পাঠ-৩: বুলুর দুষ্ট বন্ধু
বুলু কে কোলে নিয়ে বসে আছি অনেকক্ষন। বুলুর সম্ভবত মন খারাপ। পিঠে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। যদিও তার যে মন খারাপ তা কিন্তু জানার উপায় নেই। সবসময়ের মতই আজো সে চুপচাপ। তবু আমি জানি। কিভাবে জানি, সেটা আমি জানিনা।
নইলে কখন মুখে পাউরুটি ধরিয়ে দিয়েই কোল থেকে ফিকে দিতাম। আমার তো আর কাজ নেই!!
সে যে কোলে বসে মজা পাচ্ছে তা কিন্তু না। কিছুক্ষন পর পর গুড়মুড় করে শরীর ঝাঁকুনি দিচ্ছে নামার জন্য। ওর তো দুটো পা নেই, তাই সরাসরি লাফাতেও পারছেনা।
কিন্তু মুখের চরম বিরক্তি দেখে বুঝতে পারছি, মনে মনে বলছে, " তোর এতো আলগা পিরিত দেখান লাগবেনা! কোলেত্তে নামা! "
আমি আসলে ওকে যতখানি পেয়ার করি ও ঠিক ততখানি অপছন্দের ভাব দেখায়।
পকেট থেকে ৫টা টাকা বের করে বুলুর চোখের ফুটোতে ভরে দিলাম। এটা নিরাপদ। এখান থেকে চুরি হবার ভয় নেই। আরেকটা চোখ না থাকলে হয়ত ১০ টাকা পর্যন্ত রাখতে পারতাম!
বুলু আবার গুড়মুড় শুরু করেছে। আমিও ঠেসে ধরে রেখেছি কোলের মধ্যে, এবার ঝাঁকা দেখি! বুলু আর কিছুতেই ঝাঁকুনিতে সুবিধা করতে পারেনা। তবে না ঝাঁকাতে পারলেও ওর ভাইব্রেশন ঠিকই টের পাচ্ছি আমি।
আমাকে না বললে কি হবে, আমি জানি বুলুর কেন মন খারাপ। ওর কেউ না থাকলেও একটা দোস্ত ঠিকই আছে। তবে খুবই লোভী দোস্ত।
প্রতিদিন আমি ঘুম থেকে উঠে বুলুকে একটা শুকনা পাউরুটি দেই। ও যেমন শুকনা, ওর পাউরুটিও থাকে তেমন শুকনা।
সেই পাউরুটি দিয়ে অনেকক্ষন খেলে, এটার চারপাশে ঘুরে। তারপর পাউরুটির মাঝখানে ফুটো করে মাথা ঢুকিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে থাকে।
তারপর কিছুক্ষণ পর একটা কাক আসে ওটা কেড়ে নিতে। এটাই ওর সেই বন্ধু, দুষ্ট বন্ধু। কাকটা এসে দড়িতে বসতেই বুলু পাউরুটি ফেলে দিয়ে মাথা উঠিয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কাকটা এক পা এক পা করে খুব সাবধানে কাছে এসে পাউরুটি নিয়ে এক সেকেন্ডে পগার পাড়।
আমি দূর থেকে দেখা মাত্রই লাঠি নিয়ে তেড়ে আসি, এই বদ কাকের ঠেঙ ভেঙে ল্যাংড়া বানিয়ে দিবো। কিন্তু কাক ততক্ষণে হাওয়া।
বুলু দেখি চলে যাবার পরও অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। কাকটাকে সে কোনো এক কারণে পছন্দ করে আমি নিশ্চিত। তবে কেন করে সেটা আমি জানিনা।
এমন হতচ্ছাড়া পাজি কাকের মধ্যে সে কি দেখেছে? দুষ্ট বজ্জাত একটা পাখি! কাকের বাচ্চা কাক।
আরে কাকের দোষ দিয়ে লাভ কি, ও তো চুরি করবেই। শয়তান তো আমার বিলাইটাই। দুধ কলা দিয়ে কাল-সাপ পুষতেছে সে।
আর বন্ধু পাতাইছে আবার এক কাকের সাথে। কালা কাক। দুই কালা এক হইছে আর কি।
আমি তো হুমকি দিয়ে দিয়েছি বুলুর সামনেই,
" ফের যদি দেখছি ঐ কালা কাউয়া আসতে, ওর দুই পা ভেঙে তোর সাথে বিয়া দিয়ে দিবো। দুই ল্যাংড়া কালা সংসার পাতবি।"
বুলু হুড়মুড় করে চেতে উঠে। মুখে কিছু বলেনা কিন্তু কঠিন চোখে আমার দিকে তাকায়। রাগে ফোঁস ফোঁস করে। আমি আস্তে করে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসি।
তবে সেই কাক এখন আর আসেনা। তাই জন্যে বুলুর মন খারাপ। একটাই তো পাখি ছিলো যে চুরির জন্যে হলেও ওর কাছে আসতো। একটু দেখা সাক্ষাত হতো। এখন তাও আর হয়না।
বুলু তার জন্য রুটি না খেয়ে এখনো বসে থাকে। কিন্তু কাকটা আর আসেনা।
ভেবে আমারো কেন জানি একটু মন খারাপ হয়ে গেছে। আমার এই বিড়ালটার আর কেউ থাকলো না? আহা!
দূর থেকে পটলা কে দেখা যাচ্ছে। পেট দোলাতে দোলাতে আমাদের বাসার দিকে আসছে। গ্রামের কিছু কিছু বাচ্চার পেট অনেক বড় হয়। তাদের কখনো গেঞ্জি থাকেনা। খালি গায়ে হাটে। কিন্তু পটলার পেট আরো বড়। দেখলেই অস্বস্তি লাগে, মনে হয় পেট ভরা গু।
ওর হাতে একটা ঘুড়ি। বিকালে আমরা সাধারণত ঘুড়ি ওড়াই। ঘুড়ি উড়ানোর কথা ভেবেই যেন মন আচমকা ভালো হয়ে গেলো। আমার ঘুড়ি কাল ছিঁড়ে গেছে। আরেকটা কিনতে হবে বলাইয়ের দোকান থেকে। বলাই শালা চারআনাও বাকি দেয়না। আগে দিতো, এখন বজ্জাত হয়ে গেছে।
আমি বুলুর চোখের ফুটো থেকে থেকে পাঁচ টাকাটা বের করে ফেললাম।
পটলা কাছে আসতেই ওর হাত টানতে লাগলাম, " তাতাড়ি চল, তাড়াতাড়ি চল। "
" যাচ্চি-তো রে, টানাটানি লাগাইছিস কেন! "
" না তুই তাড়াতাড়ি আয়। এক্ষুনি আয় তুই"
" কেন কি হইছে, এক্ষনি কেন? "
আমি অস্থির হয়ে উঠলাম,
" নইলে তুই এইখানেই পায়খানা করে দিবি। তোর পেট ভরা গু। ভিতরে সব পাক খাচ্ছে। দৌড় দে, দৌড় লাগা না বাল। "
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro