পাঠ-৫: অন্ধকারের স্বাক্ষী
আমি আর পটলা বাসার যখন খুব কাছাকাছি তখন রাত খুব বেশি। সবাই দুঃশ্চিন্তায় বাসার বাইরে পায়চারী করছে।
পটলা আমার মাকে দেখতে পাওয়া মাত্রই চিৎকার করতে করতে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে দৌড় দিলো। এতোক্ষন চেপে রাখা ভিতরের সব ভয়, আর্তনাদ সব একসাথে বের হতে লাগলো। আমার মাও তার দিকে প্রায় ছুটে এলো।
" আমার বিট্টু কোথায়?? বিট্টু?? " প্রচণ্ড ভয়ের পরও আমার মা'র কথা শুনে হাসি পেলো। পিছনে ভালো করে দেখলেই আমাকে দেখতে পেতো।
" বিট্টু.... আন্টি বিট্টু.. আন্টি!!!..... " পটলা মনে হচ্ছিলো জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। কিছুই বলতে পারছেনা ঠিক মত।
" কি?? কি হয়েছে আমার বিট্টুর?? এই পটলা এমন করছিস কেন?? বল কি হয়েছে আমার বিট্টুর??? "
আমার মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেলো। অজানা এক আশংকায় আমার ভিতরের সব কিছু হঠাৎ লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে লাগলো,
" আন্টি... বিট্টু পানিতে.... আন্টি ঘুড়ি তুলতে গিয়ে.... বিট্টু পানিতে...." পটলা কথা সম্পূর্ণ করতে পারেনা। তার কথা শুনে পাশে ঘুমিয়ে থাকা বুলু হঠাৎ ধড়মড় করে উঠে বসলো।
মা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে, তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। তার পায়ের নীচের মাটি সরে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।
"আন্টি বিট্টু... পানিতে ডুবে গেছে। " -পটলা এই পর্যন্ত বলেই একটু এগিয়ে গিয়ে আঙিনায় ধড়াম করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।
আমি দেখলাম বুলু পটলার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে পটলার পিছন দিকে ঘুরে আমার দিকে তাকালো।
আমি অবাক হয়ে বুলুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আর সে আমার দিকে। দুঃখ, কষ্ট অনুভূতি এখন আর অনুভব করতে পারছিনা। ধীরে ধীরে সব ভয় কেটে যাচ্ছে। কারণ এখন আমার শরীর নেই। আমি শুধুই একটা আত্মা।
তার প্রায় এক সেকেন্ড পর আমার আম্মা ইয়া আল্লাহ বলে মাথায় হাত দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।
আমি তখনো বুলুর দিকে তাকিয়ে আছি। কারণ সেই একমাত্র আমাকে দেখতে পায়। পটলাও আমাকে কখনো কখনো দেখতে পেয়েছে তাই রাস্তায় প্রায়ই ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠে কাঁদছিলো ভয়ে।
বুলু শোয়া থেকে উঠে আমার গায়ে লাফ দিলো। আমি বুলুকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। কিন্তু এই বুলু একদম আগের মত নয়। এই বুলুর চারটি পা-ই আছে, আছে দুটো সম্পূর্ণ চোখ।
আমি বুলুকে আদর করে গলায় আঙুল বোলাতে বোলাতে বললাম, "আগেও ঘাড় ঘুরিয়ে তুই সবসময় আমাকেই দেখতে পেতি তাই না রে??
বুলু কোনো কথা বললো না। কারণ মরে গিয়েও আমি আমিই থাকলাম তার জন্যে।
আমি তাকে আদর করতেই থাকলাম, " আমার বুলু সোনা, আমার ছোট্ট বুলু, আমার দুষ্টু বুলু.."
একটু পরে আমার লাশ নিয়ে আসা হলো। গ্রামের লোকেরা পানি থেকে তুলে এনেছে। আমি দাড়িয়ে দেখছি। এখন গোসল করানো হচ্ছে। যদিও গোসল আগে থেকে হয়েই আছে।
দূরে তাকিয়ে দেখি, পারু আপা এসেছেন। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন, তারপর কি কারণে জানিনা লজ্জা পেয়ে আমি মুখ নামিয়ে নিলাম।
পিছন থেকে হঠাৎ একটা লোকের গলা শুনলাম। সেই ছোট্ট বেলায় যে গলা শুনতে পেতাম বাবার সাথে ফেরার সময়। বাবা বারণ করেছিলো এর উত্তর দিতে। আমি তাই জবাব দিতাম না।
কিছুক্ষণ পর আবারো পিছন থেকে বিট্টু বিট্টু বলে ডাকতে শোনা গেলো। আমি নিষেধ অমান্য করে প্রথমবার সে ডাকের উত্তর দিলাম,
""" হ্যা বাবা, বলো?? """
#সমাপ্ত :)
__________
__________________
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro