৪র্থ পর্ব
"বাপরে... একদিনে তোদের দুজনের এই হাল, বিয়ের পরে আলাদা থাকবি কি করে তোরা?" অয়নের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেল নিঝুম। কি আশ্চর্য ও মনে করেছিল এই ছেলে বোধহয় কম কথা বলে, কিন্তু আধাঘন্টার আলাপে ওকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়ছে দুই ভাই। একজন ভয়ঙ্কর সব প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে। আর আরেকজন বেহায়ার মত সেটার উত্তর দিচ্ছে। দুটোই সমান ফাজিল।
আসলে অয়ন এসেই নিঝুমকে লম্বা করে একটা সালাম দিয়ে বলল, "ভাবীজান কি অধমের উপর এখনও রেগে আছেন?"
নিঝুম নিজেই ততক্ষণে কিছুটা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু তাই বলে এত মিল হবে! দুজনের পোষাক ছাড়া তো পার্থক্য করা ভীষন মুশকিল।
শেষ পর্যন্ত পুরো ঘটনাটা অরণ্যই বলল। পুরোটা শুনে নিঝুম মুখ টকটকে লাল।
ইশশ .. ও যদি জানত যে কালকে অরণ্য ওদের বাসায় যায়নি, তাহলে ভুল করেও ও আজ অরণ্যর সাথে এখানে এসে বসত না। কি লজ্জা লাগছে। বিয়ের কথা পাকা হতে পারলনা আর ও পাত্রের সাথে ড্যাঙ ড্যাঙ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাও আবার যদি হয় অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ।
"ভাইয়া তোর লজ্জাবতী তো লাল হতে হতে শেষে পড়ে যাবে চেয়ার থেকে।োী ওকে ধর," অয়নের কথায় নিঝুমের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিল অরণ্য।
" এই আমার বউকে আর লজ্জা দিবিনা।"
অরণ্যর কথায় বুকটা ধরাস করে উঠল নিঝুমের। কি লাগামহীন কথাবার্তা চলছে দুই ভাইয়ের মধ্যে। বিয়ের কথার ব ও হয়নি আর একজন দেখো বউ বউ করে ডাকছে। কি অসভ্য.....
নিঝুম ওদের কথার ফোকরে লজ্জাবনত মুখে একটা স্মিত হাসি দেওয়া ছাড়া আর কিছু বলার সাহস পেল না। বলে যদি শেষে বিপদে পড়ে.. এরা দুজনেই মহা ত্যাদড়।
"তোমরা তাহলে থাক, আমি এখন চলি। তোমাদের মধ্যে কাবাবমে হাড্ডি হবার কোনো শখ নেই আমার, " চেয়ারটা পেছনে ঠেলে উঠে দাঁড়াল অয়ন।
ওকে দাঁড়াতে দেখে নিঝুমও বলে উঠলো,
" আমিও এখন যাব সেই সকালে বেরিয়েছি।"
"ঝুম প্লিজ একটু বস... চিন্তা করনা, আমি তোমাকে পৌছে দেব বাসায়।"
অরণ্যর কথায় হো হো করে হেসে ফেলল অয়ন,
"ভাল বলেছ ভাইয়া। কালই তুমি বললে বিয়ে ভাঙ্গতে... আর আজই ছাদনাতলায় যাবার জন্য তুমি এক পায়ে খাড়া। তা আমার ঝুম ভাবী তোমাকে বিয়ে করতে রাজি তো? "
অয়নের কথা শুনে নিঝুমের মনে হলো অরণ্যর মাথাটা ফাটায়। কি লজ্জা... কি লজ্জা।
কিন্তু সব লজ্জা শরম ধুলোয় মিটিয়ে দিয়ে সাথে সাথে আরেকজন উত্তর দিল, "অ্যাই ঝুম শুধু আমি আদর করে ডাকব ওকে, তোরা ভুল করেও ওকে এই নামে ডাকবি না।"
নিঝুমের মনে হলো ও আজ আর কাউকে মুখ দেখাতে পারবেনা। কি নির্লজ্জ এই লোক, হসপিটালে তো খুব ভদ্র মনে হয়েছিল। ওর নাক, কান সব ঝাঁ ঝাঁ করছে আর ওই লোক মুখ টিপে হাসছে।
একবার নিঝুমকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করল না যে ও বিয়েতে রাজি কিনা.....। অসভ্য,ফাজিল কোথাকার। কিন্তু ঝুম শব্দটা শুনতে খুব ভাল লেগেছে, এটা অস্বীকার করবে না নিঝুম। শব্দটা শুনে কেমন কেঁপে যাচ্ছে ভিতরটা। অরণ্যর কন্ঠস্বরে কি নেশার কিছু মাখান আছে? শুনলেই কিছু হচ্ছে ওর।
অয়ন বেরিয়ে যেতেই লজ্জায় গুটিসুটি হয়ে বসল এবার নিঝুম। তখন ওর মাথায় অভিমান, দুঃখ এরা দখল করে ছিল বলে সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন এই লোকের সাথে একা ও কি করে বসে থাকবে। হাঁটু কাঁপছে নিঝুমের সমানে।
"আ.. আমি বাসায় যাব," নিঝুম কোনোমতে বলল।
"নিশ্চই যাবে। আমি তো বললাম, আমি নিজে তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসব," অরণ্য বলল।
নিঝুম আড়চোখে তাকিয়ে দেখল অরন্য ওকে দেখছে মনোযোগ দিয়ে। নিঝুমের মনে হলো ওই লোকের চোখে স্ক্যানার সেট করা আছে,ওর ভেতরে কি চলছে সব সে দেখতে পাচ্ছে।
নিঝুম অস্বস্তির সাথে ওর কামিজটা টেনেটুনে ঠিক করল, ওড়নাটা আবারো একটু সামনে আনল। অরণ্য ততক্ষনে তার চোখের দৃষ্টিদিয়ে নিঝুমের ভেতরটা এফোঁড়ওফোঁড় করছে।
"ঝুম আমি কি মাকে বলব যে, তোমাদের বাসায় ফোন করে হ্যাঁ বলতে? তুমি কি আমার সাথে তোমার জীবনটা কাটাতে আগ্রহী? আমি কিন্তু এখন সিরিয়াসলি প্রশ্ন করছি। আমার জব আর লাইফস্টাইল দুটোই কিন্তু খুব যন্ত্রনাদায়ক, সাথে বিপদজনও।"
অরণ্যর প্রশ্নে পেটের ভেতর হাজারটা প্রজাপতি ওড়াওড়ি শুরু করল নিঝুমের। কিন্তু এখন অরণ্যর কথাগুলো সত্যি ভাবার মতো। নিঝুম ঘামতে লাগলো। কি বলবে? চেনে না জানে না ভালো করে... আর যদি লোকটার কারো সাথে সম্পর্ক থেকে থাকে? এমনতো হতেই পারে যে কাল সেজন্যই আসেনি। হয়তো তার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে। কিন্তু তাইবা কি করে হয়... হসপিটালে যেভাবে হাত ধরে ছিল, ওই হাত ধরা চেহারাতেই না নিঝুম আছাড় খেল। কিন্তু আর কিছুই তো জানেনা ভাল করে। শুধু দেখতে ভালো দেখেই কি কারো ব্যাপারে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ? অবশ্য প্রস্তাবটাতো পারিবারিক ভাবেই এসেছে।
" আমি কি তাহলে আম্মুকে মানা করে দিব?" অরণ্য নিঝুমের চিন্তিত চেহারা দেখে কথাটা না বলে পারলনা। অরণ্য নিজেও আসলে ওর নিজের আচরনের কোনো মাথা মুন্ডু কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু ও এখন হেল্পলেস। কোনো মেয়ের ধার কাছ দিয়ে হৃদয় ঘটিত ব্যাপারে ও একশ হাত দূরত্ব বজায় রেখেছে এতকাল। অরণ্যর ভাষায় এরা দাহ্য পদার্থ,খালি মনকে পোড়ায়। তাই বলে বিয়ে করবেনা এধরনের কোনো পণ অবশ্য কোন কালেই ছিল না। তাই গাইগুঁই করেও শেষ পর্যন্ত মেয়ে দেখতে রাজি হয়েছিল কিন্তু ভ্যাজাল করল ওই অ্যাকসিডেন্ট।
এখন বিয়েতো বিয়ে, বিয়ে না করলে ওর জান যায় অবস্থা। কাল থেকে এখন পর্যন্ত নিঝুম ওর মাথার থেকে এক সেকেন্ডের জন্য সরেনি। এভাবে চলতে থাকলে তো ও শেষ।
আর নিঝুমের কনফিউজড চেহারা ওকে আরো কনফিউজ করে দিচ্ছে, পুরো ব্যাপারটাই উল্টো হয়ে যাচ্ছে।
অবশ্য পুরো ছাত্রজীবন পার করে এসে এখন বিয়ের আগের দিন পাগলের মতো প্রেম করতে ইচ্ছে হলে হবু বউ একটু আধটু সন্দেহ করতেই পারে। আসলে গতকাল পুরো দিনটাই এত উল্টাপাল্টা ছিল যে ওর মাথা ঠিকমত কাজ করছিল না। একটার পর একটা ঘটনা ওকে পাজলড করে দিয়েছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে নিঝুমের চেহারাটা ওকে রাশ টানার কথা মনে করিয়ে দিল। সত্যিই তো ও কে? নিঝুমকে এভাবে বলাটা বোধহয় একদম উচিত হয়নি। ও কি নিঝুমকে সরি বলবে?
ওর আচরন যে একটু বেশি ওভারএক্সাইটেড হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা খেয়াল ছিল না অরণ্যর।
অরন্যর কথায় মুখটা আবার অন্ধকার হয়ে গেল নিঝুমের। মাকে মানা করে দিবে?
"কেন? " বোকার মত প্রশ্ন করে ফেলল এবার নিঝুমই। " মাকে কেন মানা করবেন?"
"কারন তুমি আমার প্রশ্ন শুনে দ্বিধায় পড়ে গেছ," অরন্য এবার হেসে ফেলল। না আর মেয়েটাকে ঘুরিয়ে পেচিয় লাভ নাই। মাকে না বলে দেবে একথা শোনার সাথে সাথেই মুখ যেভাবে অন্ধকার হয়ে গিয়েছে, তাতে উত্তর ও পেয়ে গেছে। শুধু অপমানিত মনোভাব থাকলে, আজ অরণ্য যেভাবে ওর পিছনে দৌড়েছে তাতেই খুশি হয়ে যেত। এই মেয়ের ওকে হারানোর ভয় আছে। এতেই অরণ্য খুশি আর কিছু লাগবেনা।
"না মানে, আমি.. আপনি... মানে বিয়ে।"
নিঝুমের কথা সব আটকে জট পাকিয়ে যাচ্ছিল। লোকটা খালি ওকে উল্টো বোঝে কেন? এরকম হুট করে প্রশ্ন করলে ও কি করে বলে যে হ্যাঁ আমি তো গতকাল থেকেই রাজি। খুব খারাপ একটা লোক, একদম বাজে.. ইয়ে একটা।
নিঝুম অসহায়ের মত অরণ্যর দিকে তাকিয়েই আবার চোখ সরিয়ে নিল। মায়াভরা এক জোড়া চোখ ঠিক ওর চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওই তাকানোতে কি আছে জানে না নিঝুম... কিন্তু ওর ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড আকারে ভাঙচুর চলছে। ওই চাহনি ওকে সাতরঙা রংধনুর সুতো দিয়ে স্বপ্ন দেখার লোভ দেখাচ্ছে। এই স্বপ্ন দেখার লোভ সামলানোর উপায় জানা নেই নিঝুমের।
"তাহলে বিকেলে তোমাদের বাসায় আসি?" অরণ্য নিজের ঠোঁটের কোন কামড়ে ধরে নিঝুমকে জিজ্ঞেস করল। বুকের মধ্য বেশ সুখ সুখ একটা অনুভূতি হচ্ছে ওর।
"আ.. আজ.. আজ বিকেলে?"
"কেন সমস্যা... তাহলে থাক, আমাকে তোমার পছন্দ না বুঝে গেছি আমি।"
"আশ্চর্য... আমি কি না বলেছি একবারও.. আপনি সব সময় উল্টো বোঝেন কেন? "
"তাহলে সোজা কোনটা সেটা বলো।"
"আ..আমি জানিনা, আপনার যা ইচ্ছা করেন।"
"আমার যা ইচ্ছা তাই করব! বুঝেশুনে পারমিশন দিলে তো তুমি? পরে কিন্তু না করতে পারবেনা। আমি কিন্তু পারমিশন নিয়েই এগুচ্ছি।" অরন্যর কথাটা দুষ্টুমিচ্ছলে বলা, কিন্তু ওর চোখে চোখ পড়তেই উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল নিঝুম। অরন্য কেমন ঘোরলাগা চোখে ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিঝুম তাকাতেই নিঃশব্দে একটা ঢোক গিলল অরণ্য। নিঝুম ওকে ক্রমশ নিজের বশে করে ফেলছে। এতদিনের চেনা নিজেকে এতটা প্রগলভ হতে দেখেনি অরণ্য নিজেও। কিন্তু কি করবে.... কালকে প্রথম নিজের মনকে এত চঞ্চল হতে দেখেছে ও। কেন, কখন, কিভাবে মন চুরি হয়ে গেছে বোঝার আগেই, নিঝুমের চেহারাটা ওর হৃৎপিণ্ডের একেবারে মাঝখানটা দখল করে নিয়েছে।
অরণ্যর মনটা আজ নিঝুমের খোলা আকাশে উড়ে বেড়ানোর আবদার করছে, ওর গহীন কালো চুলে মুখ ডুবানোর সাধ হচ্ছে, এত্ত এত্ত ভালবাসায়
কপালের ঠিক মাঝখানে একটা টিপ আকতে ইচ্ছে করছে যার রংটা হব ঠিক গাঢ় নীল। ওটা যে টিপ নয়, ওর ভালবাসার চিহ্ন।
এই এত এত সাধ নিয়ে চোর ছ্যাচ্চোরের পিছনে ঘুরতে হবে মনে হলেই জীবনে প্রথমবার খুব আফসোস লাগল অরণ্যর। চব্বিশঘণ্টা ডিউটি করতে করতে প্রায় একটা রোবট হয়ে যাচ্ছিল ও। নিঝুমকে দেখে আবার মানুষ হতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
নিঝুমকে এরকম লজ্জায় লাল হতে দেখে হুশ হল অরণ্যর। ও আসলে নিজের মধ্যে ডুবে গিয়েছিল।
"উহ্.. উহ্ " গলাটা কেশে একবার পরিষ্কার করল অরণ্য।" এরকম লাল নীল হতে থাকলে তো কপর্দকশূন্য হতে হবে আমাকে।"
ওর কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলনা নিঝুম। ওর লজ্জা পাওয়ার সাথে অরণ্যর কপর্দকহীন হওয়ার কি সম্পর্ক? কিন্তু জিজ্ঞেস করলে যদি লাগামছাড়া উত্তর দেয়। লোকটার মুখ বড়ো আলগা। ইতিমধ্যেই তার যথেষ্ট প্রমাণ ও পেয়েছে।
"বলছি এরকম লাল টুকটুকে বউ রেখে অপরাধী দাবড়ে বেড়াতে কার ভাল লাগে? কিন্তু আমার কপালটাই এমন, বউয়ের পাশে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই, সরকার বেতন দেবে না।" অরণ্য নিঝুমের অপেক্ষা না করে উত্তরটা নিজেই দিয়ে দিল। নিঝুম ঠিক কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা। অরন্য যতবার ওকে বউ বলছে ততবারই যেন দামামা বেজে উঠছে। ওর মনের রাজ্যের কোনায় কোনায় নীরবে নিভৃতে অরণ্যর নামটা কখন খোদাই হয়ে গেছে রাজ্যের অধিশ্বরী সেটা বুঝতেই পারেনি।
"তোমাকে আমি ঝুম বলে ডাকতে চাই... এতে তোমার কোনো আপত্তি আছে?" একদম স্পষ্ট করে কথাটা জানতে চাইল অরণ্য।
তারপর মুচকি হেসে বললো," অবশ্য পারমিশনটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ।"
পরিচিত গানের কলিটা শুনে মুখটা নিচু করে হাসল নিঝুম। তারপর মাথা নাড়ল।
"তারমানে আমার আবেদন পাশ হলো?" অরণ্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিঝুম আর উত্তর করলনা। কি অসভ্য.. যেন বললে সে শুনতো।
অরণ্য নিঝুমের এই লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখে খুব মজা পাচ্ছিল, "আচ্ছা তাহলে আমি কাল তোমাদের বাসায় আসি? "
"কাল? কিন্তু একটু আগে যে বললেন বিকেলে আসবেন? " প্রশ্ন করেই আবার কথা ঘোরাল নিঝুম। " না মানে আমি বাবাকে কি বলব তাই জিজ্ঞেস করলাম।"
বলেই জিভ কাটল নিঝুম। এই লোকের অসুখ কি ওরও হলো।
"আজকের কথা তুমি বাসায় বলবে? " একটু হাসল অরণ্য। মেয়েটা নার্ভাসনেসে ভুগছে, আর এটাই ভাল লাগছে ওর। খুব বেশি ফাস্ট আর বোল্ড বিহেভ পছন্দ না অরণ্যর। না নারী স্বাধীনতার বিপক্ষে না ও। কিন্তু জগতের প্রত্যেকটা জিনিসের নিজস্ব একটা সৌন্দর্য আছে আর লজ্জা জিনিসটা নারীর সৌন্দর্যকে বাড়ায় বই কমায় না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এই লজ্জাকে পায়ে ঠেলে সামনে এগিয়ে আসার শক্তিও থাকা উচিত । কিন্তু প্রয়োজনে নিজের শক্তির ব্যবহার আর বিনা কারনে তার প্রয়োগ দুটো আলাদা জিনিস মনে হয় ওর কাছে।
"না... না... প্লিজ। এখানে আমাদের দেখা হয়েছে এটা প্লিজ আমার পরিবারের কাউকে বলবেন না," নিঝুমের স্বরে অনুনয় ঝরে পড়ল।
"ডোন্ট ওরি আমি বলব না। তোমার চিন্তাও আমাকে এখন করতে হবে, তাই না? আফটার অল তুমি আমার লাইফের খুব ইমপরট্যান্ট একটা অংশ হতে যাচ্ছ," অরণ্যর এই সামান্য কথাটা খুব ভাল লাগল নিঝুমের।
"থ্যাংক ইউ।"
"কাল তাহলে আসবো তোমাদের বাসায়?"
এবার আর কথায় না গিয়ে ঘাড় নাড়ল নিঝুম।কথা বললেই বিপদ।
"ঝুম.. একটা কথা জিজ্ঞেস করি?" অরন্যের বলার ঢঙে ভয় পেল নিঝুম। তারপরও বলুন বলল ও।
"ঝুম...কাল আমি কি পরে আসব? না মানে প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি যাব।"
অরন্যর শয়তানি এবার বেশ ধরতে পাড়ল নিঝুম।
"আপনার যা ভাল মনে হয় পরবেন। আপনাকে সব কিছুতেই ভাল লাগবে।"
"তাহলে একটা তোয়াল পরে চলে আসব, ধবধবে সাদা। " খুব সাধাসিধা ভাব করে দুষ্টুমি হচ্ছে, কিন্তু নিঝুম এবার আর বাড়তে দিল না। অনেক বেলা হয়ে গেছে ওকে উঠতে হবে।
"নাহ একবারে শেরওয়ানি পরে আসেন।"
এছাড়া আর কি বলবে নিঝুমের মাথায় এল না। এই লোক খালি কথা প্যাচায়। শেষে না বলে বসে যে অন্তর্বাস পরে চলে আসি? এর দ্বারা সব সম্ভব বলে মনে হচ্ছে ওর কাছে, মহা ফাজিল।
................................................................
পরদিন বিকেলে অরণ্যর বাবা- মা আবার এলেন। তবে এবার একজন নয়। দুই ছেলে নিয়েই। শাহেদ, রুমানা দু'জনেই অবাক অরণ্য আর অয়নকে দেখে। সেদিন কে এসেছিল আর কার জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছিল জিজ্ঞেস করতেই দুইভাই দু'জনের দিকে আঙ্গুল তুলল। আয়শা তো হেসেই খুন।
অয়নকে আশু বলেই ফেলল, অয়ন ভাইয়া এরপর থেকে আপনি একদম দাড়ি ফেলে দিন। না হলে আপি কনফিউজ হয়ে ভাইয়ার জায়গায় আপনার গলা ধরে ঝুলে পড়বে।
অয়নও পাঁজির পা ঝাড়া। বলে, " ঝুললে ঝুলবে। আমি দাড়ি ফেলব না। ভাইয়ার ভয় থাকলে ভাইয়া ক্লিন সেইভড হয়ে যাক। "
আসমা বেগম আজকে মোটামুটি প্রিপারেশন নিয়েই এসেছেন। নিঝুমের পরিবার রাজি হলে একবারে পাকা করেই রেখে যাবেন আজ। অরণ্য পরিষ্কার করেই বলেছে যে নিঝুমকে ওর পছন্দ হয়েছে। প্রথমে তো তিনি খুব রাগ হলেন যে, কাল অমন উদ্ভট আচরন কেন করল ও? পরে অরণ্য অনেক কায়দা কানুন করে যখন পুরো ব্যাপারটা ওনাকে বললেন, রাগে কতক্ষন কথাই বলেননি তিনি। গতদিনই আসমার একবার সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু অয়নের সেদিন রাতে বাইরে খেয়ে আসার কথা ছিল। দুই ভাই মিলে ওনাকে এরকম ঘোল খাইয়েছে শুনে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলেন তিনি অনেকক্ষন। শেষে অরণ্য বাবাকে ধরে অনেক কষ্টে সব ম্যানেজ করেছে। আসমা বেগমও কম যাননা, এই ধাড়ি ধাড়ি দুই ছেলেকে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন। আর দুই ভাইও তেমনি বেহায়া, কান ধরে উঠবস করছে আর একজন আরেক জনকে খোঁচাচ্ছে, সাথে হাসির ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছিল। আসমা বেগম কালকের কথা মনে করে হেসে ফেললেন। নিঝুমকে তার প্রথমদিন হসপিটালে দেখেই খুব পছন্দ হয়েছিল অরণ্যর জন্য।
নিঝুম আজ আশুকে নিয়ে পার্লারে গিয়েছিল। সুন্দর একটা নীল জামদানী পড়েছে ও আজ।সাথে সাদা মুক্তোর সেট পরেছে। কাল বাসার সামনের গলিতে নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময়, গাড়ির জানালায় মুখ বাড়িয়ে বলে দিয়েছিল আজ যেন নীল কিছু পরে ও। নীল রঙে নাকি বেশী সুন্দর লাগে ওকে। প্রথম দিনও নীল একটা কামিজই পরা ছিল ওর পরনে।
নিঝুমের ফুপু দিলারা জানালেন, ওনারা সবাই রাজি। পরিবারের সবাই আলাপ করেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। কিন্তু নিঝুমের দুই ফুফু দেশের বাইরে থাকেন। এক্ষুনি তারা আসতে পারবেন না। দিলারা অনুরোধ করলেন নিঝুম বাড়ির বড়ো মেয়ে, ওর বিয়েতে সব ফুপুরা থাকতে চান।
তাই তাদের জন্য বিয়েটা দুই তিনমাস একটু পিছিয়ে দিতে।
রায়হান সাহেব কথা দিলেন দুই পরিবারের সুবিধা অসুবিধা মাথায় রেখেই অরণ্য- নিঝুমের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে।
আসমা বেগম আর দেরী না করে নিঝুমকে আংটি পরিয়ে দিলেন। অরণ্যর দাদীর একজোড়া চুড়ি আছে ওটা নিঝুমকে বিয়ের পরে দেবেন ঠিক করেছেন।
আংটি পরান হয়ে গেলে অয়ন বলল," ভাবী তোমার রুম কোনটা বলত? এক জায়গায় এরকম গ্যাট হয়ে বসে থাকতে আমার ভাল লাগছে না।"
আশু সাথে সাথে বলে দিল, " উপরে গিয়ে ডাইনের রুমটা ভাইয়া , একদম শেষেরটা।"
"চল তো আশু আমরা ভাবীর রুমটা কেমন দেখি।"
অয়নের কথায় দিলারা শেষ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হলেন যে, "নিঝুম, অরণ্য আর অয়নকে তোমার রুমটা দেখাও।"
দিলারার কথায় নিঝুম অসহায় ভঙ্গিতে তাকাল ওর মার দিকে। কিন্তু তিনিও ইশারায় ওকে যেতে বললেন।
নিঝুমের অবস্থা দেখে অরণ্য মুখ নিচু করে হেসে ফেলল। নিঝুম একদমই যেতে চাচ্ছিল না। কাল গাড়িতে আসতে আসতে সুযোগ পেয়ে ওর হাত ধরে বসেছিল অরন্য। পুরো রাস্তায় সিগন্যাল পড়লেই এই কাজ করেছে সে।
এখন আবার রুমে গেলে সেই বান্দা আবার কি করে কে জানে?
চলবে....
পর্বটি ভালো লাগলে ভোট ও কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো 😊
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro