Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৪৪

নিঝুম মনযোগের সাথে বসে বসে একটা কাঁথা সেলাই করার চেষ্টা করছে। এটা আসমা বেগম ওর হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন আসার সময়। উনি নিজে দুই তিনটা করছেন, তার থেকে একটা ওকে দিয়েছেন যেন অয়নের সাথে বেড়াতে এসে মুড অফ হলে এটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে পারে নিঝুম। কিন্তু শাশুড়ি যদি ঘুনাক্ষরেও তার বড়ো ছেলের কুকীর্তি টের পেত। অবসর দূরে থাক নিঝুমের নাওয়া খাওয়ার অবস্থা বেহাল করে দিচ্ছে অরণ্য। আধাঘন্টায় দশটা ফোঁড়ও ও ঠিক মতো দিতে পারেনি। সমানে ওর পিঠের নিচে হাত দিয়ে খোঁচাখুচি করে চলেছে অরণ্য পাহাড় সমান ধৈর্য নিয়ে।

"অরণ্য হাত সরাও প্লিজ.."

"আরে আমার ঠান্ডা লাগছে।"

নিঝুমের মনে হলো কটকট করে বাজ পড়ার মতো শব্দ করে ফাজিলটার মাথার উপর পড়ে। ঠান্ডায় বলে সে জমে যাচ্ছে... অথচ রুমের ভিতরের এসি বহাল তবিয়তে চলছে।

"আমার হাতে কিন্তু সুঁই, ফুটলে সব দোষ তোমার।"

"আমিতো সেজন্যই তোমাকে ওটা এখন রাখতে বলছি।"

"আর পাঁচ মিনিট করি প্লিজ, নাহলে মামনি দেখতে চাইলে খুব লজ্জা পাবো।"

"ঝুম আমি কিন্তু এখন যথেষ্ট ফ্রি আছি পরে কিন্তু চাইলেও পারবনা। তখন কিন্তু আমাকে কোন দোষ দিবা না। "

নিঝুম সাথে সাথে কাঁথাটা রেখে দিল। এখন না রাখলে দিনরাত একই কথা শোনাতে থাকবে টেপ রেকর্ডারের মতো।

"এই রাখলাম... এবার খুশি?"

অরণ্য মিটমিট করে হাসতে লাগল। নিঝুম যখন এতো সহজেই ওর কথায় পরাস্ত হয় বেশ লাগে।

"ঝুম... "

"উমম"

"আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে।"

"সন্দেহ! কী নিয়ে?"

" বলছি "

নিঝুমের পেটটা জড়িয়ে ধরে ওর হাতদুটো নিজের চুলের মাঝে ঢুকিয়ে দিল অরণ্য," আশু মনে হয় তোমার উনার উপর কাইত।"

নিঝুম মাত্রই অরণ্যর চুলগুলো আলতো মুঠিতে ধরতে যাচ্ছিল। আশুর নামটা শুনে থমকে গেল," মানে? কী বলো এসব।"

"ওকি...ওকি... হাত সরাচ্ছ কেন? আমি কোথায় তোমাকে একটু স্বামীসেবার সুযোগ দিচ্ছি আর তুমি দূরে সরে যাচ্ছ বারবার," অরণ্য নিঝুমের হাতদুটো নিয়ে পারলে হাতকড়া পড়ায় এমন ভাবে আকড়ে ধরল।

"আমি কোথাও যাচ্ছি না, কিন্তু তুমি আশুর সাথে ফাহিম ভাইকে নিয়ে এমন কথা বললে কেন? কী করেছে আশু? আর আমার উনি আবার কী কথা... তুমি ফাহিম ভাইয়ের নাম শোনার পর থেকে এমন সব বিচ্ছিরি কথা বলেই চলেছ," নিঝুম এবার সত্যি অভিমান করে ঠোঁট ফোলায়।

"আমি সত্যি বলছি... এখন হতে পারে আমার যেটা মনে হলো সেটা ভুল, কিন্তু তারপরও বলব নাইনটি এইট পারসেন্ট সম্ভাবনা আছে।"

নিঝুমের শেষের কথাটা অরণ্য গায়েই মাখল না।

"কী দেখে? " নিঝুম অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে জানতে চাইল। অরণ্যর উপর একটু রাগই হচ্ছে ওর। আশুর নামে মিথ্যা কথা বললে একদম রাম চিমটি দেবে ও অরণ্যকে আজ একটা, সব কিছু নিয়ে ফাজলামো।

"আশু তোমার ফাহিম ভাইয়ের দিকে কিভাবে ছলছল দৃষ্টিতে তাকায় খেয়াল করো তাহলেই বুঝতে পারবে... সুইটহার্ট। "

"আবার," এবার ইচ্ছে করেই অরণ্যর চুলগুলো একটু জোরের সাথে মুঠি করে ধরল নিঝুম। "আর একবার তোমার ফাহিম বললে আমিও তোমার অহনার বারোটা বাজাব।"

"উহহহ... হিংসুটি কোথাকার, দিল আমার চুল ছিড়ে।"

"আরও বলো তোমার ফাহিম।"

"না সরি.... কিন্তু আশুর কথা কিন্তু আমি এমনি এমনি বলছি না। আমার আশুকে দেখেই বারবার এই কথা মনে হচ্ছে। তুমি আশুকে একটু বাজিয়ে দেখতে পারো ওটা আশুর ফাহিম কিনা। "

অরণ্যর কথায় এবার একটু প্যাঁচ খেল নিঝুম। সত্যি কী আশু,ফাহিম ভাইয়ের প্রতি দুর্বল? কিন্তু ফাহিম ভাই কী রাজি হবেন? মনটা খারাপ হয়ে গেল নিঝুমের। আশুকে কষ্ট পেতে দেখলে ও সহ্য করবে কী করে... একটা মাত্র বোন ওর।

"এতো ভেবোনা... আশুকে সরাসরি জিজ্ঞেস করো উত্তর পেয়ে যাবে, আর যদি আমার কথা ঠিক হয়তো আগামী দুই দিন আমার সব কথা তোমাকে অক্ষরে অক্ষরে শুনতে হবে," গুরুগম্ভীর আবদার অরণ্যর।

চোখ কপালে উঠলো নিঝুমের। কত্ত বড়ো পাঁজি,"আর যদি তোমার সন্দেহ মিথ্যা হয় তখন? "

"তাহলে সামনের এক সপ্তাহের জন্য অরণ্য তোমার... নো কনফিউশন, যা বলবে এক ইঞ্চি এদিক ওদিক হবেনা।"

নিঝুম একটু ঝিম মেরে পড়ে রইল। কী করবে, কী করা উচিত?

....................................

আশুর মনে হচ্ছে ওর কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে। ফাহিম ভাই বারে বারে চশমা খুলছে আর হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছছে, তারপর আবার চশমাটা চোখে দিচ্ছে । কান্নায় ফাহিমের নাক মুখ লাল হয়ে গেছে অলরেডি। আশু এতক্ষণ ধরে তাকে বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু উনি অবুঝ বাচ্চার মতো কেঁদেই চলেছেন। আশুর খুব খুব রাগ হচ্ছে। ছেলেদের এভাবে কাঁদতে দেখলে ওর খুব আজব লাগে, কিন্তু এখন লাগছে না। উল্টো কষ্ট হচ্ছে, বুকটা ধরে শক্ত জমাট হয়ে আসছে। ফাহিম ভাই কী জানেন ঠিক এই মুহূর্তে উনি যে কষ্টটা পাচ্ছেন এই কষ্টটা আশু বহুদিন ধরে পাচ্ছে তিলে তিলে।

"ফাহিম ভাই আপনি কাঁদছেন কেন বলুন তো?"

"কই কাঁদছিনা তো," বলেই আবার চোখের পানি মুছল ফাহিম।

"আচ্ছা মানুষ প্রেম করে, যখন ছ্যাকা খায় তখন কাঁদে... এটা মানা যায়। কিন্তু আপনি তো একদম আবুল মার্কা একটা লোক যার সাথে কোন সম্পর্কই হয়নি, তাকে ভালোবেসে একেবারে দেওয়ানা মাস্তানা মুভি বানায় ফেলতেছেন। আপনার এই আশিকি মার্কা ভালোবাসা আমার ওই ফ্যাতকান্দুনি বোন যদি দেখে তখন যে কী হবে আপনি বুঝতে পারতেছেন না। "

"কী হবে?" ফাহিম আশুর কথায় বড়ো বড়ো চোখ করে জানতে চাইল। নিঝুমের সমন্ধে যে কোন কিছু শুনতে সে আগ্রহী।

"আপু আম্মুকে ফোন করবে এক সময় সহ্য করতে না পেরে।"

"তো? "

"তো তখন আপনার রুমানা খালা হারে রে রে করতে করতে তার পুরো ফৌজসহ যুদ্ধে করতে চলে আসবে জিজুর সাথে।"

"অরণ্য সাথে? " একটু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল ফাহিম।

"হুমম।"

" সমস্যাটা কী? না মানে রুমানা খালা কী নিয়ে বাঁধাবেন? "

"কেন, আপনি কী চান যে আম্মু এসে ঝগড়া বাঁধাক আর আপনার এতো ভালোবাসার মানুষটা কষ্ট পাক?"

"না... না.... তা কেন চাইব।"

"তা হলে এরকম অসহায়ের মতো ভেউ ভেউ করে কাঁদবেন না, আমার একদম অসহ্য লাগছে।"

"আচ্ছা " ফাহিম লক্ষী ছেলের মতো ঘাড় কাত করল।

ফাহিমের উত্তর দেয়া দেখে আশু খিল খিল করে হেসে ফেলল।

"তুমি হাসছ কেন? " ফাহিম অবাক। এই মেয়েটা মাত্রই খুব বিরক্ত হচ্ছিল ওর প্রতি।

"ও আপনি বুঝবেন না," আশু বিরবির করতে লাগল।"এক গবেট আর এক মাথামোটাকে ভালোবেসেছিল। এই জন্যইতো সেটিংটা হলো না। না হলে আল্লাহতো জানেন দুটো মিলে একটা বোকার স্বর্গ বানাত।

........................................................

"কী? আমার কথা বিশ্বাস হলো তো? "

অরণ্যর কথা শুনে নিঝুমের চোখদুটোয় পানি উপচে পড়তে লাগল।

"ঝুম... এটা কী? "

"অরণ্য, ফাহিম ভাইতো আশুকে ভালোবাসে না। আমার আশুর এখন কী হবে?"

" হমম..

আচ্ছা আগে বলো, তুমি চাও কী? ফাহিম আশুকে সেচ্ছায় বিয়ে করলে হবে?"

অরণ্য কথায় নিঝুমের দুঃখ আরও বাড়ল।

"বিয়ে হলেই কী মানুষ সুখী হয়? বরং এরকম সম্পর্কে আরও অশান্তি হয়।"

"তাহলে? "

"আমি জানি না।"

" উমম.. তারমানে তুমি চাচ্ছ তোমার আই মীন আশুর ফাহিম ভাই আমার প্রেমে পড়ুক।"

" কী! "

" আহা.... হাইপার হচ্ছো কেন? আগে পুরোটা ভাল করে শোন। তুমি চাচ্ছ আশুকে আমাদের ডাক্তার দুলাভাই প্রায় ভিক্ষে চাওয়ার মতো হাতে পায়ে ধরে বিয়ে করুক তাই তো।"

নিঝুম কী বলবে বুঝতে পারলনা, এই লোকের কথাবার্তা দিন দিন আরও অদ্ভুত হচ্ছে। ও আর পেরে উঠছেনা।

"কী হলো বলো?"

"হুমম... মানে হ্যাঁ। "

"ওকে ডান। কিন্তু এত কষ্টের কাজ... পরিশ্রমও বেশি ওই হনুমানকে বোঝাতে গেলে, সেক্ষেত্রে আমার ডাবল পেমেন্ট চাই।"

"পেমেন্ট! কিসের পেমেন্ট? "

"বাহ! আমি এত কষ্ট করে তোমার মজনুকে লাইনে আনব, সেক্ষেত্রে আমার একটা কিছু পাওনা হবেনা?"

" কিসের পেমেন্ট? ওনাকে আমার কাছ থেকে সরাতে পারলে তোমার নিজের লাভ। ওনাকে তুমি নিজের গরজেই আশুর সাথে সেটিং করে দাও," কথাটা বলে নিঝুম বিরক্তির সাথে রান্নাঘরে চলে গেল। অরণ্য মুখটা চুন করে তাকিয়ে রইল। কে বলে ওর বউয়ের মাথায় বুদ্ধি নেই, যত দিন যাচ্ছে এক কাঠি করে সরেস হচ্ছে। নাকি উল্টো ওই দিন দিন বোকা হয়ে যাচ্ছে।

.................................................

"রুমানা, আশুরা কয়দিন শ্রীমঙ্গলে থাকবে কিছু জানিয়েছে? "

"না... কেবল পৌছে ফোন দিয়েছিল। গেলই তো মাত্র দুদিন, ঘুরে দেখতে গেলে একটু সময় তো লাগবেই।"

"হুমম " শাহেদ গম্ভীর মুখে সায় দিলেন। বড়ো মেয়েটাকে নিয়ে সত্যি বড়ো দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কী থেকে কী হয়ে গেল৷ তার হাসিখুশি মেয়েটা একদম মুষড়ে পড়েছে। এখন অয়ন ছেলেটা ওর ঠিক কতটা যত্নআত্তি করবে কে জানে। ওদিকে আশু আবার গেল ফাহিমের সাথে। এটাও একটা ভুল হলো। আসলে রুমানার অনুরোধে তিনি না করতে পারেননি কিন্তু এখন রাগ লাগছে নিজের নির্বুদ্ধিতার কারনে।

"রুমানা তুমি নিঝুমকে ফোন দিয়ে বলো যে, আশুদের তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিক। ও নিজে একেতো অসুস্থ, তার উপর বোঝার উপর শাকের আটির মতো ওরা যেয়ে জুটেছে।"

"আচ্ছা " রুমানা মাথা নাড়লেন। এটা আসলে তার নিজেরও মনে ছিলনা যে মেয়েটা এই অবস্থায় ওদের যত্ন করতে পারবেনা। খুব ভুল হয়ে গেছে। মোবাইলটা নিয়ে নিঝুমকে ফোন দিল রুমানা।

"হ্যালো আম্মু "

"নিঝু.."

"হ্যাঁ বলো।"

"বলছি তোর শরীর কেমন আছে? "

"ভাল, তোমরা ভাল আছো? "

"আমরা ভাল আছি, বলছি ফাহিম কী বলতে চাইল তোকে সেটা বলেছে? ওর কাজ হয়ে গেলে ওদের বরং পাঠিয়ে দে। "

"না.. না.. আম্মু এখন পাঠানো যাবে না। "

"কেন... কী হয়েছে? কোন সমস্যা? "

"না কোন সমস্যা না। "

"তাহলে?"

"না মানে ফাহিম ভাই কী কাজে এলেন সেটাই তো এখনো পরিস্কার করে আমাকে বলেননি। "

"কী আর বলবে... যাক, তোর যা মন চায় কর আর তোর আব্বুকে একটা ফোন দে। আশুদের আসার ব্যাপারে কী যেন বলবে।"

"আচ্ছা "

নিঝুম ফোন রেখে মন খারাপ করে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। আব্বুর সাথে কথা বলে ওর মন খারাপ হয়েছে। আব্বু আশু আর ফাহিম ভাইকে তাড়াতাড়ি ঢাকা যেতে বলেছে।

"অ্যানি প্রবলেম মাই ডিয়ার ওয়াইফি"

"অরণ্য... "

"ইয়েস ম্যাজেস্টি..."

"আব্বু না আশুদের পাঠিয়ে দিতে বলছে, কিন্তু ওরা চলে গেলে তো ফাহিম ভাইও আবার বিদেশে চলে যাবে। তাহলে আমার আশুর কী হবে?"

"যাহ... তা হলে তো আমার অতিরিক্ত খাটুনি করার ভেজাল গেল, শান্তি... শান্তি। শ্বশুরআব্বা আপনি দীর্ঘজীবী হউন। ফাহিম ভাই টা টা।"

"অরণ্য প্লিজ... কিছু একটা করো।"

"কি করব... আমার কাজ তো হয়েই গেছে, মাই অ্যনিমি ইজ গোয়িং টু ফার ফার অ্যাওয়ে ফ্রম মাই ওয়েডেড ওয়াইফ।"

"অসহ্য! "

"ঠিক বলেছ। তোমার... না.. না.. আমাদের ফাহিম ভাইটা একদম অসহ্য, একদম সহ্য হয়না আমার," অরণ্য নাক মুখ কুঁচকে এমনভাবে বলল যে মনে হয় ফাহিম একটা কেন্নো।

"প্লিজ... কোনভাবে আশুর সাথে ওনাকে... "

"কী? "

"প্লিজ বলছি তো"

"আমার পেমেন্ট"

"বদমাইশ একটা লোক"

"আমি বদমাইশ?"

"নয়তো কী? দুনিয়ার মেয়েদের সাথে ইয়ে করে বেড়ায়।"

"আচ্ছা তাহলে আমি গেলাম, তুমি করো তোমার ভাই - বোনের সেটিং।"

" আচ্ছা আচ্ছা দিব। রাগ করছো কেন? আমি তো মানা করিনি।"

" কথা দিলে "

"কথা দিলাম কিন্তু ঢাকা পাঠানোর আগেই ফাহিম ভাই যেন আশুকে বিয়ে করতে রাজি হয়, তাও নিজের আগ্রহে।"

"ডান কিন্তু আমার দু' একটা শর্ত আছে।"

"আবার শর্ত! এমনিতেই পাওনার পাহাড় জমাচ্ছ।"

"তা হলে যাও, আমার কী"

"আচ্ছা বলো শুনি "

"প্রথমটা হলো তুমি, আমার আর অহনার মধ্যের ওই কিস নিয়ে কাউকে কিছু বলবানা। আম্মুকে তো নাই। দ্বিতীয়ত তুমি ওটা নিয়ে আর মন খারাপ করতে পারবানা আর আমাকেও খোটা দিতে পারবানা"

"বাহ... মানে তুমি যা ইচ্ছা অপকর্ম করে বেড়াবা আর আমি সাজা কাটব।"

"ঝুম প্লিজ আমি তো বলছি ওটা জঘন্য অপরাধ হয়েছে। দ্বিতীয়বার আর কখনো কোন অবস্থাতেই ওই কাজ করব না, দরকার হলে মরব তবুও না।"

"আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু এর মধ্যে আবার মরার কথা কেন বলো। তুমি চাও আমি এই শুনে মরে যাই?"

"ওফফো...

নাহ... আচ্ছা তৃতীয় দাবি হলো আমি যা যা করবো তুমি কোন তর্কে যেতে পারবেনা। তোমার দরকার আশু আর ফাহিমের মধ্যেকার রিয়েল রিলেশন কিন্তু আমি কিভাবে কী করব তা নিয়ে তুমি মাথা গলাবা না। "

"আচ্ছা কিন্তু ওদের কোন ক্ষতি যেন না হয়।"

"ঝুম এবার কিন্তু আমার মেজাজ গরম হচ্ছে।"

"আচ্ছা বাবা কিচ্ছু বলবো না, দেখবোও না।"

"হমম.. আর আমার পেমেন্টে"

"তাও দেব.."

"ওহ রিয়েলি! তা হলে একটা নগদ প্রমিস দাও। "

নিঝুম পায়ের পাতার উপর দাঁড়িয়ে অরণ্যর কপালে একটা চুমো দিয়ে দিল, " কাজে সফল হও।"

"বউ এটা কী তুমি আমাকে ম্যাট্রিক পাশের জন্য দোয়া করলা... মনে আছে হেড স্যার শেষ বিদায়ের দিনে সবার জন্য এমন করে দোয়া করেছিলেন।"

"চুমো খেয়ে! "

"না ওইটা অবশ্য খায় নাই। যাক কান টানলে মাথা আসে, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।"

অরণ্যর আক্ষেপের বহর দেখে নিঝুম মনে মনে হেসে কুটি কুটি হতে লাগল। ওর এই মুহুর্তে খুব নিশ্চিন্ত লাগছ। অরণ্য যখন বলেছে তখন ব্যবস্থা একটা হবেই হবে।

...................................................................

"বাবা "

"হ্যা.. আব্বু"

"তুমি এখন কই?"

"আমি এখন বান্দরবনে মিশু।"

"অফিসে?"

"না, তোমার এক আঙ্কেলের কাছে এসেছি তবে বিশেষ একটা কাজে।"

"অফিসের কাজ? "

"তুমি এখন রাখ আব্বু। আমি রাতে ফ্রি হয়ে তোমাকে ফোন দিব।"

মশিউর ফোনটা কেটে দিয়ে ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে রইল। ছোট্ট মিশু ওর মায়ের কোলে বসে আছে। খুব আলতো ভাবে ছবিটায় আঙুল ছোঁয়াল মশিউর।

তারপর পাহাড়ের কোলঘেষা একেবেঁকে বয়ে চলা মাতামুহুরি নদীর দিকে তাকিয়ে রইল অপলক দৃষ্টিতে। বিয়ের পরের স্মৃতিগুলো আবার এসে খোঁচাতে লাগল বুকের আনাচে কানাচে। নদী দেখলেই নদীর কথা মনে হয় মশিউরের, হাতের মুঠিটা শক্ত করে চেপে ধরল ও।

"সময় এসে গেছে রাইসুল, তৈরী হ। পিষে মারব আমি তোকে, লাল পিঁপড়ের মতো পিষে মারব।"

বুকের ভিতরের আগুনেটা দিনে দিনে জলন্ত এক নদী থেকে লাভার সমুদ্রে পরিনত হয়েছে মশিউরের। সেগুলো আজ সুনামীর স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে। ভীষন দাপুটে ক্ষোভগুলোকে বাগে আনতে অনেকটা সময় লাগল মশিউরের।

...................................................

নিঝুমের মাথায় ঢুকছে না অরণ্যর ওকে কোলে নিয়ে চা বাগানে ঘোরার এতো শখ হলো কেনো। আর হলো তো হলো.... আশু আর ফাহিম ভাইয়ের সামনে কুছ পরোয়া নেই ভঙ্গিতে নেচে বেড়ানো লাগবে কেন?

"ফাহিম ভাই আপনি পারলে আশুকে একটু ধরে নিয়ে আসুন। "

" অ্যা! " ফাহিমের চোখ ছিটকে বের হওয়ার উপক্রম। বলে কী অরণ্য... আশুকে?

"আজ সকাল থেকে টানা বৃষ্টি হওয়াতে বাগানে প্রচুর জোক বেরিয়েছে, মেয়েরা ওগুলো সহ্য করতে পারবেনা। আর আশু দেখলে ভয়ও পেতে পারে।"

"কী বলছেন? "

"যা সত্যি তাই বলছিরে ভাই।"

"জিজু আমার তো ভীষন ভয় করছে," আশু ফাহিমের হাতটা চেপে ধরল নিজের অজান্তেই।

"তোমার কী মাথা খারাপ হলো? " নিঝুম বিরিবির করে জানতে চাইল। "কি আবোল তাবোল বকছো?"

"সশশ...একদম চুপ।

তুমি সামনে তাকাও তো, খালি মাতব্বরি।
ধরতে দাও হাত, যত তাড়াতাড়ি একজন আরেকজনের হাত ধরবে তত তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলবে।"

অরণ্যর চাপা স্বরের ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেল নিঝুম। কী যে সব অদ্ভুত অদ্ভুত বুদ্ধি অরণ্যর মাথায় কিলবিল করে কে জানে।

"এখন আমরা কোথাশ যাচ্ছি?"

"চায়ের দোকানে। শ্রীমঙ্গলে আসলা আর স্পেশাল চা খাবেনা কেমন একটা হয় না।"

"হুম " বলেই আবার পিছনে দেখতে যাচ্ছিল নিঝুম, কিন্তু অরণ্য ওকে মোটেই পিছনে দেখতেই দিল না।

"এই আমি এত সুন্দর একটা চেহারা নিয়ে তোমার চোখের দাঁড়িয়ে আছি, তা বাদ দিয়ে তোমার গোয়েন্দাগিরি করা পছন্দ হলো?"

"না " নিঝুম মাথা নাড়ল, " বলছি ফাহিম ভাই ছেলে মানুষ, যদি হঠাত অন্য কিছু করে মানে... ইয়ে মানে। "

"তো করুক না। করলেই তো সুবিধা, একদম শালার ব্যাটার টুটিটা ক্যাক করে ধরব," অরণ্যর ঠোঁটে দুষ্টামির হাসি।

নিঝুম হাত দিয়ে কপাল চাপড়ানের ভঙ্গি করলো। এই লোকের শয়তানি বুদ্ধি কোন কালে যাবে না।

চলবে.........

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro