Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

২০

খুক খুক শব্দ কানে যেতেই অরণ্য দ্রুত সতর্ক হলো কিন্তু ততক্ষনে যা হবার হয়ে গিয়েছে।
পিছনে ফিরে তাকাতেই অরণ্য দ্রুত নিঝুমকে ছেড়ে দিল। পড়বি পড় মালির ঘাড়ে! আম্মু একদম সাক্ষাত ওদের পিছনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
কিন্তু আম্মু আসল কখন?

নিঝুমও লাফ দিয়ে পিছনে সরে গেল। এখন কি হবে?

আসমা ছাদের দরজার চৌকাঠে হেলান দিয়ে ওদের দেখছিলেন। বৃষ্টির মধ্যেও ওরা কেউ নিচে নামেনি দেখে উনি নিজেই আবার ওদের ডাকতে উপরে উঠে এসেছেন। অয়নের আবার ঠান্ডার দোষ আছে। একটু ঠান্ডা লাগলেই খুব সহজে ওর কাশি হয়ে যায়। কিন্তু এসে দেখেন বৃষ্টির মধ্যে নায়ক নায়িকা তো ভিজছেই, সাথে বাচ্চাকাচ্চাগুলোও কম যায়না, হা করে পুরো সিনেমা গপাগপ  গিলছে।

আসমাকে  দেখ অরণ্য তোতলাতে লাগল,
" ম...মম..আম...আম্মুু.... তুমি? "

" হান জি... ম্যা, তেরি মাম্মী। কেন আমাকে অডিয়েন্স হিসেবে তেমন পছন্দ হচ্ছে না বুঝি?"

"না মা.. মাম মানে কি বলছ এসব তুমি আম্মু? তুমি অডিয়েন্স কেন হবা? " অরণ্যর তোতলানো বেড়ে গেল ভয়ে। আম্মুতো আর জানে না যে.... ও নিজের বউকে জড়িয়ে ধরসে, একদম লাইসেন্সধারী বউ। এই দৃশ্য দেখে আম্মু ওদের খারাপ মনে করবে নাতো?

"তাইত.. আম্মু তুমি অডিয়েন্স কেন হবা? তুমি হলে গিয়ে ফিল্ম মেকার। তুমি যা বলবা তাই," পাশ থেকে অয়ন এসে আসমাকে জড়িয়ে ধরল।

ভাইয়া আর ঝুমঝুমির কপালে আজ গনধোলাই আছে বলে মনে হচ্ছে অয়নের।

"তাই না? আমি ওদিকে মনে করলাম আমার বাচ্চা দুটো কত ভদ্র, লক্ষী, শান্তশিষ্ট, সংস্কারি আর এদিকে তো দেখি ঘোর কলিকাল চলছে। একেবারে সেই রকম, সব কিছু। মা হয়ে আমার তো মাথা পুরো বো বো করে ঘুরছে। কি অবস্থা আমার, " আসমা ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

নিঝুমের তো শাশুড়ির কথা শুনে হয়ে গেছে। এখন কি হবে কে জানে? বিয়েটা ভেঙ্গে দেবে নাতো আন্টি ওকে খারাপ মনে করে? লজ্জায় আর দুঃখে কান্না চলে আসল নিঝুমের।

আসমা একবার অরণ্য আর একবার নিঝুমের মুখের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, " ছাড়তো অনু আমি নিচে যাই। ও দুটোতো আর আমাকে ভালোবাসেনা যে আমাকে জড়িয়ে ধরবে, নিজেরাই যা করার করুক। আমার কাজ বউ তাড়াতাড়ি ঘরে তোলা। আমি বরং বিয়াইনকে গিয়ে সেটাই  বলি যে, মেয়ে যত তাড়াতাড়ি পারেন আমার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। না হলে আমার ছেলে ভোরের আগে বাড়ি ফেরা ভুলে যাবে।"

আসমার কথায় নিঝুম লজ্জায় মাথাই তুলতে পারলনা। আল্লাহ আন্টিতো তাহলে সবই জানেন। অরণ্য যে রাতে ওর কাছে থাকে... এটা আন্টির সামনে দাঁড়িয়ে ও স্বীকার করবে কি করে? অরণ্যও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল অপরাধীর মতো। মার কাছে এভাবে ধরা খেয়ে গেল। এখন ও কি জবাব দিবে মা যদি জিজ্ঞেস করে যে  তুই রাত্রে নিঝুমের সাথে কোন অধিকারে থাকিস? মা কিভাবে টের পেল? ও তো একটুও শব্দ না করে ঢোকে বাসায়। তাহলে?

আম্মু অরণ্যকে তো খারাপ ভাবছেই, সাথে ঝুমকেও...  'গাধা একটা 'নিজেকেই নিজে গালি দিল অরণ্য। আম্মু ওদের ভুল বুঝলে খুব খারাপ হয়ে যাবে পুরো ব্যাপারটা।

"কি অবাক হচ্ছিস যে আম্মু জানে কি করে?" আসমার প্রশ্নে শুকনো ঢোক গিলল অরণ্য। ওর মাথা এখন এমনিতেই কাজ করছে না তার মধ্যে আম্মু এরকম করে প্রশ্ন করতে থাকলে ও তো হালেই পানি পাবে না।

অরণ্য জবাব না দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কি বলবে? মাথা নিচু করতে করতে থুতনি গিয়ে বুকে ঠেকেছে ওর। আজকে তো মনে হয় কান ধরে উঠবস করলেও রেহাই মিলবে না।

"ওরে আমিও পুলিশের মা... সারারাত খাবারগুলো তোর অপেক্ষায় পড়ে থাকে। সকালে এসে ওগুলো আমাকেই তুলতে হয়। নিঝুমকে দেখার পর থেকেই এই রোগে ধরেছে তোকে," আসমা বলে উঠেন।

এইবার অরণ্য আর চুপ থাকতে পারলনা। আম্মু হয়ত এবার বলেই বসবে যে নিঝুম ভাল মেয়ে না। অরণ্য এটা কোনেভাবেই সহ্য করতে পারবেনা। ও মার হাতটা ধরল তাড়াতাড়ি।

"আম্মু প্লিজ... বিশ্বাস কর ঝুমের কোনো দোষ নেই। ও তো আমাকে...  আমিই জোর করে ওর বাসার নিচে গিয়ে দেখা করতাম।"

নিঝুম ততক্ষণে কেঁদে চারদিক ভাসিয়ে ফেলছে।

"আরে আমি কখন বললাম যে নিঝুম খারাপ," আসমা চোখ কপালে তুললেন।

"আম্মু আমি সত্যি বলছি, ঝুমের কোনো দোষ নেই। আমি.. মানে আমরা..  বিয়ে...."

অরণ্যর মুখের কথাটা কেড়ে নিলেন আসমা বেগম," জানি, তোরা বিয়ে করে নিয়েছিস। আমার কাছে তোদের বিয়ের ছবি আছে।"

আসমা বেগমের কথায় অরণ্য হতবাক হয়ে গেল। ছবি! ছবি কোথ থেকে আসলো আম্মুর কাছে?
" ছবি আছে মানে? আম্মু আমরা ইচ্ছে করে এই বিয়ে করিনি, পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে করতে বাধ্য হয়েছিলাম।"

"জানি। অনু আমাকে বলেছে তোদের ব্যাপারটা।"

অরণ্য এবার কটমট করে অয়নের দিকে তাকাল। অয়নকে পইপই করে ও মানা করেছিল ব্যাপারটা আম্মুকে না জানাতে। সময় হলে ও নিজেই আম্মুকে জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু এখনতো সব ওর নিয়ন্ত্রনের বাইরে। এখন ও কি করে সবটা সামলাবে? অয়নকে ধরে দুটো থাপ্পর মারতে মন চাইল অরণ্যর।

"ভাইয়া আমার উপর রাগ করিস না। আমি আম্মুকে বলতে বাধ্য হয়েছি। কেউ একজন আম্মুর ফোনে তোদের ওই ধরে বেঁধে বিয়ের ছবি পাঠিয়েছিল মেসেজ করে। সাথে কাবিনে তোরা সাক্ষর করছিস সেসব ছবিও ছিল। আম্মুর দেখে অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা, আমি তাই বলতে বাধ্য হয়েছি।"

অয়নের বক্তব্য শুনে অরণ্য একদম বোবা হয়ে গেল। তলে তলে এত কিছু করে ফেলেছে ওই রাইসুলের বাচ্চা। ওই শয়তানটাকে পেলে ওর হাড়-গোড় সব গুড়ো গুড়ো করবে অরণ্য।

"যাক যা হয়েছে হয়েছে, চুরি ছুপি যা করার ছিল তাও করেছিস। বাপ-মাকে তো আর বিশ্বাস করিস না তোরা কিন্তু আর লুকোচুরি করার দরকার নেই... অন্তত আমার সামনে। আমি বেয়াইনকে অনুরোধ করবো তোদের বিয়ে যত দ্রুত ব্যবস্থা করা যায় করার জন্য, বাকিটা উপর ওয়ালার ইচ্ছা। "

"আন্টি আম্মুকে বলবেন না প্লিজ... আম্মু এই বিয়ের কথা শুনলে আমাকে মেরেই ফেলবে," নিঝুম ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল আবার। এমন খারাপ পরিস্থিতি গুলো ওর জীবনে কেন হচ্ছে?

আসমা এগিয়ে গিয়ে নিঝুমকে জড়িয়ে ধরলেন।

" তুই কি পাগল নিঝুম... আমি গিয়ে ওই বিয়ের কথা তোর মাকে বলব নাকি? এখানে তোর চাইতে আমার পেটের ছেলের দোষ বেশি । ও তোকে রক্ষা করতে পারেনি। তুই তো হচ্ছিস ঘটনার শিকার। "

আসমার কথায় এবার একটু ভরসা পেল নিঝুম। আন্টি বোধহয় তাহলে ওদের মাফ করে দিয়েছেন। কিন্তু আন্টিকে বিয়ের ছবি পাঠাল কে? একই প্রশ্ন অরণ্যর মাথার মধ্যেও ঘুরছে... ব্যাপারটা রাইসুলই করল না অন্য কেউ?

"আর আমাকে আন্টি বললে আমি কিন্তু আর তোর কোনো কথার জবাব দেব না নিঝুম। আইনত তুই এখন আমার বাড়ির বড়ো বউ," নিঝুমের থুতনিটা একটু নেড়ে দিলেন আসমা।

গাল দুটো লাল হয়ে গেল নিঝুমের।

"সরি মা, আর বলবনা। কিন্তু আব্বু -আম্মু, ফুপির সামনে কি করব? "

"সে তোকে ভাবতে হবে না, ওটা ম্যনেজ করার দায়িত্ব আমার, " আসমা হাসতে হাসতে বললেন।

মায়ের মুখে হাসি দেখে এতক্ষণে স্বস্তি পেল অরণ্য। আম্মুকে দুঃখ দেওয়ার একফোঁটা ইচ্ছে ওর নাই। ওরা দুভাই এটা মাথায় রাখার চেষ্টা করে সব সময়। আজ ওর কারনে আম্মু কষ্ট পেলে সত্যিই ওর যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকত না। আব্বু আর আম্মু হলো ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, সবচেয়ে অকৃত্রিম আর ভালবাসার।

"এই তুই একটু হাসরে অরু। তোর এই গম্ভীর মুখটা দেখলে আমার খুব বিশ্রী লাগে। কি এক পুলিশের চাকরিতে ঢুকলি তুই আর আমার হাসিখুশি ছেলেটা একটা মেজাজী লোক হয়ে গেল। এখন বৌটা যদি তোকে একটু সাইজে আনতে পারে।"

মায়ের কথায় এবার সত্যিই হেসে ফেলল অরণ্য। সাথে আশেপাশের পিচ্চিপাচ্চা গুলোও। ওরাও যে ওদের সব কথাগুলো গোগ্রাশে গিলছিল সেকথা একদম ভুলে গিয়েছিল ওরা। সবাইকে এরকম প্রানখুলে হাসতে দেখে এবার দুহাত মুখ ঢাকল নিঝুম।

.....................................................

হাতের মুঠোটা খুলে আরেক দফা লজ্জা পেল নিঝুম। অরণ্য এটা কি দিয়েছে ওকে। ছোট বাক্সটার গায়ের লিখা পড়ে ও কি করবে বুঝতে পারলনা। এটা তো ইমারজেন্সি কনট্রাসেপটিভ পিল। ছাদ থেকে নামার সময় ওর হাতে আস্তে করে গুঁজে দিয়েছে ফাজিলটা। তাড়াতাড়ি ওটা নিজের হ্যান্ড ব্যগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখল নিঝুম। এমনি আন্টির সামনে ধরা পরে যা তা অবস্থা তার মধ্যে আবার এই সব। ছি...  আর যদি একবারও অরণ্য ওকে ছুঁতে আসেতো ঠিক আসমা আন্টিকে...  ধ্যাত্তেরি শাশুড়ি মাকে বলে দিতে হবে। বুঝবে মজা তখন অরণ্য বাবু..  কত ধানে কতো চাল। একা একাই ছাদে থাকাকালীন শাশুড়ি মায়ের কথাগুলো মনে হওয়াতে মুখ টিপে হাসতে লাগল নিঝুম।

নিজের রুমে ঢুকে ফেশ হয়ে সোজা বিছানায়  গেল অরণ্য৷ বাপরে খুব বাঁচা বেচে গেছে আজ। কি ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে হতে বেঁচে  গেছে ওরা। আম্মু যে তার এত ভাল অভিনেত্রী জানা ছিলনা ওর। বরিশাল এসেও তো একদম মুখে কুলপি এটে  বসে ছিল। আর অয়নটাও হয়েছেও তেমন। অরণ্যকে বললে কি হতো যে আম্মুকে ও বলে দিয়েছে। ভাবতে ভাবতেই অরণ্যর খেয়াল হলো যে মায়ের মোবাইলটা চেক করতে হবে ওকে। কোন ছবি পাঠিয়েছিল ওরা আম্মুকে? কবে পাঠয়েছিল? কোন নাম্বার থেকে? আর বিয়ের ব্যাপারটা কি শুধু আম্মু জানে না বাবাও জানে। উহ অরণ্য লাইফটা ভাজা ভাজা হয়ে গেল তোর এই প্রেমে পড়ে। কিন্তু সেই সাথে ছবিতে ওর বউকে কেমন লাগছিল সেটা দেখার জন্য মন আনচান করতে লাগল অরণ্যর।

দরজায় টুক টুক শব্দ শুনে বালিশ থেকে মাথা তুলল অরণ্য। দরজার ফাঁক দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিঝুমের মাথাটা দেখা গেল, তারপর সুরুৎ করে দরজার ফাঁক গলে ভিতরে ঢুকে গেল নিঝুম। ঢুকেই চট করে আগে ছিটকিনি তুলে দিল ও দরজার।

"কি ব্যাপার? " অরণ্য চোখবন্ধ করতে করতে জিজ্ঞেস করল। 

"কোনো ব্যাপার না এমনি এলাম। তুমি ওরকম করে ঢাকা গেলে কেন? আর আবার ম্যাজিকের  মতো চলেই বা এলে কেন? "

"ম্যাজিকের মতো চলে এলাম, এই কি তবে মোর অপরাধ ?"

"না... আমি মোটেই তা বলিনি। আমি জানতে চাইছি অমন হুট করে গেলে কেন?  আমাকে বলে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো? "

"দুটো কারন। এক বলে গেলে বলার সাথে সাথে কান্না শুরু হয়ে যেত... আর তোমাকে ওভাবে কাঁদতে দেখলে আমার যাওয়ার ইচ্ছা অর্ধেক হয়ে যেত। আর ফিরে এসে এরকম তুমি তুমিও শোনা যেত না আর যাওয়াটা খুব জরুরি ছিল আমার জন্য ঝুম।"

" ঠিক আছে, বুঝলাম। কিন্তু আমি তো আগেও  তোমাকে তুমি বলেছি," নিঝুম বিছানায় অরণ্যর পাসে এসে বসল। জরুরি প্রয়োজন! কি এমন জরুরি প্রয়োজন ছিল অরণ্যর যে কাউকে কিছু  না বলে এমন চোরের মতো ঢাকায় যেতে হলো ওকে।

আড়চোখে অরণ্যকে দেখল নিঝুম। একদিনেই মুখটা কেমন ক্লান্ত দেখাচ্ছে অরণ্যর । নিঝুমের খুব ইচ্ছে হলো দুহাতের তোলায় মানুষটার ক্লান্ত মুখটা তুলে নেয় কিন্তু কাল সন্ধ্যার কথা মনে পড়াতে ওর আর সাহসে কুলালো না। যদি অরণ্য রেগে গিয়ে ওকে কড়া কথা শুনিয়ে দেয় এখন।

"বলেছ। আবার রাগ হলেই আপনি বলবা, তোমার   এই আপনি তুমি কতদিন চলবে কে জানে," হেসে ফেলল অরন্য।

নিঝুমও মাথা নিচু করে হাসল এবার। এটা সত্যি, রাগ হলেই অরণ্যকে আর তুমি বলতে ইচ্ছে হয়না ওর।

চুপ করে কিছুটা সময় বসে থাকল নিঝুম। অরণ্য চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে গেল নাকি লোকটা?

" অরণ্য... "

নিঝুম দুইবার ডাকার পরে সাড়া  দিল অরণ্য। ঘুমে চোখ বুজে আসছে ওর। আলসেমি ভরা একটা হাই তুলতে তুলতে নিঝুমকে পাশে শুয়ে পড়তে বলল অরণ্য, জানে ওর মতো ঝুমও ঘুমায়নি কাল রাতে। চোখের কোনে কালি পড়ে গিয়েছে রাজকন্যার একদিনেই।

নিঝুমও যেন এর অপেক্ষাতেই ছিল, অরণ্য একবার বলতেই চুপটি করে ও শুয়ে পড়ল অরণ্যর পাশে।

"অরণ্য "

"উ.."

"অরণ্য "

"হমমম "

"ঘুমাও.. "

"উমমম..."

"শোনো না... "

" বলো "

"আই অ্যাম সরি। "

"কেন? "

"আমি আসলে কাল ওভাবে তোমাকে ওই কথা গুলো বলতে চাইনি। তুমি হার্ট হবে বুঝতে পারিনি,  সরি।"

"না ঠিক ততটা হার্ট হইনি যতটা তুমি মনে করছ, ভুল আমারো ছিল। তাই শুধরাতে গিয়েছিলাম। "

"মানে?" নিঝুম শোয়া থেকে উঠে বসল। অরণ্যর কথা ঠিকঠাক বুঝল না ও।

"তুমি ঢাকায় কি করতে গিয়েছিলে? কি ঠিক করতে? "

"বলছি...  আগে ওই কালো ব্যাগটা নিয়ে আসো।"

নিঝুম টেবিলের উপর থেকে  অরণ্যর দেখানো ব্যাগটা আনল। অরণ্য খুলে ওর হাতে এক থোকা টাকা দিল।

"এটা কি? "

"টাকা।"

"টাকা! আমাকে টাকা দিচ্ছ কেন? বিয়ের গিফট নাকি? " নিঝুম হাসতে লাগল।

"কারন এটা তোমার পাওনা টাকা। "

"আমার পাওনা টাকা? কিন্তু আমি তো কখনও তোমাকে টাকা ধার দেইনি। ইনফ্যাক্ট আমি এত টাকা একসাথে কখনও দেখিনি। "

"না এটা ধারের টাকা না কিন্তু তোমার টাকা। তোমার দেন মোহরানা পরিশোধ করে দিলাম। "

" কিন্তু এটা তো পরে দিলেও হতো।"

"না... বউয়ের গায়ে হাত দেওয়ার আগেই এটা পরিশোধ করা উচিত। এটাই হুকুম, আই অ্যাম সরি এগেইন।"

"আরে সরির কি আছে? আমি তো জানি তুমি আমাকে ভালবাসো। এটুকু ভরসা তোমার প্রতি আমার আছে। আমি আসলে আম্মু আব্বুর সামনে আমাদের রিলেশনটাকে কোনোভাবে ছোট করতে  চাইনি। তুমি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝ না। আমার... আমার টাকা চাইনা অরণ্য," নিঝুম টাকাগুলো অরণ্যর পাশে রেখে দিল। কাল অরণ্য ছিল না, সারারাত এক ফোঁটা ঘুম হয়নি ওর। টাকা দিয়ে নিঝুম কি করবে? টাকা দিয়ে কি কালকের মন খারাপটা দূর করা যাবে? এই যে অরণ্য এখন ওর সামনে আছে, এটুকু পেলেই  নিঝুম খুশি। আল্লাহ ওর সামনে থেকে অরণ্যকে যেন  কখনো সরিয়ে না নেন।

"না ঝুম, এটা আল্লাহর নির্দেশ। এটার সাথে বেশি বা কম ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা আমাদের বিধান। তর্ক না করে এটা মেনে নেওয়াই উচিত।  আমি দুর্বল মুহূর্তে ভুল করেছি, এটা হয়ত গুনাহই হয়ে গেছে। কাল তোমার কথার পরে আমার কথাটা মনে পড়েছে যে,  তাইত আমিতো দেন মোহরানা পরিশোধ করিনি তোমার। আম্মু একদিন গল্পের ছলে কথাটা বলেছিল তোমাকে আংটি পড়ানোর পরে। তাই টাকাটা আনতে গিয়েছিলাম।"

নিঝুম অরণ্যর কথায় হা করে তাকিয়ে রইল। অরণ্য কি পাগল! আর দুইদিন পরেই ওরা ঢাকা ফেরত  যাবে। এখন এসব করার কোনো মানে হয়?

"আর এটা তোমার কাছে রাখ।"

নীলাভ - সবুজ  রঙের একটা কাগজ ধরিয়ে দিল অরণ্য নিঝুমের হাতে।

"কি এটা? "

"খুলে দেখ। "

কাগজটা খুলে একফালি সূর্যের মতো উজ্জল আলোতে হেসে উঠল নিঝুমের মুখ। ওদের বিয়ের  প্রমান। ওর সাক্ষরের উপর অরণ্যর সাক্ষরটা দেখে খুব মায়া লাগল নিঝুমের। বুক জুড়ে অদ্ভুত এক চিনচিনে অনুভূতি, চোখের সামনের সবটা কেমন ঝাপসা হয়ে গেল। সেদিন কেমন ঘোরের মধ্যে সিগনেচারটা করেছিল। কি হচ্ছিল, ও নিজে কি করছিল কিছুই মাথায় ঢুকছিলনা। কিন্তু এখন  বুকের কাছটায় দলা মতো কিছু অনুভূতিরা কেমন  পাকিয়ে আসছে। ওদের ম্যারেজ সার্টিফিকেট। অরণ্যর বউ ও, মাথা উঁচু করে এটাতো নিঝুম এখন বলতেই পারে। ইচ্ছে হচ্ছিল কাগজটা বুকের উপর খুব করে জড়িয়ে ধরে.. বড্ড আদরের এই সুখটুক।

"কাগজটা ভালো করে চেক করে নিও। রেজিস্ট্রারের সীল, রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার সব আছে কিনা দেখ। জাল হলে আবার জেল হতে পারে আমার।"

"বাহ ফলস হলেই বা তোমার কি দোষ? তুমি কি কাজী নাকি?"

"কাজী না হই... কাগজ ভূয়া হলে তখন এটাও তো বলে বসতে পারে মানুষ যে বিনা বিয়েতে তোমাকে আমি ইউস করেছি নিজের মনোরঞ্জনের জন্য।"

"মানুষের কথা জানিনা কিন্তু  আমি এত নিচু মনের নই। সেইদিন আমরা দুজনেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেছিলাম। তোমার কোনো দোষ ছিলনা আমি জানি।"

"না... আমি ইচ্ছার বিরুদ্ধে করিনি। তবে হ্যাঁ, ব্যাপারটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না আর ওভাবে বিয়ের পক্ষে আমি কখনই ছিলাম না। তবে বিয়ে আমি তোমাকে যে কোন অবস্থায়ই করতে রাজি। সেটা অনুষ্ঠান করে হলে ভালো না হলেও ইটস ওকে। "

অরণ্যর দেওয়া আশ্বাসে নিঝুমের মনটা মূহুর্তের মধ্যে পাখির মতো হালকা হয়ে গেল, ইচ্ছে হলো মেঘের ভেলায় চড়ে ও ঘুড়ে বেড়ায় আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। অরণ্য ওর মন রাখতে এগুলো বলল কিনা জানেনা নিঝুম, কিন্তু ওর ভীষন ভাল লাগল।

"থ্যাংকস, ওভাবে চিন্তা করলে আমিও রাজি ছিলাম কিন্তু আব্বু আম্মু শুনলে খুব দুঃখ পেত।কিন্তু বিয়ে তো আমিও তোমাকেই করতাম ডেফিনিটলি।"

"যাক অধমের উপর তাহলে এতটুকু বিশ্বাস আছে  তোমার।"

"আবার পচা কথা...আমি কিন্তু সরি বলেছি অরণ্য আর আমি আমার স্বামীকে অবশ্যই বিশ্বাস করি। "

"তাই? "

"একশ ভাগ।"

"একশ ভাগ!  তাহলে তো আমার এখন প্রমান চাই।"

"এই যে নাও তোমার টাকা। এটা আমার লাগবে না। এরকম লাখ টাকা আমার অরণ্যর চেয়ে দামী না। আমার অরণ্য কোটি টাকার চাইতেও দামী। "

" তুমি ঠিক আছতো বউ? না মানে তুমি এত সহজে স্বীকার করে নিলা যে আমি তোমার কাছে দামী।"

"হ্যাঁ.... দেখো তুমি তো বেতন পাও। এখন সেই টাকা থেকে তুমি বাবা-মাকে দিবে তাই না? "

"হ্যাঁ, দেই তো  কিন্তু বাবা নেয় না আর আম্মু এতদিন নিত, বলত এই টাকায় তোর বউয়ের গয়না বানাব। কিন্তু গত মাসে বলছে বিয়ের পর থেকে সেই টাকাটা তোমাকে দিতে।"

"আচ্ছা সেটার কথা পরে এখন যেটা বলছিলাম  সেটা আগে শেষ করি। তুমি আমাকে কিছু টাকাতো হাত খরচ হিসেবে দিবে নাকি?"

"নিশ্চই... আমার বউ আমি দিব নাতো কে দিবে?"

" কত দিবা? "

"এখন ঢাকায় থাকা অবস্থায় পাঁচ হাজারের  মতো দিতে পারব। বাইরে পোস্টিং হলে বলতে পারছিনা। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা৷ আসলে আমার চাকরিতো খুব বেশিদিন হয়নি। প্রমোশন পেলে আমার বেতনের সাথে সাথে তোমার বেতনও বাড়বে। "

"মজা পেলাম.. যা হোক তারমানে পাঁচ বারং  ষাট হাজার টাকা। তিন বছরে প্রায় দুই লক্ষ্য। তাহলে  তুমি আমাকে না ছেড়ে গেলে  আগামী দশ বছরে তুমি আমাকে প্রায় ছয় লক্ষ্য টাকা দিতে যাচ্ছ মিস্টার অরণ্য... আর এরকম চলতে আমি  একদিন কোটি টাকাতে পৌছেই যাব কি বলো? "

"খুব ভাল ক্যালকুলেশন কিন্তু তারপরও এটা তোমার। কেন... আমি জানিনা কিন্তু আল্লাহ যা করতে বলেছেন সেটা ভালোর জন্যই করেন। এটা ভালো করে তুলে রাখ... পুরো দুই লক্ষ্য এক টাকা। "

"আমার না জানো খুব হাসি পাচ্ছে। "

"কেন? "

"দেখ আমি কিন্তু তোমার কাছে বিয়ে বসিনি,  আমিও বিয়ে করেছি। আর পড়া শেষে আমিও কিছু করতে চাই। তারমানে কিছু করলে আমারও ইনকাম হবে বাট তুমি কিচ্ছু পাবা না.. তোমার লস আমার লাভ। "

"ওকে.... তাহলে  আমি এখনই আমার পাওনা মিটিয়ে নেই কি বলো? "

"মানে...? "

নিঝুমের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হ্যাচকা টানে ওকে বুকের উপর টেনে নিল অরণ্য, তারপর নিঝুমের কানে ফিসফিস করে কিছু বলল। আপাদমস্তক কেঁপে উঠল নিঝুমের। অরণ্যর ফিসফিস করে বলা কথাগুলো রক্তে ভীষন রকমের এক আলোড়ন তুলল... শরীর মাতাল হলো। কিছু সময়  আগে নিজের কাছে করা প্রতিশ্রুতির সবটা ভুলে গেল নিঝুম নিমেষেই।

"সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা
রঙ ছিল ফাল্গুনি হাওয়াতে
সব ভালো লাগছিল চন্দ্রিমায়
খুব কাছে তোমাকে পাওয়াতে"

সময়ের ব্যবধানে দুটো শরীরের পার্থক্য ঘুচে যেতে লাগল আবার। অরণ্যর গভীরে ডুবতে ডুবতে রুক্ষ মরু প্রান্তরের মতোই সবটুকু ভালোবাসা শুষে নিতে লাগল নিঝুমের বেহায়া শরীরটা।

"মন খুশি উর্বশী সেই রাতে
সুর ছিল গান ছিল এই প্রাণে
ঐ দুটি হাত ছিলো এই হাতে
কি কথা বলছিলে মন জানে
সব ভালো লাগছিল তুমি ছিলে তাই
মন ছিল মনেরই ছায়াতে "

...................................

"ওস্তাদ নামগুলারে সব বোর্ডের মধ্যে তুইলা ফেলছি। একটু চোখ বুলান তো সব ঠিক আছে কিনা। কোনো শা* বাদ পড়লে বইলেন... তুইলা দিমনে," খসরু গাল চুলকাতে চুলকাতে বলল।

রাইসুল এতক্ষণ চেয়ারে বসে মিনারেল ওয়াটারের বোতল খুলে পানি খাচ্ছিল। খসরুর কথায় বোতলটা চেয়ারের নিচে রেখে উঠে দাঁড়াল। মনোযোগ দিয়ে সামনের বোর্ডে লেখা নামগুলো একবার দেখল, এরপর খসরুর কাছে একটা মার্কার পেন চাইল।

রাইসুল তার সিদ্ধান্তে অটল। এএসপি অরণ্য রহমানকে উচিত শিক্ষাটা দিয়ে ছাড়বে ও। নিজের আদরের ভাইয়ের মৃত্যুটাকে এত সহজে মেনে নিবে না রাইসুল। কঠিন শাস্তি পেতে হবে অরণ্যকে। এতদিন এমনি এমনি চুপ করে বসে ছিলনা ও। সময় নিচ্ছিল... অরণ্যর দুর্বলতাগুলোকে সঠিকভাবে চিনে নেয়ার জন্য। সাদা বোর্ডটায় লেখা নামের তালিকা থেকে একটা করে নাম মার্কার দিয়ে কাটতে কাটতে নিচে থেকে উপরে দিকে উঠল ও। অয়নের নামটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আরও উপরে উঠল। অরণ্যর কষ্টটা হতে হবে ইউনিক।

অয়নকে মেরে অরণ্যকে ঠিক নিজের সমান সমান কষ্ট দিলে তো রাইসুলের আনন্দ করাটা ঠিক মানায় না। ওর আনন্দ তো আর সামান্য এই ছাপোষা অরণ্যর বেতনের মতো হলে হবে না, তাই   অরণ্যর কষ্ট হতে হবে অসহনীয়।

" এমন শাস্তি দেব তোকে অরণ্য... যে চোখ বন্ধ করলেও তোর চোখে আর জীবনে ঘুম আসবেনা। তোকে রাইসুলের চেয়ে  দ্বিগুন কষ্ট ভোগ করতে হবে," ঘোর লাগা চোখে উপরের  নামটার উপর বৃদ্ধাঙ্গুলিটা বোলাল রাইসুল। জিভটা নিজের অজান্তেই একবার চাটল ও। তারপর ধূর্ত শেয়ালের মতোই নিষ্ঠুর একটা হাসি দিল।  অরণ্যর দুর্বলতাটিকে খুব স্পষ্টভাবে  চিনে ফেলেছে রাইসুল। মেয়েটা নিঃসন্দেহে সুন্দরী, ওর সঙ্গ যে দারুন উপভোগ্য হবে এতে রাইসুলের আর কোন সন্দেহ নেই।

চলবে....

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro