পর্ব ৬
বেরোবার অাগে নিনীকা দাদীমার,ঘরে উঁকি দিলো।দাদীমা সিগারেট ফুঁকছেন অায়েশ করে।
------দাদীমা একটা অার্নেস্ট রিকোয়েস্ট ছিলো।শুনবে??
দাদীমা জায়গা থেকে একটুও না নড়ে বললেন,
----- শুনছি বল।তুই লিপস্টিক দিয়েছিস কেনো?হুকুম ভুলে গেছিস?বিয়ের অাগে,নো সাজগোজ! বিয়ের পরে জামাই বগলে নিয়ে ইচ্ছামত সাজবি!
নিনীকা এপ্রোনের উল্টোপিঠের হাতায় লিপস্টিক মুছে নিয়ে বলল,
-----বিকেলে তোমার যে মিসকিনরা খাবে, তাঁর সাথে অামার কয়েকটা বন্ধুকেও খেতে বলি?
-------কেনোরে? তোর বন্ধুগুলোও মিসকিন নাকি?
------ওরা মিসকিন না দাদীমা।ওদের অবস্থা অারো খারাপ। ফকিরের কাছাকাছি ! বেশিরভাগেরই মা-বাবা নেই ঢাকায়; একা থেকে পড়ছে।তুমি এলাউ করলেই বলবো!
-------ক'জন?
-----পারহেপস হান্ড্রেড বা হান্ড্রেড সামথিং! বলবো??
দাদীমা তাচ্ছিল্যভরে বলল,
-----ডিনারে বল ওদের, নাহলে অামার মিসকিনদের ওরা অাবার ডিস্টার্ব করবে।
নিনীকা অানন্দিত কণ্ঠে বলল,
----- থেংক য়ু মাই সুইট দাদীমা। তুমি কি একটু দরজায় অাসবে, অামি তোমায় একটা চুমু খাবো?
----- চুমু খেতে হবে না এখন, দেখিস না অামি বিড়ি ফুঁকছি।
নিনীকা একটা ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিয়ে বলল,
-------ইউ অার দ্য বেস্ট দাদীমা ইন দিস ওয়ার্ল্ড! লাঞ্চে বড় ফুফু অাসবে, অামায় ফোন করে বলল, নিনী, মা নাকি ভুত দেখেছে অাবার! অামি দুপুরবেলায়ই অাসছি।
দাদীমা রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন,
------ভুত দেখেছি অামি, সে অাসছে কেনো?। বুইরা ধামরি একটা, দিনের মধ্যে ১৪বার তার বাপেরবাড়ি অাসা লাগে।তাঁর ইশকাডালি কথার অামি ধার ধারি না। এখন কি সে ভুতের মেনেজার সাজছে? অামি ভুত দেখলেই তাঁর অাসতে হবে?
নিনীকা অসহায় মুখ করে বলল,
-----অামি তো না ই অাসতে বললাম ফুফুকে, অামায় বলে কিনা, অামার বাপের বাড়ি, অামি একশবার যাবো, তুই না বলার কে??
দাদীমা রাগে গজগজ করতে থাকলেন।নিনীকা গাড়ির চাবিটা নিয়ে সানন্দে বেড়িয়ে এলো।
দাদীমা বড় ফুফুকে একদম সহ্য করতে পারেন না।কারণ বড় ফুফুই একমাত্র ব্যক্তি যিনি লজিক ছাড়া, কোনো জিনিস সহজে বিশ্বাস করেন না।সবসময়ই রেগে থাকেন, সব বিষয়েই তিনি হাইলি কেয়ারফুল এন্ড ডিটারমাইন্ড!তবে নিনীকার ব্যাপারে তিনি একটু সফট হার্টেড এবং এ বাড়িতে নিনীকার সাথেই তাঁর ভালো সম্পর্ক!
গাড়িতে বসেই নিনীকা গান ধরলো!
" মুখ লুকিয়ে কার বুকে..
তুমি গল্প শোনাও কাকে.....
গাড়িই একমাত্র জায়গা যেখানে সে নিশ্চিন্তে গান গাইতে পারে।নিনীকা স্পিডটা অার একটু তুলে দিলো, পাপা ঢাকায় না থাকলে তাঁর এক্সিডেন্ট করতে খুব ইচ্ছা করে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহসের অভাবে অার দুর্ঘটনা ঘটিয়ে উঠা হয়না।অাজ একটু চেষ্টা করলে মন্দ কি??
নিনীকার
দুর্ঘটনার চেষ্টা অাজও সফল হলোনা।
ক্লিনিকে নামার অাগে নিনীকা একবার পাপাকে ফোন করলো,
------হ্যালো, পাপা! পা পা..
ফোন ধরেই,
নিনীকার বাবা ব্যস্তভাবে তাড়াতাড়ি বললেন,
------মাই সুইট মম,অাই'ল কল ইউ বেক অাফটার টেন মিনিটস! অাই এম ইন এ হারি, বেবী!
নিনীকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন রেখে দিলো।সে জানে পাপা দশমিনিট পর ফোন করবে না।অাজ দুদিন পর সে পাপাকে ফোন করেছে।একমাত্র মেয়ে ফোন করলে কেউ কি এমন করতে পারে?
নিনীকার কাছে বসে দুদন্ড গল্প করবার সময় কি তাঁর কোনোদিনই হবে না? সে কি এরকম পাপা কখনো চেয়েছিলো?
দুপুরে বড় ফুফু এসেই সবাইকে হামকি ধামকি শুরু করেছেন।
-----টাকা কি গাছে ধরে নাকি? ভুত এলেই গরু জবাই।অবসর মানুষের শয়তানি সব অামি বুঝি! ভুতের এত মিসকিন খাওয়ানোর দরকার হলে, ভুত নিজে টাকা দিয়ে খাওয়াক।মিসকিন খাওয়ানোতে ভুতের স্বার্থ কি?
দাদীমা ভীত মুখ করে ফুফুর বকুনি খাচ্ছেন!
সোলায়মান চাচা জ্ঞানী লোকের মত বললেন,
------স্বার্থ অস্বার্থ কিছু নাই গো অাম্মা।না খাওয়াইলে অাবার অাইয়া ডর দেহাইবো। অামারে কইলো, যা সোলায়মান গরু কিন্না অান, নাইলে অাগুনে সেঁকা দিমু। বিদ্যা অাম্মা।কসম অাম্মা।
নাসিদা খালা চোখ মুছতে মুছতে বলল,
-----অাম্মা, অামি পস্ট দেখলাম, বাও হাত দিয়া ইশারায় অামারে ডাকলো, কইলো, বুড়ি যদি মিসকিন না খাওয়ায় তাঁর খবর অাছে! এই মরা কাঠটা ছুইয়া কইতাছি অাম্মা।
------চুপ কর নাসু, মরা কাঠ ছুঁয়ে বললে কি মিথ্যা সত্যি হয়ে যায় নাকি? তোদের ২জনের এই মাসের বেতন কাঁটা।নাউ গেট লস্ট!
নাসিদা খালা ধমকের মত করে বললেন,
-----বেতন কাটলে কাটবেন, এই নাসিদা বেতন কাটারে ডরায় না।বেতনের অাশায় কি ভুতের অাদেশ শুনমু না?
সোলায়মান অার নাসিদা জানে, যে মাসে তাদের বেতন কাটার কথা বলা হয়, সে মাসে তারা ডাবল বেতন পায়।অার সেই বেতন দেয়, ছুডু মেডাম।তাঁর মন অতিব বিশাল, গাজীবাড়ির পুশকুনির মত বিশাল।ছুডু মেডাম হইলেন সাক্ষাৎ দয়ার পাহাড়! তাঁর ঘর থাইকা ১০০০টাকা চুরি করলেও কোনো ধমক নাই।
নিনীকা দুপুরে এসেই বড় ফুফুকে জড়িয়ে ধরলো।
----অাজ কিন্তু তুমি রাতে থেকে যাবে, ফুফু! অামার সব বন্ধুরা ডিনারে অাসছে।ডিনারের পর অামরা পুল সাইডে একটা গানের জলসা করবো! সেই পার্টিতে তুমি হবে দুষ্টু রাজা।বদমাইশ রাজার মত অামাদের গান শুনে তুমি মদ খাবার ভঙ্গি করবে।পারবে না??
------বলিস কিরে? অাজ তোর বন্ধুদেরও ডিনারপার্টি নাকি? ও মাই গড, তুই অার তোর দাদীমা মিলে লোক খাইয়ে খাইয়ে তো ফতুর করে ছাড়বি দেখছি।
------ফুফু ওরা এক বাজেটেই খাবে।এত টাকা টাকা করো নাতো!
"যদি পাই বন্ধুর মন
টাকার দরকার কি কারণ?"
------এই কথাটা তুই এক্ষুণি বানালি তাই না?
নিনীকা হেসে ফেললো,
------উফ! ফুফু! তুমি কি ব্রিলিয়ান্ট!
-----একদম কনভিন্স করার চেষ্টা করবি না অামায়।পার্টিতে থাকলেও, ওসব মদ খাবার ভঙ্গি টঙ্গি অামি কিন্তু করতে পারবো না।
নিনীকা মনে মনে বললো, ফুফু অামি জানি তুমি অামার জন্য সব করতে পারো।একটা মরা তেলাপোকা দিয়ে যদি অামি গিলে ফেলতে বলি, তুমি ঠিক গিলে ফেলবে....
গানের জলসায় নিনীকার ফুফু সাজলো দুষ্ট রাজা, নাসিদা খালা সাজলো দুষ্টু রাজার পেয়াদা।নিনীকার বন্ধু রাসেল, সে মদ খাবার এক্টিংকে বাস্তব দেখানোর জন্য সত্যিকারের মদ যোগাঢ় করে নিয়ে এসেছে। ফুফুর হাতে দেয়া হয়েছে মদভর্তি গ্লাস! ফুফু সেই গ্লাস হাতে নিয়ে মদ খাবার ভঙ্গি করে করে দু-গ্লাস মদ খেয়ে নিলেন।এরপর থেকে প্রথমে শুরু হলো কঠিন বমি, রাত দেড়টা নাগাদ সাথে যোগ হলো লোজ মোশন! অবস্থা এতই খারাপ হলো যে, রাত তিনটায় উনাকে সিটি পলি ক্লিনিকে এডমিট করে স্যালাইন দিতে হলো।হাসপাতালে ভর্তি হবার পর থেকে ফুফু সবার কাছে মাফ চেয়ে বিদায় নিচ্ছেন।তারঁ ধারণা তিনি মারা যাচ্ছেন!
নিনীকার কাছে মাফ চাওয়ার সময় বললেন,
------নিনীরে তোর বিয়েটা দেখে যেতে পারলাম না।
নিনী সিরিয়াস মুখ করে বলল,
------ওহ ডিয়ার ফুফু! হাসপাতালে অামার অনেক বন্ধুরা এসেছে সাথে। একটা চয়েস করে দাও তো।এক্ষুণি বিয়ে করে ফেলবো।বিয়েটা দেখে যাও।
-------যাদেরকে সাথে এনেছিস, সবগুলাই তো মরাছড়া।পছন্দসই তো নেই একটাও।সবগুলাই তো বাদরের হাড্ডি!
যে মদ এনেছিলো, সে কই? তারে একবার সামনে নিয়ে অায়! জিজ্ঞেস করতো সত্যিই মদ না জোলাপ নিয়ে এসেছিলো?
রাসেল দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলো,
-----১৯৮০ টাকা দিয়ে এক বোতল কিনলাম ফুফু।বললো তো পিওর ওয়াইন। কোরবান ডাকু রোজ রাতে এই মদটা ৫বোতল খায়।
সোলায়মান চাচার কাছে, মাফ চাইবার সময় সোলায়মান চাচা বিরস মুখ করে বললেন,
------সবই ভুতের রাগ গো অাম্মা, অাফনে তাঁর কাছে খেমা চান।সে খেমা করলেই দাস্ত বন্ধ হইয়া যাইবো।ভুতেরে ত্যক্ত করায় এই অবস্থা হইছে অাপনার!
ফুফু সাথে সাথে সোলায়মান চাচার অারও এক মাসের বেতন কেটে দিয়েছেন।
(চলবে)
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro