মেঘ বৃষ্টির আমন্ত্রণে (৪)
“আচ্ছা,আপনি আমাকে সবসময় ‘এই মেয়ে’ বলে ধমক দেন কেন? আমি যদি আপনাকে ‘এই লোক’ কিংবা ‘এই ব্যাটা’ বলে ডাকি,আপনার কেমন লাগবে? ধমক ছাড়া কথা বলতে পারেন না? নাকি বুয়েটে পড়লেই ধমক দিতে হয়? আর সেদিন তো আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে একেবারে উল্টে কাত হয়ে গেলেন!কেন? নিজেকে সামলাতে পারেন না? ব্যাল্যান্স নেই? খালি আমাকেই ধমকান নাকি সবাইকেই? বিয়ের পর তো বউ ধমক খেয়ে ডিভোর্স দিয়ে দিবে!”
মুনিয়া জীবনে কোনোদিন এত কথা বলেনি।আজ হঠাৎ এত কথা বলে খানিকটা বিব্রত।অন্যদিকে অর্কও জীবনে প্রথমবার ধমক শুনে হতভম্ব।
মুনিয়া থেমে অর্কর দিকে তাকাতেই অর্ক শব্দ করে হেসে উঠলো। এই প্রথম অর্ককে হাসতে দেখে মুনিয়ার মনে হল সে ছাদ থেকে যেন পড়ে যাবে! সে একদৃষ্টিতে অর্কর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
মুনিয়াকে এভাবে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ক হাসি থামিয়ে দিল। মুনিয়া প্রায় দৌঁড়ে ছাদ থেকে নেমে ঘরে এসে ঢুকল।
************************************************************************
একটু আগেও আকাশ পরিষ্কার ছিল। কিন্তু হঠাৎ চারদিক ছাপিয়ে বৃষ্টি শুরু হল। মুনিয়ার মেজাজ খারাপ হওয়ার কথা। কারণ রাস্তায় একটাও রিকশা নেই। কিন্তু এত সুন্দর বৃষ্টি দেখে মেজাজটা ভাল হয়ে গেছে।
মুনিয়া পুরোপুরি কাকভেজা হয়ে একটা বড় গাছের নিচে দাড়িয়ে কোনো রিকশা আসে কিনা তার জন্য অপেক্ষা করছিল।হঠাৎ তার সামনে এসে একটা রিকশা থামল।
“এই মেয়ে! ওঠো রিকশায়”, বলতে বলতে রিকশা থেকে নামল অর্ক।
“কিন্তু আপনি তো ভিজে যাচ্ছেন।আমার জন্য আপনি....আমি অন্য কোনো রিকশা...”
“চুপ!”,মুনিয়াকে থামিয়ে দিল অর্ক। “তোমার কথা কে শুনতে চায়? ওঠো রিকশায়”, বলে হঠাৎ মুনিয়ার হাত ধরে তাকে রিকশার দিকে এগিয়ে দিল অর্ক।
রিকশা চলতে লাগল। মুনিয়া বারবার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছিল। একটা মানুষ তার জন্য রিকশা ছেড়ে দিয়ে এই বৃষ্টিতে হাঁটছে!মুনিয়ার চোখে পানি এসে গেল। বারবার চোখ মুছেও চোখের পানি আটকাচ্ছে না।
রিকশার ভাড়া মিটিয়ে মুনিয়া উপরে উঠে এল।তবুও চোখের পানির কোনো বিরাম নেই। মুনিয়া ঘন ঘন চোখ মুছছে।
বাসার দরজা খুলল চাচাতো বোন রিমু।
“ কিরে মুনিয়া পাখি, হোয়াই ক্রায়িং? চোখ মুখ লাল কেন?বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে গেছিস নাকি?”
“ধুর! তুমি যে কি বল না,রিমু আপু! আরে বাইরে বৃষ্টির হচ্ছে না,তাই.....”
“বৃষ্টির সাথে কান্নার কি সম্পর্ক?”
“সমানুপাতিক”,বলে চোখ টিপল মুনিয়া।
“মানে? উফফ্! তোদের সাইন্স এর মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না। মানুষের ভাষায় বল।”
“রবীন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস কর”, বলেই রিমুকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে চলে গেল মুনিয়া।
************************************************************************
সকালবেলা এক কাপ চা না হলে অর্কর মেজাজ ঠিক থাকে না।সে বারান্দায় বসে পেপার পড়ছিল। মা এল চা নিয়ে।দিনের এ সময়টা তিনিও ছেলের সাথে বসেই চা খান। ছেলেকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বললেন,
“ জানিস,৩ তলার মুনিয়ারা আছে না?ওরা ট্রান্সফার হয়ে চিটাগাং চলে যাচ্ছে। ওর বাবা.....”
-------------------------------------------------------------------------
চলবে..........
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro