#১. 'Skip'
"আই অ্যাম সরি। উই হ্যাভ টু এন্ড এভরিথিং হিয়ার,"আমার জীবনের অন্যতম একটি মধুর স্বর তেতো বিষের মতো হয়ে আমার কানে বাজলো।
"হুহ?" বাম চোখের ওপর পড়া সদ্য কাটা বাদামি ব্যাঙস সরিয়ে আমি প্রশ্ন করি।
"দেখো, আমার পক্ষে আর কনটিনিউ করা পসিবল না। আমার কাছে আমার ফ্যামিলির চাইতে বড় আর কোন কিছু নাই। আমার আম্মু তোমাকে মানে নাই। সে আমাকে ক্লিয়ারলি বলে দিয়েছে যে সে সেম এজের মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিবে না। মোরওভার, আমাদের ফ্যামিলিও ম্যাচ করে না সো আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নাই।"
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম। এ কি বলছে আমার অনি? এক মিনিট, সে কি আদৌ আমার অনি? তিন বছর আগে যে মানুষটা ছিল এখনো কি সেই মানুষটাই আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে?
আমার উত্তর না পেয়ে সে ইচ্ছে করে আমাকে অবহেলার ভান করা শুরু করে, আমার পছন্দ করে দেওয়া কালো জিন্সের পকেট থেকে তার সেলফোন বের করে আনমনে কি যেন করতে থাকে।
আমার চোখের জল অনবরত গড়িয়ে পড়তে থাকে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতে থাকে। ঢোক গিলতে গেলে গলায় কেমন যন্ত্রনা হতে লাগে। তবুও কষ্ট লাঘব করে নীরবতা ভাঙতে হয় আমায়।
"এই, এসব কি বলছো তুমি, অনি?" আমার কান্নাজড়িত কন্ঠে ভারি হতে থাকে শুভ্রর রুম, "আচ্ছা, আমি তো তোমাকে বলছি না ফ্যামিলি ছেড়ে কিছু একটা করতে! তুমি তো জানো যে আমি ফ্যামিলির অমতে কোনদিন কিছু করবো না। কিছু করার বয়স ও তো হয়নি আমাদের! তোমার আম্মু না চাইলে আমরা কথা বলা বন্ধ করে দিই, কিন্তু তুমি অন্তত আমার সাথে যোগাযোগ তো রাখবে - প্রতি সপ্তাহে শুধু একটা মেসেজ দিলেই চলবে আমার!" অনির নীল শার্ট আমার দু হাতের মুঠোয় আরো শক্ত করে বসে।
"উফফফ, ছাড়ো তো! ঘেঁষাঘেঁষি বন্ধ করো!" অনি এক ঝটকায় ওর থেকে আমাকে সরিয়ে নেয়। সেলফোনের পর্দা থেকে চোখ তোলে। রুপালি ফ্রেমের চশমার আড়ালে থাকা চোখের কথা বোঝা
কষ্টকর হয়ে যায়। নাকে কেমন লালচে ভাব। শেভ করে না মনে হয় বহুদিন। কেমন উন্মাদের মতো রূপ যা কিনা আমার অপরিচিত।
আমি আঁতকে উঠি। এ কে আমার সামনে দাঁড়িয়ে?
আমি ছিটকে গিয়ে পড়ি শুভ্রর কম্পিউটার টেবিলের দিকে। কি হয় কে জানে! আমার মনে হয় আমি সব বোধশক্তি ততক্ষণে হারিয়ে ফেলেছি। শুধু বুঝতে বাকি রইলো না যে আমার গাল জুড়ে কেমন যেন গতিময় তরলের উপস্থিতি।
"মামা, আস্তে! মেয়েটার গায়ে হাত তুলছিস কেন?" শুভ্র হঠাৎ প্রতিবাদ করে।
আমি তা গায়ে মাখি না। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আমি অনি কে হারাতে বসেছি।
"অনি, তুমি বলো এসব মিথ্যা। দিস ইস আ ভেরি ব্যাড জোক। প্লীস স্টপ দিস। আই লাভ ইউ। আই কান্ট লিভ উইথ আউট ইউ!" আমি দুর্বল এক বিড়ালের ছানার মতো বলতে থাকি ওর শার্ট আবারো আঁকড়ে ধরে।
"দেখো রাই... সরি রাইমা। দেখো রাইমা, এইসব জিনিস আমার লাইফে অনেক ডিসট্রাকশান তৈরি করছে। আমার লাইফে এখনো অনেক কিছু করা বাকি। সামনে পরীক্ষা। তুমিও পড়ো আর আমাকেও পড়তে দাও। কিন্তু রিলেশনশিপ আর কনটিনিউ করতে পারব না," অনি এবার আস্তে করে ছাড়িয়ে নেয় আমাকে নিজের থেকে।
সব কেমন গুলিয়ে যেতে লাগলো আমার। কাঁটার মতো কথাগুলো বিঁধতে থাকে মনে।
"কিন্তু অনি, আমি তো তোমাকে ছাড়া কিছু করতে পারবো না। আই আম নাথিং উইথ আউট ইউ! আমরা তো ভবিষ্যতে সব ঠিক করতে পারি। আই ক্যান ওয়েট ফর ইউ। তুমি শুধু একবার বলো ইউ লাভ মি! তোমার ফ্যামিলি এখন মানবে না এইটাই তো স্বাভাবিক, ক্লাস টুয়েলভের প্রেম কেউ মানবে না, কিন্তু ভবিষ্যতে সব ঠিক হয়ে যাবে," আমি নাকের জল, চোখের জল আর কপাল ফাটা রক্ত এক করে অনি কে শেষবারের মতো জড়িয়ে রাখি নিজেতে।
"হোয়াইটএভার! ইমম্যাচিউরের মতো কথা বলা বন্ধ করো। আর আমি তোমার প্রথম বয়ফ্রেন্ড বলে আমার জন্য তোমার ইমোশন বেশি," আমার চুলে আলতো করে হাত বুলায় অনি, "লিস্টেন, মাই ন্যাম ইস অনিক অ্যান্ড নট অনি। অ্যান্ড আই এম নো লংগার আ পার্ট অফ ইউ। ফ্রম টুডে ইউ শুড লিভ লাইফ অন ইউর ওউন,"এই বলে আমাকে ছুড়ে দেয় শুভ্রর কাছে।
"ভাই, আমি তো মারা যাবো!" আমি শুভ্রর সাদা শার্টে রঙ মাখাই।
অনি নয়, অনিক পা বাড়ায় তার ভবিষ্যতে। স্কুল জীবনের প্রেমকে #skip করে। যে প্রেম থেকে পরিণত হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম দুজনে।
রাইমা নয়, আমি রাই ডুবি বিষাদের অসীমে।
*****
লেখিকার কথা
এই লেখাটি আমি লিখেছিলাম ফেসবুকে একটি গ্রুপের প্রম্পট 'স্কিপ' (skip) অনুযায়ী। পরে চিন্তা করলাম Wattpad এ এর একটা ফুল ভার্সন লিখলে কিন্তু মন্দ হয়না!
পুরো বইটিতে বাংলা হরফে লেখা কিছু ইংরেজি থাকবে। বাংলাদেশের কিছু অঞ্চল এবং দেশের বাইরের কিছু অঞ্চলেরও উল্লেখ থাকবে। এর কারণ হচ্ছে আমি এই ব্যাপারগুলোর সাথে পরিচিত হওয়ায় এ নিয়ে লিখতে একটা সাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
এছাড়াও,"রাজকন্যা আমি ততক্ষণ, বাবা তুমি আছো যতক্ষণ" কথাটিও ফেসবুকের একটি পোস্ট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা, যা কিনা ছিলো, "রাজকন্যা তুমি ততক্ষণ, বাবা আছে যতক্ষণ।"
প্রথম চ্যাপটারটি পড়ে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আগামী চ্যাপটারগুলোতেও এই একই পাঠকদের আমি পাশে পাবো।
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro