Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

২৫

"এটা আমার জন্য অয়ন! "

অয়ন মিষ্টি করে হাসল শুধু, কিছু বলল না।

"ওয়াও.... ইটস বিউটিফুল," অহনা হাতের হ্যান্ডব্যাগটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল।" পার্পেল ইজ মাই ফেভারিট কালার। ইউ নো মম এর লাস্ট বার্থডে তে আমি ঠিক এরকম কালারের একটা ড্রেস নিয়েছিলাম। ওটার সাথে এটা একদম পারফেক্ট। "

"তোমার সত্যি পছন্দ হয়েছে তো?"

"অফকোর্স, তুমি আমার জন্য গিফট কিনেছ আর আমার পছন্দ হবে না, হাউ কুড ইউ বিলিভ দ্যাট। " অহনার কথায় অয়ন বাচ্চদের মতো খুশি হয়ে গেল।

ব্যাগটা অয়নের খুব পছন্দ হয়েছে। কাল ভাইয়ার বিয়ের কেনাকাটা করছিল ও আর আম্মু, হঠাৎ করেই এই ব্যাগটা নজরে আসে ওর। সবচেয়ে মজার কথা হলো আম্মু এটা প্রথমে ঝুমঝুমির জন্য নিতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে গোল্ডনের একটা দেখল... ওটা নাকি ঝুমঝুমির শাড়ির সাথে যায়, তাই আম্মু এটা আর নেয়নি। সুযোগ বুঝে অয়নও আর দেরি করেনি, চট করে পাশে দাঁড়ান সেলস ম্যানের হাতে দিয়ে বলেছে... একদম র‍্যাপিং করে দিতে, আর ওটার বিলটাও যেন আলাদা হয়।

"অনা ভাইয়ার বিয়েতে আমার গেস্ট হিসেবে তোমাকে কিন্তু আসতে হবে এবার, আর লুকোচুরি খেলতে পারছিনা। আম্মু থেকে শুরু করে ভাইয়া পর্যন্ত আমাকে জেরা করা শুরু করে দিয়েছে। আর চুপ থাকতে পারছিনা। আমি চাই আম্মু- আব্বু তোমাকে সামনা সামনি দেখুক, শুধু ভাইয়া না, আমার চয়েজটাও দেখুক। "

"আমি চেষ্টা করব অয়ন। আচ্ছা তোমার ভাবি কি খুব সুন্দরী? না মানে তুমি যেভাবে বলছো তাতে তো তোমার আম্মু ওকে খুব পছন্দ করেন মনে হচ্ছে, তাই বললাম।"

"সরি শুধু আম্মু না, আমাদের বাসার সবাই আসলে ঝুমঝুমি ভক্ত। সি ইজ সো বিউটিফুল এন্ড লাভলি পারসন। ঝুমঝুমির সবচেয়ে বড়ো গুন হচ্ছে সে যখন তখন বিনা নোটিশে লাল টুকটুকে টমেটো হয়ে যেতে পারে। সো তুমি তাকে সসের অলটারনেট হিসেবে খাবারে ইউস করতে পারো," অয়ন হো হো করে হেসে ফেলল।

"ঝুমঝুমি? এটা তোমার ভাবির নাম! ওর বয়স কত?"

"না না সেরকম কিছু না। ওর আসল নাম হচ্ছে নিঝুম। ভাইয়া ছোট করে ঝুম ডাকে। তো আমার আবার সেই নামে ডাকা নিষেধ, ওই নামের উপর আমার ভাই আবার রেজিষ্ট্রি করে অধিকার নিয়ে নিয়েছে কিনা... তাই বিকল্প হিসেবে আমি এই নামটা নিয়েছি। আসলে বয়সে ও তোমার চেয়েও ছোট, মাস্টার্স কমপ্লিট করেনি এখনো। ভাবি ডাকা যায় কিন্তু ওতে কেমন যেন একটা ফর্মালিটি মেনটেইন করে ডাকছি বলে মনে হয়। আসলে আমার কাছে অস্বস্তি লাগে কিন্তু তাই বলে তুমি আবার ঝুমঝুমি কে ওই নামে ডেকো না। ঝুমঝুমি কিছু মনে না করলেও, আম্মু একদমই সহ্য করবে না। তুমি প্লিজ ঝুমঝুমিকে ভাবীই বলো, কেমন?" অয়ন একটু থামল। "অনা আমি চাইনা আম্মুর মনে কোনভাবেই তোমার জন্য কোন বিরূপ ধারনা জন্মাক। আমি চাই আম্মু ঝুমঝুমিকে যেমন পছন্দ করে তোমাকেও ঠিক ততটুকু পছন্দ করুক। "

"ওহ, ইয়েস অফকোর্স। তুমি দেখো আন্টি আমাকে তোমার ঝুমঝুমির চেয়েও বেশি ভালোবাসবে, তুমি অকারনে ভয় পেওনা। "

অহনার কথায় স্বস্তির একটা হাসি ছড়িয়ে পড়ল, অয়নের চোখে মুখে। আসলে ওর বাইরে চলে যাওয়ার কাগজ প্রসেসিং হওয়া শুরু হয়েছে। অনার কাগজ নিয়ে কোনো প্রোবলেম নেই, ওর এমনিতেই কানাডার সিটিজেনশিপ আছে, তাছাড়া অনার পুরো পরিবারও কানাডাতেই থাকে। অয়ন ভেবেছে বিয়ের পর ওরা কানাডাতেই সেটেল হবে।

.....................

বাতাসটা হঠাৎ বেশ গুমোট হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি বোধহয় বেশ জোরেশোরেই আসছে। নিঝুম ভাল করে তাকিয়ে অরণ্যর মুখটা দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু অরণ্য যেভাবে বালিশে হেলান দিয়ে আধাশোয়া হয়ে আছে,তাতে অরণ্যর থুতনি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

অরণ্য হঠাৎ এমন গম্ভীর হলো কেন? কোন একটা বিষয়ে খুব চিন্তিত বোধহয়, কিন্তু নিঝুম হাজার বার জিজ্ঞেস করলেও ওই লোক টু শব্দ করবেনা এখন, সেখানে ওর কি করার আছে।

একদিন অভিমান করে নিঝুম অরণ্যকে বলেছিল," তুমি আমাকে একটুও বিশ্বাস করনা, তা না হলে আমাকে ঠিক সব বলতে।"

নিঝুম আসলে অত কিছু ভেবে কথাটা বলেনি, কিন্তু সেটার জন্য খুব কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছিল ওকে।

যে লোক মিটিংয়ে ঢুকলে বা কোনো বিশেষ কাজে আটকে থাকলেও ফোন বন্ধ রাখলে ঘন্টা দুই তিন পর পর ওর খোঁজ নেয়, সেদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা ফোন দূরে থাক, একটা মেসেজ পর্যন্ত সে দেয়নি। মোটের উপর ফোন খুলেইনি অরণ্য। রাতে যখন বাসায় এসেছে অরণ্য, নিঝুম রাগ করা দূরে থাক, ফোন কেন খোলেনি সেটা জিজ্ঞেস করার সাহস পর্যন্ত পায়নি। সেদিন রাতে অরণ্য তেমন কথাও বলেনি। পরের দিন অবশ্য একাই স্বাভাবিক আচরন ফিরে এসেছিল।

কিন্তু অরণ্য কোন দুশ্চিন্তায় ডুবে আছে এটা নিঝুম আজকাল ওর মুখ দেখলেই টের পায়। আর অফিসিয়াল ফোনগুলো আসলে বেশির ভাগ সময়েই শুধু হু, হা অথবা ফিসফিস করে কথা বলে।

সেজন্য আজকাল অফিসিয়াল কোন ফোন আসলে নিঝুম নিজেই অরন্যর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু আজ অরণ্যকে খুব বেশি অদ্ভুত লাগছে, নিঝুম কী একবার জিজ্ঞেস করে দেখবে কেন সে এতো চিন্তিত?

"তোমাকে একটা কথা বলি।"

নিঝুমের কথায় ঘোর কাটল যেন অরণ্যর, অবাক হয়ে জানতে চাইল,"কিছু বলছ?"

নিঝুম চুপ করে রইল।

অরণ্য খাটের মাথার হেলান দিয়ে বসে আছে, আর নিঝুমের মাথাটা ওর বুকের উপর। এতটা কাছে থেকে কথা বলার পর যে লোক ওর কথা শুনতে পাচ্ছে না, হয় সে গভীর কোন ভাবনায় ডুবে আছে আর তা না হলে ওকে অবহেলা করতে শিখে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় অপশনটা নিঝুমের বিশ্বাস হয় না।

"ঝুম... তুমি কী আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছ? "

"গন্ডারের চামড়া..."

"বুঝলাম না। "

"কিছু না, তুমি আমাকে এখন আর আগের মতো ভালবাস না। সরি ভুল বললাম, একেবারেই ভালবাস না," নিঝুম যতটা আহ্লদী স্বরে বলা যায়... বলল।

"আচ্ছা... তা হলে কাকে বাসি?" অরণ্য আকাশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল। খুব জোরে আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, দু একটা বজ্রপাত হলো ভীষন শব্দ করে। বজ্রপাতের শব্দে নিঝুমও খানিকটা কেঁপে উঠলো ওর বুকের মধ্যেই, টের পেল অরণ্য।

এখান থেকে মতিঝিলের উঁচু উঁচু ভবন গুলো দেখতে পাচ্ছে নিঝুম। বিল্ডিং গুলোর মাথার উপর কালোমেঘ গুলো কি ভীষন ভাবে ওলট-পালট করছে, দমকা বাতাসে জানালার সাদা পর্দাটা নাচুনি বুড়ির মতো নাচছে। এই এতো অস্থির পরিবেশে অরণ্য কেমন বরফের চাইয়ের মতো থম মেরে আছে। নিঝুমের কেমন ভয়ই লাগল, কি অত চিন্তা করে এই লোক দিনরাত ?

"তুমি কাকে ভালবাস তা আমি কী করে বলব? সে ফোন দিলেই তো তোমার গলার স্বর নিচু হয়ে যায়, একদম ফিসফিস করে কথা বলো। তুমি কী মনে করো আমি বুঝি না? আমি ঠিকই বুঝি, তুমি তাকে আমার চেয়ে অনেক বেশি ভালবাস।"

অরণ্য হতবাক হয়ে গেল, ওর ফিসফিস করে কথা বলার এই অর্থ বের করেছে ঝুম!

"তোমার কী মাথা খারাপ হয়েছে ঝুম? কী আলতু ফালতু কথা বলছ? আমি অন্য কাউকে ভালবাসি! এই আমাকে চিনলে তুমি?"

"হ্যাঁ, ওকে তুমি আমার চেয়ে বেশি ভালোবাস, আমি জানি," নিঝুম গাল ফুলাল।

"একদম উলটো পালটা কথা বলবে না নিঝুম, আমার মেজাজ এমনিতেই ঠিক নাই। তারপরও, তোমার সামনে যথেষ্ট স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি৷ কিন্তু তুমি এরকম করতে থাকলে, হঠাৎ আমার ধৈর্যের বাঁধটা ভেঙে যেতে পারে। আর সেটা কিন্তু অরণ্যর খুব খারাপ একটা চেহারা হবে, তখন সেটা সামলাতে পারবে তো?"

"এই শোনো আমাকে এই সব আলতু ফালতু কথা বলে ডাইভার্ট করার চেষ্টা করবানা একদম। মানুষ তখনই সব কিছু গোপন করে, যখন তার কোনো পাপ থাকে। অফিসিয়াল কথা, অফিসিয়াল কথা... তাহলে তো আমাকে তোমার বিয়ে করাই ঠিক হয় নাই। এই অফিস তো তোমার সারাজীবন থাকবে, তো কী সারাজীবন এমন ফিসফিস করে কথা বলবে তোমার ওই গোপন প্রেমিকার সাথে?"

"নিঝুম স্টপ, তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছ।"

"করলে করছি,বেশ করেছি। আমার অধিকার আছে কী নাই সেটা আগে বলো তুমি । তুমি কী করো, কার সাথে অফিসের নাম করে ঘোরো সব.. সব হিসাব চাই আমার।"

"কী? " অরণ্য উঠে দাঁড়াল বিছানা থেকে। ওর খুব অপমান লাগছে। কী বলছে নিঝুম এসব!

"কেন ভয় পাচ্ছ যে তোমার গোপন প্রেমিকা ধরা পড়ে যাবে?" নিঝুম তখনও একইভাবে বলেই যাচ্ছে। অরণ্য অবাক হয়ে গেল, ঝুমের এরকম নিচু ধ্যানধারনা ওকে নিয়ে। এত লো! হতাশায় ছেয়ে গেল ওর মনটা।

"ফর গড সেক ঝুম.. প্লিজ চুপ করো, এগুলা কী শুরু করলা বেড়াতে এসে। তোমার মনে আমাকে নিয়ে এত বাজে ধারনা আমার সহ্য হচ্ছে না, কষ্ট হচ্ছে।"

"আগে ছিলনা তো, কিন্তু ইদানীং তোমার আচরনে আমি ভাবতে বাধ্য হচ্ছি অরণ্য, তুমি আমাকে সেটা ভাবতে বাধ্য করেছ," নীরস স্বরে উত্তর দিল নিঝুম। ওর এই শক্ত অভিব্যাক্তি তীরের ফলার মতো যেয়ে লাগল অরণ্যর বুকে। এই জন্যই বলে যার জন্য করো চুরি, সেই বলে চোর। কার জন্য এত কষ্ট করে রাইসুলের কেস রি ওপেন করাল অরণ্য? কোনো কথা না বলে ও খোলা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বৃষ্টির ছিটা আসছে জানালার ফাঁক গলে। ওর গায়ের পাঞ্জাবিটা একটু একটু করে ভিজছে,তারপরও অরণ্য ওখানে দাঁড়িয়ে রইল। এই মূহুর্তে ওর মনের অবস্থা ওই গর্জে ওঠা আকাশের চেয়েও ভয়ংকর, নীল বিচ্ছুরিত আলোর ঝলকানিতে আকাশের এ মাথা থেকে ও মাথা তখন চিড়ে যাচ্ছে। গাছের পাতা গুলো ছুটছে এলোমেলো, পাগলা হাওয়ায় সওয়ার হয়ে। অরণ্যরও প্রবল ইচ্ছে হলো ওই আকাশের মতোই প্রচন্ড আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে, ঝরা পাতার সাথে উড়ে যেতে... দূরে... বহুদূরে।

নিঝুম কেন ওকে ভুল বুঝবে? কেন সে ওকে বিশ্বাস করছেনা,নাকি অরণ্যই ভুল করেছে ওর ঝুমকে চিনে নিতে? কিন্তু ওযে অরণ্যর বড়ো ভালোবাসার। ভয় লাগে অরণ্যর... ওর মোমের পুতুল আঘাত পেয়ে গলে না যায়। ঝুমকে কষ্ট দেওয়ার কথা ভাবতেই পারে না অরণ্য। কিন্তু ওর সেই মোমের পুতুলই যে আগুনের সাথে সন্ধি করে ফেলেছে।

"কী কিছুই বলতে পারছনা। তারমানে জবাব দেবার সৎ সাহসটাই তোমার নেই, তাইতো?"

"কী জানতে চাও তুমি?"

"কার সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছো?"

"আপাতত তোমার সাথেই..."

"আবারো তুমি কথা ঘোরানোর চেষ্টায় আছো,জানি তো।"

"না, কিন্তু সত্যিই কী আমাকে এতটা অবিশ্বাস করো ঝুম? "

নিঝুম জালে আটকে পড়া মাছের মতো খাবি খেতে লাগল, জুতসই কোন জবাব খুঁজে পেলনা। বিপদ দেখে অরণ্য নিজেই তাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ওর দিকে।

"আমি একটা কেস নিয়ে খুব ব্যাস্ত আছি। তাই তোমাকে সময় দিতে পারছিনা। জিনিসটা গোপনীয় আর বিপদজনক,তাই একটু সতর্ক হয়ে কথা বলি।"

"মিথ্যে কথা। তুমি তো বাইরের মানুষের সামনে না, আমার সামনেই লুকাও বেশি। তারমানে কী আমি তোমার শত্রু? আর শত্রু যদি নাই হই তাহলে আমার সামনে লুকাও কেন? "

"আশ্চর্য, আমার অফিশিয়াল বিষয় আমি ফেরি করে বেড়াব নাকি সবার কাছে? ওগুলো তো হাইলি কনফিডেনশিয়াল আর আমি এই ডিটেইলসগুলো অপ্রয়োজনীয় জায়গায় বলবই বা কেন,এটা তো একটা গুরুতর অপরাধ। "

"ও...., তার মানে তুমি ওই মেয়ের কাছে এতই বিশ্বস্ত থাকতে চাও যে, আমার কোনো কিছু বলা বা মনে করায় তোমার কিছু যায় আসেনা?"

অরণ্য বুঝতে পারলনা এত অদ্ভুত চিন্তা নিঝুমের মাথায় ঢুকল কী করে?

"এটা তোমার ভুল ধারনা,আমি তোমার কথার কতটা গুরুত্ব দেই তুমি জানো। এখন ওই সামান্য জিনিস নিয়ে ঝগড়া করে এই মূহুর্তটাকে তিতা করোনা আর... প্লিজ।এমনি অনেকদূর গড়িয়েছে ব্যাপরটা।"

"ঠিক আছে থাক,তোমার ভালোবাসার লোকের নিন্দা তো আমি করিনি, তবুও তোমার ব্যাথা লাগছে সে জন্য আমি দুঃখিত," কথাটা বলেই বালিশে মুখ লুকাল নিঝুম।

মেয়েটা কি কাঁদছে! অরণ্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। নিজের কাজের প্রতি বেশি বিশ্বস্ত হতে গিয়ে কি শেষে ঝুমকেই দুঃখ দিয়ে ফেলল অরণ্য। কিন্তু ঝুমের জন্যই না আবার এত কষ্ট করে পুরানো ওই কেসটা রিওপেন করাল ও। নিঝুমকে ওই অত লোকের সামনে কিভাবে অপমানিত হতে হয়েছিল, অরণ্য কিছুতেই সেই মূহুর্তগুলোকে ভুলতে পারেনা। সব সময় ওর চোখের সামনে ঘটনাগুলো ঘুরপাক খেতে থাকে, নিঝুমের ব্যাথা ভরা দুচোখের ভাষা এখনও ওর পিছু ছাড়েনি।

আর জীবনে প্রেম আসি আসি করে এত দেরী করেই এসেছে যে , এখন সোজা মালা বদল করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় অরণ্যর জানা নেই, আর সেটা প্রমান করার উপায়ও ওর জানা নেই।

"ঝুম, আমার কথা শোনো। আমি কখনোই এমন কিছু করব না যার কারনে তোমাকে অসম্মানিত হতে হয়। আমি তোমার কাছে আমার ব্যাক্তিগত জীবনের কোনো কিছুই লুকাইনি, আর তোমার যদি আরও কিছু জানার থাকে, আমাকে সরাসরি সেটা জিজ্ঞেস করো। কিন্তু এরকম উলটো পালটা প্রশ্ন করে অযথা নিজেদের মধ্যেকার সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট করো না।"

" আমার যা জানার, আমি তোমাকে বলেছি।
তুমি বলতে চাইলে বলো,না হলে আর কথা বাড়ানোর দরকার নেই।" নিঝুমের গনগনে উত্তপ্ত কথায়,অরণ্য আর পারলনা,এগিয়ে এসে ওর পাশে বসল।

"কী শুনবে.... কী শুনতে চাও বলো? আমি ফোনে কী বলি, কার সাথে বলি এই তো? আচ্ছা শোন.... আমি পার্থর সাথে কথা বলি। আমি রাইসুলকে ধরতে চাই। এখন বলো রাইসুল কে? রাইসুল হচ্ছে সেই লোক যে আমাদের উপর নোংরামো করার দায় চাপিয়েছিল, আর তারই ফলশ্রুতিতি আমাদের আচমকা বিয়ে করতে হয়েছে। আর এই রাইসুল অনেক বড় মাপের শয়তান। ও কোথায় থাকে, দেখতে কেমন.... গুটি কতক লোক ছাড়া কেউ জানেনা। নিজের স্বার্থে যে কোন খারাপ কাজ সে করতে পারে। হিউম্যান ট্রাফিকিং থেকে শুরু করে ড্রাগস, মানি লন্ডারিং,সোনা চোরাচালান সব কিছুর সাথেই রাইসুল জড়িত। আর আমি এর শেষ দেখতে চাই। আমি রাইসুলকে ধরতে চাই। ও আমাদের প্রফেশনাল লাইফের শত্রুতাকে পারসনাল বানিয়ে ফেলেছে। তোমাকে সবার সামনে নিচু করেছে, আর এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নেব না। রাইসুলকে তার পাপের শাস্তি পেতে হবে," অরণ্য দৃঢ়তার সাথে বলে উঠল।

"আর এই শাস্তি টা ওই লোককে কে দিবে?" নিঝুমের স্বরে হালকা টিটকিরির আভাস।

"আমি দিব। আমি আর পার্থ একসাথে এই অপারেশনে কাজ করছি। কিন্তু এই কেসটা অনেক বিপদজনক। রাইসুল ব্যাপরটা টের পায়নি এখনও, কিন্তু পেয়ে যাবে খুব দ্রুত। আর তখন ও আমার কাছের মানুষদের ক্ষতি করতে চাইবে এটা আমি নিশ্চিত। আর এ কারনেই আমি চাইনি তোমরা এ বিষয়ে কেউ কিছু জান। কারন জানলে তোমাদের উপর ওর আগ্রহ আরও বাড়বে। আর তুমি এমনিতেই টপ লিষ্টে আছ৷ আমি খবর পেয়েছি, আমার সোর্স আমাকে জানিয়েছে। আর তারচেয়েও বড়ো কথা আমি প্রমান পেয়েছি। ওর লোকজন কুয়াকাটায় আমাদের চারপাশে ছিল।"

"কী বলছ তুমি, সত্যি ওর লোক ছিল ওখানে!"

" ছিল, আর সেজন্যই তোমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসতে হয়েছে আমাকে কুয়াকাটা থেকে।"

"সরি...আমি বুঝতে পারিনি। "

"আমি জানি সেটা, কিন্তু আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি আমাকে এত ছোট মনের ভাবলে? আমি ওরকম বিপাকে পড়ে বিয়ে করেছি বলেই বোধহয় ওরকম ভাবতে পারলে আমাকে তাই না? ক্যারেকটারলেস একটা ছেলে...।" অরণ্যর চোখ দুটো ছলছল করছে অভিমানে।

নিঝুম অরণ্যকে কী করে বোঝায় যে.. নিঝুম একবিন্দু অবিশ্বাসও এখন আর অরণ্যকে করতে পারে না কিন্তু এই কথাগুলো জানা ওর জন্য ভীষন জরুরি ছিল।

"ছি..আমি কি তাই বলেছি। আমি বলেছি তুমি কার সাথে ঘোরো?"

"হ্যাঁ তো.. বউ আছে যার, সে যখন অন্য মেয়ের সাথে ঘোরে, তখন সে নিশ্চই কোন ভাল চরিত্রের লোক না।"

"আচ্ছা সরি, কিন্তু আমি মোটেই তোমাকে খারাপ ভাবিনি, আর হ্য আমি একটুখানি অভিনয় করেছি তোমার সাথে ,না হলে তো তুমি একদম মুখে কসটেপ দিয়ে বসে থাক। তাহলে আমার কী দোষ?"

"মানে?" অরণ্য আকাশ থেকে পড়লো।

"মানে আমি এমনি জিজ্ঞেস করলে তুমি জন্মেও বলতো না। তাই তোমাকে একটু রাগিয় দিয়েছি আর একটু ব্যাথাও দিয়েছি, আর সেজন্য আমি অনেক অনেক দুঃখিত।"

"ও!! তারমানে এটা তোমার প্ল্যান ছিল?" অরণ্য এবার সত্যি রেগে গেল। সব কিছুকে এত ছেলেখেলা কেন মনে করে নিঝুম।

"সরি কিন্তু আমি কি করব? তুমি একা একা দুশ্চিন্তা করে মুখটা ভূতুম পেঁচার মতো বানিয়ে ফেলছ, আমার আর সহ্য হয়নি। "

কিন্তু অরণ্যর রাগ তাতে পড়ল না। বউ ওকে ব্লাফ দিল?

"আচ্ছা তিনবার সরি।"

"না সরির দরকার নাই, কিন্তু এরপর থেকে আমি অন্য মেয়েদেরকে নিয়েই ঘুরবো।"

"খবরদার... একদম না।"

"কী খবরদার হ্যাঁ?.. তোমার যা জানার ছিল সেটা তো জানছই... এখন তুমি তোমার মতো আর আমি আমার মতো।"

"এই না অরণ্য, ভালো হবে না কিন্তু বলছি। আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সঙ্গে ঘুরলে আমি...। "

"কী... মেরে ফেলবা আমাকে।"

"না.... নিজেই মরে যাব।"

"খবরদার ঝুম, আর একবার এমন ফালতু কথা বললে চড় খাবা। "

"আমি আর বলব না তো, তুমি অন্য মেয়ের কাছে যাবা আর আমি মরব, ইটস ফাইনাল।"

"চুপ। আর একটা কথাও না, এই চ্যাপ্টার এখানেই ক্লোজ কর," অরণ্য গমগম করে বলে উঠল। ওই স্বরে নিঝুমের বুকের ভিতরটা ভয়ে কেঁপে গেল.... কি রাগীরে বাবা.. হুহ, হুলো বেড়াল একটা।

..........................

"আচ্ছা সরি, বললাম তো..."

"আমি সরি চাইনি, ওটা তুমি তোমার কাছে রেখে দাও।"

"আচ্ছা তাহলে একটু আদর করো, এই একটুখানি।" দুই আঙ্গুলের মাথা দিয়ে এক চিমটি বানিয়ে অরণ্যর মুখের সামনে তুলে দেখালো নিঝুম।

"বাঁচতে চাইলে আমার কাছ থেকে পাঁচশ হাত দূরে থাক।"

"দূরে থাকলে তো এমনি মরে যাবো,তারচেয়ে আমিই আদর করি," বলেই নিঝুম চট করে অরণ্যর গালে একটা চুমু দিয়ে দিল।

অরণ্য কিন্তু সেই চুপ করে বসেই রইল। আজ নিঝুম ওকে নানা ভাবে ব্যাথা দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত যে কথাগুলো ও বলতে চায়নি সেগুলোও বলেছে। কাজটা একদম ঠিক করেনি নিঝুম।

"আচ্ছা আমি কান ধরব? "

"কেন? "

"এই যে তুমি রাগ করে আছ।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।"

"সত্যিই কষ্ট হচ্ছে?"

"সত্যিই হচ্ছে বিশ্বাস করো, খুব কষ্ট হচ্ছে।"

"আর কখনো এরকম করোনা ঝুম, বারবার কষ্ট পেতে থাকলে দেখবে হুট করে তোমার অরণ্য একদিন হারিয়ে গেছে।"

"এই না প্লিজ, আর কোনোদিনও বলব না। এটাই প্রথম আর এটাই শেষ।"

"হমম।"

"কি হুমম....তুমি কি এখনও আমার উপর রাগ করে আছ? "

"জানিনা, তবে আমি বেশিক্ষণ তোমার উপর রেগে থাকতে পারিনা। কাজেই তুমি চিন্তা করো না, আমি সামলে নিব।"

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল অরন্য।

"আমাকে একটু বুকের মধ্যে নাও না প্লিজ , আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এখন, আমার একদম উচিত হয়নি তোমাকে ওভাবে প্রশ্ন করা।"

এবার নিঝুমের অনুরোধটা আর ফেলল না অরণ্য। নিঝুমকে বুকের মধ্যে নিয়ে ওর কপালটা নিজের গালের সাথে চেপে ধরে বসে থাকল। রাইসুল ওর ঝুমের কিছু করবে না তো? নিঝুমকে ও রক্ষা করতে পারবে তো? আরও জোরের সাথে নিঝুমকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরল অরণ্য।

.........................................

শফিকদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় দশটা বেজে গেল। অরণ্যরা বের হলো রাত সাড়ে দশটারও পরে। রাস্তায় নেমেই মেজাজ খারাপ হলো অরণ্যর। আজকেই অয়নের গাড়িটা নেওয়া লাগল। এখন এই বৃষ্টি কাঁদার মধ্যে সিএনজি, ট্যাক্সি কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না আর সাথে নিঝুম আছে। ভীষন বাজে একটা অবস্থা।

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শেষে একটা রিক্সা পেল অরণ্য। অয়নও ততক্ষনে বাসায় ফিরে এসেছে, ওরা ইচ্ছা করলে এখন বাসা পর্যন্ত রিক্সায় যেয়ে বাকি পথটা গাড়িতে যেতে পারে।

"না, আজকে চল পুরোটাই রিক্সায় যাই। অনেকদিন রিক্সায় চড়ি না। আর ভিজে তো আমরা এমনিই গিয়েছি।"

নিঝুম বাঁধ সাধল।

"চল, কিন্তু ঠান্ডা লাগলে সব দোষ তোমার।"

রিক্সায় বসে ভারী বৃষ্টির ফোঁটা, ভেজা প্লাস্টিকের পর্দা আর সাথে হঠাৎ হঠাৎ দমকা বাতাস, সব মিলিয়ে দুজনের বেশ নাকানিচুবানি অবস্থা। শেষতক হাল ছেড়ে দিল দুজনেই।

অরণ্য রিকশাওয়ালা কে বলেই বসল," মামা তোমার পর্দা আর ধরে রাখতে পারছিনা। উড়ে গেলে আমি দাম দিয়ে দিব। "

দাম দিয়ে দিবে শুনে রিকশাওয়ালাটা এক গাল হাসল। তারপর বলল," দুই কোনা হুডের মইদ্যে গুঁইজা দেন, ওড়বেনানে।"

অরণ্য তাই করল,আর পারছেনা ও। ধরে রাখতে রাখতে হাত ধরে আসছিল ওর আর চোখ- মুখ তো ভিজে একাকার।

হাত খালি হতেই নিঝুমের কোমরটা আকড়ে ধরল অরণ্য। নিঝুম টের পেতেই চোখ পাাকাল।

"হচ্ছেটা কী? হাত সরাও।"

"মোটেই না, আজ এমনি একবার মাফ করেছি, এর পর তেরিবেরি করলে ডবল ফাইন দিয়েও কাজ হবে না বলে দিলাম। তখন আবার আই অ্যাম সরি বললেও কাজ হবে না।"

"অসভ্য "

পরক্ষনেই শাস্তি বরাদ্দ হয়ে গেল নিঝুমের আর তার চাইতেও কম সময় লাগল সেটা কার্যকর হতে। অন্ধকার মুখে আক্রান্ত জায়গায় হাত বুলাতে লাগল নিঝুম।

"পাঁজি লোক একটা, আমার কান খেয়ে ফেলল।"

তার পরক্ষনেই নিঝুমের ঠোঁট দুটোও ব্ল্যাকহোলে হাওয়া হয়ে গেল।

...................................

"আম্মু, আপুর বিয়েতে আমি তিনটা ড্রেস নিব,"
আশু, নিঝুমের বিয়ের শাড়িগুলো সুটকেসে তুলছে।

"আচ্ছা নিবি।"

"আর একটা শাড়ি।"

"ঠিকআছে। কিন্তু তোমার বোন সে আসছেনা কেন? কত বাজে খেয়াল আছে কারো?"

"আপু আসছে, কথা হয়েছে আমার সাথে," অশু ফোন টিপতে টিপতে জানাল মাকে। আপু এখন তার রাজকুমারের সাথে রোমান্সে ব্যাস্ত, আর আম্মু আর ফুপিটা কিচ্ছু বোঝেনা। অবশ্য ওরা তো আর আসল খবর রাখেনা... বিয়ে আপুর জিজুর সাথে কবেই হয়ে গিয়েছে। কেবল অনুষ্ঠানই যা বাকি আছে।

একা একাই হাসতে হাসতে আবার নিঝুমের ফোনে একটা কল দিল আশু কিন্তু কেউ ধরল না।

"আপু তুই রাস্তাঘাটে কত রোমান্স করিস? ফোনটাও ধরিস না।"

ঠাস করে ফোনটা টেবিলে রাখল আশু, নিঝুমের সাথে একটা জরুরি কথা আছে ওর।

ব্রি....... করে শব্দ হতেই দুজনে কেঁপে উঠল ওরা যুগলবন্দী অবস্থায়। পরক্ষণেই বুঝল নিজেদের কারও ফোন বাজছে। কিন্তু দুজনের কারুরই এখন আর সেই মুড নেই। অন্ধকার রাতের ঠান্ডা ভিজে হাওয়ায় জাপটে বসে আছে দুজন দুজনকে... বৃষ্টি আগের থেকে একটু ধরে এসেছে।

"আশু নইলে আম্মু কেউ একজন ফোন দিচ্ছে।"

"হু...." বলেই অরণ্য আবার নিঝুমের ঠোঁটে ডুব দিল। পর্দাটা এখনো আছে ভাগ্যিস, নিঝুম পর্দার কোনা আকড়ে ধরে রইল শক্ত করে। কী ভুল করেছে আজ এই লোককে ক্ষেপিয়ে দিয়ে ও। সব শুদে আসলে উসুল করছে।

"অরণ্য ছি!আমরা বাইরে আছি।"

"তো বাসা কোথায় পাবো বলো.. তুমি তো আমার বাসায় যেতে চাও না।"

"বাসার দরকার নাই, শুধু তুমি দুষ্টুমি বন্ধ করো।"

"তার মানে কী? ভালো বাসার দরকার নাই?
তাহলে আমরা থাকব কোথায় ঝুম?"

"অরণ্য দুষ্টুমি কম... "

আবার কথাগুলো হারিয়ে গেল... দূরে কোথাও গান হয়ে সুরের মাঝে মিশে গেল।

চলবে..........

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro