার কাছ থেকে শাড়ি নেইনি। আমার তো শাস্তি পাওনা। তো এটাই বরং আমার শাস্তি হোক।আপনি..  আপনি আমাকে কস্ট দিয়ে এত আনন্দ পান! "

নিঝুমের  অশ্রুসজল চোখ, অরণ্যর নিজেকে সামলানো দায় হয়ে গেলো। এতো মহা মুশকিল.....। এই মেয়ে তো চোখের পানি দিয়েই ওকে কায়দা করে ফেলবে।

কিন্তু ঝুম বোধহয় খুব কেঁদেছে এতক্ষণ।  নিজের ওপর এবার একটু রাগই হলো অরণ্যর। বাড়াবাড়িটা বোধহয় একটু বেশিই হয়ে গেছে। আসলে এত শখ করে কিনল, অরণ্য মনে করেছিল যে ঝুম খুব বেশি খুশি হবে এটা হাতে পেয়ে। কিন্তু হলো উল্টো। আর তাতেই হঠাৎ খুব রাগ হয়ে গিয়েছিল ওর। মনে হচ্ছিল ওর ইচ্ছে অনিচ্ছের কোনে দামই নেই এই মেয়ের কাছে।

"ঝুম পাখি, বউ শোন প্লিজ তুমি এরকম করোনা। তুমি এরকম করলে অরণ্য একদম মরে যাবে।"

অরণ্যর নরম কথায় নিঝুম আবার কেঁদে ফেলল। " আপনি আমার সামনে মরে যাওয়ার কথা বলতে পারলেন? আমি কি এতই খারাপ? "

"না.... এই মেয়েতো দেখি বেশি বোঝে,  আচ্ছা এদিকে ঘোরো দেখি। "

অরণ্য দুই হাত দিয়ে নিঝুমকে নিজের দিকে ফিরালো।

"আই অ্যাম সরি, ওকে।  আমার একদম উচিত হয়নি ওরকম করা। আমি আর কখনও ওরকম করব না। এই দেখো কান ধরলাম।"

নিঝুম অভিমান ভুলে তাকায়... অরণ্য সত্যি নিজের কান দুদিকে ধরে টানছে। পাগল নাকি এই লোক!

"একদম সত্যি কান ধরেছি দেখো।"

অরণ্য নিঝুমের দিকে তাকিয়ে হাসে। ওর মনে হচ্ছে ওর সামনে একটা পরী বসে আছে। আচ্ছা পরীটাকে ও হারিয়ে ফেলবে না তো?

" কিন্তু আপনি এতক্ষণ  আমার ফোন কেন ধরেননি? আমার..  না মানে আমার বাসার আর আপনাদের বাসার সবাই কত চিন্তায় পড়ে  গিয়েছিল আপনি জানেন? আর... আর... আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন শুনি? " নিঝুম একদমে প্রশ্নগুলো করে তবে থামল।

"এত্তোগুলো প্রশ্ন... তাও আবার একসাথে? একটা একটা করে উত্তর দেই, " অরণ্য হাসছে।

অরণ্য নিঝুমের রাগী রাগী মুখ আর জেরার ভঙ্গি দেখপ হাসছে। বউ তো এখনই ওর ক্লাস নেওয়া শুরু করে দিয়েছে।

অরন্যর হাসিতে এবার একটু লজ্জা পেল নিঝুম। ও বোধহয় একটু বেশি বলে ফেলেছে। কিন্তু ও কি করবে? ওর মনকে তো আর ও কন্ট্রোল করে না। আর ওর সত্যিই রাগ হয়েছিল।

"এক গ্লাস পানি পাওয়া যাবে?" অরণ্য জিজ্ঞেস করতেই লাফ দিয়ে উঠল নিঝুম। এমা ছি....।
লোকটা কতক্ষণ হলো এসেছে আর নিঝুম তাকে এতক্ষন পর্যন্ত একগ্লাস পানিও অফার করেনি।

"এক মিনিট, আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।"

নিঝুম একছুটে ওদের কিচেনে এসে ঢোকে। ফ্রীজ খুলে দেখে রাতের খাবার বেশ অনেকটাই আছে। চট করে মাইক্রো ওভেনে ভাতের বোলটা দিয়ে,  ট্রেতে প্লেট, গ্লাস সব সাজিয়ে নিল নিঝুম। কিন্তু হায়... উপরে এসে  যখন নিজের ঘরে ঢুকলো অরণ্যরাজি ততক্ষনে  ওর বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

কি মায়া লাগছে নিঝুমের।

কিন্তু এভাবে না খেয়ে ঘুমালে তো পরে পেট ব্যাথা করবে অরণ্যর। নিঝুম ট্রেটা টেবিলে রেখে অরণ্যর পাশে এসে বসল। এত মুক্ত স্বাধীন ভাবে অরণ্যকে দেখার সুযোগটা হাতছাড়া করতে মন চাইলো না ওর। ঘুমাক দশ মিনিট, তারপর ডাকবে। অরণ্য চোখদুটো কি সুন্দর। ছেলেদের চোখের পাপড়িও এত সুন্দর হয়? কি ঘন! ভ্রু দুটোও সুন্দর। মুচকি হাসিটা আরও সুন্দর।  শোয়ার কারনে অরণ্যর চুলগুলো  একপাশে হেলে গেছে, নিঝুম খুব আস্তে করে তাতে হাত ডোবাল। খুব সাবধানে ওর আঙুলগুলো দিয়ে চুলগুলো একটু একটু করে এলোমেলো করে দিতে লাগল। আচ্ছা অরণ্যর তো অনেক ব্যাস্ত জীবন। নিঝুম পারবে তো ওর সাথে মানিয়ে নিতে? যদি না পারে?

উত্তরটা দেওয়ার জন্যই বোধহয় পাঁজিটা ওর দিকে পুরো ঘুরে শুল। এখন মুখটা একদম পুরোটাই দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। অরণ্যর চোখের নিচে একটা ছোট কাটা দাগ আছে। নিশ্চই খুব দুষ্ট ছিল। এখনও যে পাঁজি দুটো... নিঝুম হেসে ফেলল। নিঝুম মুখে বলতে পারছেনা কিন্তু ও চোখ বন্ধ করলে অরণ্য ছাড়া আশেপাশে কিছু দেখতে পাচ্ছেনা। মন তো ওর কেনা বাঁদী হয়ে গেছে এই লোকের।

একভাবে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল জানে না নিঝুম,  কিন্তু লোকটাকে এখন ডাকা দরকার। যে কেউ চলে আসতে পারে। কেলেঙ্কারির তখন শেষ থাকবে না। নিঝুম অরণ্যর চুল থেকে হাত সরিয়ে ওকে ডাকতে যাচ্ছিল তার আগেই অরণ্য ওর হাতটা ধরে ফেলল। "উমম...  হাত কেন সরাচ্ছো? আরেকটু প্লিজ।"

"আ... আপনি জেগে আছেন? " নিঝুম লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এই লোক এতক্ষণ ওর সাথে নাটক করছিল!

"একদম না। আমি তো ঘুমিয়েই গিয়েছিলাম। কিন্তু রাজকন্যা এত আদর করে মাথায় বিলি কাটছিল যে, আমার আর ঘুমিয়ে থাকতে ইচ্ছে হলোনা," অরণ্য হাসল।

নিঝুম এবার অরণ্যর দাঁত গুলো দেখছিলো।

"আমাকে দেখা এখনও হয়নি? তাহলে আবার শুয়ে পড়ি?" অরণ্যর কথায় এবার মুখ ভেঙচালো নিঝুম।" মোটেও আমি আপনাকে দেখছিলাম না, আপনাকে দেখতে আমার বয়েই গেছে। আর আপনি প্রথমে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।আপনি পুরো বিকেল কোথায় ছিলেন?  ফোন কেন ধরেন নি? আমার জবাব চাই।"

" ছিলাম, তোমার আশেপাশেই ছিলাম তবে.. গাড়িতে। আর আমার ফোন রাগে সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম। আটটার দিকে অয়নকে কল দিতে গিয়ে দেখি একগাদা মিস কল। তার মধ্যে তোমার এতগুলো মিসড কল দেখে আমি ঘাবড়ে গেছি।"

"ওহ..  আর তারপরও আপনার একবার আমাকে কল করার কথা মনে হয়নি? " কন্ঠটা রুদ্ধ হয়ে আসতে চাইলো নিঝুমের। কষ্ট হচ্ছে খুব, চোখ দুটোও জ্বলছে। লোকটার বোধহয় তাহলে ওর জন্য বিশেষ কোন ফিলিংস নেই।

"হয়েছিলোতো। কিন্তু তার চেয়ে  বেশি দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল... আর সেই সাথে এই শাড়িটা দেওয়ার লোভ।"

অরণ্য দেখল নিঝুম মনোযোগ দিয়ে শাড়ির প্যাকেটটা দেখছে।

"ঝুম একটা অনুরোধ করব?" অরণ্য নিঝুমের হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

নিঝুম উত্তর দেয়ার সাহস পেল না। অরণ্যকে না করার শক্তি ওর আছে কি?

অরণ্য শাড়ির প্যাকেটটা নিঝুমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,"এই শাড়িটা এখন শুধু তুমি তোমার কাছে রেখে দাও। এখন পরতে হবেনা। বিয়ের পর দেখি কে তোমাকে কি বলে।"

অরণ্যর এইটুকু আশ্বাস নিঝুমের জন্য অনেক কিছু।

" রাখবে? " অরণ্য জানতে চাইলো।

নিঝুম এবার আর না করলনা। এখন আর মানা করা যায়না, মানুষটা ভুল বুঝবে তাহলে ওকে।

" আপনি তখন পানি খেতে চেয়েছিলেন। আমি সাথে একটু খাবারও এনেছিলাম। আপনি কি খাবেন?"

"খেতে পারি, যদি তুমি মেখে খাইয়ে দাও।"

কি অদ্ভুত দাবী। নিঝুম একাজ জীবনেও পারবে না।

"কি হলো দেবেনা? "

নিঝুম দেখলো... ওমা অরণ্য গাল ফোলাচ্ছে! এসব কি ঢং? এতবড়ো মানুষকে কেউ খাইয়ে দেয় বুঝি? নিঝুমের মুখ দেখে অরণ্য উঠে গিয়ে ট্রে থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলল।

"ওকে তাহলে আসি। "

হায়... লোকটা কি রাগ করল? নিঝুম অরণ্যর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে। এই লোক তো দেখি এক সেকেন্ডের মধ্যে রেগে বোম হয়ে যায়।

অরণ্য জানালার ফ্রেমে বসতেই নিঝুমের যে কি হলো.... মনে হলো আবার কান্নার মতো কিছু একটা দুর্বার গতিতে উঠে আসছে।

লোকটা ঠিক রাগ করেছে। এ জন্যই এরকম করে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ওর যে কি রোগ হল ঘোড়ার ডিম! ওই লোকের মন খারাপ হলেই ওর এখন কষ্ট হচ্ছে।

" আমি খাইয়ে দিলে আপনি খাবেন? " বলবে কি বলবেনা ভাবতে ভাবতে বলেই ফেলল নিঝুম।

কথাটা শুনে মাথা নিচু করে হাসল অরণ্য। ও ঠিক বুঝেছিল। নিঝুমের দুর্বলতা গুলো বোধহয় একটু আধটু ধরতে পারছে ও," খেতে পারি কিন্তু নিজ হাতে খাইয়ে দিতে হবে। চামচ দিয়ে হলে খাবো না। ওটাকে কেমন যেন সৎ মা সৎ মা মনে হয় আমার।"

"এরকম অদ্ভুত কথা আমি জীবনে প্রথম শুনলাম।" নিঝুম অরণয় মুখে একটা লোকমা তুলে দিল ভাতের। আশু বড়ো হবার পর বহুদিন কাউকে এভাবে খাইয়ে দেয়নি নিঝুম। হাত গলে কেমন পড়ো যেতে চাইছে খাবার।

"আমার অনেক কিছুই খুব অদ্ভুত নাগো বউ?"

নিঝুমের চোখ দিয়ে কেন যেন পানি চলে আসছে আনন্দে। কি এক অদ্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে গেল ও। নিঝুম কোনো উত্তর না দিয়ে পরের লোকমাটাও অরণ্যর গালে তুলে দিল। শেষ লোকমাটা নেওয়ার সময় অরণ্য ওর হাতটা নিজে ধরে খেল। নিঝুম বুঝতে পারেনি প্রথমে, কিন্তু সে যখন একটা করে ওর আঙুল চেটে খাচ্ছিল নিঝুমের মনে হলো ওর দম আটকে আসছে, পুরো গায়ে রীতিমতো কাঁপুনি হচ্ছে। কি করছে এই লোক?

"সরি, এই লোভ টা সামলাতে পারলাম না। কিন্তু এখন বোধহয় যাওয়া উচিত। " অরণ্য উঠে দাঁড়াল। "থ্যাংস ফর ইউর হসপিটালিটি।"

নিঝুমের তখনও কাঁপুনি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এই লোক ওকে মেরে তবে শান্ত হবে।

"ঝুম.."

"জি? "

"আরেকটা কথা। আমার একমাত্র শ্যালিকাকে বলো জিজুর তরফ থেকে তার জন্য একটা গিফট পাওনা হলো। কাল পারলে অয়নকে দিয়ে ওটা পাঠিয়ে দেব। "

"জি"

নিঝুম আর কি বলবে। ফাজিলটা দেখো নিজেও নিজেকে জিজু বানিয়ে ফেলেছে।

"আর একটা কথা...  দু একদিনের মধ্যে আম্মু -আব্বু এসে বিয়ের তারিখ ঠিক করবে বোধহয়। কাছের কোনো সুবিধা মতো তারিখ পেলে, তোমার ফুফুদের তুমি একটু ম্যানেজ করো না,যেন ওনারা রাজি হন। তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। "

নিঝুমের চোখ আর মুখ দুটোই আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। কি অসম্ভব কথা এই লোক অনায়াসে বলতে পারে। ফুপিদের ও বলবে তাড়াতাড়ি চলে আসতে, যেন ও তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে পারে!

কিন্তু অরণ্যর কথাও তো সত্যি। এভাবে তো চলতে পারে না। অরণ্য কাছে থাকলে যেভাবে হাত পা কাঁপতে থাকে তাতে যে কোনো মুহূর্তে অঘটন ঘটাবে ওই ছেলে, নিঝুম মনে হয় আটকাতেও পারবে না।

"ঝুম, এবার আসি তাহলে, জানালাটা তুমি ভাল করে আটকে দাও।"

অরণ্য যতক্ষণ নামল... নিঝুমের শ্বাসটা বোধহয় ততক্ষণ ওর বুকের কাছে আটকেই ছিল। অরণ্য নেমে হাত নাড়তেই , কেন যেন অকারনেই  গতদিনের চুমুর শব্দটা আবারো এসে কানে পর্দায় আছড়ে পড়লো নিঝুমের।

"কিছু কথা বলো তুমি সাধারণ ভাষায়
অথবা কিছুক্ষন বসে থাকো নীরবতায়
একটু হাসো তুমি এতটুকু হালকা কথায়
চোখ বুজে থাকো যদি কবি কবি ভাবনায়

বিকেল ফুরিয়ে গেলেও,
কিছু আলো রয়ে যায়
তোমাকে দেখলেই আমার,
মন ভালো হয়ে যায়

নিজেকে লেখা চিঠি পড়তে দেব তোমায়
তুমি খুব হাসবে বুঝি সেই,
ছোটো ছোটো ঘটনায়
আমি অল্পতে অভিমানী,
অল্পতে মান ভেঙে যায়
আবোল তাবলেই আমি তাই ভালোবাসি তোমায়।"

Lyrics : Shomeshwar Oli

....................................................................

"হ্যালো... "

"বলো... "

"অয়ন... অয়ন, তুমি শুনছো?"

"হমম..  শুনছি। বলো..."

"আই লাভ ইউ।"

সদ্য শোনা কথাটা শুনে,
এক চিলতে পরিতৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল অয়নের ঠোঁটের কোনায়।

চলবে.......

পর্বটি ভালো লাগলে ভোট এবং কমেন্ট করার অনুরোধ রইল।

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro