ফার্স্ট
কাল রীতির রেজাল্ট বেরিয়েছে। রীতি বাড়িতে কাউকে কিছু বলেনি, এমনকি ওর বাবাকেও না। ওর বাবা ওকে বলেছিলেন ক্লাস নাইনের পরীক্ষায় যদি ফার্স্ট না হয়, তবে ওকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেবে। রীতি কাল সেকেন্ড হয়েছে। কাল ওকে ওর স্কুলের আন্টিরা, ওর বন্ধুরা সবাই বাহবা দিয়েছে। কিন্তু ওর বাবা ! ওর বাবা কি বলবে ! ওর বাবাতো ওকে বলেছে যে ওকে ফার্স্ট হতেই হবে। রীতি বোর্ডিং এ যেতে চায় না। কিন্তু, রেজাল্টের কথাটা তো বাবাকে বলেতেই হবে। তাই আজ ও ঠিক করে ফেললো যা হোয় হোক, ও বাবাকে বলবেই।
আজ সকালে রীতি ভয়ে ভয়ে বাবার কাছে গেল। ওর বাবা তখন সোফায় বসে চা খাচ্ছে। সামনের টেবিলে রাখা খবরের কাগজ টা এখনো পড়া হয়নি ওনার। রীতি ওর বাবাকে কিছু বলার আগেই টেবিলে রাখা খবরের কাগজের সামনের হেডলাইন এর ওপর চোখ পরল ওর। হেডলাইন টা দেখেই চমকে উঠলো ও। ওর বাবা জিজ্ঞেস করলেন, "কিরে এসে দাঁড়িয়ে রইলি যে, কিছু বলবি?"রীতির তখন সমস্ত ভয় কোথায় চলে গেছে। ও তখন বাবার দিকে চুপচাপ রিপোর্ট কার্ড টা বাড়িয়ে দিলো। বাবা রেগে বললেন, "তোর কাল রেজাল্ট বেরিয়েছে, আর তুই আমাকে জানাস নি ! বুঝেছি, নিশ্চয়ই ফার্স্ট হোসনি! দেখি রেজাল্ট দেখি।" রিপোর্ট কার্ড টা রীতির হাত থেকে উনি প্রায় ছিনিয়ে নিলেন... কিছুক্ষণ পর বলে উঠলেন, "ছি! ছি! ছি! দিনের পর দিন রক্ত জল করে, এত টিউটরদের কাছে হাজার হাজার টাকা ঢালা সত্ত্বেও তুই ফার্স্ট হলি না ! তোকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল আমার, ভেবেছিলাম এবার ক্লাস নাইনের পরীক্ষার ফার্স্ট হয়ে এরপর ক্লাস টেনে মাধ্যমিকে ও তুই ফার্স্ট হবি। হয়তো স্কুলের মধ্যে, হয়তো জেলার মধ্যে, বা হয়তো সারা রাজ্যেও !" কথাগুলো বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে উনি হাঁফিয়ে উঠেছিলেন, একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন, "প্রত্যেক বছর যেমন মাধ্যমিকে ফার্স্ট গার্ল ফার্স্ট বয়দের ছবি কাগজে বেরোয় তাদের গর্বিত বাবা মায়ের সাক্ষাৎকার এর সাথে, ভেবেছিলাম সেরকম তোরও ছবি বেরোবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তা আর হওয়ার নয়।" যতক্ষণ রীতির বাবা কথা বলছিলেন, রীতি একটাও কথা বলেনি, চুপচাপ পাথরের মত খবরের কাগজের দিকে চেয়েছিল। ওর বাবার কথা শেষ হতেই রীতি অল্প হেসে বলল, "তুমি ঠিকই বলেছ বাবা, আমি কিছুই পারি না... আর হয়তো কোনদিন পারবোও না। কিন্তু এষণা -কে দেখ, মাধ্যমিকের অনেক আগেই ওর কেমন খবরের কাগজে নাম বেরিয়ে গেছে... ছবিও বেরিয়েছে, তাও আবার একেবারে সামনের পাতার হেডলাইনে। এষণা-কে মনে আছে তো তোমার? আমার সেই বন্ধু যে অঙ্কে খুব কাঁচা... আজ নিশ্চয়ই ওর বাবার ওর জন্য খুব গর্ব হচ্ছে, তাইনা বাবা?" কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে, কোন ভাবে চোখের জল সামলে রীতি ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। ওর বাবা খোলা দরজার দিকে বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।
খবরের কাগজ এর সামনের পাতার দিকে চোখ পড়তে ওর বাবা দেখলেন হেডলাইনটা স্কুলের অঙ্ক পরীক্ষায় ফেল হওয়ায় এক ছাত্রীর আত্মহত্যার... তলার ছবিটা এষণার ।
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro