Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৫ম পর্ব


"আশু তুই ওনাদের নিয়ে যা আমি আসছি," নিঝুম আশুর কানে কানে বলল।

"কিন্তু আপু " আয়শা হেসে ফেলে।
" ভাইয়া তোর রুমে বসে একা একা করবেটা কি?"

"আরে তুই যা না আমি আসছি।"

নিঝুমের পিড়াপীড়িতে আয়শা শেষ পর্যন্ত অয়ন আর অরণ্যকে উপরে নিয়ে গেল।

নিঝুম তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল। এখানে থাকলে কিছু সময় অন্তত বাঁচা যাবে ওদের শয়তানির হাত থেকে। অরণ্য একা থাকলে যতটা মারাত্মক, দুই ভাই একসাথে থাকলে তারচেয়ে বেশি বিপদজনক। দুটো শরীর কিন্তু মাথা মনে হয় একটা। এক্কেবারে গরুর শিংয়ের মতো। এই জন্য একসাথে হলেই এদের শক্তি বেড়ে যায়... আর ওদের শয়তানিও।

"কি রে নিঝু তুই এখানে রান্নাঘরে কি করিস?" রুমানা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন। মেয়ে এমন সময় রান্নাঘরের কোনায় এসে দাঁড়িয়ে আছে কেন?

"না মানে.. পানি.. মানে..." নিঝুম কি বলবে বুঝতে পারলনা। আজ অরণ্যকে দেখে ওর নার্ভাসনেস বেড়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হবে তো? নিঝুম তাড়াতাড়ি কিচেনের কাউন্টারটা আঁকড়ে ধরল। বুঝতে পারছেনা, ওর তো ভীষন খুশি হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা বাদ দিয়ে কেন যেন অরণ্য মাথা নিচু করে হাসছে.... এই দৃশ্য বার বার মনে পড়ছে আর বুক মোচড় দিয়ে দিয়ে উঠছে। এই লোক ওকে ফেলে হারিয়ে যাবে না তো?

"পানি কি ওরা কেউ খেতে চেয়েছে নিঝু?" রুমানা ট্রেতে খাবার রাখতে গিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন।

"হ্যাঁ মানে, ওই অয়ন, না মানে.. উনি.. মানে, " নিঝুমের উত্তর এলোমেলো হয়ে গেলো মায়ের জেরার মুখে।

রুমানা মাথা নাড়লেন... এই মেয়ে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এই মেয়ে ভবিষ্যতে সংসার করে খেতে পারবে তো? হতাশ সুরে বললেন, " দুই গ্লাস পানি ট্রেতে করে নিয়ে যা ওদের জন্য।"

" আচ্ছা। "

মায়ের কথায় লক্ষী মেয়ের মতো মাথা ঝাকাল নিঝুম। তারপর দুরুদুরু বুকে পা টিপে টিপে উপরে নিজের ঘরে এল। না কারো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। নিজের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেমে, বড় করে একটা দম নিল নিঝুম, তারপর সোজা ঘরে ঢুকল। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে রুমটা ভীষন রকম ফাঁকা। মনটা দুম করে ভীষণ খারাপ হয়ে গেল নিঝুমের।

ওরা বোধহয় আশুর রুম দেখতে চলে গিয়েছে। তারপরও নিঝুম বারান্দায় গিয়ে ভাল করে একবার সবটা দেখল। না বারান্দা দিয়ে বাসার নিচটাও পুরো দেখা যাচ্ছে, সেখানেও কেউ নেই। কোথায় গেল?

আশু আর অয়ন না হয় গেল কিন্তু অরণ্য তো থাকতে পারত... মনটা ভার হয়ে এল নিঝুমের। ও সাথে আসেনি বলেই থাকা যাবে না? কিন্তু ওরা গেল কোথায়? একদম সাড়াশব্দ নেই। মনে হয় ও উপরে আসার আগেই ওরা নিচে নেমে গিয়েছে। হাতের ট্রেটা টেবিলে রেখে আয়নায় নিজেকে দেখল আবার নিঝুম। না একেবারে খারাপ লাগছেনা। যদিও অরণ্যর পাশে ওর রংটা একটু চাপাই লাগে কিন্তু আজকে এই গাঢ় নীল রঙের জন্য ওর রংটা উজ্জ্বল শ্যামলা থেকে বেশ ফর্সাই লাগছে।

দরজাটা বন্ধ করে শাড়ির কুঁচিগুলো আবার ঠিক করল নিঝুম। এরপর আঁচলের ভাঁজ খুলে মেলে পরতে গেল। ওভাবে কেমন টেনে ধরছিল শাড়িটা, ওর অস্বস্তি লাগছিল গলার কাছটায়। শাড়ি পরার অভ্যাস আগে থেকেই একটু আধটু আছে ওর, কলেজ থেকেই কোনো ফাংশন হলে পরে কিন্তু আশু ওর চেয়ে ভালো শাড়ি হ্যান্ডেল করতে পারে।

হঠাৎ দরজায় খটখট শব্দ শুনে চমকে তাকাল নিঝুম।

"এই আপু, তাড়াতাড়ি নিচে আয়। আম্মু ডাকছে।"

আয়শার গলা শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল নিঝুম, হঠাত শব্দে ভয় পেয়ে গিয়েছিল ও।

"আসছি তুই যা।"

তড়িঘড়ি করে সেইফটিপিন লাগাতে গিয়ে বার বার বেকায়দা জায়গায় আটকাচ্ছিল ওটা, মেজাজ গরম হচ্ছিল খুব নিঝুমের। সাথে সুন্দর করে হাত খোঁপা করেছিল একটা, ওটাও খুলে গেল। রাগে কান্না এসে গেল নিঝুমের। সব এক্ষুণি হওয়া লাগবে। তাড়াতাড়ি আঁচল রেখে খোঁপা করতে গেল ও.. কিন্তু খুট করে একটা শব্দ হতেই পাই করে ঘুরে দাঁড়াল নিঝুম।

অরণ্য ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শ্বাস নিতে ভুলে গেল। ওর সামনে দুই বা তিন হাত দূরে নিঝুম বুকের কাপড় ফেলে দাঁড়িয়ে আছে। ওর গাঢ় নীল থ্রী-কোয়ার্টার ব্লাউজটা কোমর অব্দি নামান। ব্লাউজের আশপাশটায় মনে হচ্ছে আগুন জ্বলছে।অরণ্যর মনে হলো ওর চোখ সেই আগুনে জ্বলছে। অজান্তেই ঢোক গিলল অরণ্য। চোখদুটো ওর সুদৃশ্য পর্বতচূড়ায় গ্লুর মতো আটকে গেছে। ঘটনাটা কয়েক সেকেন্ডের। পরের মুহুর্তেই দুজনে ঘুরে দাঁড়াল।

নিঝুম আগে কোনোদিন এরকম খারাপ পরিস্থিতিতে নিজেকে ফেলেনি। লজ্জায় ওর হাত পা থরথর করে কাঁপছিল। এরকম ভয়নক লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে মানুষ কি করে? ওর মাথা মনে হয় ফ্রীজ হয়ে গেছে। কি হবে এখন?
অরণ্যতো খুব খারাপ মেয়ে ভাববে ওকে এখন।

হঠাত শব্দ করে ফুপিয়ে কেঁদে ফেলল নিঝুম।

অরণ্য তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে যেতে গিয়ে থমকে দাড়াল, "ঝুম কাঁদছে কেন?"

মাথায় হাতের ছোঁয়া পেয়ে ঘুরে তাকাল নিঝুম। আঁচলটা ততক্ষণে বুকের সাথে ভালো করে আঁকড়ে নিয়েছে ও। বুকটা হাপরের মতো লাফাচ্ছে। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে ফোঁটায় ফোঁটায়।

"কি হয়েছে.. তুমি কাঁদছ কেন?" অরণ্য আবারো জিজ্ঞেস করল।" ঝুম আমি কিছু বলছি।"

"আমি জানতাম না, বিশ্বাস করুন, "নিঝুমের কান্নার বেগ আরও বাড়ল। " আমি দরজা আ....আটকে শাড়ির আঁচল ঠিক করছিলাম। আমি বুঝিনি আপনি ওয়াশরুমে।আ.. আমি জানতাম না। আমি এত খারাপ মেয়ে না।"

অরণ্য প্রথমে বুঝতে পারেনি নিঝুমের কথা। বোঝার সাথে সাথে নিঝুমকে বুকের মধ্যে টেনে নিল।" অ্যাই বোকা মেয়ে, এখানে খারাপ মেয়ে ভাল মেয়ের কি আছে?"

"আমি জানতাম না বিশ্বাস করুন, " নিঝুম তখনও ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। অরণ্য কতো খারাপ ভাবলো ওকে।

" তুমি কি পাগল ঝুম? এটা একটা দুর্ঘটনা। আর আমরা দুজনের কেউই এটা ইচ্ছে করে তো করিনি। না তুমি জানতে, আর না আমি। সব জিনিসের কি ব্যাখ্যা হয় বলো?" অরণ্য
নিঝুমের মুখের উপর থেকে খোলা চুলগুলো সরিয়ে দিল। মেয়েটার চোখের কাজল গুলো লেপ্টে একাকার হয়ে গেছে, কাঁদুনি বুড়ি......একটা।

"আপনি সত্যি আমায় খারাপ মেয়ে ভাবেন নি? " নিঝুম নিজের মুখটা এতক্ষণে উপরে তুলল। অরণ্য খুব মনযোগ দিয়ে নিঝুমের চোখ গুলো দেখছিল। ওই চোখজোড়াতে কেমন একটা নিষ্পাপ ভাব আছে। কালো, গভীর... অনেক গভীর। অরণ্য মাথা নেড়ে না বলল। তারপর বললো....

" তোমার এই চোখদুটো আমায় দেবে?"

অরণ্যর প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল নিঝুম। কি বলে এই লোক, চোখ কি করে দেওয়া যায়?

"বুঝলাম না।" নিঝুম বুঝতে না পেরে বলেই ফেলল।

অরণ্য নিঝুমের উত্তর শুনে ওর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকল আরো কিছু সময়। তারপর অসম্ভব সাহসের একটা কাজ করে ফেলল। নিঝুমের মুখটা খুব কাছে এনে ওর চোখদুটোর উপর আলতো করে নিজের ঠোঁটটা ছুঁইয়ে দিল, তারপর কপালে চেপে ধরলো। নিঝুমের পুরো শরীরটা শিউরে উঠছিল টের পাচ্ছিল অরণ্য।

নিঝুমের মনে হচ্ছিল ও আর বাঁচবে না বেশিক্ষণ। চোখের পানি ওর খরস্রোতা নদীর মত চিবুক ছুঁয়ে টপটপ করে পড়ছিল। নিঝুমের কাঁদতে খুব ভাল লাগছিল। এই যে দুটো হাত ওকে সবলে আঁকড়ে রেখেছে। সারাজীবন এভাবে ওকে ধরে থাকবে তো? হারিয়ে যাবে নাতো ওর চোখে আবীর ছড়িয়ে? নিজের অজান্তেই অরণ্যর পাঞ্জাবির বোতামগুলি মুঠি করে ধরল নিঝুম। ওর হারাবার খুব ভয়। অরণ্য তখনও ওর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।

"তুমি এত মিষ্টি কেন বলত বউ ? এত মিষ্টি হলে আমিতো ডায়বেটিস হয়েই মরে যাব।" অরণ্য, নিঝুমের কানে মুখ ঠেকিয়ে বলল। ওর ঠোঁট যখন নিঝুমের কান ছুঁয়ে যাচ্ছিল, ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস যখন নিঝুমের ঘাড়ের কাছটা পুড়িয়ে দিচ্ছিল, নিঝুম নিজের সম্পূর্ণ মুখটা অরণ্যর বুকে ডুবিয়ে দিল।

একটু আগেও নিঝুমের চোখে পানি ছিল। এখনও আছে। পার্থক্য এইটুকু যে, তখন ও ভয়ে কাঁদছিল আর এখন আনন্দে কাঁদছে। কিন্তু আনন্দ কেন হচ্ছে জানে না নিঝুম। অরণ্য যতবার ওকে বউ বলছে, নিঝুমের ততবার আনন্দে মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।

"আমি যাবো এখন?" অরণ্য প্রশ্ন করার সাথে সাথে ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাড়াল নিঝুম। ইশশ লোকটা যে কি ভাববে ওকে.... একদম বেহায়া একটা মেয়ে।

অরণ্য আবারও একই প্রশ্ন করল। এবার মাথা নিচু করে সায় দিল নিঝুম। ওকে সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়েই লক খুলে অরণ্য বের হয়ে গেল রুম থেকে। অরণ্য যেতেই দু'হাতে মুখ ঢাকল নিঝুম। নিজের কপালে হাতটা ছোঁয়াল। একদিনে লোকটা ওর মনের এত কাছে এল কি করে?

কি একটা বোকার মত কাজ করেছে নিঝুম আজ। একবার ওয়াশরুমটা অবশ্যই দেখা উচিত ছিল ওর। আর...আর লোকটাই বা কি? এরকম করে কারও ওয়াশরুমে ঢোকে কেউ? তাও আবার ঘরের সাথে লাগোয়া। ওয়াশরুমের কথা মনে হতেই হঠাৎ এলার্ম দেওয়া ঘড়ির মত লাফ দিল ও। দৌড়ে ওয়াশরুমে যেয়ে তাকিয়ে দেখল, না সব ঠিক ঠাক আছে ।

নিঝুম যখন নিচে নামল ততক্ষণে সবাই ডাইনিং রুমে খাবার খেতে বসে গেছে। ওকে দেখে বড় ফুপি দিলারা বেশ রাগ করলেন। জানতে চাইলেন ও এতক্ষন কোথায় হাওয়া হয়েছিল?

নিঝুম আর অরণ্যর দিকে তাকায়নি। তখন অমন করে লোকটাকে জড়িয়ে ধরলেও এখন বড্ড লজ্জা লাগছে। আসলে ঘটনার আকস্মিকতায় ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি।

আসমা বেগম চলে যাবার সময় নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন। রায়হান সাহেবও নিঝুমের পুরো পরিবারকে আগামী শুক্রবার ওনাদের বাসায় দাওয়াত করলেন। আসলে বড়ো বোন দিলারার ভরসাতেই শাহেদ এই বিয়েতে এক কথায় রাজি হয়েছেন। তা না হলে আদরের মেয়ের বিয়েতে মত দিতে তিনি আরও সময় নিতেন।

অরণ্য চলে যাওয়ার আগে কি কি যেন ফুসুর ফুসুর করল আশুর সাথে। নিঝুম দেখেও না দেখার ভান করল। দূর থেকে সব লক্ষ্য করেছে ও, কিন্তু খুব বেশি কাছে যায়নি। আজ দুজনেই উল্টোপাল্টা কাজ খুব বেশি করে ফেলেছে। এতটা এগুনো মোটেই ঠিক হয়নি। শুধু একটা আংটি পরানোতেই একেবারে চুমু খাওয়া কি ঠিক?

"বেহায়া হয়ে যাচ্ছিস নিঝুম," নিজেই নিজের কানটা একটু টেনে দিল ও। কিন্তু ওকি ইচ্ছা করে করেছে নাকি? কিন্তু ওতো ঠেকাওনি। আলতো করে আবার কপালটায় হাত ছোঁয়ায় নিঝুম।মুহূর্তটা মনে হতেই মিষ্টি একটা হাসি ছড়িয়ে পড়ে ওর চোখেমুখে।

কাপড় পাল্টে নিজের বিছানায় এসে শোয় নিঝুম। অরণ্যরা না আসা অব্দি কি টেনশন যে কাজ করছিল। সত্যিই আসবে তো? চোখের সামনে নিজের হাতটা মেলে ধরে সদ্য পাওয়া আংটিটা বার বার দেখছিল নিঝুম। একদম ছোট্ট একটা ফুলের মতো নকশা আংটিটায়। কিন্তু নকশাটা খুব সুন্দর। আস্তে করে একটা চুমু খেল নিঝুম আংটিটাতে। ওর অমূল্য সম্পত্তি। বুকের কাছটায় কেমন দলা পাকিয়ে আসে নিঝুমের। চোখটা কেন ভিজে আসছে বার বার? এ কেমন সম্পর্ক? একদম কাছের আবার কাছের না। অরণ্য কাছে আসলে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে আর দূরে চলে যেতে চাইলে সহ্য হয়না। দূর ছাই..... চোখ বন্ধ করলেও ওই লোক। নিঝুম পারলে রবার দিয়ে ওর ছবিটা এখনকার জন্য মুছে দিত ওর মন থেকে। ওই লোক ওকে শান্তিতে ঘুমাতেও দিবে না নাকি?

চোখ বন্ধ করে বালিশটা কেবল চোখের উপর দিতে যাচ্ছিল, আর সাথে সাথেই ওর ফোনের রিংটোনটা বেজে উঠলো। আননোন নাম্বার। ফোনটা ধরবে কি ধরবে না করতে করতেই ফোনটা কেটে গেল। যা বাবা...। মোবাইল ফোনটা সাইড টেবিলে রেখে শুতে যাচ্ছিল নিঝুম, ফোনটা আবার বেজে উঠল।

এবার ফোনটা ধরল নিঝুম। অরণ্য না তো?

কিন্তু ধরেই হেসে ফেলল নিঝুম, ওপাশে অয়ন। হাসছে ফাজিলটা।

" ঝুমু ভাবি শোনো.. আমিও তোমাকে একটা নাম দিলাম ভালোবেসে। "

নিঝুম শুনতে পাচ্ছে ওপাশ থেকে অরণ্য বলছে,
"খবরদার অয়ন, ঝুমকে ওই নাম ধরে ডাকলে আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। এক্ষুনি ওই নাম উইথড্র কর। "

"করব না, আমার ভাবিকে আমি যে নামে ইচ্ছা ডাকব তাতে তোর কি?" দুভাইয়ের কথায় হাসি চেপে রাখা দায়।

"না ঝুম আমার বউ, তুই শুধু ভাবি ডাকবি। না হলে তোর মোবাইল কেনার টাকা দিলাম না, বুঝিছ কিন্তু।"

ওদের কথা শুনে হাসিতে নিঝুমের দম আটকে আসছিল। এরা দুটো চাকরি করে? তাও আবার অফিসার পোস্টে? বিশ্বাস করা যায়! পুরাই দুষ্ট বাচ্চা।

"ভাবি আমি আপাতত রাখছি। ভাইয়া সত্যিই ক্ষেপেছে, নাও তোমার মিস্টারকে সামলাও।"

অয়নের কথায় নিঝুমের পা থকে মাথা পর্যন্ত লজ্জায় লাল হয়ে গেল। বউ বলা কি কম ছিল, যে এখন আবার মিস্টার?

"হ্যালো ঝুম, জান কি করো? " নিঝুমের মনে হলো ও একশ তলার উপর থেকে পড়ল। এই লোক কি? এতো টারবো ইঞ্জিনের গতিতে এগুচ্ছে। জান! নিঝুম কি উত্তর দিবে বুঝতে পারেনা।

"ঝুম?" এবার নরম গলায় ডাকল অরণ্য।

"জি বিছানায় বসে আছি, " নিঝুম কোনমতে উত্তর দেয়।

"আর বসে বসে কি করো? আমাকে ভাব?" অরণ্যর গলায় প্রচ্ছন্ন কৌতুক।

কি ভয়ংকর এই ছেলে! নিঝুম সাথে সাথে উত্তর দেয়, " না চুল বাঁধছিলাম, ঘুমাবো।"

"ওহ, তুমি এত আগে শুয়ে পড়?" অরণ্যর স্বরে মনে হয়ে হতাশা ঝরে পড়ল।

"হুমম।"

এছাড়া আর কি উত্তর দিবে... নিঝুম বুঝতে পারলনা।

"ঝুম একটা কথা বলি... রাগ করবে না তো? প্লিজ।" অরণ্যর গলায় সত্যিকারের আকুতি। এই কন্ঠ শুনলে নিঝুমের এখন বেসামাল লাগছে, শ্বাস নিতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছে।

"আপনি বলুন," কোনোমতে উত্তর দেয় নিঝুম।

"তোমার কপালে একটা চুমু দেই? " অরণ্যর কথায় নিঝুম কোন উত্তর দিতে পারেনা। এমনিতেই ওর পেটের ভেতর একশটা প্রজাপতি উড়োউড়ি করছে, তার মধ্যে যদি বলে চুমু খাবে, কেমন লাগে?

পর মুহূর্তেই অরণ্য নিজেই আবার বলে," না থাক।তুমি ঘুমাও।"

"জি " নিঝুম মাথা দোলায়।

"বাই " অরণ্যর স্বরটা একটু বিষন্ন।

"বাই " ফোনটা কেটে যেতেই রাজ্যের যত মন খারাপ যেন নিঝুমের মনে এসে ভর করে। কি দরকার ছিল ওই কথা বলার। নিজেই লোভ দেখাল আবার নিজেই মানাও করে দিল। পচা লোক একটা। ওকে জিজ্ঞেসই বা কেন করে সে? নিঝুম কি বেহায়া মেয়ে নাকি? ও কি করে বলবে যে, এই দেখো আমি চোখ বুজলাম। শুধু কপালে না, তখনকার মতো আদর করে চোখেও দুটোতেও একটু আদরের টিপ একে দাও। একদম পচা একটা ছেলে... ও কি করে ঘুমায় এখন?

বিছানায় কতক্ষন এপাশ ওপাশ করে শেষে উঠে বসল নিঝুম। মোবাইলে টাইম দেখল। একবার রিং করে দেখবে? যদি অরণ্য ধরে তাহলে বলবে একাই চাপ লেগে কল হয়ে গিয়েছে। একবার করতেও গেল কিন্তু শেষে বাদ দিল। ব্যাড আইডিয়া নিঝু। ওই ছেলে শিওর ধরে ফেলবে... ভীষন ত্যাদর।

বিছানা থেকে উঠে পানি খেল নিঝুম, তারপর লাইট অফ করে এসে শুয়ে পড়ল। জোর করে হলেও ওকে ঘুমাতে হবে, না হলে ডার্ক সার্কেল হবে। ঘুমের প্রবলেম হলেই ওর এই সমস্যা হয়।

চোখ হালকা লেগেও এসেছিল নিঝুমের কিন্তু মোবাইলের রিং শুনে ঘুমটা চলে গেল।

অরণ্য!

"হ্যালো?" ও প্রান্ত থেকে অরণ্যর খুশি খুশি স্বরটা ভেসে আসে।

"বলুন।"

"কি করো? "

"ঘুমাচ্ছিলাম।"

"সত্যি? "

"হুম।"

"আচ্ছা তাহলে ঘুমাও।"

"জি।"

"ঝুম প্লিজ একটা কথা।"

"জি " একটা হাই তুলল নিঝুম। ওর এখন সত্যি ঘুম পাচ্ছে।

"ঝুম এক সেকেন্ডের জন্য তোমার জানালার সামনে একটু আসবে?"

অরণ্যর কথায় লাফ দিয়ে উঠে বসল নিঝুম বিছানায়। জানালার সামনে মানে!

"আপনি কোথায়? " গলা প্রায় খাদে নামিয়ে জানতে চায় নিঝুম।

"তোমার রুমের বাম দিকের জানালার সামনে।"

নিঝুম তাড়াতাড়ি জানালা খুলে দিতেই দমকা হাওয়ায় ওর জানালার পর্দাগুলো সব নাচতে শুরু করে। নিঝুম তাকিয়ে দেখে রাস্তার ওপাশে লাইটপোস্টের নিচে গাড়ি থামিয়ে রেখেছে অরণ্য। নিঝুম এতে খুশি হবে না রাগ, বুঝতে পারেনা। এত রাতে এগুলো করার কোনো মানে হয়?

"আপনি কি পাগল ? এত রাতে...?"

"কি করব ঘুম আসছিলনা। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল।"

নিঝুম, অরণ্যর এরকম অকপট উত্তরে হেসে ফেলল। লোকটা কি? সারাক্ষণ ওকে জ্বালাবে।

"আচ্ছা এখন তো দেখা শেষ, এখন বাসায় যান।"

"হ্যাঁ যাব। তোমার দেখা শেষ?"

"মানে!আমি কখন দেখতে চাইলাম?"

"মুখে বলনি, কিন্তু আমি জানি। আমার বউকে আমি চিনি।"

নিঝুম পুরো হা। এই লোক ওকে পাগল বানাবে..।

"কি হলো..... অত্তো বড়ো হা করতে হবে না। বেশিক্ষণ হা করে থাকলে কিন্তু আমি মুখ বন্ধ করতে উপরে চলে আসব। তখন কিন্তু আমার কোনো দোষ দিতে পারবে না।"

এরকম হুমকি পেয়ে নিঝুম সাথে সাথে মুখ বন্ধ করল।

রাত প্রায় তিনটা বাজে, আর এই ছেলে একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। যতই পুলিশের লোক হোক...... রাতের অন্ধকারে বিপদ ঘটতে সময় লাগেনা। আর তার ওপর একা।

"আপনি প্লিজ বাসায় যান," নিঝুম এবার সিরিয়াসলি অনুরোধ করল।

"যাচ্ছি। আমারও একটা অনুরোধ আছে।" অরণ্য যে মিটমিট করে হাসছে দূর থেকেও সেটা নিঝুম কথা বলে বেশ বুঝতে পারছে।

"আবার কি? "

"কাল আমার সাথে একটু বাইরে যাবে?"

"বাইরে? "

" হ্যাঁ, এখন তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।"

" কিন্তু আব্বু, আম্মু?"

"আমি তোমাকে তোমার আম্মু, আব্বুর কাছ থেকে পারমিশন নিয়েই তারপর নিয়ে যাব।"

"আচ্ছা," স্বস্তির হাসি হাসে নিঝুম।

"বাই। "

"বাই।"

"ওয়েট.... ওয়েট, এবার একটা চুমু দেই? " এরপরই একটা চুমুর শব্দ শোনা গেল নিঝুমের স্পিকারে। নিঝুম চোখ বন্ধ করে ফেলল। অজান্তেই জোরে বলে ফেলল, ফাজিল।

"যাক, জি এর বাইরে কিছু তো বললে। এই বা কম কি?" অরণ্য হাসছে। নিজের জিভ কাটে নিঝুম... ইশশ স্লিপ অফ টাং।

"ওকে এবার ফাইনালি বাই।"

নিচ থেকে হাত নাড়ল অরণ্য। নিঝুমও হাতটা নেড়েই ফেললো অরণ্যর সাথে, এখন কেউ দেখে না ফেললেই হয়।

"তাহলে যাই?"

"হুমম...."

"ওকে তুমি ঘুমাও।"

" জি।"

"ঝুম... "

"হু...."

"আই লাভ ইউ....।"

নিঝুম একবার অরণ্যর দিকে তাকিয়েই মুখ নিচু করে ফেলে। অরণ্য নিঝুমকে চাঁদের আলোয় মোটামুটি দেখতে পাচ্ছে। কাছে থাকলে মুখটা আরেকটু ভাল করে দেখতে পেত। নিঝুমের মুখ এখন একটা হাওয়াই মিঠাই হয়ে আছে নিশ্চই। ওর হাওয়াই মিঠাই।

"ঝুম..... "

"হুু...."

"ডু ইউ লাভ মি? "

"Do you love me like I love you?
Do you breathe me like I breathe you?
Do you want me like I want you?
Do you feel the things I feel for you?"

চলবে.......

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro