Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৩৭

"ঝুম... বউ... জানালাটা খোল না প্লিজ, ঢুকতে পারছি না তো... " ঘুমের মধ্যে বিরবির করে কথাগুলে বলেই আবার বালিশে মুখ গুঁজল লোকটা।

ওড়নার কোনা খানিকটা মুখে পুরে দিয়ে কান্নার শব্দ রোধ করল নিঝুম... অনেক কষ্টে।  হাপরের মতো ওঠানামা করছে ওর বুকটা, ফোপাঁনোর শব্দ আটকে গিয়ে অদ্ভুত এক গোঙানির মতো আওয়াজ হচ্ছে শুধু... বুক, পেট সব ব্যাথা করছে।হাত, পা চলছে না, কেমন অসাড় হয়ে গেছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ থেকে টপটপ করে পড়তে থাকা পানিগুলো মুছল নিঝুম। খুশি, কান্না, ভয় সব একসাথে তালগোল পাকিয়ে একাকার হয়ে গেছে ওর। সামনে যে লোকটা শুয়ে আছে সেটা অরণ্য... এতে এখন বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই ওর। কিন্তু তারপরও হাজার হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নিঝুমের মাথায়। থেকে থেকে সন্দেহ বীজ থেকে মহীরুহতে পরিনত হচ্ছে আর নিঝুম তাদের নিশ্চিহ্ন করে চলেছে কিন্তু সুযোগ পেলেই তা আবারও অঙ্কুরিত হচ্ছে, লতাপাতার মতো আঁকড়ে ধরে বাড়ছে।

  কিন্তু অরণ্য নিজেকে কেন লুকাচ্ছে ওর কাছে থেকে? আর এটা যদি অরণ্য হয় তাহলে ঐ দুর্ঘটনায় কে মারা গিয়েছে? অয়ন! কিন্তু তাহলে অরণ্য অহনার সাথে সম্পর্ক কেন রাখছে? আবার কাল রাতে সে ওর সাথেও শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। মানে যা ইচ্ছে তাই হচ্ছে নিঝুমের সাথে আর এই সব কিছুর পিছনে ওর স্বামী অরণ্য রহমানের পুরোপুরি হাত রয়েছে। আর সে তার পরিচয় তার নিজের পরিবার, স্ত্রী সবার কাছ থেকে লুকিয়ে বেরাচ্ছে।

নিঝুম বুঝতে পারলনা অরণ্যকে বেঁচে থাকতে দেখে ওর খুশি হওয়া উচিৎ না দুঃখিত। ওর স্বামী তার মৃত ভাইয়ের প্রেমিকার সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছে, সাথে নিজেই নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে... পুরো ব্যাপারটাই এক অর্থে নিঝুমের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ও একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য কোন এক গোলকধাঁধার ফাঁদে পড়ে গেছে। অরণ্য, অয়ন হয়ে বেঁচে থেকে অহনার সাথে এক্সট্রা মেরিটেরিয়াল লাইফ লিড করতে আগ্রহী, কিন্তু কেন? অহনাকে ভালোবাসে? অয়নের মরার পিছনে অরণ্যরই হাত নেইতো?

এতদিন বাদে ভালোবাসার মানুষটার স্পর্শ ফিরে পাওয়ায় যে আনন্দ মন প্রানকে উন্মাতাল করে দিচ্ছিল নিঝুমের ধীরে ধীরে সেটা ক্রোধে রূপান্তরিত হলো। অরণ্য ওর সাথে তারমানে এতদিন অয়ন সাজার মিথ্যে অভিনয় করেছে... ওর এই রকম শারীরিক অবস্থায়ও অরণ্যর ওর জন্য বিন্দুমাত্র মায়ার সঞ্চার হয়নি! আর ওদের বিয়ে, বিয়ের আগের পরের দিনগুলোর সব কথা, সব প্রতিশ্রুতি সব মিথ্যা!

'আমি আর বলব নাতো,তুমি অন্য মেয়ের কাছে যাবে আর আমি মরব, ইটস ফাইনাল ' অরণ্যকে বলা কথাটা এতদিনে বাদে মনে পড়ার সাথে সাথে মাথায় রক্ত উঠে গেল নিঝুমের। সেদিন তো ও নিছক দুষ্টুমি করে কথাটা বলেছিল কিন্তু সেটাই যে ওর ভবিতব্য হবে জীবনেও ভাবেনি নিঝুম। অরণ্যর প্যান্টের পকেট থেকে বন্দুকটা আবার  বের করে আনল নিঝুম, এনে স্থির দৃষ্টিতে ওটার নলের দিকে তাকিয়ে রইল। প্রানপ্রিয় পুরুষকে অন্যকারো বাহুডোরে দেখার চাইতে শাস্তি বোধহয় আর কিছুতে নেই, কিন্তু  নিঝুমকে তার চেয়ে অনেক বেশি দেখতে হয়েছে... অনেক বেশি। ওর কোমল হৃদয়টা চৌচির হতে লাগল খরস্রোতা জলরাশির মতো... লক্ষ লক্ষ নুড়িপাথরের জন্ম যেখানে।

নিজের চোখে না দেখলে নিঝুম হয়তো জীবনেও বিশ্বাস করতে পারতনা যে অরণ্য ওর সাথে এত বড়ো বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। সাথে কাল রাতে যা ঘটলো সেটাকে আসলে ঠিক কী বলা যায়? নিঝুম যদি খুব জোর খাটাত তাহলে কী অরণ্য ওকে ছেড়ে দিত... কী যেন, খুব জোর গলায় এখন আর অরণ্য সম্পর্কে ভালো কিছু বলার মনোবৃত্তি ওর হচ্ছে না।

...............................................................

চোখ মেলতেই চারদিক কেমন স্বপ্নের মতো লাগল অরণ্যর... অনেকদিন পর শান্তি করে ঘুমালে যেমন লাগে, শরীরটা ভীষন রকম নির্ভার কিন্তু সেই সাথে ভীষন ভোঁতা একটা অনুভূতি, মাথাটা মনে হচ্ছে কয়েকশ টন হয়ে গেছে এক রাতের মধ্যে। কিন্তু এটা কোন জায়গা!

ঘুম ঘুম চোখেই বড়ো করে একটা হাই তুলল অরণ্য। কেমন উৎকট একটা গন্ধ আসছে ওর মুখ দিয়ে। হাতের তালুটা মুখের কাছে নিয়ে জোরে শ্বাস ফেলতেই চমকে উঠল ও। সর্বনাশ হয়ে গেছে... কাল দুঃখের চোটে বাংলোর পাহারাদার অমলের কাছ থেকে দু, তিন ঢোক তারি গিলেছিল ও, কিন্তু... তারপর কী হয়েছে কিছুই মনে নেই ওর। চারদিকটা ভাল করে দেখল অরণ্য। এটা তো ওর ঘর নয়, ঝুমের ঘর। তারমানে ও ভুল করে নিজের ঘরে না গিয়ে এখানে চলে এসেছে। গায়ের উপর পড়ে থাকা পাতলা চাদরটা সরাতেই মুখ শুকিয়ে গেল ওর ভয়ে, গায়ে একটা সুতো পর্যন্ত নেই শরীরে। তারমানে কোন অঘটন ও কাল ঘটিয়েছে ঝুমের সাথে... শিট! ঝুম তো  আজকে রেগে বোম হয়ে যাবে। ও তো আর জানেনা যে ও অরন্য আর অয়ন তো সে... ভাবতেই আবার নিজের চিন্তায় হোচট খেল অরণ্য। কাল আসলে ঠিক কী কী করেছে ও নেশার ঘোরে কিছুই মনে আসছে না এখন। ঝুম সুস্থ আছে তো... আর বাচ্চাটা! কপালে হাত দিয়ে বসে রইল অরণ্য। শা* নিজেই নিজেকে কষে কয়েকটা লাথি মারতে ইচ্ছে করছে ওর এখন। কাল ঝুম ওভাবে সিড়ি দিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে এক সেকেন্ডের জন্য ওর মনে হয়েছিল সব শেষ। ঝুমের বা বাচ্চাটার কিছু হলে ও বাঁচবে কী করে? না..  না.. সেটা হতেই পারেনা, অয়নের পরে ঝুম যদি  ওকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে! ভয়ে অরণ্যর  মাথা  কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিভাবে যে কাল ও নিঝুমকে কোলে নিয়ে ঐ ক্লিনিকে ছুটেছিল একমাত্র  আল্লাহই জানেন। ডাক্তার যখন বলেছে বড়ো বাঁচা বেঁচে গেছেন আর একটু এদিক ওদিক হলে বড়ো ধরনের ক্ষতি হতে পারত আপনার স্ত্রীর আর বাচ্চার, স্বস্তি আর আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল অরণ্য।

এই দুনিয়ায় একা একা প্রিয় মানুষগুলোকে ছেড়ে বেঁচে থাকার মতো দুর্ভাগ্য আর নেই। অয়নকে হারিয়ে অরণ্যর এখন প্রচন্ড ভয় করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে। কিন্তু এখন যে ও কাল রাত্রে আবার কী বিপদ ঘটিয়ে রেখেছে তা তো এখন এক নিঝুমই বলতে পারবে।

বড়ো ভয়ে ভয়ে গায়ে কাপড় চড়াল অরণ্য। কী করতে যে কাল ও অমলের কাছ থেকে ওই ছাইপাঁশ গিলতে গেল... আসলে মাথা ওর  কাল এত গোলমাল হয়ে গিয়েছিল পার্থর কাছ থেকে খবরটা পাবার পর যে সেটা হ্যান্ডেল করতে যেয়ে  ওর নিজেকে বেশ অনেকটা সময় দিতে হয়েছে। আর তারপরই ঝুমের এক্সিডেন্টটা হলো... মাথা পুরো আউলে গিয়েছিল ওর।

বাংলোর দারোয়ান অমলের সাথে ওর অনেক আগের থেকেই পরিচয় আছে। আগেও ও আর অয়ন এখানে এসেছে ঘুরতে। তখনও চুরি করে একটু আধটু গিলেছিল ওরা বাবা -মায়ের চোখ এড়িয়ে, জাস্ট ফান হিসেবে। কিন্তু কথায় আছে পাপে ছাড়েনা বাপেরে, আর সেই কথা এখন অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে। অরন্য আজ তোর হবে। বউ আজ তোর ছক্কা বাউন্ডারি সব পিটোবে... তুই খালি চুপ করে সহ্য করতে পারলে হয়।

নিচতলায় নেমে কোথাও নিঝুমকে দেখতে না পেয়ে একটু ভয় পেয়ে গেল অরন্য। রাগ করে কোথাও চলে যায়নি তো ঝুম ওকে ফেলে?

" ঝুম...,  না মানে নিঝুম," একটু জোরেশোরেই আওয়াজ তুলার চেষ্টা করল অরণ্য কিন্তু কেন যেন সেটা ইথারে খুব বেশি ঢেউ তুলল না। অপরপক্ষ থেকেও কোন সাড়াশব্দ  মিলল না। ভয়ে বুকটা ধুক পুক করছে তখন বীরের।

"ঝুম প্লিজ আজকের মতো মাফ করে দাও। আর জন্মেও ওই ঘন্টা নাক দিয়েও শুকব না, যত দুঃখ হোক, তোমার কসম," এদিক ওদিক অসহায়ের মতো খুঁজতে লাগল অরণ্য। বউ হারালে এবার ঠিক কেঁদে দিবে ও।

মূল দরজা দিয়ে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে বাইরে তাকাতেই একরাশ ভাল লাগা ছুঁয়ে গেল অরণ্যকে। নিঝুম এত সুন্দর শাড়ি কোথায় পেল? নিঝুমের আধা ভেজা চুলগুলো এত সুন্দর ভাবে পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে যে, ওই চুল দেখে অরণ্যর ভীষন লোভ হলো ওতে নাক গুঁজে দেয়ার। কিন্তু সাধাসিধে দৃষ্টিতে অরণ্য যেগুলো করতে পারে, অয়ন সেগুলো করতে পারেনা। শালার এই ডাবল লাইফ লিড করতে যেয়ে ওতো ফ্রাস্টেশনে ভুগতে ভুগতে মরে গেল। বউ ওর, বাচ্চা ওর
অথচ অরণ্য ওদের না ছুঁতে পারছে আর না ভালোবাসতে। আর এখন আবার নিজের সব অনুভূতিগুলোকে শামুকের মতো শক্ত খোলসে মুড়িয়ে দিতে হবে। কবে যে এর থেকে মুক্তি মিলবে  ওর কে জানে?

তবে আশার কথা অয়নের খুনিকে ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছে ওরা। কিন্তু খুনির পেট থেকে কথা বের করা খুব কঠিন ছিল। পেশাদার খুনি... শুধু টাকার বিনিময়ে কাজ করেছে। যেটুকু তথ্য উগরেছে তাতে পুরো ঘটনার মাস্টার মাইন্ড যে রাইসুল তাতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু এই শয়তানটাকে হাতেনাতে ধরতে গেলে যে পরিমান সলিড প্রমান চাই তাতে এখনো বেশ খামতি আছে। ওই প্রমানটুকু পেলেই সরাসরি অ্যাটাকে যাবে ওরা, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত অয়নের নামটাকেই ব্যবহার করতে হবে অরণ্যকে, কিচ্ছুটি করার নেই। কিন্তু অয়নের নাম নিয়ে নিঝুমের কাছে গেলেই ওর মাথা খারাপ হয়। ঝুম ওকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসবে এটা ভাবলেই ওর মাথায় আগুন জ্বলে, হোক সে একই চেহারা একই শরীর।

নিঝুম শুধুই অরণ্যর আর কারো না। কিন্তু নিঝুমকে দেখলে যে ওর মন মানে না। তাইতো ঐ দুর্ঘটনার পরও মাঝরাতে চুরি করে নিঝুমের ঘরে যেয়ে বসে থাকত ও, পাগলীটাকে একটু দেখার জন্য।

.....................................................

নিঝুম লন থেকে ভিতরে ঢুকেই ডাইনিং টেবিলের কাছে এগিয়ে গেল। ওর হাতের মুঠিতে নানা রঙের ছোট বড়ো পর্তুলিকা,পিটুনিয়া... সাথে কিছু ঘাস,লতাপাতাও আছে। মেয়েদের আর বাচ্চাদের বোধহয় ফুল দেখলেই ওটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে ইচ্ছে করে। অরণ্য কৌতুহলী দৃষ্টিতে নিঝুমের কার্যকলাপ দেখতে লাগল। নিঝুম কোথা থেকে একটা ফুলদানি জোগাড় করেছে আল্লাহ মালুম, তবে সে এখন ফুলগুলো সাজানোর চেষ্টা করছে সুন্দর করে। অরণ্যর কী ভীষন ইচ্ছে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু অয়নের জন্য তো এই আচরন উপযুক্ত নয়। ঘোরলাগা চোখ থেকে তাই ভালবাসার রেশটাকে উপরে ফেলে বেশ শক্তপোক্ত মুখে অধিকার জাহির করার ভঙ্গিতে নিঝুমকে জানাল, "কালকের আচরনের জন্য আমি খুব দুঃখিত। খুব জঘন্য ধরনের অপরাধ করে ফেলেছি... একদম উচিত হয়নি। আমি আসলে সেন্সে ছিলাম না, নিঝুম।"

আরও কিছু বলতে চাচ্ছিল অরণ্য কিন্তু তার আগেই ওকে এক কথায় থামিয়ে দিল নিঝুম," ঝুমঝুমি... তুমি আমাকে ঝুমঝুমি বললে খুশি হব, ওই ডাকটা অনেক বেশি আপন মনে হয় অয়ন।"

"মানে? "অরণ্য পুরো হা হয়ে গেছে। ঝুম কী তবে অয়নকে ভালোবেসে ফেলল? ওকে ভুলে গেল অয়নকে বিয়ে করে?

"মানে নিজের বউকে ওরকম নাম ধরে ডাকলে কেমন দূরের দূরের, পর পর মনে হয় না বলো?"

অরণ্য সহসাই কোন উত্তর দিতে পারলনা। বুকের ভিতরে কেমন যেন জ্বলে যাচ্ছে। মন চাচ্ছে ঝুমের হাতের ফুলদানিটা এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে চৌচির করে দেয়। কী কথা... ইহ্ ওর বউকে অন্য কেউ আদর করে ডাকলে তার জিভ টেনে ও ছিড়ে ফেলবে। কিন্তু নিঝুম যদি ওকে ভুলে যায় সত্যি সত্যি! যায় কী ওর তো মনে হচ্ছে ওকে ঝুম ভুলে গেছে।

"আচ্ছা অয়ন, আমাদের মধ্যে তো আর কোন দূরত্বই রইলো না, তাইনা? লিগ্যাল হোক বা ইলিগ্যাল কিন্তু তুমি এখন আমার স্বামী, আমার সব কিছু, আমার বাচ্চার বাবা," নিঝুম বলছে আর হাতের ফুলগুলো ফুলদানিতে একটা একটা করে সাজাচ্ছে মনযোগ দিয়ে।

"মানে! দূরত্ব রইল না মানে? এক সাথে শুলেই কী মনে মনে দুজন মানুষ এক হয়ে যায় নাকি? আ..আমি কখনই অহনা মানে অনার জায়গায় তোমাকে বসাতে পারবনা। অনা আমার ফার্স্ট লাভ।"

নিঝুম খুব বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,"তাহলে আর কী.... এই একরাতের অভিসারের তো আর কোন মূল্যই রইল না। কপাল খারাপ আমিও গর্ভবতী, কুমারী নই আর তোমারও আমাকে দরকার নেই। তাহলে বরং সম্পর্কটা এখানেই শেষ হয়ে যাক। তুমি বরং আমার ঢাকা যাবার ব্যাবস্থা করো, আমি আব্বু আম্মুর কাছে ফাহিম ভাইয়ের কথাই বলি। "

"ফাহিম! এই ফাহিমটা আবার কে? এর নাম তো এর আগে কখনও শুনিনি তোমার মুখে।"

"শুনবে কী করে, তোমার সাথে কী আগে কখনো এতা কথা বলতাম আমি? ফাহিম ভাই আমার কাজিন হয়... ডাক্তার। দেশের বাইরে আছে, পোস্ট গ্রাজুয়েশন করছে। আমাকে নাকি অনেক আগে থেকেই মনে মনে খুব পছন্দ করে, বিয়েও করতে চায়। আমার বাচ্চা নিয়েও তার নাকি কোন প্রবলেম নাই," নিঝুম খুব গুরুত্ব নিয়ে কথাগুলো জানাল।

"কিন্তু আমার সাথেতো তোমার বিয়ে হয়ে গেছে, এখন কী করে ওকে বিয়ে করবে?" কোমরে হাত দিয়েবেশ হৃষ্টচিত্তে কথাটা বলল অরণ্য।

"আহারে ওটাতো আর সত্যিই সত্যিই হয়নি, লোক দেখানো... আর সত্যিটা হওয়ার আগেই বরঞ্চ  আমরা যার যার রাস্তা মাপি। তাতে তোমারও তোমার অনাকে পাওয়া হবে আর আমিও একটা সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে পাবো, যে সব বাঁধা উপেক্ষা করে আমাকে নিজের করে নিতে প্রস্তুত, কি বলো?"

অরণ্যর চোখদুটো ঘন তমসাচ্ছন্ন, ছলছল করছে নিজের অজান্তে। কী নিষ্ঠুর একটা মেয়ে নিঝুম? কী করে ওকে ভুলে গিয়ে আরেকটা বিয়ের, আরেকটা মানুষের কথা ভাবতে পারছে? ও তো ভাবতেও পারেনা ঝুমের জায়গায় অন্য কাউকে। এজন্যই বোধহয় গানের কলিতে ভারাক্রান্ত হৃদয়ের কষ্টগুলো ফুটিয়ে তুলে শিল্পীরা। নিঝুম কী তবে সত্যিই এত পাষানা?

" এক হৃদয়হীনার কাছে
হৃদয়ের দাম কী আছে
সে আছে নিজকে নিয়ে
আমি তো আপন দোষে
পেলাম শুধু অথৈ যন্ত্রণা

সে তো যাবে চলে
সবই যাবে ভুলে
নিঠুর সে সজনী
আমি যাব কেঁদে
তারেই সেধে সেধে
জেগে শুধু রজনী
নীরবে নীরবে"  (কথাঃ আব্দুল হাই আল-হাদী)

"অয়ন কিছু বলো? "

নিঝুমের কথায় ভিতরের ঈর্ষাটা আরও বহুগুন বাড়ল বই কমল না অরণ্যর। এই ফাহিমের বাচ্চা আবার কোথা থেকে এসে জুটল। এমনিতেই হালে পানি পাচ্ছে না ও তার উপর নতুন আর এক উপদ্রপ। রাগে গা টা কড়কড় করছে অরণ্যর। এই বিদেশে থাকা ছেলে গুলোর জন্যই ভাল মেয়েগুলো সব বিদেশে রপ্তানি হয়ে যায়... অসহ্য।

"অয়ন," অসম্ভব উদ্বিগ্নতা নিয়ে ডাকল নিঝুম। কিন্তু অরণ্যর কানে সেই শব্দ একদম কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লাগল।

"কী? এত একশবার অয়ন অয়ন করে ডাকবানাতো আমাকে," প্রায় খেঁকিয়ে উঠতে যাচ্ছিল অরণ্য। সব জায়গায় খালি প্যাচ আর প্যাচ, সুন্দর সকালটা এক্কেবারে শেষ হয়ে গেল ওর।

"আজব তাহলে কী বলব? ওগো, হ্যাগো বলার  মতো সম্পর্কও তো আমাদের হবে না। তুমিই তো বললে যে, কোনদিনও তুমি অহনার জায়গায় আমাকে বসাতে পারবেনা।  তাহলে অন্যের বরকে আর কী নামে ডাকব তাহলে?"

"কেন? অয়ন, অরণ্যর ভাই। সেই হিসেবে ও তোমার কিছু হয়না। "

"হয়, কিন্তু মৃত স্বামীর ভাইকে কী আর নিজের ভাইয়ের জায়গায় বসান যায়। আর দেবর মানেই দেখনা কী ভয়ংকর। নবিজি বলেছেন দেবর বিষতুল্য... কেন বলছেন এখন বুঝতে পারছি। ভালবাসবে না অথচ সারারাত শখ মিটিয়ে আমাকে ভোগ করলে আর এখন অনা আমার জান। যাকগে, তোমার আর তোমার অনা বেবির মধ্যে আমি আসতেও চাইনা। আমি ঢাকায় গিয়েই আব্বুকে বলবো যে আমি ফাহিম ভাইকেই বিয়ে করতে চাই। তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ভালোবাসবে না আবার এটো বাসনের মতো চেটে ফেলে রেখে দিবে আবার সময়ে ছোট ভাইয়ের মতো দেখতে বলবে... এত মিরাকল আমাকে দিয়ে হবে না।"

"ওহ.. তারমানে তুমি যা ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা চাইলেই বিয়ে করতে পারো, এত সহজ মনে হয় তোমার। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে অত সোজা না, বিয়ের কাবিনে তুমি নিজে দস্তখত করছিলা মাইন্ড ইট। আর ভোগ করছি মানে... আমার বউ আমি ভোগ করছি, যেমনে ইচ্ছা সেমনে ভোগ করছি, আরও করব। দরকার হলে চার হাত পা বেঁধে রেখে দিব দেখি কী করে ঢাকা যাও তুমি।"

নিঝুমের কথায় অসম্ভব জ্বালা হতে লাগল অরণ্যর। ওই ফাহিমের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতো অরণ্য ঐ ব্যাটা দেশে থাকলে। কত বড়ো সাহস ওর বউ বিয়ে করবে শয়তানটা, ইবলিশ কোথাকার।

"অরণ্য মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। অসভ্যাতামির একেবারে শেষ মাথায় চলে গিয়েছ। বেঁধে রাখবা মানে,আমি কী তোমার পোষা কুকুর নাকি?"

"আরে আগে তোমার নিজের ওই বড়ো বড়ো বুলি কপচানো বন্ধ করো। আমাকে এত জ্ঞান দিতে আসার দরকার নাই। আমি আইনের বাইরে কোন কাজ করিনা। কখন থেকে সেই ভোগ করছি ভোগ করছি...বা* নিজের বউয়ের সাথে শুইতেও বলে এত ঝামেলা পোহাইতে হয় মানুষকে। "

"কী... তুমি..  তোমার.. তোমার.. এত্ত সাহস," রাগে হাতে থাকা রজনীগন্ধার স্টিকগুলো ছুড়ে মারল নিঝুম, অরণ্যর মুখের মধ্যে।

"হ্যাঁ তো, বরিশালে যখন গেলাম তখন পুরো দেনমোহরের টাকা বুঝিয়ে দিছি না তোমাকে, তারপর আবার অন্যায় ভাবে ভোগ করলাম কোথ থেকে, হ্যাঁ?" অরণ্যও পুরো তেতে আছে, ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলছে ফনা তোলা সাপের মতো।

"হ্যাঁ, দেনমোহরের টাকাটা তুমি আমাকে দিছ ঠিকি কিন্তু কাবিনের কাগজটা তুমি আমার কাছ থেকে চেয়ে নিছিলানা?"

"হ্যাঁ তো ওটা তো আমার আলমারিতেই আছে, খুঁজে দেখা লাগেনা।"

বিরক্তির সাথে উত্তর দিল অরণ্য। ফালতু সব প্রশ্ন করে। কাবিন, কাবিন... মনে হয় ও ওটা নিয়ে  একেবারে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে।

"তো আমি আমার বিয়ের কাবিন তোমার আলমারিতে খুঁজব কেন? "

"তো কোথায় খুঁজবা? জাতীয় জাদুঘরে? "

" আমি কী অরণ্যর আলমারিতে খুঁজব? "

"হ্যাঁ... আমিতো তাই বললাম। আমাদের বিয়ের কাবিন তো আমাদের ঘরেই থাকবে, তাই না? "

"ওহ, আমি ভেবেছিলাম ওটা হারিয়ে গেছে। তুমি যত্ন করে রেখে দিয়েছ জানলে তো আর এত চিন্তা করতাম না।"

"তুমি আমাকে অনেক আন্ডার এস্টিমেট কর ঝুম, তোমার অরণ্য এত কাঁচা কাজ কখনো করেনা," অরণ্য স্বদর্পে একটা মুচকি হাসি দিল। নিঝুম বোধহয় এবারের মতো পরাস্ত হলো ঝগড়ায়।

"হুমম... তাই দেখছি। আমার অরণ্য যখন কাউকে নিয়ে খেলে তখন একদম তার ঠোঁটদুটো নিয়েই খেলে, একদম কাঁচা কাজ করেনা এমনকি সেটা নিজের বাড়ির গ্যারেজের  সামনে হলেও না, মৃত ভাইয়ের প্রেমিকা হলেও না, ভীষন পাকা খেলোয়ার সে," অরণ্যর চোখের দিকে থেমে থেমে খুব স্পষ্ট আর শান্ত গলায় কথাগুলো বলল নিঝুম।

একশ ওয়াটের শক খেল যেন অরণ্য। হায় হায় বলে কী...? অহনার সাথে কী ওকে দেখে ফেলেছে নিঝুম! এখন কূ হবে... আর... আর এতক্ষণের বাক্যালাপের সময় হুশ জ্ঞান সব খুইয়ে বসেছিল ও। নিজের মুখেই তো গাধার মতো সব উগরে দিয়েছে...  এখন কী করে সব সামাল দিবে ও। এ কি সর্বনাশ হলো অরণ্য তোর।

নিঝুমের চোখগুলো একদম অ্যাম্বুলেন্সের সিগনাল লাইটের মতো জ্বলছে,ভয়ে হাত-পা সব  অসাড় হয়ে এলো অরণ্যর।

"ঝুম...লক্ষী বউ... আমার কথা একটাবার জন্য একটু শোন। আমি সব তোমাকে খুলে বলছি," ঢোক গিলতে গিলতে কোনমতে এই কথাটুকু বলতে পারল অরণ্য।

চলবে....

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro