মেঘ বৃষ্টির আমন্ত্রণে (৫)
"জানিস,৩ তলার মুনিয়ারা আছে না,ওরা ট্রান্সফার হয়ে চিটাগাং চলে যাচ্ছে। ওর বাবা....."
চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে যেন ছ্যাঁকা খেল অর্ক।মায়ের বাকি কথাগুলো আর কানে ঢুকছে না।হঠাৎ মনে হচ্ছে কি যেন হারিয়ে যাচ্ছে!!
************************************************************************
মাঠ,ঘাট,গাছপালা ছাড়িয়ে ট্রেনটা দ্রুত সরে যাচ্ছে। অন্ধকারে বাইরের দৃশ্য ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছে না।কেবল গাছপালার অবয়ব বোঝা যাচ্ছে আবছাভাবে।
মুনিয়া জানলার ধারের সিটে গেলান দিয়ে বসে আছে।তার চোখ পানিতে ঝাপসা হয়ে আসছে।সে তো অন্যরকম একটা সপ্ন দেখেছিল...
"কতো কিছুই তো ঘটে যাহা তাহা
সবই কেনো সত্যি হয় না আহা!!"
************************************************************************
হঠাৎ করেই স্টেশনে ভদ্রমহিলার সাথে দেখা হয়ে গেল।
"ওমা! তুমি অর্ক না! কেমন আছ বাবা? তোমার মা-বাবা ভাল আছেন তো?"
"জি আন্টি। আপনি এখানে?ভাল আছেন তো?"
"হ্যাঁ,বাবা।আমি ভালই আছি। আমার মুনিয়া তো এখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে আই.আর. নিয়ে। ওর সাথে দেখা করতেই ওর হলে এসেছিলাম।এখন আবার ফিরে যাচ্ছি।"
"ওহ, তাহলে আন্টি আপনি এখানেই দাঁড়ান।আমি আপনার জন্য টিকিট কেটে আনি। যা ভিড় কাউন্টারে!"
"আরে না না,বাবা। মুনিয়া গেছে টিকিট আনতে। আরে! ওই তো মুনিয়া..."
মুনিয়া অর্ককে দেখে চমকে উঠল। মাঝখানে যে তিনটা বছর কেটে গেছে তা মনেই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এইতো গতকাল ছাদে দেখা হয়েছিল।
************************************************************************
মুনিয়ার মাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে অর্ক আর মুনিয়া হেঁটে আসছিল।সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অনেকক্ষণ নীরবে হাঁটার পর অর্কই প্রথম কথা শুরু করল।
"কি খবর তোমার?"
"আপনার ধমকের সুর কোথায় গেল?"
"তিন বছর আগে তোমার সাথে চিটাগাং চলে গিয়েছিল", হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেলল অর্ক।আর বলেই খেয়াল করল মুনিয়া তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
নিজেকে সামলে নিল অর্ক। আর দেরি করা ঠিক হবে না,
"শোন,তোমাকে একটা কথা বলি। স্পষ্ট কথায় কষ্ট কম। তুমি কি ভাববে আমি জানি না।কিন্তু.."
মুনিয়া নিজের ভেতরের চাপা উত্তেজনাকে দমন করার চেষ্টা করলো।
"আমি সবসময় তোমার সাথে কথা বলতে চাইতাম। কিন্তু তোমাকে দেখলেই আমার সবকিছু ওলটপালট হয়ে যেত। কথা আটকে আসত। আর তাই উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতাম। কারণটা তুমি বুঝে নাও"
মুনিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।
"আমি কি কিছু ভুল করলাম?",অর্ক খানিকটা অবাক।
"ভুল তো করেছেন। তিন বছর পর এসে লেকচার দিচ্ছেন,ফিলোসফি ঝাড়ছেন! আর একটা সামান্য বাক্য বলতে পারছেন না?
কি হল? হাঁ করে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন? চোখের পানি মুছিয়ে দিন! কি আশ্চর্য!"
অর্ক হেসে ফেলল।
************************************************************************
তুমুল বৃষ্টিতে সব কিছু ভেসে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। শুধু দু'জন মানুষ হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে।তাদের গন্তব্য জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত....
-----------------------০-সমাপ্ত-০ --------------------
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro