Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৫০

অহনাকে সঙ্গে নিয়ে অরণ্যকে অ্যামব্রসিয়া নামের একটি রেস্টুরেন্টে আসতে হয়েছে। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই অরণ্যর মেজাজ গরম হয়ে গেল। রেস্টুরেন্টে পা দিয়ে অহনার প্রথম কথাই হলো চলো আগের দিন যেখানে বসেছিলাম ওই কর্ণারে গিয়ে বসি।

তারমানে অয়ন অহনাকে নিয়ে এর আগেও চট্টগ্রামে এসেছে, আর এই রকম দামী দোকানে এনে খাইয়েছে। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস অরণ্যর বুক চিরে বের হয়ে আসতে চাইলো। এক... অয়নটা একটা বড্ড ভুল মানুষকে বোকার মতো ভালোবেসেছিল আর অরণ্য নিজের বউ নিয়েও এই সব দামী দোকানে ঢোকার চিন্তা করেনা।

রেস্টুরেন্টে বসেই অরণ্য সিদ্ধান্ত নিল ঝুমকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসলে এই রেস্টুরেন্টে অন্তত একবার হলেও ওকে খাওয়াবে অরণ্য। না হলে নিজের কাছেই কেমন অপরাধী লাগছে ওর। রেস্টুরেন্টেটা  ওভার এক্সপেন্সিভ এটাই শুধু ব্যাপার না, সাথে নিঝুমের পাওনা সঙ্গটা ও অহনাকে দিচ্ছে এই অপরাধবোধটাই ভীষন যন্ত্রনা দিচ্ছে অরণ্যকে। ঝুম অরণ্যর কাছে ওর সঙ্গ ছাড়া আর কিছু চায়নি এ পর্যন্ত আর এই মেয়ের সাথে ও কাজ ফেলে সেই সময় নষ্ট করে ভালোবাসার অভিনয় করছে, অসহ্য।

অবশ্য এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড়ো কাজ ওদের সবার জন্য। অনেক গুলো মানুষের চাওয়া-পাওয়া আর সুখের বিবর্ণ রঙ জড়িয়ে আছে এর সাথে। সেই কষ্টের ঋণ শোধ না করে অরণ্যর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।

"অয়ন... এবার কিন্তু আমরা কক্সবাজারে যেতে পারি। গতবার তো যাওয়া হলো না সময়ের অভাবে।"

কক্সবাজার! অহনার কথায় পিত্তি জ্বলে গেল অরণ্যর। কিন্তু তবু কষ্ট করে ফূর্তি ফূর্তি ভাবটা বজায় রাখতে হলো ওকে, জান বাঁচানো ফরজ কাজ যে।

"দেখি, আগে জরুরী কাজগুলো শেষ করি তারপর।"

"এবারও কী অনেক কাজ নিয়ে এসেছ অফিসের? এই ব্যাংকের চাকরি এতো খারাপ আমার জানা ছিল না।"

"আমারো না," বিরবির করে বলল অরণ্য।

" বিশ্বাস করো বউ অফিসের কোন কাজই এবার সঙ্গে আনিনি... শিট, আই মিন অনা। আসলে তোমাকে টাইম দেওয়াও তো আমার কাজ তাইনা ? "

"কী ব্যাপার বলতো অয়ন.. একেবার বউ, আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো? " অহনা খিলখিল করে হেসে ফেলল।

"নাহ... স্বপ্নকে এবার সত্যি বানাতে চাচ্ছি তাই মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেছে।"

কথাটা মুখের হাসি বহাল রেখেই বলার চেষ্টা করল অরণ্য। শিট.. এ রকম বউ বউ করতে থাকলে একদিনের মধ্যে ও ধরা পড়ে যাবে রাইসুল বাহিনীর কাছে। বি কেয়ারফুল অরণ্য, নিজের বউ - বাচ্চার চিন্তা কর, ওদের কাছে সহি সালামত ফিরতে চাইলে অহনার মনে বিন্দু মাত্র সন্দেহের ছায়া পড়তে দেওয়া যাবে না।

" রিয়েলি! অয়ন তুমি এতো কিউট কেনো। "

"তোমাকে পাবার জন্য, তোমাকে পাওয়ার জন্য যে আমি কী করতে পারি তোমার ধারনা নেই।"

অহনা এবার আবদারের সুরে নয় প্রায় হুকুমের সুরে বলে বসল," তাহলে এবার ঢাকায় ফিরে তোমার ওই ভাবিকে তোমাদের বাসা থেকে বের করো। আমি ওই মেয়েকে তোমার সাথে একেবারেই টলারেট করতে পারছি না।"

এক সেকেন্ডের জন্য দপ করে জ্বলে উঠেই আবার নিভে গেল অরণ্যর চোখদুটো। দেঁতো হাসি হেসে বলে উঠল," চিন্তা করো না সুইটহার্ট , আমি ওকে মোটেই সেই ভাবে পাত্তা দেইনা। নেহায়েত ভাইয়ার বাচ্চাটা পেটে তাই কিছু বলছি না ঝুমঝুমিকে। "

"দয়া করে আমার সামনে আহ্লাদ করে এরকম ঝুমঝুমি ঝুমঝুমি করবে নাতো, গা জ্বলে যায়।এক বাচ্চার মা হয়ে গেছে তারপরেও ঢঙে বাঁচে না।" হিসহিসিয়ে উঠল অহনা।

অহনার কথায় অরণ্য ভীষণ অবাক হলো। মানে কী? ঝুমকে নিয়ে কী আগে থেকেই এদের মাঝে ঝগড়া চলে নাকি? এই মেয়েতো ঝুমকে একদম সহ্যই করতে পারেনা দেখা যাচ্ছে। ওর বউতো এর চেয়ে কম হিংসুটি, বাই চান্স অয়ন একে বিয়ে করলে তো কুরুক্ষেত্র বেঁধে যেত বাসায়।

"আচ্ছা, তাহলে অন্তত ঝুম বলি। একেবারে নিঝুম বললে হঠাৎ করে আবার কিছু সন্দেহ করে বসতে পারে আম্মু, আপাতত আমি সেটা চাইছি না। " অরণ্য ঝুম নামটাতেই টিকে থাকার চেষ্টা করল, এতে ওর সুবিধা। ঝুমঝুমি ওর মুখে একেবারেই আসে না।

"তাহলে কী চাইছ, আজীবন তোমার ঝুমঝুমির নকল বর হয়ে থাকতে?"

"আরে না, তুমি কী পাগল হলে নাকি? বাচ্চাটা হয়ে গেলেই কিক আউট। আমার মায়ের দুর্বলতাটা হলো ভাইয়ার বাচ্চাটা, বুঝলে অনা ডার্লিং।"

"হুমম।"

"শোন জান, আমি এখন একটু দরকারী কথা বলতে চাই। "

"কী? "

"আমার মতে এবার আমাদের বিয়েটা করতে হবে, ইটস আর্জেন্ট। না হলে আমি ঝুমকে ঠেকাতে পারবনা। ওই মেয়ে যখন, তখন আমার রুমে চলে আসে।"

"কিন্তু তুমি তো বলেছ যে তোমাদের বিয়ের কেবল নাটক করা হয়েছে। তাহলে এখন এসব কী? ওই মেয়ে এতো বেহায়া কেন? "

" আর বলোনা একদম..রাত নেই দিন নেই হুটহাট আমার রুমে এসে ঢুকব। আসলে কী  অনা সেও তো রক্তে মাংসের মানুষ। নিড তার থাকাও স্বাভাবিক আর ফলস হলেও আমাদের বিয়ে হতে যাচ্ছে এরকম একটা আশাতো তাকে দেওয়া হয়েছে, তাই না?" মনমনে অহনার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করল অরণ্য। আমার বউয়ের এক নখের যোগ্যও তুই না, উনি আবার আসছে আমার বউয়ের খুত ধরতে। এক থাপ্পর দিয়ে তোর বত্রিশটা দাঁত ফালায় দিব আমি শয়তান মেয়ে কোথাকার। মনেমনরাগে দাঁতে দাঁত ঘষল অরণ্য। "ঝুম আমার কাছে আসবেনা তো কী তুই আসবি... অসভ্য, বেহায়া মেয়ে একটা ....... "

কিন্তু মনের ঝালটুকু  মনেই মিটাতে হলো অরণ্যকে। অহনার সামনে বেশ একটা দুঃখিত চেহারা ধরে বসে থাকতে হলো অরণ্যকে, যেন ও বড়ো দরের কোন অপরাধ করে ফেলেছে নিঝুমের নাম নিয়ে।

অহনাও এবার বিষয়টা একটু গুরুত্বের সাথেই নিল। অয়নকে বিয়ে করাটা বোধহয় আসলেই এখন জরুরী হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাইয়াকে বললে কী রাজি হবে? রাইসুল ওর কাজিন হলেও, ওকে নিজের বোনের মতোই আদর করে। তাই অনেকেই ওদের সম্পর্ক ঠিক বুঝতে পারেনা। রাইসুলের ছোট ভাই জাহাঙ্গীরের সাথে ওর হৃদ্যতা অনেক বেশি ছিল, অনেকে এ কারনে আবার ওকে জাহাঙ্গীরের গার্লফ্রেন্ডও মনে করে। জাহাঙ্গীর নিজেও এটা খুব উপভোগ করতো। তবে অহনা নিজে জাহাঙ্গীরকে ঠিক অতটা পছন্দ করতো না যদিও ওদের মধ্যে আনহেলদি একটা রিলেশন ছিল। জাহাঙ্গীর বেঁচে থাকলে হয়তো ওদের বিয়েও হয়ে যেত। কিন্তু জাহাঙ্গীরের মৃত্যুটাই সব এলোমেলো করে দিল। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর সাথে অরণ্যর নামটাও উঠে এলো আবার , এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা পড়ল। নিজেও ভালোবাসলোনা আর ওকে যে ভালোবাসে তাকেও কেড়ে নিল অরণ্য।

এই আক্রোশটাই আরো বেশি করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল অহনার। এক সময় অরণ্যর জন্য পাগল ছিল ও। কিন্তু ছেলেটার খুব হামবরা ভাব, মোটে পাত্তা দিত না ওকে। তাই ওর জমজ ভাই অয়নের সাথে বন্ধুত্ব পাতাল অহনা। অয়নটা দেখতে একই রকম হলেও, সহজ আর হাসিখুশি বেশি। ওর সাথে বন্ধুত্ব করার উদ্দেশ্য ছিল কোন না কোন ভাবে অরণ্যর খবর রাখা আর অরণ্যর খবর অহনা রাখতও।

কিন্তু জাহাঙ্গীরের মৃত্যুতে জড়িয়ে গেলে রাইসুলের সামনে অরণ্যর কথা বলার সাহস হয়নি আর ওর। একদম জায়গায় গুলি করে মারবে রাইসুল অরণ্যর নাম ওর মুখে শুনলে। তখন থেকেই আসলে অয়নের সাথে প্রেমের অভিনয় শুরু হয় ওর রাইসুলের নির্দেশে। কিন্তু এতে আরও উল্টো ফল হয়েছে অহনার। আবারো অরণ্যর প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। অয়ন ভীতুর মতো দেশ ছাড়তে চায়, বিদেশে নিরাপদে থাকবে বলে। অরণ্য উল্টো বাবা - মায়ের কাছে থাকতে চায়, সরকারি চাকরিতে ঢুকেছে। দেশের পরিস্থিতি খারাপ বলে যারা পিঠটান দিয়ে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালায় তারা আর যাই হোক যোদ্ধা নয়। তাই অয়নকে ও কেবল ব্যবহারই করতে পারে, ভালোবাসতে নয়।

কিন্তু দুম করে ওই যোদ্ধা মানুষটা দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়ে ওকে একা করে চলে গেল। যদিও ততদিনে নিঝুম নামের আপদটা অরণ্যর গলায় ঝুলে পড়েছে। নিঝুমের নামটা শুনলেই ওর ভিতরটা জ্বলে পুরে যায়। অরণ্য থাকুক বা না থাকুক নিঝুম ওর বাচ্চার মা, সারাজীবন অরণ্যর নামটা নিঝুমের সাথেই থেকে যাবে, এটা ভাবলেই ওর মনে হয় এক লাথি দিয়ে ওই মেয়েটার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলে দেয়। সারাজীবন অরণ্যর মা ওকে দুই ছেলের বৌ বানিয়ে পূজো করবে সেটা অহনা হতে দিবে না। তাই অয়নকে ও বিয়ে করবে। নিঝুমকে ওই বাড়ি থেকে বের করে তবেই ওর শান্তি।

খাবার খাওয়া শেষ হলো অরণ্য চুপচাপ বিল পে করে দিল, যদিও বিলটা কলিজায় গিয়ে লাগল ওর। ক্যাশমেমোটা আস্তে করে পকেটে চালান করতেই অহনা বলে উঠলো, "চলো হোটেলে যাই, আমার ফ্রেশ হওয়া দরকার। "

"উমম... শিওর।"

ওরা যখন হোটেল বাদ দিয়ে ফ্ল্যাটটার সামনে এসে থামল অহনা রীতিমতো অবাক।

"অয়ন আমরা এখানে কেন? এটা কী তোমার কোন বন্ধুর বাসা? "

"হ্যাঁ, কিন্তু ও এখানে থাকে না। আমি রঞ্জুকে আমাদের কথা বলতেই ও নিজেই আমাকে ইনসিস্ট  করলো এখানে থাকতে।"

"ওয়াও, তোমার ফ্রেন্ডটা তো খুব ভালো মনে হচ্ছে অয়ন।"

চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের মূল দরজাটা খুলতেই অহনা  অরণ্যকে পিছনে ফেলে আগে আগে ভিতরে ঢুকে পড়ল। ফ্ল্যাটে খুব অল্প কিছু আসবাবপত্র আছে কাজ চালানোর মতো। দুই রুমে দুইটা খাটের ব্যবস্থা করতে বলেছিল অরণ্য পার্থকে। উঁকি দিয়ে সেগুলো করা হয়েছে কিনা দেখার জন্য ঢুকতেই, অরণ্যর পিছন পিছনে অহনাও এসে ঢুকল।

"ওয়াও... এই রুমটা তো পাশেরটার চাইতে বেশি সুন্দর। আমরা এই রুমে থাকি ওকে।"

আমরা!

অরণ্যর বুক ধরাস করে উঠল, বলে কী এই মেয়ে। অয়নকি এই মেয়ের সাথে ওই সম্পর্কেও জড়িয়েছে নাকি? দ্রুত মেজরকে মেসেজ সেন্ড করল অরণ্য। উত্তর এলো, " আমি দেখছি। বি কেয়ারফুল... সে কিন্তু রাইসুলের ভাইয়েরও রক্ষিতা ছিল শুনলাম। এরকম হলে রাইসুল কোনভাবেই বিয়েতে রাজি হবে বলে মনে হয়না। প্ল্যান এ চেঞ্জ করতে হবে, বি অ্যপ্লাই করব।"

"স্যার " মেসেজ পাঠিয়ে ফোনটা পকেটে রাখল অরণ্য।

একটু পরেই কলিং বেলের শব্দ হলো। অহনা তখন গোসল করে বেরিয়েছে মাত্র। শুনতে পেল অয়ন কার সাথে যেন কথা বলছে। গায়ে কোনমতে তোয়াল প্যাচানো অবস্থাতেই বেরিয়ে এলো ও রুম থেকে। অরণ্যর তখন দু বোতল মিনারেল ওয়াটার হাতে নিয়ে দরজা দিচ্ছে।

অহনাকে দেখে অরণ্যর চোখ কপালে উঠল। মাই গড... এই মেয়ে দিয়ে সব হবে। দ্রুত চোখ নামিয়ে  পাশের ঘরে এসে ঢুকতেই খেয়াল করল অহনা ওই অবস্থাতেই ওর পিছন পিছন চলে আসছে। ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল অরণ্যর। অহনা মেয়েটার কেবল সুন্দর একটা শরীর আছে , কিন্তু কেবল ওটুকুই ভাল... বাকি সব রদ্দির মাল।

"অনা তাড়াতাড়ি একটা কিছু গায়ে দাও বেবি। নইলে এখানকার মশা খুব ডেঞ্জারাস, পাহাড়ি মশা তো। তোমার ডেঙ্গু হলে তো আমি মহা বিপদে পড়ে যাব। তোমাকে হাসপাতালের বিছানায় দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না।"

অরণ্য বিছানার চাদর হাতে নিল সাথে সাথে অহনাকে দেবার জন্য, কিন্তু অহনা ওসবের ধার দিয়েও গেলনা। উল্টো বিছানায় বসে অরণ্যর হাত ধরে পাশে বসাল," হসপিটালের বেডে না হোক এই বিছানায় তোমার সাথে সহ্য হবে তো?"

অহনার চোখে মুখে স্পষ্ট আমন্ত্রণ। অরণ্য দ্রুত হাতে অহনার হাতটা ছাড়িয়ে নিল, তবে দূরে সরে গেলনা। এই পরীক্ষায় পাশ দেওয়াটা খুব জরুরি ওর জন্য। নিঝুমকে তাই মনের দরজার পাশে বসিয়ে দিল অরণ্য দ্বাররক্ষী হিসেবে।

"কী যে বলনা। সহ্য হবেনা মানেটা আবার কী? একেবারে দৌড়াবে," ঠোঁটে লম্বা চওড়া একটি হাসি ঝুলিয়ে দিল অরণ্য। মনেমনে একরাশ স্বস্তি এসে জুড়ে বসল, ভাগ্যিস নিঝুম নামের অভিমানী  মেয়েটা ওর জীবনে এসেছিল। না হলে আজ হয়তো ও ভেসে যেত। জীবনে বার বার ভুল করাটা  জরুরি না... কিন্তু অসময়ে করা একটা ভুলের মাশুল কখনো কখনো জীবন দিয়েও শোধ করা সম্ভব হয়না।

" অয়ন, আমাকে ওইদিনের মতো একটু আদর করনা প্লিজ," অহনা ঠোঁট দুটো ফুলিয়ে সেলফি তোলার ভঙ্গি করল। অরণ্যর মনে হলো মেয়েটাকে ধরে নিয়ে লকআপে ঢোকায়, তারপর মন মতো ওনার খাতিরদারি  করে। কথা বলার সময় অহনা যতটা পারে শরীরে ঢেউ তুলে  অরণ্যকে উসকানোর চেষ্টা করছে।

"ওইদিনের মতো মানে? "

"মানে আবার কী? ওইদিন যেমন করে কিস করলে আই ওয়ান্ট দ্যাট টাইপ অফ লাভ অ্যান্ড কেয়ার ফ্রম ইউ," অহনার কথায় মাথা ভনভন করতে লাগল অরণ্যর। বলে কী এই মেয়ে, কিস!
নিঝুম শুনলে এবার কচুকাটা করবে ওকে, তালাকও দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু অহনার হাত থেকে এখন বাচঁবে কী করে ও?

অরণ্য চোখ বন্ধ করে মনের আয়নায় নিঝুমের ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মুখটাকে আঁকল আবার। সেখানে চুলের নতুন হেয়ার কাট নেই, কুমারী মুখের জৌলুশতা হ্রাস পেয়েছে কালের গর্ভে, চোখের কোলে কালি, মাঝে মাঝে কিছু চেপে ধরে শেষ নিঃশ্বাসের মতো হা করে শ্বাস নেওয়া আর পাহাড় সমান উঁচু ঢিবির মতো একটা পেট। সামনে আধশোয়া  মডেলের মতো শরীরের বাঙময়তা সেখানে অবান্তর। তবু ওর থেকে মাইল দূরে থাকা বিষন্ন মেয়েটা একা একা ওর সন্তানের ভার বহন করে চলেছে একা একা শুধু তার মনের দায়ভার থেকে। তার তুলনায় অরণ্যর পথ চলাটা কতো সহজ। এই আত্মত্যাগ কতো তুচ্ছ, কতো সাধারন। সাথে সাথে ভীষন অস্থিরতাটা কেটে গেল অরণ্যর। নিজেকে শেকলে বাঁধতে আর একটুও কষ্ট হলনা ওর। ঝুম ঝুম নিঝঝুম... ওর আত্মরক্ষার তাবিজ এখন।

"জান... আমি একটু ব্রাশ করেনি কেমন? দুপুর থেকে কেমন যেন দাঁতে শিরশির করছে।"

"ও শিওর। কিন্তু এসে আমাকে একটা লং কিসি করতে হবে। "

অরণ্য একখানা ক্লোজআপ  হাসি দিয়ে মাথা ঝাঁকাল," সাথে আমি একটু কফি করেও নিয়ে আসি, তুমি ততক্ষণে কিছু একটা গায়ে দাও। ঠান্ডা লাগলে খুব ঝামেলা হবে। "

"ওকে, তবে আমি এক গ্লাস দুধ চাই, রাতে কফি আমার স্যুট করেনা।"

"ওকে বেবি "

অরণ্য রান্নাঘরে যেয়ে একটা বোতল থেকে পানি নিয়ে আলাদা আলাদা গরম করতে দিল। ঠিকঠাক মতো দুধটা এখন কাল নাগীনিকে গেলাতে পারলে হয়। নিঝুমকে দ্রুত হাতে ফোন করতেই ওপাশ থেকে রাজকন্যার গলার স্বর শোনা গেল।

"হ্যালো..."

নিঝুম অভিমানে ফুলে আছে বোঝা যাচ্ছে।

" ঝুম তুমি খেয়েছ ?"

"তুমি ? "

"হুমম... আমি বাইরে থেকে খেয়ে আসছি, এখন কফি বানাচ্ছি, খাবো।"

"ওহ "

"তুমি খাও জান, আমার নাহলে রাতে ঘুম হবে না আর আমি তোমাকে চিটাগং ঘোরাতে নিয়ে আসলে একটা সুন্দর রেস্টুরেন্টে এনে খাওয়াবো, প্রমিস।"

" আমি না খেলে তোমার কী? আর সুন্দর রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াবা মানেটা কী? তুমি কার সাথে ঘুরতেছ এখন অরণ্য ?"

"আরে কী বলো, কারো সাথে ঘুরি না। আজকে  গ্রুপের সবাই মিলে ভাল একটা রেস্টুরেন্টে খেলাম। খাবারটা বেশ পছন্দ হলো, তাই বললাম,"বলেই অরণ্য এক হাতে কান ধরল । বউয়ের সাথে কথা বলা মানেই তো  মহাবিপদ। এদের মনে হয় মাছির মতো পুঞ্জাক্ষী থাকে... আল্লাহ। নইলে এতো দূর থেকে টের পায় কী করে ? একদম ফরসেফ দিয়ে টেনে টেনে বের করে নিয়ে আসে... একদম আজব মাইরি।

নিঝুম আরও প্রশ্ন শুরু করার আগেই ওর ফোনটা  রাখা দরকার। অরণ্য তাড়াতাড়ি বললো," ঝুম  তুমি এখন আগে খাও পাখি, আমি এখন রাখি। আমি আবার একঘন্টা পরে ফোন দিচ্ছি, কেমন।"

"ঠিক তো.. দিবা তো ফোন?"

"দিবো... তুমি এখন আগে খাও, খেয়ে বিছানায় শুয়ে আমার ওয়েট করো। আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি, ওটা করে আসছি।"

"আচ্ছা "

"আমার লক্ষী বউ... উম্ মা.. "

ওপাশ থেকে নিঝুমের মুখটা হাসিতে ভরে গেলেও অরণ্যর ফোনে আবার একটা  মেসেজ আসার শব্দ হলো 'বিপ ' সাউন্ড করে। ওটা ওপেন করতেই  মেজরের ম্যাসেজটা ভেসে উঠলো ওর ফোনের স্ক্রীনে।

"অরণ্য এসব উম্মা বাসায় যেয়ে দিয়েন, আপাতত চুলার দিকে মনযোগ দিন। পানি উথলে পড়ে গেল সমস্যা। আর দুধ বানানোর পর পাশের বোতল থেকে অল্প পানি মিক্স করবেন, ওতে ঘুমের ওষুধ মিক্স করা আছে।"

ঠং করে হাতের গরম চামচটা পায়ের পাতাতে গিয়ে পড়ল অরণ্যর... শিট। ও ভুলে গিয়েছিল পুরো বাসায় স্পাই ক্যামেরা সেট করা হয়েছে। মেজর সব দেখছেন। ওপাশ থেকে মুচকি হাসল মশিউর। অনেকদিন পর কারো এমন হতভম্ব মুখটা দেখে ভীষন হাসি পাচ্ছে ওর.... আসলে হাসতেই ভুলে গিয়েছে সে।

অহনাকে দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দিতেই লোভনীয় কায়দায় শরীরটাকে মোচড় দিয়ে  আধাশোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলো মেয়েটা। অরণ্য দ্রুত চা খাওয়ায় মনযোগ দিল। ভাবতে লাগলো কত পাপ যে জমা হচ্ছে ওর অ্যাকাউন্টে কে জানে। নিঝুম অনেক বিশ্বাস করে ওকে এখানে আসতে দিয়েছে, ঝুমের বিশ্বাসের  বিন্দুমাত্র বরখেলাফ যেন না হয় অরণ্যকে দিয়ে। আনফরচুনেটলি কিছু হয়ে গেলে ঝুম কেন, অরণ্য নিজেই আর কোনদিন ঝুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবেনা। কল্পনায়  নিঝুমের অভিমানে ভরা মুখটাকেই জোরে আকড়ে ধরলো অরণ্য নিজের বুকের মধ্যে। এতোক্ষনে শান্তি...  এখন ঝুম আছে ওর সাথে। এবার স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে পারবে অরণ্য, অহনার সাথে। ঝুমকে বুকে নিয়ে পুরো দুনিয়াই স্বপ্নের শহর লাগে ওর কাছে। নিঝুম, অরণ্যর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আবার নিঝুম  সাথে থাকলেই ওর দুর্বলতা গুলো মুহূর্তের মধ্যে কেটে যায়।

গ্লাসে একটা চুমুক দিয়েই অরণ্যকে পাশে গিয়ে বসার আহ্বান জানাল অহনা। অরণ্য অস্বস্তি নিয়ে পাশে গিয়ে বসলো, যদিও জানে দুই এক মিনিটের বেশি টিকার কথা না অহনার।

অহনা, অরণ্যর কাঁধে মাথা রাখতেই অরণ্যর শরীরটা শক্ত হয়ে গেলো। ওর ভাইটাকে কতো নির্দ্বিধায় মেরে ফেলেছে ওরা। হয়তো অরণ্যর জন্য ছিল ফাঁদটা তবু ভুল তো করেছে ওরা। ওকে না মেরে ওর ভাইকে মেরেছে জানোয়ারগুলো। পারলে এখুনি অহনার  গলাটা টিপে ধরে মেরে ফেলতো অরণ্য। বহুকষ্টে চন্ডালের মতো উঠে আসা রাগটাকে দমন করলো ও।

তিন মিনিটের মাথায় অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল অহনা। অহনার ঘুমন্ত মুখটার দিকে কিছুটা সময় অপলক চোখে তাকিয়ে থাকল অরণ্য। অয়ন কী ভয়নক এক ভালোবাসার ফাঁদে পা দিয়েছিল। সেদিন না মারলেও যেকোন সময় অয়নকে মারতে একটুও পিছপা হতোনা এই ছলনাময়ী নারী। আর তার জন্য স্বপ্নের বাসর সাজাচ্ছিল বোকা ছেলেটা।

হঠৎ করে  ঘুমের মাঝেই অরণ্যর কাঁধের কাছে নাক ঘষলো অহনা। কাঁধটা দ্রুত নেড়েচেড়ে বসলো অরণ্য।

হুট করেই একটা কাল্পনিক দৃশ্য উঁকি দিয়ে গেলো অরণ্যর মাথায়।  মুহূর্তেই চোয়ালজোড়া শক্ত হয়ে গেল ওর। ঠিক এভাবে নিঝুম অন্য কোন পুরুষের সাথে একরুমে... মনে হতেই খুনের একটা তীব্র ইচ্ছা ভর করলো ওর উপর। নিজের অজান্তেই হাতের কাপটা এতো জোরে আকড়ে ধরলো অরণ্য যে হাত দুটো কাপের গরমে লালচে রঙ ধরলো।

অহনাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর মাথার নিচে বালিশ গুঁজে দিল অরণ্য। গায়ের উপর পাতলা চাদরটা টেনে দিল। দেখে যেন মনে হয় একশ ভাগ কেয়ার করেছে অয়ন ওর প্রতি। এরপর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করল..অহনার ঘুমন্ত শরীরের নিরবিচ্ছিন্ন শ্বাস প্রশ্বাস লক্ষ্য করল। ওষুধে কাজ হয়েছে। ভিতর থেকে দরজা লক করে পাশের রুমে এসে ঢুকল অরণ্য।

নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দুটো চেয়ারটা পাতল দরজার একপাশে, যেন দরজা খুলে হুট করে কেউ ঢুকলে খালি বিছানা দেখে ভড়কে যায়। এরপর একটা চেয়ারে বসে দ্বিতীয় চেয়ারটায় পা তুলে দিল অরণ্য। বন্দুকটা রাখল নিজের হাতের কাছেই। এরপর মেজর মশিউরকে কল করে ওর রুমের স্পাই ক্যামেরাটা সকাল পর্যন্ত বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাল। প্রথমে হবেনা.... হবেনা করেও শেষ পর্যন্ত ওর অনুরোধ  মেনে নিলেন মশিউর। তবে এটা একটা নীতিমালা বিরুদ্ধ কাজ কথাটা অরণ্যকে স্মরণ করাতে ভুলল না মশিউর। যে কোন মূহুর্তে বিপদ আসতে পারে... অহনা একটা ওৎ পেতে থাকা বিপদ ওদের সবার জন্য এটা মাথায় রেখে... সকাল থেকেই আবার মনিটরিং  করা শুরু হবে বলেই  কানেকশন ডিসকানেক্ট করলেন মশিউর।

উফফ্.... দীর্ঘ একটা শ্বাস ছাড়ল অরণ্য। বউটাকে কালকে মানুষের সামনে একটাও আদর দেয় নাই ও ফোনে আর আজ এই বুড়ো খাটাশটা ওকে জ্বালাচ্ছে.. সমানে। ঝুমকে ফোন দিতেই ওপাশ থেকে কথার ফুলঝুরি ছুটলো মহারানীর।

"এই শোনো, তুমি আমাদের কোথায় খাওয়াবে বলোতো, নামটা এক্ষুনি  লিখে রাখব।  নাহলে তুমি ঠিক পরে নাম ভুলে যাবা।"

"অ্যামব্রসিয়া"

"বাবা একদম দেবতাদের খাবার খেয়ে ফেলেছ, সাক্ষাৎ অমৃত।"

"মানে? "

"মানে........ অ্যাম্ব্রোসিয়া অর্থ দি ফুড অফ গড তাই বললাম আরকি। যাক অ্যাম্ব্রোসিয়াতে খাওয়াও আর  না খাওয়াও  তুমি দীর্ঘজীবি হলেই আমি খুশি। । "

"ঝুম  আই লাভ ইউ বউ....  আমার  এখন  তোমাকে খুব দেখতে  ইচ্ছে হচ্ছে।"

"কী ব্যাপার অরণ্য, তোমার কী জ্বর জ্বর লাগছে? মাথা ব্যাথা? কপালটা কী বেশি গরম?

"ফান না বউ, আমার সত্যি সত্যি মন খারাপ। আমার তোমার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।"

" বোকা নাকি তুমি? আমি তো এখন তোমার বুকের মধ্যেই শুয়ে আছি অরণ্য, আর আমার বুকে একটা ছোট্ট অরণ্যও ঘুমিয়ে আছে। আর ও কী বলছে জানো? বলছে মা, বাবইকে বলো একটু দূরে সরে শুতে। বাবাই এতো বার করে তোমার পেটে হাত দেয় যে আমার মাথায় ব্যাথা করে। "

"দেখছো ঝুম তোমার শয়তান পোলা এখন থেকেই আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেছে। ওরে ভাল হয়ে যাইতে বলো, নাহলে কিন্তু আমি ছেলে বলে মাফ করবো না।"

"আল্লাহ এরকম হিংসুটে বাবাও হয় আমার জানা ছিল না।"

"জানবা কেমনে? তোমরা দুই তো বোন নিজেদের বাবাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাও। উনি তোমাদের বাবা না তোমরা উনার মা বোঝা দায়।"

"আচ্ছা.... আচ্ছা হয়েছে হয়েছে....  এত বোঝো  তো নিজের বাবা - মার কষ্টটাও একটু বোঝ। ওনাদের কোথাও হানিমুন করতে পাঠাও। "

"ওয়াও ঝুম... এতো নাইস আইডিয়া তোমার মাথায় আসল কী করে? এই বয়সে হানিমুনে পাঠিয়ে আব্বুর হাতে  আমার ধোলাই খাওয়ার ব্যবস্থা করতে চাইছ তুমি!"

"আমার আইডিয়া সব সময়ই নাইস হয় আর আমার কথা মতো কাজ করলে জীবনেও ধোলাই খাবে না এই গ্যারান্টি আমি তোমাকে দিতে পারি। খালি মুখেই যতো মা... মা করো। এতো বয়স হয়ে গেলো এখনও কোথাও শান্তি করে ঘুরতে পারেছেন ওনারা, সারাক্ষণই খালি ছেলেদের কথা ভাবেন আর মন খারাপ করেন।"

নিঝুমের এই কথাটা মন্দ লাগলনা অরণ্যর। সত্যি ওরা দুই ভাই বাবা-মাকে একটু স্বস্তিও দিতে পারেনি এখন পর্যন্ত। কিন্তু তাই বলে দুজনকে ছেড়ে দিয়ে হানিমুন করতে পাঠালে অরণ্যর নিজেরই ঘুম হারাম হবে তাদের দুশ্চিন্তায়। তারচেয়ে বরং সবাই মিলে একটা ট্যাুর দিবে ওরা যদি বাচ্চাটা সুস্থ মতো পৃথিবীর মুখ দেখে। কিন্তু ওরা ঘুরবে কোথায়?

নিঝুমকে প্রশ্নটা করতেই ম্যাজিক হলো। গুগল ঘেটে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত যতো টুরিস্ট স্পট আছে তার ফিরিস্তি দেয়া শুরু করল বোকা বউটা। আর অরণ্য? সে নিঝুমের কথার উত্তরে হু হা করতে করতে কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো নিজেও টের  পেলনা।

চলবে...

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro