২৩
নিঝুমদের খাবারের টেবিলে বড়োসরো একটা গোল বৈঠক চলছে... রুদ্ধ দুয়ার বৈঠক বললে হয়তো আরও মাননসই হতো।
নিঝুম আর আশু দুজনেরই মন খুব খারাপ। কুয়াকাটা যাওয়াটা একদম মাটি করে দিয়েছে পাঁজি লোকটা। কোথায় ভেবেছিল কত সুন্দর একটা দিন কাটাবে আর হলো কী? দুঃখে প্রানটা ফেটে যাচ্ছিল আশুর। অরণ্য কেন এরকম প্রায় ধরে বেঁধে ওদের কুয়াকাটা থেকে ফেরত নিয়ে আসল তা আল্লাহই জানেন। কারো কোনো কথাই কাল কান দিয়ে ঢুকায়নি অরণ্য, এমন সিরিয়াস মুখ করে ছিল যে আশুও কিছু বলতে সাহস পায়নি। আপু যে মাঝে মাঝে ক্ষেপে জিজুর উপর তার নিশ্চিত কোন কারন থাকে।
সত্যি বলতে এবার অরণ্যর উপর আশুরও খুব রাগ হচ্ছে। সবাইকে সাথে নিয়ে ভাল করে কয়েকটা ছবিও তোলারও সময় দেয়নি ওকে অরণ্য, দুই একটা সেলফিই যা ভরসা। বান্ধবীদের সামনে আশুর মান ইজ্জত সব শেষ, খুব গর্ব করে বলছিল দুলাভাই ওদের কুয়াকাটা বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে আর এখন ছবি মাত্র হাতে গোনা... আশু এখন বান্ধবীদের দেখাবেটা কী?
দুই বোনের মুখ দেখেই অরণ্যর যা বোঝার বোঝা হয়ে গিয়েছে। এক ঘন্টার বেশি হয়েছে ওরা নিঝুমদের বাসায় এসেছে। সদরঘাট থেকে সিএনজি তে আসার পথে একটা কথা বলেনি দুইবোন ওর সাথে রাগ করে। অরণ্যও আর ওদের ঘাটায়নি, জানে লাভ হবে না। ওরা কেউ বিপদটার গুরুত্ব বুঝতে পারবেনা, মাঝখান থেকে ভয় পেয়ে যাবে।
শত্রুপক্ষ বিশ্বস্ত কোনো সোর্স থেকে ওর খবর পাচ্ছে। তা না হলে ওর একদিন আগে বুক করা হোটেলে ওরা পৌছায় কিভাবে? কিন্তু কে আর কী করে এই দুটোই এখনো প্রশ্ন। ডাব ওয়ালা লোকটাকে ধরতে পারলে কিছু প্রশ্নের সমাধান হতো। কিন্তু তাকেও আর পাওয়া যায়নি। জাস্ট হাওয়া... এলাকাতেই নেই। আর সবচেয়ে ভয়নক হলো অরণ্য এখনো রাইসুলের প্ল্যানটা ধরতে পারছে না। বিপদ যে কোনো দিক থেকে আসতে পারে। দেখা যাবে ও একজনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে আর আক্রান্ত হলো অন্যজন।এরকম হলেই অরণ্যর হারে মজা পাবে রাইসুল। কিন্তু বুদ্ধির খেলাতে রাইসুলকে জিততে দিতে চায়না অরণ্য কোনভাবেই।
এখান থেকে বের হয়েই কয়েকটা ফাইল নিয়ে বসতে হবে অরণ্যকে। কাজটা গুরুত্বপূর্ন। পুরানো কিছু কেসে রাইসুলের উপস্থিতির আভাস পাওয়া পাওয়া যায়। বেশির ভাগ গুলোই ঠান্ডা মাথার খুন। কিন্তু আলামত পরিস্কার ছিল না। আর ভিকটিম বেশিরভাগই মহিলা আর মৃত্যুর আগে ভিকটিমরা সবাই রেপড হয়েছিল। রাইসুলের স্যাডিষ্ট নেচারটা এটাতে স্পষ্ট। ঝুমকে নিয়ে এজন্য যথেষ্ট সঙ্কিত অরণ্য, ওর রাগ যদি ঝুমের উপর দিয়ে তোলে রাইসুল?
"অসম্ভব " নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছে অরণ্য। রাইসুলের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়বে সেই প্ল্যানই কাল থেকে মনে মনে সাজাচ্ছে ও বার বার। পুরোনো ওইসব কেসের সাক্ষী গুলোকে আবারো জেরা করা গেলে সবচেয়ে ভালো হতো কিন্তু রাইসুলের ক্ষমতার হাত খুব লম্বা আর তারচেয়েও বড়ো কথা ও খুবই ধূর্ত, নিষ্ঠুর একজন খুনী । সব কেসগুলোকেই ও নিজের ক্ষমতার বলে চূড়ান্ত রায় দিয়ে ক্লোজ করে ফেলেছে, রিওপেন করার কোনো রকম সুযোগই রাখেনি।
মনে মনে রাইসুলকে বিশ্রী একটা গালি দিল অরণ্য। কেন যে এই অতি বুদ্ধিমান লোকগুলো এত নিচুস্তরের মন মানসিকতা নিয়ে জন্মায় অথচ এদের মেধাগুলোকেই একটু ভালো কাজে লাগালে দেশের উন্নতি ঠেকান কঠিন হয়ে যেত। একটা দীর্ঘশ্বাস ঠেলে বেড়িয়ে আসে অরণ্যর বুক চিড়ে।
অথচ এই রাইসুলের মতো লোকের কারনে আজ ওর জীবনের সুন্দর সব মুহূর্তগুলো ওকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে। বউটা ওর কত সুন্দর হাসি খুশি ছিল, সব মাটি করে দিল ইবলিশটা।এখন কি করে ঠান্ডা করবে ওর কিউটের ডিব্বাটাকে সেটা ভেবেই কোন কূল পাচ্ছিল না অরণ্য।
আজকে বোধহয় ঝুম রাগে কোনো কথাই বলবে না ওর সাথে। গুডবাই কিস তো দূরে থাক। কিন্তু তারপরও রাতে একবার আসতে হবে অরণ্যকে। ঝুমের মেজাজ ঠান্ডা হলে, শুনতে হবে ওর নেশা হওয়ার কারনটা কি?
"আঙ্কেল আমি এখন উঠব... আজ জয়েন করতেই হবে।"
শাহেদ মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দিলেন। শাহেদের অরণ্যকে বেশ পছন্দ হয়েছে। ছেলেটা নিজের কাজের প্রতি বেশ দায়িত্বশীল। মেয়ের জামাই এমনই চেয়েছিলেন তিনি, এছাড়া অরণ্যর পুরো পরিবারের সবার ব্যাবহারই খুব অমায়িক। বড়ো বোনের কাছে শাহেদ এজন্য খুব কৃতজ্ঞ বোধ করছেন। বড়ো আপা নিজে থেকে যেচে এমন ছেলের প্রস্তাব এনেছিলেন, না হলে হয়তো কোনোদিনই যোগাযোগ হতোনা অরণ্যর সাথে। তবে অরণ্য আর নিঝুমের মেলামেশাটা কেমন একটু চোখে বাঁধছে শাহেদের । অল্পদিনে দুজনে বড়ো বেশি ফ্রি হয়ে গেছে একজন আরেকজনের সাথে আর দুজনের অধিকারবোধের ঘনঘটাও পরিবারের সবার চোখে লাগছে... ব্যাপারটা অস্বস্তিকর। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এটা ভালোভাবে নাও নিতে পারে, নিঝুমকে সতর্ক করতে হবে মনে মনে চিন্তা করলেন শাহেদ।
বোনদের জন্য ওদের বিয়ে খুব বেশি দেরী করা ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না তার। আগামী দুই একমাসের মধ্যেই ওদের বিয়ের দিনটা ঠিক করে ফেলতে হবে, বলা যায়না ভাল ছেলে, বেশি ঝুলিয়ে রাখলে ফস্কেও যেতে পারে।
ছেলেটার ব্যবহার বেশ ভদ্র,সেইসাথে নিঝুমকে খুব সুন্দর হ্যান্ডেল করতে পারে। মেয়ে তার এমনিতে অনেক লক্ষী কিন্তু প্রচুর জেদ। কোনো কিছু করবে তো করেই ছাড়বে, দরকার হলে নিঃশব্দে নিজের উপর অত্যাচারও করবে কিন্তু কাজ আদায় না করে থামবে না। অথচ আজ অরণ্যর কথা শুনে, মন খারাপ হওয়া সত্বেও সুর সুর করে চলে আসল। এই ক্ষমতাটাই সবার থাকে না। বিয়ে তো সবাই করে, কিন্তু মনের কাছে মন বাঁধা পড়ে ক'জনার?
অরণ্য বের হবে তখনই হাতেট মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল।
নিঝুমের ফোন। আশেপাশে দেখতে না পেয়ে সিড়ির দিকে সিড়ির দিকে খোঁজ করতেই অন্ধকার মুখটা নজরে এলো অরণ্যর। চোখটা কি ছলছল করছে ঝুমের?
বুকটা চিনচিন করে উঠল অরণ্যর। ঠিক যে কাজটা ও করতে চায়না, প্রতিনিয়ত সে কাজটাই ওকে করতে হচ্ছে কিছুদিন ধরে। নিজেট এই কষ্ট ও কাকে দেখাবে? ঝুমের ঝলমলে মুখটা হচ্ছে অরণ্যর সারাদিনের ভাল থাকার ট্রামকার্ড, আর সেই মুখটা ওরকম আলোহীন দেখে বের হলে ওর দিন কি করে কাটবে? মনটা তো সারাক্ষণ ওর চৌহদ্দির মধ্যেই ঘুরতে থাকবে। এভাবে কী করে কাজ করবে অরণ্য?
ওর অবাধ্য মনের দুঃখগুলো বের হয়ে আসার পায়তারা করছে কেন কে জানে? ভীষন ইচ্ছে হচ্ছে অরণ্যর, ঝুমকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘন কালো চুলে নাক ডুবিয়ে দিতে.. যেখানে হাজারো ফুলের সুবাস আছে। কিন্তু ঝুম পরী ওর রাগ হয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে কাল থেকে.. সহ্য হয় বলো?
নিঝুমের চোখের কোনে জমে থাকা এক ফোঁটা অশ্রুও ওর কাছে হীরের মত দামী। অরণ্য পারলে ওগুলো খুব যত্ন করে নিজের কাছে জমিয়ে রেখে দিত। ওটা যে ওর অভিমানী আদুরে বউটার হৃদয় নিংড়ানো মুহূর্ত গুলোর সাক্ষী।
কিন্তু মনের ইচ্ছে গুলো অরণ্যর মনেই মরে যাচ্ছে। অভিমানে ভরা মুখটা দেখেও কিছু করার ছিল না ওর কাল। একটু নরম হলেই ঠিক ওকে দিয়ে হ্যাঁ করিয়ে ছাড়ত নিঝুম।
"আশু আমি একটু ফ্রেশ হবো, ওয়াশরুম কোনটা খালি আছে?" অরণ্য খুব স্বাভাবিক
ভাবে জিজ্ঞেস করল। আসলে ওপরে যাবার এটাই এখন সবচেয়ে ভালো একটা অজুহাত। দিনের বেলা তো আর জানালা বেয়ে উঠা সম্ভব না, হাজার হোক শ্বশুরবাড়ি।
"আপুরটা বোধহয় ফাঁকা আছে জিজু," আশু বলল।
"তুমি একটু দেখে আসবে প্লিজ? "
অরণ্যর কথায় ভীষন হাসি পেল আশুর। কি অভিনয়রে বাবা... একরাত বউ ছাড়া থাকেনা, সেই লোক আবার এখন সাধু সাজছে।
" আচ্ছা আমি দেখছি।"
আশুর পিছে পিছেই উপরে উঠে এল অরণ্য। আশু দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। ও আসতেই বাই বলে চলে গেল।
নিঝুমের ঘরে ঢুকেই অরণ্যর মনটা আবার হাহাকার করে উঠল। বালিশে মুখ দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা । এবার আর নিজেকে আটকালো না অরণ্য, তাড়াতাড়ি নিঝুমের খাটের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।
"ঝুম আমি খুব দুঃখিত, একদিন দেখো আমি তোমাকে খুব সুন্দর সুন্দর জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাব, প্রমিস। কিন্তু তুমি আর কেঁদনা প্লিজ," অরন্য নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করল।
ওর কথায় কান্নায় বিরতি ঘটালেও, বালিশ থেকে মুখ তুলল না রাজকন্যা। শেষে অরণ্যকেই জোর করতে হলো।
"ঝুম মুখ তোলো প্লিজ।"
"না..... তুমি যাও। ডিউটি কর গিয়ে।"
পাগলীটা যদি একটি্ু বুঝত বিপদটা, কিন্তু সব কথা ওর পক্ষে বলা সম্ভব না এখন নিঝুমকে।
"আমি কি তাহলে আজকে সারাটা দিন এমন পচাই কাটাবো? কেউ আমাকে একটু হাসি মুখেও বিদায় দিবে না? এমনও তো হতে পারে যে, এই যে বের হচ্ছি আর কোনদিন ঘরে ফিরলামই না।"
এই কথার জন্যই হয়তো.. এক মুহূর্তের মধ্যে বিছানায় উঠে বসল নিঝুম।
"খবরদার অরণ্য, আর একবার এই কথা বললে আমি আর কোনোদিনও তোমার সামনে আসবনা। "
"আরে এ দেখি উল্টো ধমকি দেয়।"
"একদম হাসবে না।"
"তাহলে কাঁদব?" অরণ্যর প্রশ্নে আবার চেহারাটা কান্না কান্না করে ফেলল নিঝুম। ও কি তাই বলল নাকি?
"আরে.. ঝুম। আরে বউ আবার কাঁদ কেন? "
"আমার খুব মন খারাপ হচ্ছে অরণ্য, আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। "
"আচ্ছা আমরা আবার কুয়াকাটা যাব.. আমাকে কিছুদিন সময় দাও, প্লিজ।"
"তোমার কী মনে হয়...ওই কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য আমি কাঁদছি? " নিঝুম রাগ হয়ে জিজ্ঞেস করল অরণ্যকে।
"হ্যাঁ.. না মানে.. তাহলে তুমি কাঁদছ কেন? "
নিঝুম উত্তর না দিয়ে চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইল, টপটপ করে ওর চোখের পানি তখনও গড়িয়ে পড়ে চলেছে।
"ঝুম কি হলো?"
পর মুহূর্তেই অরণ্যর বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল নিঝুম। সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউ গুলো যেমন আছড়ে পরে তীরের উপর ঠিক তেমনি করে।
অরণ্যও দুহাত দিয়ে টেনে নিল নিঝুমকে। কাল থেকে খুব কষ্ট হচ্ছিল ওর। একটা বারের জন্যও লঞ্চে কথা বলেনি নিঝুম ওর সাথে আর অরণ্যও রাগ ভাঙাতে যায়নি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে কী রকম ছটফট করছিল.. সে তে শুধু ওই জানে।
"আমার খুব কষ্ট হচ্ছে অরণ্য," এবার হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল নিঝুম।
"কিন্তু কেন? " বুঝেও না বোঝার ভান ধরতে হলো অরণ্যকে। কিছু করার নেই ওর, ঝুম পাগলি ওকে পাগল করে দিচ্ছে। ওকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারলে বেশ হতো.. কিন্তু অরণ্য পালাবে তো পালাবেটা কোথায়?
"বলব কিন্তু তুমি হাসতে পারবেনা কথা দিতে হবে," ঠোঁট ফুলিয়ে আবদার করলো নিঝুম।
"আচ্ছা হাসব না। তোমার কান্না দেখে আমার মন এমনি খুব খারাপ হয়ে গেছে।"
"আমার তোমাকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হবে এখন। আমি কি করে থাকব?"
" বুঝলাম না?"
"এখন তো তুমি চলে যাবে আমাকে রেখে।"
"হ্যাঁ, তো? রাতে আবার আসবতো।"
"সেই কত্তো রাতে আসবা। এই এত সময় তো একবারও দেখা হবে না। আমি কি করে থাকবো এতক্ষণ না দেখে।"
"হ্যাঁ তো আগেও তো এরকমই ছিল পুরো ব্যাপারটা। আর আমি তো বাসাায় ফিরলেও এতো রাতেই ফিরি।"
"সে জন্যই তো বলছি। এই কদিন তুমি কী সুন্দর আমার চোখের সামনে ছিলে আর এখন আবার সেই পুরানো মডেলের অরণ্য। যার স্টাইল খটমটে, যার ফোনে প্রায় সারাদিনই রিংটোন, ভাইব্রেশন অফ থাকে।"
রাজ্যের অভিযোগ নিঝুমের।
নিঝুমের কথায় হাসলেও আসলে কষ্টটা অরণ্যরও হচ্ছে। এই কদিন প্রায় সবসময়ই একসাথে ছিল ওরা, একদম চোখের সামনে। নিঝুম যেন ওর রক্তে মিশে গেছে, দম বন্ধ হয়ে আসে ওর ঝুমকে ছাড়া। কিন্তু সেটাতো বলতে পারবে না অরণ্য। হাজার হলেও পুরুষ মানুষ সে... ভিতরে ভিতরে ভেঙ্গে গেলেও বাইরে টু শব্দ করতে পারে না, জন্মজাত অভ্যাস।
তাছাড়া নিঝুমের পরিবার এখনও বিয়ের ফিক্সড কোনো ডেট দিচ্ছে না। নইলে এখনই অরণ্য এক পায়ে রাজি নিঝুমকে ওদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওর ঘরটা সেই কবে থেকে ঝুমের জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে।
ঝুমের জন্য টুকটাক কিছু জিনিস কিনেছে অরণ্য।
সেগুলো দেখানোর জন্য মনটা ভীষন আকুপাকু করছে ওর। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে কবে ঝুমকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবে সেটা তো ও নিজেই এখনো জানে না। দুই মাসও হতে পারে আবার ছয় মাসও। এখন এটা তো ঝুমের পরিবারের ইচ্ছার উপর নির্ভর।
" আমার মনে হয় ফালতু বিষয়টা নিয়ে কান্নাকাটি না করাই ভাল ঝুম।"
অরণ্য বিষয়টা ঘোরানোর চেষ্টা করল। ঝুমের কান্নায় ওর নিজের কি পরিমান অসহায় লাগছে সেটা যদি ঝুম জানত। নিজের বউ হওয়া স্বত্তেও ওকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে পারছেনা অরণ্য আর জোর করে কিছু করাও যাবে না, তাতেও আবার ঝুমই সবচেয়ে কষ্ট পাবে। কি করবে কিছুই মাথায় খেলে না অরণ্যর। আর ওদিকে রাইসুলের বাচ্চা এসে জ্বালানো শুরু করেছে। অরণ্যর ইচ্ছে হচ্ছিল রাইসুলকে নিয়ে বঙ্গোপসাগরের পানিতে নিয়ে চুবায়।
"আমার কষ্ট তোমার কাছে ফালতু?"
নিঝুমের প্রশ্নে চোখ কপালে উঠল অরণ্যর। একথা আবার কখন বলল ও?
"তুমি কি পাগল ঝুম? তোমার কান্না আমার কাছে ফালতু মনে হয়...এটা তুমি কি করে বলো? আমি বলছি ওটা তো আমাদের হাতে নেই, তাহলে আমরা অযথা চিন্তা করে কি করব?"
অরণ্যর উত্তর যে নিঝুমের একটুও মনপুত হয়নি তা ওর মুখ ভেঙচানো দেখেই বোঝা গেল।
"আচ্ছা তার চেয়ে আমায় একটু আদর করো, কাল থেকে একদম ঠান্ডা বরফ হয়ে বসে আছো," অরণ্য গুমোট পরিবেশটা হালকা করতে চায়।
"সরো এখান থেকে, না হলে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব আমি। আর খবরদার আমার বিছানায় বসবা না তুমি। পচা একটা লোক। আমি নাকি ফালতু, আমি নাকি বরফ? বরঞ্চ তুমি একটা কাঠ, একটা অনুভূতি বিহীন রোবট।"
"এটা একদম সত্যি বলেছ। তবে আমাকে পেলে আমার বান্ধবী গুলো সব গিলে ফেলার জন্য বসে থাকে।"
"কী ? তোমার বান্ধবীগুলো তোমাকে গিলতে চায়? তারমানে কি? তুমি ওদের চুমু খাওয়ার সুযোগ দাও? ওদের সাথেও তোমার সম্পর্ক আছে? " এক ঝটকায় উঠে বসল নিঝুম অরণ্যর বন্ধন থেকে।
" ঝুম তুমি ভুল বুঝছো " নিঝুমকে ধরার জন্য হাত বাড়ায় অরণ্য।
"না। তুমি আমাকে ছুঁবে না খবরদার... চিটার কোথাকার " কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে নিঝুম।
বুকে অসম্ভব জ্বালা হচ্ছে ওর। কারা এরা, কতজন... সবগুলোর চোখ তুলে নিবে নিঝুম কেউ ওর অরণ্যর দিকে তাকালে। অরণ্য শুধু ওর আর কারও না।
এরপর অরণ্য আর একটা কথাও শুনল না নিঝুমের, উল্টো দুহাতে জাপটে ধরে অনেকক্ষণ আদর করে দিল বউটাকে। ওর মনে হলো বিয়ের পর প্রথম প্রথম বউগুলো সব এরকম অবুঝ থাকে, ভীষন নরম... জেলী ক্যান্ডির মতো।
............................................
"হ্যালো "
"বলো "
"আরে শোনই না...."
"ঝুম আমি শুনছি, আর মনযোগ দিয়েই শুনছি। " অরণ্য সত্যিই হাতের ফাইলটা বন্ধ করলো।
"না এভাবে না। প্লিজ এক মিনিট শুনবে শুধু, তারপর রেখে দিও।"
"আচ্ছা তা হলে তুমি আমাকে শেখাও কিভাবে মানুষ শোনে, তারপর আমও ট্রাই করি।"
"আচ্ছা আচ্ছা যাও, এত ভাব নিতে হবে না।"
"হমম... তা হলে ঝেড়ে কাশ এখন।"
" তাহলে শোন একটা সারপ্রাইজ আছে। "
"কী? "
"আব্বু না.. "
"আব্বু কী!"
"আব্বু বলেছে তোমরা চাইলে সামনের মাসে বিয়ের ডেট হতে পারে। ছোট ফুপি আর সেঝ ফুপি আসছে সামনের মাসে।"
"কী?" হাতের ফাইলগুলি পড়ে গেল অরণ্যর হাত থেকে।" আমি ঠিক শুনছি তো? "
"একদম.. শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছি, খবরে কোন ভেজাল নেই স্যার।" নিঝুম হাসতে হাসতে জানাল। কথাটা শোনার পর থেকে ওর পেট ফেটে যাচ্ছিল অরণ্যকে কথাটা বলার জন্য। উহহ..এখন শান্তি।
চলবে......
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro