৫
#রিদম
পর্ব- ৫ম
"উমম.... কারন তো একটা আছেই বটে। লোভও আছে। এই সুযোগে রিদমের সুন্দরী মা যদি এই অধমের দিকে একটু তাকায়।"
এই লোক রাহাতের সামনেই ওর সাথে ফ্লার্ট করছে। কী অসভ্য এই লোক, ছিঃ...। কান পর্যন্ত লাল হয়ে গেল পিউয়ের লজ্জায়।
"উহ্...উহ্.."
রাহাত খুক খুক করে কেশে উঠল।
পিউ তাড়াতাড়ি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। ছিঃ... কী গুরুত্বপূর্ণ একটা অবস্থা চলছে আর এই লোক তারমধ্যে, কোনো লজ্জাশরম নাই এই ডাক্তারের।
"শ্রাবণ আপনি কী সত্যি ব্যাপারটা ভেবেচিন্তে বলছেন?"
রাহাত প্রচন্ড অবাক হয়েছে আসলে। শ্রাবণের এরকম সিদ্ধান্তের পিছনে মূল কারনটা যে পিউ তাতে ওর কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু তারপরও কিছুদিন পরেই একটা অনাথে পরিনত হবে রিদম, সেচ্ছায় ওর বাবা হতে চাওয়াটা কি স্বাভাবিক? রাহাত চাইলেও ওর ছেলেটার সাথে থাকতে পারছে না। ওকে যেতে হবে। বিদায়ের ঘোষনা লিখা হয়ে গেছে ওর, শুধু শেষ মুহূর্তের অপেক্ষায় দিন গুনছে ও। ব্রেন টিউমার আছে ওর। যখন যন্ত্রনা শুরু হয় তখন নিয়ন্ত্রন একেবারেই থাকে না। বিপর্যয় যেন রাহাতের এখন নিত্যদিনের সাথী। কথা চলে যাওয়ার পর রিদমকে বুকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল ও। কিন্তু সেটাও মঞ্জুর হয়নি উপরওয়ালার কাছে। তা নিয়ে অবশ্য খুব বেশি দুঃখ হয়না রাহাতের এখন। ওপারে কথার কাছেই তো যাবে, কিন্তু ছেলেটা এরকম অসহায়ের মতো রাস্তায় পরে থাকবে, বাবা হয়ে সেটা ও কী করে মানবে। তাই উপায়ন্তর না দেখে মরিয়া হয়ে পিউয়ের মার কাছে ছুটে গিয়েছিল ও, শেষ বারের মতো। যদি বাচ্চাটার কথা চিন্তা করেও পারভীন হ্যাঁ বলেন। কিন্তু আসলে ওনারও দোষ নেই, মা হয়ে নিজের অবিবাহিতা মেয়ের এত বড়ো ক্ষতি আসলে কোন মাই করবেন না। তারপরও নিজের সন্তানের মুখ চেয়ে স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিল রাহাত। আর সে জন্যই পিউয়ের বিয়ের পরও আশা ছাড়তে পারেনি, যদি কোনোভাবে পিউ দায়িত্বটা নিত। পিউ যে রিদমের পুরোপুরি খেয়াল রাখবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বলেই রাহাত জোঁকের মতো ওর পেছনে লেগেছিল। কিন্তু নিজের সন্তানের ভালো চাইতে গিয়ে কোন ফাঁকে অন্য একটা সংসারের ভাঙনের কারন হয়ে গিয়েছে বুঝে উঠতে পারেনি রাহাত। কিন্তু শ্রাবণ পিউয়ের স্বামী হয়ে, পিউকে না চেনার ভান করেছে শুনে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি রাহাত। না পিউয়ের এত বড়ো ক্ষতির কারন হতে পারবেনা ও, তাতে যা থাকে কপালে। কৃতঘ্ন হতে পারবেনা সে।
পিউ মেয়েটা প্রচন্ড রকমের ভালো একজন মানুষ। এত ভালো একটা মেয়ে এই রকম অপমানের লাইফ লিড করতে পারেনা। আর সত্যিকার অর্থে ওরা একে অপরকে ভালোও তো বাসেনা। বিয়ে করতে চাওয়ার একমাত্র কারন ছিল রিদম।
"আমি যা বলেছি ভেবে চিন্তেই বলেছি। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের।"
শ্রাবণ খুব ঠান্ডা গলায় মেপে মেপে কথা বলল। ওর কথা বলা আসলে শেষ। এখন যা বলার পিউ আর রাহাত বলবে।
"শ্রাবন এখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। আপনার প্রতি আমার শুধু একটাই অনুরোধ, সেটা হলো আমার সন্তানের জন্য আপনারা কোনো বিপদে না পড়েন। আমি বরঞ্চ একটা এতিমখানায় কথা বলেছি, আমার যা কিছু আছে অল্পবিস্তর সেটাই ওদের আমি দিয়ে যাব। "
রাহাতের কথায় পিউয়ের বুকটা কেঁপে উঠে। কী বলে রাহাত? না না এটা হতেই পারেনা। রিদম কথার একমাত্র চিহ্ন ওর কাছে। কথা বারবার ওকে বলত," পিউরে, আমার কিছু হলে আমার বাচ্চাটাকে তুই দেখিস।"
পিউ কী করে সেই ওয়াদা ভুলে যাবে?
"না তার প্রয়োজোন হবে না। আমার যদিও বাবা হবার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তারপরও মানুষের বাচ্চাই তো, ঠিক পেরে নিব। আর না পারলে রিদমের মা তো আছেই, ঠিক সামলে নিবে। "
শ্রাবণের কথায় বুক থেকে ভয়টা যেন একেবারে উবে গেল পিউয়ের। না.. এই লোক মিথ্যে কথা বলছে বলে মনে হয় না । কী আনন্দ হচ্ছে পিউয়ের, মনে হচ্ছে পাগল লোকটাকে জড়িয়ে ধরে। লোকটা এত্ত ভালো কেন? এত ভালো হতে তাকে কে বলেছে?
-----------------------------------------------------------
রিকশায় ওঠার সময় শ্রাবণ বউ সামলাবে না ছেলে বুঝতে পারছিল না। রাহাত ছেলেকে শ্রাবণের কোলে দেওয়ার সময় কান্না আটকাতে পারলনা। ধরা গলায় বলল,"রাতে উঠে কাঁদলে দুধ খাওয়ানোর পর একটু কাঁধে নিয়ে হাটবেন।তাহলেই আবার ঘুমিয়ে যাবে।"
শ্রাবণেরও মনটা খারাপ হলো। লোকটা আসলে অসহায়। ওর বউকে পাচ্ছিল না বলেই ওর মাথা খারাপ হচ্ছিল আর রাহাতের তো সব শেষ। কিন্তু এই মুহূর্তে রিদমকে না নিয়ে গেলে পিউ এই অবস্থায় যাতায়াত করতে পারবেনা। আর রিদমের সাথে মানিয়ে নিতে ওর আর মারও সময় লাগবে। তাছাড়া আরও একটা ব্যাপারে ওকে নাক গলাতে হবে। তা না হলে পিউকে অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হবে। শ্রাবণ সেটা একেবারেই চায় না।
রিকশাটা যখন চলতে শুরু করল পিউয়ের ভীষন ভালো লাগছিল ভাঙা হাতটা নিয়েও। বিয়ের পর দুজনে কোথাও এভাবে রিকশায় ঘোরেনি ওরা। লোকটার অবস্থা হালুয়া টাইট। বউ এর সাথে বাচ্চা ফ্রি... বোঝ এবার ঠেলা। হি... হি..।
"আপনার গাড়ি কই?"
"গাড়ি গ্যারেজে পাঠিয়েছি মোবিল চেঞ্জ করতে হবে বলে। এরমধ্যে কল আসল। কিন্তু তুমি হাত ভাঙলে কী করে? একটু সাবধানে চলতে পারো না?" শ্রাবণ শান্ত স্বরে বলল। কিন্তু প্রচ্ছন্নভাবে হলেও খোঁচাটা গায়ে লাগল পিউয়ের। এই লোক নিজের জ্ঞানের বহর সবার উপর দেখাতে আসে।
"তার মানে, আপনার ধারনা আমি ইচ্ছে করে আমার হাত ভেঙেছি ?"
উত্তর না দিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল শ্রাবণ। এই ভলকানোর এর সাথে তো কথা বলাই বিপদ। সারাক্ষণ টগবগ করে ফুটতেই থাকে। শ্রাবণের আসলে পুড়ে মরার শখ হয়েছিল সেটা এখন বেশ বুঝতে পারছে। ওই যে কথায় বলেনা, পীপিলিকার পাখা হয় মরিবার তরে।
কিন্তু উত্তর না দিয়ে ওই মিটি মিটি হাসি, পিউ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। এত হাসার কী আছে ওই লোকের। সব সময় মুখ টিপে টিপে হাসতে হবে কেন? অসহ্য!
"হতে পারে, হয়ত ইচ্ছে করেই হাতটা ভেঙেছ, তারপর আমার বন্ধুর ক্লিনিকে যেয়ে আমাকে ফোন করিয়েছ যাতে আমাকে দিয়ে প্লাস্টারটা করানো যায়।" শ্রাবণ তখনও মুচকি মুচকি হাসছে।
পিউয়ের মনে হলো ছোটো খাটো একটা নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ হলো ওর চারপাশে। আশ্চর্য কথা, ও কী করে জানবে যে ওটা এই লোকের বন্ধুর ক্লিনিক।
"আপনার ধারনা আমি আপনাকে দিয়ে প্লাস্টার করানোর জন্য মরে যাচ্ছিলাম?"
পিউয়ের তেতে ওঠা লাল মুখটা দেখতে বেশ লাগছিল শ্রাবণের। বুকের সাথে পিষে ভর্তা করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর মেয়েটাকে। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
"আরে না, অন্য কেউ করলে তো বিল দিতে হতো তাই না? " শ্রাবণ ইচ্ছে করে খোঁচাচ্ছে। রাগ রাগ মুখেই না হয় বলুক, তার পরও ওর সাথে ম্যাডাম ফুলি কথা বলছে এই বা কম কি।
"কী? কী বললেন আপনি? আমি বিল দেওয়ার ভয়ে আপনাকে দিয়ে প্লাস্টার করিয়েছি? আপ... আপনি একটা... " পিউ রাগে কথা হারিয়ে ফেলল। এই লোক ওকে কী ভাবে? এহ ও না আনলে কি পিউ রিদমকে ফেলে রাখত নাকি। যেভাবে হোক একটা কিছু করতই।
"আমি একটা? "
"কিছু না যান। আমি বাসায় ফিরেই আপনার বিল পুরোটা দিয়ে দিব। আপনার লস করাব না।
"পাগল নাকি, আমি লসের ব্যাবসা করিনা। আমি আমার কোনো পেশেন্টকে এমনি এমনি দেখি না। এমনকি আমার মা কেউ না," শ্রাবণ গুরুগম্ভীর স্বরে কথাটা বলল।
শ্রাবনের কথায় পিউ অবাক।
"তারমানে! আপনি আপনার মার কাছ থেকেও পয়সা নেন? "
"পয়সার কথা কখন বললাম? "
"এই মাত্রই তো বললেন। "
"উহুঁ আমি একবারও পয়সার কথা বলিনি। বলেছি বিলের কথা। এখন বিল যে পয়সাই হতে হবে এমন তো কথা নেই। জানো না আগের দিনে মানুষ ডাক্তার বাবুর কাছে এলে কলাটা মূলাটা নিয়ে আসত?"
"হ্যাঁ.... তাতো সেই একই কথাই হলো।পয়সার বদলে ডাক্তারগুলা শয়তান শেয়ালের মতো মুরগী নিয়ে নিত।"
পিউ মুখ বাঁকাল। এই ডাক্তার লোকটাকে ওর একটুও দাম দেওয়া উচিত না।
"সেটাই তো বলছি। আমিও বিলের প্যাটার্ন একটু চেঞ্জ করেছি আমার কাছের মানুষদের জন্য। যেমন বড়ো খালার বিরিয়ানিটা চমৎকার আর মার পরোটা। আর তার সাথে যদি ছোট মামীর ঝাল মাংসটা হয়.... উমম ফার্স্টক্লাস,"শ্রাবণ জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল।
"আপনি কি আমার হাতের রান্না খেতে চাচ্ছেন? কিন্তু আমি এখন কী করে রাঁধব? তবে আপনি যদি ওয়েট করেন তবে আমি আপনাকে নিশ্চই রেঁধে খাওয়াবো। "
পিউয়ের কথায় হতাশ হয়ে মাথা নাড়ল শ্রাবণ।
"না... শুধু ওটাই খেতে চাচ্ছিনা, সাথে একটু অন্য কিছুও টেষ্ট করতে চাচ্ছি।"
'আর সেটা কী?"
পিউ ঘুরে শ্রাবণের দিকে তাকাতেই নিজেই লজ্জা পেল। কী অসভ্য লোক আঙুলের মাথা দিয়ে ওর ঠোঁটটা অবলীলায় ছুঁয়ে দিয়েছে। কত হাজার হাজার লোক রাস্তায়।
"আপনি.. আপনি... "
"আমি... আমি.."
"একটা আস্ত অসভ্য, রাস্তায় কত লোক দেখেছেন?"
" তাহলে লোকে না দেখলে অ্যালাও করতে বলো?"
"কক্ষনো না, ইশশ লোকগুলো কী খারাপ ভাববে।"
"লোকের খেয়ে কাজ নেই। আর বাচ্চা কোলে নেওয়া কাপলের দিকে লোকজন এমনিতেই তাকায়না। তাকালেও মনে করবে বউ বোধহয় একসিডেন্ট করে ঠোঁট ফাটিয়েছে, জামাই বেচারা তাই পরীক্ষা করে দেখছে। "
পিউ কথায় না পেরে সামনে তাকাল। এই লোক মহা ত্যাদর চীজ।
"থাক বুঝলাম, মুখ অন্ধকার করার দরকার নেই। "
"কী বুঝলেন? "
"ভালবাসা কি আর জোর করে হয়?"
"বুঝলাম না। "
"কিছু না তুমি আমাকে মোটে সহ্যাই করতে পারনা। "
"বলেছে আপনাকে। আপনি একেবারে সবজান্তা, সব জেনে বসে আছেন।"
হঠাত মুখ ছিটকে কথাটা বলতেই দাঁত দিয়ে জিভ কাটল পিউ। ইশশ কী বলে ফেলল। এই লোক এখন এই কথা নিয়ে আবার পেচানো শুরু করবে।
কিন্তু কিছু বলছে না দেখে পিউ শ্রাবণের দিকে মুখ ফিরাতেই হেসে ফেলল। রিদম শ্রাবণের নাকটা ধরে টানছে সমানে। আর শ্রাবণ চুপ করে ওকে দেখছে। শ্রাবণ রিদমের বাবা না হয়েও যে চেষ্টাটুকু করছে ভালো লাগছে পিউয়ের। এই লোক ওর এত অত্যাচার সহ্য করছে, আসলে একটা অসম্ভব কাজকে পানির মত সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও লোকটা একটু বেশি ভাব নেয়। প্রথমদিন মানা করেছে বলে, বাবা আর একদিনও নিজে থেকে এসে পাশে বসেনি। মনে হয় যেন ওর পাশে বসলে গুনাহ হবে। হুহ্...।
বাসায় ঢুকেই আগে রিদমকে মায়ের কোলে দিয়ে দিল শ্রাবণ। মা থাকতে রিদমের আর খুব বেশি সমস্যা হবে না। মা তার অসম্ভব দয়ালু। তার বেশ কতগুলো পালক সন্তান আছে। অবশ্য খালারা প্রথম কয়দিন ঝামেলা করবে। তারপর এক সময় সবাই মানিয়ে নিবে। আর ওর নিজের কোনো প্রবলেম নেই রিদমকে নিয়ে। আর এটা তো অনেক বড়ো একটা সুযোগ আল্লাহর নেক নজরে পড়ার। তাছাড়া পিউ ভালো থাকতে পারবেনা রিদমকে ছাড়া। আর বাচ্চাটা সত্যি অসহায়। মানুষ কতকিছু দেয় প্রেমিকাকে খুশি করার জন্য.. গয়না, বিড়াল, কুকুর। ও না হয় বউকে একটা মানুষের বাচ্চাই উপহার দিল। ফ্রি ফ্রি বাবা হওয়ার সুযোগটাই বা কয়জন পায়।
রাতে পিউয়ের একটু একটু জ্বর আসল। শ্রাবণ পিউকে একটা এ্যান্টিবায়েটিক আর পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে মায়ের ঘরে এসে ঢুকল। শাহানা রিদমের কাপড় পাল্টে দিচ্ছিলেন। ছেলেকে দেখে হাসলেন শাহানা। অনেক বছর পর আবার এত ছোটো একটা বাচ্চা তার দায়িত্বে। শাহানার মনে হচ্ছে যেন আবার শ্রাবণকেই কোলে তুলে নিয়েছেন।
শ্রাবণের বেশ মজা লাগল রিদমকে দেখে। বাচ্চাটা ইতিমধ্যেই বেশ পটে গেছে ওর মায়ের সাথে।
"মা তুমি আমার উপর রাগ হওনি তো? ওর বাবা ওকে এতিমখানায় দিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু কথাটা শুনেই আমার কেবল বাবার কথা মনে হচ্ছিল। আমার তো তাও স্মৃতিতে বাবা বলে কেউ একজন আছে। ও তো এতিমখানায় মানুষ হলে ওর কেউ থাকবেনা। এই কথাটা আমি সহ্য করতে পারিনি মা। আর পিউও ভাল থাকবেনা ওকে ছাড়া।"
শ্রাবণ কথাগুলো না বলে পারল না। এটাই সত্যি, রাহাতের কথা শোনার পর ওর এটাই মনে হয়েছে।
"তুই এত চিন্তা করছিস কেনো? আজ থেকে ও আমার নাতি। ওকে আমরা সবাই মিলে ভালোবাসব। ওকে ছাড়া আমরা কেউ ভালো থাকবো না। তুই তোর খালাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করিস না তো। আর ব্যাপারটা পিউয়ের দিকে গড়াবে না।"
মায়ের আশ্বাস পেয়ে দুশ্চিন্তার পাহাড় ঘাড় থেকে নামল শ্রাবণের।
মা যেন কী করে সবসময় ওকে পড়ে ফেলে।
শ্রাবণ মাকে জড়িয়ে ধরে বলল," থ্যাংকিউ মা। যদি বড়ো খালা কিছু উল্টোপাল্টা বলে, সাথে সাথে বলবে বাচ্চাটা সমন্ধে পিউ কিছু জানেনা। ওকে আমি নিয়ে এসেছি। যা বলে আমার নামে বলুক। "
"না রে খোকা। কেউ কিচ্ছু বলবে না। তুই যা শুয়ে পর।"
শাহানা বেগম স্বস্তির হাসি হাসলেন। ছেলে আর বউয়ের মধ্যে একটু অস্বস্তি চোখে পড়ছিল তার। তার একটাই ছেলে আর বউ তিনি নিজে পছন্দ করেছেন। খুব চিন্তা হচ্ছিল। এখন বাচ্চাটার কারনে যদি ওদের সেই দূরত্বটা মিটে যায়, রিদমকে মাথায় তুলে রাখবেন তিনি।
বারটার বেশি বাজে। বিছানায় গা ঠেকাতেই রাজ্যের ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে এল শ্রাবণের। কিন্তু ঘুমের মধ্যেই মনে হলো কেউ একজন কাঁদছে। তাকিয়ে দেখে পিউ।
"কী হলো?"
"খুব যন্ত্রনা হচ্ছে...।"
পিউয়ের এরকম অসহায় চেহারা এই প্রথম দেখল শ্রাবণ। ভালবাসাটা আবার ছুঁয়ে গেল প্রথম দিনের মতো। মায়া লাগছে। মেয়েটা আসলে অত শক্তও না যতটা দেখায়। হাতটা কপালে ছুঁইয়ে দেখল, জ্বর বেড়েছে। মুখটাও কেমন শুকিয়ে গেছে। চুলগুলো এলোমেলো। কালকে জ্বর না কমলে অ্যান্টিবায়োটিকটা পাল্টে দিতে হবে। পিউকে একটা পেইন কিলার খাইয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পরল আবার শ্রাবণ।
কিন্তু আবারও ফোঁপাচ্ছে মেয়েটা। শ্রাবণ মুখের উপর থেকে বালিশটা সরিয়ে বলল,"একটু সহ্য করো, খানিকটা সময় তো লাগবে ব্যাথা কমতে।"
কিন্তু উত্তরে পিউ যা বলল, তা শুনে শ্রাবণের আক্কেল গুড়ুম।
" মিথ্যুক কোথাকার, রাস্তায় দুনিয়ার লোকের সামনে হিরোগিরি দেখিয়ে এখন কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোচ্ছে। আর বউটা যে হাতের ব্যাথায় একা কষ্ট পাচ্ছে সে দিকে কোনো নজর নেই।"
"আশ্চর্য তোমার ব্যাথা আমি কী করে কমাব? ওষুধ তো দিলাম। একটু পরেই কমে যাবে।"
"কখন? আমি মরে যাব তারপর? "
"একটু সময় দাও। ওষুধ টা রক্তের সাথে মিশবে তারপর তো।"
"ততক্ষনে আমি যদি ব্যাথায় মরে যাই।"
"আরে যাহ, ব্যাথায় কেউ মরে নাকি?"
"যদি মরি। তখন তো তুমি ড্যাং ড্যাং করতে করতে আবারো বিয়ে করবে। তোমার মতলব আমি বুঝতে পারছিনা মনে করো।"
পিউয়ের কথায় শ্রাবণ হেসে ফেলল। পিউয়ের মাথা আউলে গেছে। এই প্রথম ওকে তুমি বলছে ওর পিউকাঁহা।
"আর বিয়ে, এক বিয়ের ঠ্যালা সামলাতেই আমি শেষ। এখন নাও শুয়ে পর। একটু পরেই দেখবে ওষুধ কাজ শুরু করেছে।"
"শুধু ওষুধে কী কাজ হয়? একটু আধটু আদর করলে কী হয় হ্যাঁ? আমার কী অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছো।"
পিউয়ের কথা শুনে শ্রাবণের চোখ বিস্ময়ে টেনিসবলের মত বড়ো হয়ে গেল। বলে কী এই মেয়ে? শ্রাবণ কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইল। পিউই তো বলছে তাই না কথাগুলো?
তারপর মনে হলো আল্লাহ বোধহয় দয়া করেছে এতদিন পরে ওর উপর। যে বউ পাশে বসতে পর্যন্ত দেয় না স্বামীকে বিয়ের রাতে, সে বলছে আদর করার কথা.... মদ টদ খায়নি তো? কিন্তু
ওর হার্ডনাট বউয়েরও তাহলে একটা সফট হার্ট আছে। আর এক সেকেন্ড দেরি না করে মাঝের বালিশটা একপাশে সরিয়ে পিউয়ের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিল শ্রাবণ।
পিউ কিছুক্ষণ ওর হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে করুণস্বরে বলল," আমি কী করে আসি ভাঙা হাত নিয়ে। তুমি আমায় একটু তোমার বুকে নাও না?"
শ্রাবণ আর কালক্ষেপণ করেনি। দেরী করলে যদি হাতছাড়া হয়ে যায় এমন সুযোগ। বউ তার অনেক মুডি। জড়িয়ে ধরতেই বুকের মধ্যে মুখ গুজল পিউ। শ্রাবণের বুকটা তখন স্যাকরার হাপরের মত লাফাচ্ছে।
"রিদম বুঝি মায়ের কাছে?"
পিউ নিজের নাকটা শ্রাবণের বুকে ঘষতেই, শ্রাবণের চারশো চল্লিশ ভোল্টের ধাক্কা লাগল।এই মেয়ে আর সময় পেল না। ভাঙা হাত নিয়ে.....
"হুমম... "
শ্রাবণও ততক্ষণে পিউয়ের মুখটা দুইহাতের তোলায় নিয়ে নিয়েছে। পিউয়ের চোখদুটো কী অদ্ভুত মায়াকাড়া, শ্রাবণের বুকটা কেমন মোচড় খেয়ে উঠে। প্রথম দিনের মতো আর একদিনও হাসেনি মেয়েটা। কিন্তু হাসিটা ওর যে খুব পছন্দ।
ইশশ মেয়েটা চোখ বুজলেও কেন যে এত সুন্দর দেখায়। এই মুহূর্তটাকে যদি ফ্রেমে বন্দী করে রাখা যেত... কিন্তু মোবাইলটা বন্ধ করে চার্জে দেওয়া। হালকা করে পিউয়ের নাকে একটা আদর দিয়ে দিল শ্রাবণ। ওদের একটা মেয়ে হলে বেশ হয়। খুব আস্তে করে পিউয়ের ঠোঁটজোড়া দখল নিয়ে নেয় শ্রাবণ।
নতুন, অদ্ভুত এই জগতের সাথে আজ প্রথম পরিচয় পিউয়ের। জিভের সাথে জিভ ছোঁয়ালে বুঝি এমন ভাবে ভূমিকম্প হতে থাকে গোটা পৃথিবী জুড়ে? কারও আঙুলের এত সামান্য ছোঁয়াও এরকম তীব্র অনুভূতির জন্ম দেয়!
এই প্রথম ভীষণ কাঁপছে পিউ। কী রকম অদ্ভুত এক ভাল লাগা কাজ করছে ওর সমস্ত স্বত্তা জুড়ে। এই অনুভূতির নাম কী ? কেউ তখন প্রচন্ড আবেগ নিয়ে পিউয়ের হৃদয়ে নিজের অস্তিত্বের চিহ্ন বসিয়ে দিচ্ছিল তীব্র আলিঙ্গনে। নীলাভ আকাঙ্খায় বিবশ হয়ে আসছে পিউয়ের সমস্ত চিন্তা ভাবনা।লোকটা ওকে এ কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়? পিউ যেন গলে গলে যাচ্ছে ভালবাসার উষ্ণতায়।
শ্রাবণ যখন পাগলের মত ওর সমস্ত মুখ আদরে ভাসিয়ে দিচ্ছিল আর অস্ফুটস্বরে বার বার বলছিল, " ভালবাসি.... ভালবাসি ।"
পিউয়ের তখন হঠাত মনে হলো, আচ্ছা... লোকটার পুরো নামটা যেন কী? "
( সমাপ্ত)
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro