Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

২৯

"আপনারা কী জমজ ছিলেন?"

"জি..."

"আপনার নামটা জানতে পারি?"

অনেকটা সময় চুপ থেকে খুব বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের নামটা উচ্চারন করল মানুষটা... অয়ন রহমান।

"আমরা খুবই দুঃখিত অয়ন সাহেব, আপনার ভাই আসলে তখনই মারা গিয়েছেন.. স্পটেই। আমাদের হাতে চেষ্টা করার মতোও কিছু ছিল না।"

টুপ করে একফোঁটা নোনতা জল বোধহয় বশ মানতে না পেরে গড়িয়ে পড়লো ছেলেটার অবাধ্য চোখদুটোর মায়াবী কোল ধরে। একটা নাম আজীবনের জন্য শূন্যে লীন হয়ে গেল.. একদম ধরা ছোঁয়ার বাইরে, আর কোনদিন সেই কন্ঠের মায়া ডাক শোনা হবেনা.. অনুভূতিটা ঠিক সামলে উঠতে পারছিলনা সে।

এতটা কষ্ট আগে কবে হয়েছিল মনে নেই ওর। দু'হাত দিয়ে নিজের চোখদুটা চেপে ধরে, কান্না মাখানো স্বরে বলে উঠলো, " আমার ভাই আমায় আর কোনদিন জড়িয়ে ধরবে না ডক্টর, সব শেষ। আমি আমার মাকে এখন কী জবাব দেব?"

ডাক্তার সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না। কী বলবেন, কোনো সান্ত্বনাই আসলে এ সময়ে একটা মানুষ শান্ত করতে পারেনা।

বুক পকেটে রাখা মোবাইলটা তখনও অনবরত বেজেই চলেছে... অয়ন ওটা বের করতেই দেখল, অহনা নামের মেয়েটা একভাবে ফোন দিয়েই যাচ্ছে.. দিয়েই যাচ্ছে।

.

.

.

.

.

তিন মাস পরের কোন এক পড়ন্ত বিকেলে......

"নিঝু, এই কাপড়টা পরে নে মা," মার কথায় রুমানার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল নিঝুম। চোখমুখ ঈষত কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করল, কী বলছে মা।

রুমানা হাতে গোলাপি একটা শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শাড়ির দিকে তাকিয়ে আবারও অবাক হলো নিঝুম। এত কারুকাজ কেন এই শাড়িতে? কেমন বিয়ের শাড়ির মতো দেখতে। ওর খুব হাসি পেল। কাল আশু এসে ওকে ধরে হাউমাউ করে খুব কাঁদল। কেন যে অত কাঁদল বুঝল না নিঝুম। কিন্তু ওর খুব বিরক্ত লাগছিল... আজব! আরে এত ভেউভেউ করে কাঁদার কি আছে?

"নিঝু শোন মা, ওরা এসে পড়বে।"

"কারা? ট্রাম্পের লোকজন?নাকি এডিস মশা? " বলেই মুখ চাপল নিঝুম। মার এবার খুব রাগ হবার কথা হিসেব অনুযায়ী।

"নিঝুম আমার কথা শোন, বিয়েটা এখানে না হলে অন্য কোথাও হবে। সেখানে তোর বাচ্চাটা আরও অনাদরে থাকবে, তুই কী তাই চাস?"

মার এই কথায় থমকে গেল নিঝুম। মাথাটা আবার ঝিমঝিম করে উঠলো ওর। দূর ছাই.. কী সব জেন বলেছিল মা তখন ভুলে গেছে নিঝুম। আজকাল সব কেমন ভুলে যায় ও। কিন্তু এই অরণ্য... উহ্, এখনও আসছেনা কেন? বাজে একটা লোক। ওকে যেতে বলল, তারপর কোথায় যে গেল? নিঝুম খুঁজেও পায় না আর সে নিজেও আসে না। পচা একটা লোক। বাচ্চাটা কবে ফট করে বড়ো হয়ে বাবাকে খুঁজবে... তখন নিঝুম কাকে ধরে আনবে ওর সামনে?

"নিঝু আমার কথা শোন মা," রুমানা হতাশ গলায় বলতে থাকে। নিঝুমকে গত তিনমাস ধরে বলেও কোনো ফল হয়নি। মেয়েটা কোন কথা ভাল করে শোনেও না, বোঝে কী বোঝে না তাও ঠিকমত বোঝেন না। মেয়ে তার পুরো না হলেও আধপাগলা হয় গেছে। মেয়ে তার কোনভাবেই বিশ্বাস করেনা যে অরণ্য নেই। ওনারা যখন ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেন তখন মনযোগ দিয়ে শুনে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে কিন্তু তারপর আবার যেই কী সেই, একি অভিযোগ, "অরণ্য এখনও আসলনা, বাবুটা বড়ো হয়ে যাচ্ছে....মা ওকে আসতে বলো এক্ষুনি।"

রুমানা আর সহ্য করতে পারছেন না। এদিকে নিঝুমের পেট আর কত ঢেকে রাখবেন। ও বাইরে মোটেই যায় না বলে এখনও অত সমস্যা হয়নি, কিন্তু ওর ফুপিদের সামনে সেদিন একদম জলজ্যান্ত মিথ্যে কথা বলতে হয়েছে রুমানাকে।

গত মঙ্গলবারে দিলারা আপা তার ছোট মেয়ে দীনাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিল। নিঝুম তাদের সামনে খেতে খেতেই হটাৎ হক হক করে সব উগরে দিল টেবিলেই। ভয়ে রুমানার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস আশু সময়মত দৌড়ে এসেছে বলেছিল, "মা আপুকে চটপটিতে অত টক খেতে কিন্তু আমি মানা করেছিলাম কিন্তু আপু সেটা শুনলে তো... এখন এত এসিডিটি হলে তো এমন বমি হবেই। "

রুমানা তাড়াতাড়ি স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। আশুকে ইশারায় নিঝুমকে ঘরে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু এভাবে কতদিন? এক সময় না এক সময় তো থলির বেড়াল বের হবেই, তখন?

শেষ পর্যন্ত অরণ্যর পরিবারের সাথেই আবার যোগাযোগ করতে বাধ্য হলেন। সত্যি বলতে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে যে না পারছেন অরণ্যকে পুরোপুরি দোষারোপ করতে কিন্তু ওর জন্য এখন তাদের পরিবারে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেটা আরো ভয়াবহ হবে যদি এরমধ্যে অরণ্যর পরিবার কোনো উপযুক্ত সিদ্ধান্ত না নেয়।

রায়হান ভাই আর আসমা আপাকে অয়নের সাথে নিঝুমের বিয়ের কথা বলতে বাধ্য হয়েছেম রুমানা আর শাহেদ। এছাড়া কোনো পথই তাদের মাথায় আসেনি। বাচ্চাটাকে অ্যাবরশন করিয়ে ফেলতে পারতেন কিন্তু একেত অরণ্য নাই... এরপর বাচ্চা না থাকলে মেয়ে যদি পুরোপুরি পাগল হয়ে যায়।তাছাড়া অরণ্যর পরিবারও বাচ্চার বিষয়টা জানে। নাতির উপর তাদেরও বরাবর হক আছে।

নিঝুমের সাথে অয়নের বিয়ের কথা বলার আগে অনেক সাত পাঁচ ভেবেছেন রুমানা আর শাহেদ। অয়নের কোনো পছন্দ আছে কিনা জানেন না তারা। থাকলে নিঝুম হয়ত অনেক সাফার করবে, কিন্তু এই মুহূর্তে শুধু নিঝুম নয় পুরো পরিবার সাথে বাচ্চাটার ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাদের আর এক্ষেত্রে অয়নের চেয়ে ভাল বিকল্প আর নেই।

রুমানা প্রস্তাবটা দেয়ার পরে আসমারা খুব অসহায় ভাবে তাকিয়েছিল। খারাপ রুমানারও যে লাগেনি, তা নয়। অরণ্যকে মনে মনে তিনি নিজেও ছেলের মতো ভালোবেসে ফেলেছিলেন।কিন্তু ওর ওই পুলিশের চাকরিটাই রুমানার মোটে পছন্দ ছিল না। তারচেয়ে বরং অয়ন ব্যাংকে চাকরি করে,ঝুট ঝামেলা বিহীন। ভালো বেতনের সাথে সাথে লোন টোনেরও অনেক সুবিধা আছে। এখন অয়নের সাথে নিঝুমের একটু মনের মিল হলে হয় তাদের দুশ্চিন্তাটা একটু কমতো। সময়ের সাথে সাথে মেয়েটার পাগলামি।দিনকে দিন খালি বেড়েই চলেছে।

কিন্তু অয়নকে কিছুতেই রাজি করান গেল না৷ সে না বলার পরিস্কার কোনো ব্যাখা দেয়না, শুধু বলে এ হয় না। ওর সেই একই কথা, নিঝুম তো শুধু অরণ্যর জন্য... আর শুধু কাঁদে। আসমা ছেলের সাথে রাগ করে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শেষে রুমানারাই হার মানতে বাধ্য হয়েছেন, প্রস্তাবটা ফিরিয়ে নিয়েছেন।

পরে আসমা একদিন নিজেই রুমানাকে ফোন করে জানালেন,তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে নিঝুমকে একটা ভাল ছেলের হাতে দেবেন। ছেলেটাকে তিনি নিঝুম আর অরণ্যর বিয়ে সম্মন্ধে সব জানিয়েই ঠিক করবেন। রুমানারা হ্যাঁ বললেই, তিনি কথা বলবেন।

শাহেদ প্রথমে গাইগুই করছিল, কিন্তু রুমানার কথায় শেষ পর্যন্ত রাজি হতে বাধ্য
হয়েছেন। মেয়ের আগের বিয়ের কাবিন আছে কিন্তু তারপরেও বাচ্চা পেটে নিয়ে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া সহজ কথা নয়।

ছেলের নাম সাফায়েত। আসমার দূর সম্পর্কের চাচাত ভাইয়ের ছেলে। সাফায়েতরা দুই বোন এক ভাই। সাফায়েত এম বি এ শেষ করে চাকরি করছে। ওর বাবা নেই। এক সময় খুব অভাব ছিল ওদের। আসমার ভাই বোনরা মিলে তখন ওদের পরিবারকে অনেক সাহায্য করেছেন। সাফায়েতের পড়ার খরচও এক হিসেবে ওনারাই দিতেন।

সাফায়েত ছেলেটার সাথে রুমানা আর শাহেদ দুজনেই কথা বলেছেন। ছেলেটা নিঝুমের সব জানার পরই বিয়েতে রাজি হয়েছে। বলেছে, "আসমা আন্টি নিজে যখন নিঝুমের কথা বলেছেন তখন আমার আর কিছু জানার নেই । "

রুমানা আর শাহেদেরও ওকে অপছন্দ হয়নি। সেই বিয়েই আজ হতে চলেছে। আসমা নিজের বাসাতেই নিঝুম আর সাফায়েতের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। রুমানারা আপত্তি করে শেষ পর্যন্ত আসমার কাছে হার মেনেছেন। আসমার এক কথা আমার মেয়ে আমার বাসা থেকেই বিয়েটা হবে।

"নিঝুম... মা আমার কথা শোন," রুমানা কাতরস্বরে অনুরোধ জানালেন।

"মা শোন, আমি বিয়ে করব না। তোমরা জোর করলে আমি কিন্তু পালিয়ে যাবো। আর যদি পালাতে না পারি তো বিষ খাবো।"

নিঝুমের কথায় লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রুমানা। আবার শুরু হলো সেই একই কথা।

আসমা গত সপ্তাহে অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলেন নিঝুমকে। কিন্তু আবার সেই অরণ্যর ভূত মাথায় চেপে বসেছে এখন ওর। নিঝুমের এককথা অরণ্য ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না ও, করলে ওর পাপ হবে।

আবারো আসমাকেই ফোন করতে হলো রুমানাকে... এখন তিনি একমাত্র সামলাতে পারেন নিঝুমককে।

.............................................

গাঢ় অন্ধকারে ছেয়ে আছে ঘরটা। তাতে কোন একটা সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদাটে ঘোলা এক ক্যান্ডেলা আলো বুঝি ছিটকে এসে পড়েছে। পুরো ঘরটার আবহ একই সাথে খুব বেদনা আর হাহাকারে ছেয়ে থাকলেও.. বুকের উপর চেপে বসা এক খন্ড পাথর খন্ড যেন আজ নড়েচড়ে বসেছে। সত্যি আজ আসমার মনের অবস্থা খুবই নাজুক।

অন্ধকার ঘরটায় আসমা চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছেন। একটু আগে ব্লাড প্রেশার খুব বেড়ে গিয়েছিল। পারিবারিক ভাবে যে ডাক্তার ওনাদের দেখেন তিনি পরামর্শ দিয়েছেন ওষুধ খেয়ে রেষ্ট নিতে। প্রেশার এখন কিছুটা স্বাভাবিক কিন্তু নিজের মনকে আসমা কোনভাবেই প্রবোধ দিতে পারছেন না। যে মেয়েকে আজ তার বাড়ি নিয়ে আসার কথা বউ বানিয়ে তাকে আজ নিজের হাতেই আরেক বাড়ির বউ বানিয়ে পাঠাতে হচ্ছে তাকে...দুঃখে কষ্টে মাথা কাজ করছে না আসমার।
কেবলই মনে হচ্ছে অরণ্য তাকে মাফ করবেনা, অরণ্যর ভারী অভিমান হবে.. কিম্তু নিঝুমের দিকটাও তো তাকে ভাবতে হবে।

এর মাঝেই রুমানার ফোনটা আসল। শুনে আসমা কেবল বললেন, "আচ্ছা... আমি আসছি।"

আবারো নিঃশব্দে কাঁদলেন বেশ অনেকটা সময়।

কী করবেন? কী করার আছে তার? বড়ো ছেলের ছবি বুকে চেপে ধরেই তাকে নিঝুমকে বিয়ে দিতে হবে, কিচ্ছু করার নেই। সব যাত্রীর তীরে ফেরা হয়না, কেউ কেউ সেই অনন্ত যাত্রার পথিক হয়ে সবাইকে ছেড়ে ঐ দূর নীলিমাায় হারিয়ে যায়। কেবল তাদের সুখ স্মৃতিগুলো মনের দরজায় এসে কড়া নাড়ে বারে বার।

রায়হান সাহেব দু'বার করে এসে দেখে গেলেন আসমাকে৷ অরণ্য মারা যাবার পর থেকে এখন আসমাকে হারানোর ভয় চেপে ধরেছে তাকে। আসমা ঠিক মত খায় না, ঘুমায় না। এই তিনমাসে মনেহয় বিশ বছর পার করে ফেলেছেন আসমা। এখন আবার নতুন এক ভূত চেপেছে মাথায় সেটা হল নিঝুমকে বিয়ে দেবার ভূত। রায়হান একবার বলেছিলেন বাড়ির বউ বাড়ি নিয়ে চলে আসো। অরণ্য না থাকলেও ওর সন্তান তো তারই বংশধর। পরে নিঝুম যদি মনে করে সে বিয়ে করবে, তখন দেখা যাবে। তারা কেউ তো আর নিঝুমকে বাঁধা দিবেন না। কিন্তু আসমা রাজি নয়, বলে নিঝুমের সুখি জীবন পাওনা আর এই দায় অরণ্যর ছিল। এখন ও যখন নেই তখন অরণ্যর সমস্ত দায়িত্ব তাদের, তার। আর তাই তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন যেন নিঝুম তার প্রাপ্য সুখটা পায়।

রায়হান সাহেব কী আর করবেন মেনে নিয়েছেন।

"তুমি কোথাও যাচ্ছ?"

"হ্যাঁ,নিঝুমকে নিয়ে আসি।"

"আসমা পরে দুঃখ হবে নাতে?"

"হবে কিন্তু তোমার ছোট ছেলে তো রাজি হলো না, হলে দুঃখটা একটু হলেও কম হতো।"

"অয়নকে ভুল বুঝ না আসমা, ও ওর জায়গায় ঠিক আছে। ওর দিকটাও তো আমাদের দেখতে হবে। নিঝুমকে ও অরণ্যর চোখে দেখে কী করে?"

"জানি, আমি অয়নকে দোষ দিচ্ছি না," বললেন আসমা। কিন্তু তার চোখ দুটোতে কষ্টের তীব্রতাটা খুব বেশি। রায়হান সাহেব দূরে দাঁড়িয়েও সেটা স্পষ্ট টের পেলেন। রায়হান সাহেব সারা জীবন নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করে গিয়েছেন। স্ত্রীকে দুঃখ দেয়া তার নীতির বাইরে কিন্তু এই অবেলায় এসে সেই মানুষটাকে এতো দুঃখ পেতে দেখে ভিতরে ভিতরে অনেক ভেঙ্গে পড়ছেন তিনি। অরণ্যর পরে এখন আসমাকে হারাতে হলে সেই ধাক্কাটা হয়তো তিনি সামলাতে পারবেন না।

"যাই মেয়েটাকে নিয়ে আসি, আবার বেঁকে বসেছে। বিয়েটা এখন ঠিকমতো দিতে পারলে হয়," ফোঁস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আসমা। স্বামীকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলতে চাননা আসমা কিন্তু বিবেককে মারতেও পারছেন না তিনি।

"হমম..."

কোনমতে ঘাড় নেড়ে সায় জানালেন রায়হান সাহেব। কেবলই মনে হচ্ছিল আজকের দিনটা অন্যরকম হতে পারত, আজ অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল।

.......................................

নিঝুমকে নিয়ে পার্লারে গেলেন আসমা। নিঝুম পাথরের মতো মুখ করে বসে আছে। আসমা বলেছেন, ওনার কথা না শুনলে বাবুটাকে নাকি সরিয়ে নিবে সবাই ওর কাছ থেকে। অরণ্য নাকি ওকে নিয়ে যাবে। নিঝুম কতবার বলল, অরণ্য ওকে কেন সাথে নিবে না, তার কোনো উত্তরই মামনি দিল না। শুধু বলল, বাবুটাকে ওর কাছে রাখতে চাইলে ওকে একটা কাগজের বিয়ে করতে হবে। ওটা করলেই নাকি ওকে আর কেউ যন্ত্রনা করবে না।

কিন্তু নিঝুমের মাথায় আসলনা এই বউয়ের মতো সাজটা সাজার কী দরকার ছিল, ওতো আর সত্যি বিয়ে করছে না।

শ্বাশুড়ির সাথে অরণ্যদের বাসায় ঢুকে অনেকদিন পর কেমন শান্তি লাগল নিঝুমের। মনে হলো এক্ষুনি ছুটে অরণ্যর রুমে যায়। অরণ্য বার বার বলত ওই রুমটা সবসময় নিঝুমের অপেক্ষা করে। নিঝুম বোধহয় তাই নিজের মনের অগোচরেই ওই রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আসমা এগিয়ে এসে হাসিমুখে ওর হাতটা ধরলেন, " ওদিকে না... আমার রুমে এসে বসো।"

আসমা ব্যবস্থার কোন ত্রুটি রাখেননি। বাবুর্চি দিয়ে রান্না করিয়েছেন। ছেলের বিরিয়ানি খুব পছন্দ ছিল। ওর বিয়েতে রান্নার জন্য বাবুর্চি ঠিক করা হয়ে গিয়েছিল, আর একদিন পরেই হলুদ ছিল, সব কিছু ফেলে রেখে ছেলেটা তার মুহূর্তের মধ্যে কাউকে কিছু না বলে চলে গেল। এমন ভাবে নিজের সন্তানকে বিদায় দিতে হবে, ঘুনাক্ষরেও কখনো ভাবেননি আসমা। এমনকি অরণ্য পুলিশের চাকরিতে ঢোকার পরও কখনও এমন অনুভূতি তার হয়নি।

পাত্র পক্ষ চলে আসল একটু পরেই। রুমানা খুব টেনশনে ছিলেন এতক্ষন বিয়েটা নিয়ে। ভালয় ভালয় সব হয়ে গেলে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবে সে। বড়ো মেয়েটার সাথে সাথে ছোট মেয়ের ভবিষ্যতটাও জড়িত, তারপরও লোকের কানাঘুষা ঠেকাতেই জান বেরিয়ে যাবে তাদের।

রুমানা, আসমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছিল কত কষ্ট হচ্ছে আসমার। কিন্তু কী করবেন রুমানা? অরণ্যতো আর ফিরে আসবেনা। একদম পর পর তিনটে গুলি করেছিল সন্ত্রাসীরা ওকে, স্পট ডেথ। হসপিটালে নিয়ে গেলেই ডাক্তাররা বলে দিয়েছিল হি ইজ নো মোর।

ঘটনাটা এতই আকস্মিক যে কেউ ব্যাপারাটা হজম করতেই পারছিলেন না। আসমা প্রথমে শুনে হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন কথাটা। তারপর যখন জানলেন ঘটনা সত্যি তারপর দুইদিন আসমার জ্ঞান ছিলনা। মেনে নিতেই পারেননি অনেকটা দিন, নির্জীবের মতো কেবল অরণ্যর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতেন।

রুমানা তখন নিজের মেয়ের চিন্তায় এতটাই মগ্ন ছিলেন যে, আসমার দুঃখ কেবল দেখে গেছেন। কিন্তু আজ এই বাসায় নিঝুমের বিয়ের আয়োজন দেখে কেন যেন অস্বস্তির সাথে সাথে ভীষন কষ্টও হচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে অরণ্য বুঝি সব দেখছে ব্যাথাতুর চোখে। ছেলেটা কী সত্যি খুব কষ্ট পাচ্ছে?

সাফায়েত অরণ্যদের বাসার ড্রইংরুমে বসে আছে। এই পরিবারের সবাইকে অসম্ভব সম্মান করে ও। অরণ্য আর অয়ন দুজনই ওর খুব প্রিয়, তবে অয়নের চাইতে অরণ্যর সাথেই ওর সখ্যতাটা বেশি ছিল। কারনে, অকারনে অরণ্যর কাছ থেকে অনেক সহযোগীতা নিয়েছে সাফায়েত। আজ সেই অরণ্যর পরিবার যদি ওর কাছে কিছু চায়, তাদের ফিরিয়ে দিয়ে অকৃতজ্ঞ হতে পারবে না ও। তাই নিঝুম নামের মেয়েটা কেমন সেটা জানার কোন আগ্রহ প্রকাশ করেনি সাফায়েত আসমা আন্টির কাছে। আসমা আন্টি নিজে সবই তাকে খুলে বলেছেন৷ কবে,কেমন পরিস্থিতিতে বিয়ে হয়েছিল অরণ্য আর নিঝুমের তাও খুলে বলেছেন। সবটা শুনে সাফায়েতের নিঝুমের জন্য কষ্টই লেগেছে, একটা ফুলের কলি কেবল তার পাপড়ি মেলে ধরছিল আর তার আগেই সে বৃ্ন্ত থেকে ঝরে গেল।

আসমার অনুরোধ সাফায়েত যেন তার উত্তরাধিকারীর হেফাজত করে আর নিঝুমকে কষ্ট না দেয়। সাফায়েত তার সবটা দিয়ে এই কথার মর্যাদা রাখতে চেষ্টা করবে।

চলবে......

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro