Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৩৪

"তুমি এটা কী করলা নিঝুম? তুমি.. তুমি আমাকে কিস করলা কোন সাহসে? " এক ধাক্কা দিয়ে নিঝুমকে দূরে সরিয়ে দিল অয়ন। প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেও এখন রাগে লাল টকটক করছে ওর  ফর্সা মুখটা।

অরণ্যকে এরকম রাগতে দেখে ভড়কে গেল নিঝুম। অরন্য এরকম উদ্ভট আচরন কেন করছে ওর সাথে কাল থেকে? আদর তো করছেই না শুধু দূরে দূরে থাকছে আর এখন আদরও করছে না। এরকম হওয়ার কথা ছিল নাকি ওদের বিয়ের প্রথম দিনটা? বাজে একটা লোক, মিথ্যুকের হাড্ডি। রাগে দুঃখে চোখে পানি এসে গেল ওর অভিমানে.....

" কেন কী এমন করেছি আমি? তোমাকে চুমো খেতে গেলেও আবার আমার কোর্ট থেকে পারমিশন নেওয়া লাগবে নাকি? একশটা কাগজে তো সাইন করলাম, তাউ এখনো সত্যিকারের বউ হতে পারলাম না।"

কিন্তু নিঝুমের চোখের পানিও এবার অয়নের রাগকে কমাতে পারলনা। এক ঝটকায় দরজাটা খুলে ফুঁসতে ফুঁসতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল ও। নিঝুম নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল, ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। লোকটা কী পাগল হয়ে গেল?

"আম্মু তুমি নিঝুমকে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখাও তো।"

অভিযোগ যেন গুমরে মরছে অয়নের কন্ঠস্বর জুড়ে... যেমন ছোট বেলায় অরণ্যর বল হারিয়ে গেলে করত। আসমা বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ছেলের মুখের দিকে। মন কী শুধুই প্রকৃতিতে হারিয়ে যাওয়া ঘটনাগুলোকে ফিরিয়ো আনতে চায়? উৎকন্ঠিত হয়ে আসমা জানতে চান,
"কেন বাবা কী হয়েছে? "

যেন অয়ন নয়, তার সামনে ছোট্ট অরণ্য এসে দাঁড়িয়েছে... হাতে তার কালি ঝুল মাখা প্রিয় বলটা।

"আরে ও... ও... মানে.. মানে "

" এত মানে মানে করছিস কেন? "

আসমা স্মৃতির পাতা ঠেলে সামনে এগিয়ে আসেন। অয়নের কোন সমস্যা হচ্ছে বোধহয়।

"না, কিছু না... কিন্তু তুমি নিঝুমকে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে আম্মু... অথবা ওকে তুমি ওর বাবার বাসায় পাঠিয়ে দাও। এখানে ওর পাগলামি আরো বেড়ে যাচ্ছে। "

"ঠিকআছে পাঠিয়ে দিব কিন্তু তোকেও কিন্তু ওর সাথে যেতে হচ্ছে, কাল ছোটখাট একটা বৌভাত করে পাঠিয়ে দিব," আসমা হাসতে হাসতে বললেন।

অয়ন ভ্রুজোড়া কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল," তার মানে? কিসের বৌভাত? আম্মু এরকম কোন কথা কিন্তু ছিলনা। আ... আমি ওই সব নাটক আর করতে পারবনা মিথ্যামিথ্যি, আমার ভীষন বাজে লাগছে।"

"এখন বাজে লাগলে তো হবে না বাপ, নাটক একবার যখন শুরু করেছি তখন তার শেষ তো আমাদেরই করতে হবে। ভালো লাগুক আর না লাগুক। আর মিথ্যামিথ্যির কি হলো? এখন এক বছর পরে হলেও তো বিয়েটা করবি আর নিঝুমকেই করবি, তাহলে অনুষ্ঠানগুলো এখন হোকনা...ক্ষতি কী? " আসমার সাফ কথা।

"আম্মু তুমি বুঝতে পারছনা এক বছর অনেক সময়। "

"আমি বেশ বুঝতে পারছি, তুই বরং ঢাকার বাইরে  কোথাও পোস্টিং নিয়ে নিঝুমকে এখান থেকে দূরে নিয়ে যা। লোকজন বাচ্চাটাকে নিয়ে কানাঘুষা করার আগেই ওকে দূরে নিয়ে যা।

"কী বলছ আম্মু... আমি দূরে কোথাও, একা একা নিঝুমকে নিয়ে কিভাবে কী করব?"

"কী করব মানে.. বউ নিয়ে সংসার করবি। "

"আম্মু আমি আর নিঝুম কিভাবে? "

"অয়ন আর একটা কথা বাড়াবি না, অন্য স্বামী -স্ত্রী যেভাবে সংসার করে সেভাবে করবি, তোর বাবা আর আমি যেভাবে সংসার করেছি সেভাবে করবি। তোর বাবা যখন আমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে তখন আমি শুধু ডিম সিদ্ধ করতে জানতাম, সেই তুলনায় নিঝুম যথেষ্ট বড়ো আর ম্যাচিউর। "

মার কথায় অয়ন ভিতরে ভিতরে ঘেমে পুরো একাকার হয়ে গেল। নিঝুম আর ও একা! এরকম হলে তো মহাবিপদ, একা একা থাকলে নিঝুমকে ও নিয়ন্ত্রণ করবে  কী করে? আর অহনাকেই বা কী করে সামাল দিবে?

"কিন্তু আমার সাথে থাকলে যদি বিপদ হয়? "

"কিসের বিপদ?"

"না, মানে একা একা থাকলে এই অবস্থায় অনেক সময় অনেকের বিপদ হয় শুনেছি। আমিতো বিভিন্ন কাজে বাসার বাইরে থাকবো, একা নিঝুম কোন বিপদে পড়লে কী হবে?"

আসমা মনে মনে হাসলেন। অয়ন ঠিক যতোটা

"তখন আল্লাহ দেখবে... কিন্তু তার আগ পর্যন্ত তুই দেখ।"

অয়ন যুতসই কোনো উত্তর না পেয়ে ঘুরে নিজের ঘরে চলে এল। রাগে ওর গাটা রি রি করছে। নিঝুমের এতে কোন দোষ নেই জানে ও কিন্তু তারপরও সম্পূর্ণ রাগটা নিঝুমের উপরই গিয়ে পড়ল ওর।  বিছানার পায়ের কাছে একটা পানির বোতল ছিল, লাথি দিয়ে ওটাকে একদম বিছানার নিচে পাঠিয়ে দিল ও। কী আশ্চর্য? এত সহজেই অরণ্যকে বেমালুম কী করে ভুলে যেতে পারল নিঝুম। অরণ্যর প্রতি নিঝুমের ভালবাসাটায় কী তাহলে খাঁদ ছিল? এত সহজেই  কী করে সব ভুলে গেল। একবুক বিতৃষ্ণা নিয়ে নিজের গাল ঠোঁট গুলোকে আবারো মুছতে লাগল ও।

...................................................

রায়হান সাহেব  চুপ করে হাতের ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছেন। ইউনিফর্ম পড়া অবস্থায় ছেলেটা তার রক্তের মাঝে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। চুলগুলো রক্তে ভিজে জমাটবদ্ধ হয়ে গেছে। রায়হান সাহেব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবটা দেখলেন, আজকাল এই ছবিগুলো তাকে প্রায়শই দেখতে হয়... কোনমতে মাথা নেড়ে সায় দিলেন তিনি।

অফিসার আরেকটা ছবি বের করলেন। এটা অরণ্যর শেষকৃত্যের। তাতে চার জন লোককে আলাদা আলাদা গোল বৃত্তদিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না। অফিসার কেবল বললেন, এরা তার পরিচিত কিনা? কিন্তু রায়হান সাহেব এদের কাউকে আগে কখনও দেখেছেন কিনা মনে করতে পারছেন না। জানাজা পড়ানোর সময় জায়গাটায় বেশ কড়া পাহারা ছিল, কিন্তু তার পরেও যদি সেটা ভেদ করে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করতে পারে... তাহলে অরণ্য যে বাঘের থাবাতেই হাত দিয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তিনি এদের কাউকেই চিনেন না। আগে কখনো দেখেছেন বলেও মনে হয় না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়লেন রায়হান সাহেব। এদের কাউকেই তিনি আসলে চিনতে পারছেন না।

"ঠিক আছে, ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। আমরা এদের সাসপেক্ট করছি, কিন্তু মার্ডার করার পরও কেন ওরা অরণ্যর পিছু ছাড়েনি সেটাই আমাদের প্রশ্ন," টেবিলের আরেক মাথায় বসা অফিসারটি চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন।

" আমি খেয়াল রাখব," রায়হান সাহেব বুঝতে পারছেন না, তার পরিবার কি এখনো বিপদের মধ্যেই আছে!

" রায়হান সাহেব আমরা মাঝে মাঝেই আপনাকে কেসটার বিষয়ে একটু বিরক্ত করব, তখন আমাদের একটু সময় দিতে হবে আপনাকে।"

মাথা দুলিয়ে বিমর্ষ মুখে বের হয়ে আসলেন রায়হান সাহেব। নিঝুমের কথা মনে হলো... ওর সাথে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলেন তিনি ঢাকার বাইরে যাবার ব্যাপারে কিন্তু তারাহুরো করে চলে আসাতে.. ভুলে না বলেই চলে এসেছেন।

আসলে ওদের ভালোর জন্যই এখন অয়ন আর নিঝুমকে ঢাকার বাইরে পাঠাতে চান তিনি আর আসমা। তারপরও কেসের সাক্ষী হিসেবে অয়নকে হয়তো আসতে হবে মাঝে মাঝেই, কিন্তু অয়ন আসলে তেমন কিছু জানেনা। দুর্ভাগ্যবশত ও কেবল তখন অরণ্যর সাথে ছিল সে সময়। তবুও সেটাই ওর কাল হয়েছে। ধরাধরি করে এখন অয়নের পোস্টিংটা জায়গামতো করানটাই যেন বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য।

...............................................................

সারাদিন চুপচাপ নিজের মতো সময় কাটালো নিঝুম। অয়নের দিকে তো তাকালোই না... এমনকি ওর সাথে একটা কথা পর্যন্ত সে বললো না। অয়নও আগ বাড়িয়ে আর কথা বলতে যায়নি নিঝুমের সাথে। সকালের ওই দৃশ্যটা মনে হলেই ওর মাথায় আগুন জ্বলছে... মন বলছে হিপোক্রেট  একটা।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট অরণ্যকে দেখতে পাচ্ছিল নিঝুম। ঢং.. এমন ভাব করছে যেন কোনদিন ওর ঠোঁট সে ছোঁয়নি অথচ এখন বাবা-মায়ের সামনে আবার সাধু সাজছে।

থাকবে না নিঝুম এমন মিথ্যাবাদী লোকের কাছে.. যে দিকে দুচোখ যায় চলে যাবে ও... তারপর আর কোনোদিনও এখানে ফিরে আসবে না। অভিমানে ভারী হয়ে আসে নিঝুমের চোখের পাতা। অরণ্য বদলে গেছে..  একদম বদলে গেছে।

রাতে খাবার টেবিলে বসে রায়হান সাহেব নিঝুমের সাথে অনেক বিষয় নিয়ে কথা বললেন, কিন্তু সত্যি বলতে পুরো ব্যাপারটাই নিঝুমের মাথার উপর দিয়ে গেল। কী সব বিপদের কথা বললেন শ্বশুর তার বেশিরভাগই ওর বোধগম্য হলোনা, তার উপর ওই বিশ্বাসঘাতকটার সাথে.. নো, নেভার।

"বাবা আমি এখান থেকে কোথাও যাব না, ওর সাথে তো যাবই না, কোনোদিনও যাব না," ইতস্তত ভাবে বলেই ফেলল নিঝুম।

"কেন মামনি... ও আবার কোন দুষ্টুমি  করেছে বুঝি? "

"না তোমার ছেলে আমাকে বকেছে, অনেক জোরে জোরে। আমি কিছু করিনি বাবা, তারপরও বকেছে।"

নিঝুমের গাল ফোলানো দেখে রায়হান সাহেব মুচকি হাসলেন, " এতো বড়ো অন্যায় কথা, আমার মামনিকে বকেছে... এত বড়ো বুকের পাটাটা কার একবার দেখিতো।"

বাবার কথায় অয়ন একবার মাথা তুলে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনযোগ দিল। নিঝুমের এই ফ্যাক্টরটাকে ও যত মনযোগ দিবে ততোই নিঝুমের  আহ্লাদীপনা বাড়তে থাকবে আর এই মুহূর্তে ওর এগুলো নিয়ে ভাবার মোটেই সময় নেই।

তারপর আবার কাল বৌভাতের নকল অনুষ্ঠান...  ওর মেজাজ খুব গরম হচ্ছে। নিঝুমদের বাসায় এমনি একদল খুব ফাজিল মেয়ে আছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে খুব বাড়তি ঝামেলা করছিল... কাল বৌভাতে আবার নতুন কোন শয়তানি শুরু করে কে জানে।

সবাই চুপচাপ নিজের মতো খাচ্ছিল.. হঠাত আসমার কথায় অয়নের মাথায় যেন ফুল ভোল্টোজে  বাজ পড়ল।

" তুই বৌভাত থেকে ফিরে নিঝুমকে নিয়ে সোজা শ্রীমঙ্গলে চলে যাবি। আমরা তোর আনিস মামাকে দিয়ে তোর পোস্টিংটা বছর খানেকের জন্য ঢাকার বাইরে করানোর চেষ্টা করছি, তার আগ পর্যন্ত কয়দিন তোরা ওখানে গিয়ে থাক।"

"আম্মু তুমি কী সিরিয়াস পোস্টিং এর ব্যাপারে?" অয়ন হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করল। সবাই যার যা ইচ্ছে হচ্ছে করছে। ওকে সবাই কলে দম দেওয়া পুতুল পেয়েছে নাকি? 

" হ্যাঁ"

উত্তরটা আসমার পরিবর্তে রায়হান সাহেব দিলেন। "পরিবারের নতুন সদস্যের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা এটা করতে বাধ্য হচ্ছি, আর বেশিদিনের ব্যাপার তো নয়... মাত্র একবছর।"

"কিন্তু বাবা আমাকে অ্যাম্বাসি থেকে যে কোন সময় কল করতে পারে, তখন? "

"তুমি তো বাংলাদেশেই থাকছ, চিটাগং থেকে আসতে আর কতক্ষণ লাগে?"

বাবার কথায় মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল অয়নের,"বাবা পোস্টিংটা তাহলে কুমিল্লাতে করা যায় কিনা দেখো, ওখান থেকে সবদিকে দ্রুত মুভ করা যায়।"

রায়হান সাহেব ছেলের কথায় থমকে গেলেন, "কিন্তু আমি তো তোর আনিস মামাকে চিটাগাং এর কথা বলেছি। উনিতো বোধহয় এতক্ষনে কথাও বলে ফেলেছেন তোর পোস্টিং এর ব্যাপারে।"

"ওহ... তাহলে থাক।"

"হমম...।"

অয়ন আর কথা বাড়াল না, হাত ধুয়ে যথারীতি নিজের ঘরের দিকে এগুলো।

নিঝুম আড়চোখে পুরো ব্যাপারটা দেখল।
"যা ব্যাটা, যেয়ে ওই খোপের মধ্যে ঢুকে তাড়াতাড়ি... পারলে ছিটকিনি দে। নইলে মানুষ আবার আমাকে শেয়াল ভাববে," রাগে বিরবির করতে করতে চেয়ার ছাড়ল ও। "আম্মু  ওর সাথে আমি কোথাও যাব না, ওর শ্রীমঙ্গলে ওই যাক।"

আসমা চুপচাপ পুরো বিষয়টা দেখলেন। এই দুটোর সত্যিকারের জোড় বাঁধতে কতদিন সময় লাগবে কে জানে? তবু ধৈর্য তাদের ধরতেই হবে। বুক চিরে একটা দীর্ঘনিশ্বাস বের হয়ে এল আসমার। আজ অয়নের জায়গায় অরণ্য হলে নিঝুমকে বোধহয় কোলে তুলে নাচতে নাচতে চলে যেত ওনারা বলার আগেই... নিঝুমের জন্য হঠাত খুব মন খারাপ হলো আসমার।

................................................

পুরো বৌভাতের অনুষ্ঠানে অয়নের মুখটা দেখার মতো ছিল। একমাত্র আশু ছাড়া নিঝুমের কাজিনগুলো প্রায় সারাক্ষণই ওকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করছিল। বহু কষ্টে অয়ন মুখে একটা মেকি হাসি ঝুলিয়ে রাখতে সক্ষম হলো, কিন্তু নিঝুম দূর থেকেও ওর মুখের কটমট চাহনি ঠিক ধরতে পারছিল।

"খবিশ কোথাকার... ম্যানার্স সব ধুয়ে খাইসে। আশু তোর জিজুরে বল, একদিন শালা-শালীরা এমন একটু দুষ্টামি করেই,তাতে এরকম গরু চোরের মতো মুখ বানানোর কিছু হয় নাই। "

"আচ্ছা বলবনি আপু, তুমি এখন একটু শান্ত হও," আশু বিরস মুখে উত্তর দিল। অয়ন বেচারা অহনাকে পছন্দ করে জানে আশু, নিঝুমই বলেছিল ওকে একদিন। জিজু ওরকম  হুট করে মরে গিয়ে ওদের পুরো পরিবারটাকে একদম শেষ করে দিয়ে গেছে। আপুর মাথাটা একদম উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। আপু এখনও কোনভাবেই বিশ্বাস করে না যে এটা অয়ন, তার অরণ্য না।

বৌভাতের পরে নিঝুমদের বাসায় যেতে অয়ন এতোই বেঁকে বসল যে, শেষ পর্যন্ত ওদের না  নিয়েই শাহেদরা ফিরে গেলেন। নিঝুমের পুরো পরিবার  প্রথমে বেশ আপত্তি জানালেও পরে শাহেদ আর রুমানার কথায় ব্যাপারটা মেনে নিলেন। চোখের পানিতে বাবা - মাকে বিদায় দিল নিঝুম। মনেমনে অরণ্যর প্রতি সেই রকম রাগ হলো ওর, " আজকে এই লোকের একটা হেস্তনেস্ত না করলেই নয়।"

অয়ন মাত্রই কাপড় পাল্টাচ্ছিল, অমনি দুম করে নিঝুম ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিল ভিতর থেকে। একেতো সারাদিন অনিচ্ছা সত্বেও সঙের মতো কাপড় চোপর পরে থাকতে হয়েছে ওকে,তারমধ্যে নিঝুমের এরকম থমথমে মুখ দেখে মেজাজ আরও সপ্তমে চড়ল ওর। বেশ কড়া গলায় বলে উঠল," কি ব্যাপার দরজা কেন বন্ধ করলে? আর... আর এই ঘরে কার অনুমতি নিয়ে ঢুকেছ তুমি? দেখছ না যে আমি কাপড় পাল্টাচ্ছি। "

"অনুমতি! কিসের অনুমতি? আর অনুমতি একশবার করে নিতে হয় নাকি? সেদিনই তো বিয়ে করলাম।আর কাপড় পাল্টাচ্ছো তো সমস্যা কী, আমি কী ভিডিও করে সেটা ভাইরাল করছি নাকি মানুষের মধ্যে? "

"নিঝুম ওটা নকল বিয়ে... ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করো।"

"হোয়াট! এতদিন পরে এসে আমাদের বিয়ে তোমার কাছে নকল মনে হচ্ছে? তাহলে তুমি আমাকে যে বিয়ের কাবিন দিয়েছিল ওটাও নকল ছিল বলো? আর আমাদের বাচ্চা ও.. ও.. ওর কোনো পরিচয় নেই সমাজে?"

"এটা কেমন কথা বলছ? নিঝুম ওটা ভাইয়া আর তোমার বিয়ের কাগজ ছিল। কিন্তু আমি অরণ্য নই,আমি অয়ন। আমি..  আমি তোমাকে নয় অহনা, মানে আমার অনাকে ভালোবাসি।ব্যাপারটা  একটু বোঝার চেষ্টা কর।"

"মিথ্যে কথা," নিঝুম অবিশ্বাসের সাথে বলে উঠল।। অরণ্য এ কী ধরনের নোংরা দুষ্টামি করছে ওর সাথে? ও জানে ওর অরণ্য মরেনি তবু কেন ওরা বার বার মিথ্যে বলছে?

"নিঝু.....মম।"

"ব্যাস! আর একটা কথা বাড়াবে না। তুমি নিজেকে অয়ন কেন বলছ কে জানে কিন্তু আমি আমার অরণ্যকে চিনি। আর আমার সাথে লুকোচুরি খেলবে না, এই খেলাটা আমি একদম ঘেন্না করি।"

"সরি টু সে... বাট তুমি ইম্পসিবল একটা কথাকে বিলিভ করে বসে আছো নিঝুম, আর সবাইকে সেটা বিশ্বাস করানোর বৃথা চেষ্টা করছ। আমি অয়ন, অরণ্যর জমজ ভাই।"

"মোটেও না। "

"তোমার উপর আমার এখন করুনা হচ্ছে।"

এরপর হতভম্ব নিঝুমকে একা রেখেই ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেল অয়ন।

......................................................

আচ্ছা এটা কী সত্যি অয়ন? নিঝুমের মাথা ঘুরছে, দম আবার বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু ওইদিন যে আবার বিয়ে হলো! অয়ন ওকে বিয়ে কেন করবে? কিন্তু ওর অরণ্যও তো ওর সাথে এমন আচরন কখনো করতে পারে না? কিন্তু... কিন্তু অরণ্য তাহলে কোথায়? সবাই বলে অরণ্য মরে গেছে। সেটা কী তাহলে সত্যি! কিন্তু অরণ্য তাহলে ওকে না নিয়ে, না বলে চলে গেল কেন? ও এখন কোথায় খুঁজবে ওকে?

"Main rahoon ya na rahoon
Tum mujh mein kahin baaki rehna
Mujhe neend aaye jo aakhiri
Tum khwabon mein aate rehna
Bas itna hai tumse kehna"

মন খারাপ করে আবারো অরণ্যর ফোন নম্বরে ডায়াল করল নিঝুম। একই কথা নট রিচেবল,নট রিচেবল। অসহ্য.. যেমন নিজে একটা নিষ্ঠুর লোক, ঠিক তেমনি তার মোবাইলটা,আছড়ে ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হয়।

"Kisi roz baarish jo aaye
Samajh lena boondon mein main hoon
Subah dhoop tumko sataaye
Samajh lena kirno mein main hoon
Kuch kahun ya na kahun
Tum mujhko sada sunte rehna
Bas itna hai tumse kehna"

শেষ পর্যন্ত ফোনের অ্যালবামে যেয়ে ওর আর অরণ্যর তোলা কিছু ছবি আছে সেগুলো শুয়ে শুয়ে দেখতে লাগল নিঝুম। দেখতে দেখতেই ওর মনে পড়লো অরণ্যর খুব ছবি তোলার বাতিক আছে। কিছু হলেই ফট করে সেলফি তোলে। ওদের অনেক সেলফি আছে অরণ্যর ফোনে। আচ্ছা অরণ্যর ফোনটা কোথায়? আম্মুর কাছে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে নিশ্চই । দ্রুত বিছানা ছেড়ে শাশুড়ির ঘরে চলল ও ফোনের হদিশ বের করার জন্য।

"Hawaaon mein lipta hua main
Guzar jaaunga tumko chhu ke
Agar mann ho to rok lena
Thehar jaaunga in labon pe"

অয়নের ঘর পার হবার সময়, থমকে দাঁড়াতে হলো নিঝুমকে। ওর অত্যাচারে বেচারা বোধহয় ফোনটা   ঘরেই ফেলে রেখে যেতে বাধ্য হয়েছে। ফোনটা একইভাবে বেজেই চলেছে অসহায়ের মতো। বিনা অনুমতিতে ঐ ঘরে ঢুকবে কী ঢুকবে না করতে করতে শেষ পর্যন্ত আবার  ঢুকেই পড়ল নিঝুম। মোবাইলটা হাতে নিতেই চোখে পড়ল কম করে ষোলটা মিসড কল এসেছে ফোনটায় আর তাতে যে নামটা উঠে আছে তাতে অহনার নাম স্পষ্ট। নামটা চোখে পড়তেই চোখ ঝাপসা হয়ে এল নিঝুমের। অহনা নামের মেয়েটা ততক্ষণে আবারো কল দিচ্ছে, তাড়াতাড়ি ফোনটা নিয়ে ফোনের মালিককে খুঁজতে লাগল নিঝুম। ওর অত্যাচারেই নিজের ঘর ছাড়তে হয়েছে অয়নকে, মনে মনে নিজেকে খুব ছোট মনের মনে হলো নিঝুমের।

"Main dikhu ya na dikhu
Tum mujhko mehsoos karna
Bas itna hai tumse kehna
Bas itna hai tumse kehna"

সবাই যতই আশা করুক না কেন, এটা যদি সত্যিই অয়ন হয় তো ও কিছুতেই এই বিয়ে করবে না। এক অরণ্যকে ভোলা ওর জন্য অসম্ভব, দ্বিতীয়ত ওর একার জন্য অয়ন আর অহনার জীবন নষ্ট করতে ও চায়না। ওর বাচ্চার বাবা অরণ্য রহমান, অরণ্য রহমানই থাকবে। কারও সাধ্য নেই এই সত্য পাল্টাবার। আর অয়ন যদি ওর বাচ্চার বাবা হতে পারে তাহলে চাচা হয়েও ওর বাচ্চাকে দেখবে। এটুকু অনুরোধ নিঝুম করতেই পারে অয়নকে।

মনটা এত খারাপ হয়ে আছে যে এই মুহুর্তে একটা কথাও কারো সাথে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না অয়নের। নিঝুমের উপর রাগ করে  ছাদে এসে বসার কারনে মশার কামড়ে পা ফুলে গেছে.. তাও উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না ওর। সবচেয়ে খারাপ লাগছে নিঝুমকে বকার জন্য। মেয়েটার এতে কোনো দোষই নেই আর ওকেই সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে।

"সরি... রিয়েলি সরি, আর যাই হোক না কেন তোমাকে কখনও দুঃখ দিতে চাইনি। কিন্তু কিছু জিনিস নিজের আওতার মধ্যে থাকেনা। আবারো অনেকগুলা সরি।" আঙুল দিয়ে চোখের কোনের জমে থাকা পানির ফোঁটাটা মুছল ও।

"Main rahun ya na rahun
Tum mujh mein kahin baaki rehna"

চলবে.......

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro