পর্ব ১৩
সকালে ঘুম ভাংতেই নিনীকা যে কথাটা প্রথম শুনলো,
তা হলো,
------ও ছুডু মেডাম।সর্বনাশ! দাদীমার ঘরে ভুত অাইছিলো।কইয়া গেছে বিয়ার অাগে দোয়া পড়াইয়া মিসকিন খাওয়াইতে হবে।
-------ঠিক কতজন মিসকিন এসব কি কিছু বলে গেছে খালা?
------না।জিগাইয়া অামু?
------এই ঘটনা তোমাদের জামাইকে বলেছো?
------জামাই কেডায় ?
------রওনক রাজ! দ্য কিসিং ম্যান।সেও তো এখন এ বাড়ির মানুষ হতে যাচ্ছে.. ভুত সাহেবকে তো তারঁও চেনা দরকার।
-----ও অাল্লাহ! কন কি? ভুতের খবর হুনলে মাইন করবো না?
নিনীকা ফোন ডায়াল করলো, মোবাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
-----করলে করবে।নেও খালা, কথা বলো!
নাসিদা খালা বিভ্রান্তের মত মোবাইল হাতে নিলেন,
-----ও ছুডু স্যার! দাদীমার ঘরে ভুত অাইছে! অাপনের দাওয়াত!!
বলেই খালা মোবাইল ফেলে দৌড় দিলেন।
রওনক ফোন ধরে থতমত খেয়ে গেলো।মানেটা কি? নিনীকার নাম্বার না?
------হ্যালো.. হ্যালো। ডক্টর নিনীকা...
হাই তুলতে তুলতে নিনীকা বলল,
------বলুন দুধ রাজ! কেমন অাছেন??
রওনক অাবার ফোন নাম্বারটা দেখলো। গলা তো নিনীকার মতই, তাহলে?
-------কে বলছেন?
------অামি ভুত।মিল্ক সাহেব, অামাদের বাসায় ভুত এসেছে, দেখে যান এসে।
রওনক মাথা চুলকে বলল,
------- কিছুই তো বুঝতেছি না।মানে কি?
------মানে হলো অাপনি এখন গন্ধময় দুধ রূপে অাছেন।ভেরি সুন অামি অাপনাকে, দই বানিয়ে খেয়ে ফেলবো।দই ইজ মাই ফেভারিট......
রওনক সাথে সাথে ফোন রেখে দিলো...
ও মাই গড!!
দুধ রাজটা কে?
তাঁকে দই বানিয়ে খেয়ে ফেলারই বা কারণ কি?
কার সাথে কথা বলছে সে??
নিনীকা হাসলো।
অাচ্ছা! তাঁর হয়েছেটা কি?সব কথা রওনককে কেনো বলছে? রাতেই তো সে খুব রাগ করেছিলো?
পেপার খুলেই নিনীকা বিষম খেলো! ফ্রন্টপেজে ছবিসহ নিউজ! অবশেষে সিংগেল তকমা ঘুচতে যাচ্ছে বাংলার চকলেট বয়ের; কনে ডাক্তার!
সাথে নিনীকা অার রওনকের ছবি।
নিনীকা বিস্তারিত পড়লো না অার।
মনে মনে বলল, রেডী হয়ে যাও নিনীকা এখন থেকে তুৃমিও 'খবর'!!!
বের হবার সময় নিনীকা রান্নাঘরে উঁকি দিলো, করুণ কণ্ঠ করে মা'কে ডাকলো,
-------মা.....মিসকিন খাওয়াবে ভালো কথা। ভুত তোমাদের জামাইর কথা বলেনি বলে কি তোমরা তাঁকে ইনভাইট করবে না??এটা কেমন কথা??
বিস্ময়ে হাঁ করে মাহবুবা বললেন,
------জামাইটা কে?
-----বাহ্, জামাইকেই এখন চিনতে পারছো না?অামি খুব কষ্ট পেয়েছি মা। কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছি...
নিনীকা দ্রুত পা চালিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
মাহবুবা অবাক হয়ে মেয়ের যাবার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
রাতে নিনীকা ফিরেই দেখলো ;রওনকের মা এসেছেন।
তিনি নিনীকার জন্য অপেক্ষা করছেন!
------ বিয়ের কনের বুঝি এত কাজ করতে হচ্ছে এখন?বিশ্রাম নেই??.
এপ্রোনটা খুলতে খুলতে নিনীকা বলল,
------ ভালো অাছেন!?
------তুমি তাড়াতাড়ি অাসো অামার বাড়িতে, তাহলেই অামি ভালো থাকবো।খুব খাটতে হয় বুঝি?
-------এই তো! নাম করতে গেলে তো..
------তোমার এমনি নাম হয়ে যাবে, দেখো।এপ্রোন গায়ে পেন্সিল হিলে কটকট করে যখন তুমি হাসপাতাল ঘুড়ে বেড়াও, কি যে অাদর লাগে দেখতে! অামার তো মনে হয়, তোমায় দেখেই রোগীর অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যায়....
-------অাপনি কি একাই এসেছেন??
------রওনকের প্রোগ্রাম অাছে। তুমি ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে নেও অাগে!! তারপর কথা বলবো...
-------এক কাজ করুন অাপনি অামার ঘরে এসে বসুন! ফ্রেশ হতে অামার দুমিনিট লাগবে।
রেবেকা নিনীকার ঘরে এসেই বিছানায় হেলান দিয়ে বসলেন।
-----গান শুনেন তো নাকি?
------হুঁ...
মিউজিক প্লেয়ারে
লো ভলিউমে একটা গান চালু করতে করতে নিনীকা বলল,
------অাপাতত, এই শিল্পীর সাথে থাকুন।অামি চট করেই অাসছি.
-------তোমার রুমটা খুব সুন্দর, নিনীকা! শান্তিময়! ভালোবাসাময়! কে সাঁজালো?
------অার অাপনার ছেলের ঘর বুঝি পঁচা? চা খাবেন?
------দুবার হয়ে গেছে এর মাঝে..... হারমোনিয়াম যে ঘরে, তুমি গান গাও?
------একটু অাধটু.. বাসায় খুব বকা দেয়।শখের বশে...সিরিয়াসলি নয়
-------যখন অামাদের সাথে থাকবে, কেউ বকবে না। তুমি ইচ্ছেমত গান গাইবে। রওনকের বাবাও চমৎকার গাইতেন.....
-------রওনক গান ভালোবাসে না?
-------রওনক কি ভালোবাসে অার বাসেনা, সেটা জানতেই তো তোমাকে নিয়োগ করা হচ্ছে....এটা কি?
------ রেডিয়াম মার্কার।যাতেই অাপনি মার্ক করবেন, অন্ধকারে সেটা জ্বলবে! একটা মেডিসিন কম্পানি দিলো অামায়। এটা নেবেন অাপনি?
-------মজার তো। অফ কোর্স নিবো।রওনককে ভয় দেখানো যাবে।
------এত বড় হিরোও ভয় পায়?
-------রওনক তো, বাইম মাছ দেখলেই সাপ সাপ করে ভয় পায়.......
নিনীকা শব্দ করে হেসে ফেললো..
ওয়াশরুমের দরজার দিকে যেতে যেতে নিনীকা বলল,
-------অাপনাকে কি বলে ডাকবো? 'মা' বলতে লজ্জা করছে!
গভীর মমতা ভরা চোখে রেবেকা নিনীকার দিকে তাঁকালেন! মনে মনে বললেন, তুমি এতো ভালো কেনো নিনীকা?....
হেসে বললেন,
-------তুমি অামায় অান্টি বলতে পারো তো....
ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে দেখলো রওনকের মা ঘুমিয়ে পড়েছেন।কাঁথাটা গায়ে টেনে দিলো নিনীকা। মানুষটা এত ক্লান্ত ছিলো নাকি?
বাতিটা নিভিয়ে নিনীকা
বারান্দায় এসে.....রওনককে ফোন করলো,
-------হ্যালো মিল্ক মিঞা। কি করেন?...
রওনক একটা প্রোগ্রামে তখন, একটু অাড়ালে এলো, বিরক্তির সাথে বলল,
------ এই মিল্ক ব্যাপারটা কি??সকালেও বললেন।ফোন করে ভুতের দাওয়াত দিচ্ছেন।এগুলোর মানে কি?
-------বলবো না।রহস্য...
রওনক হতাশভাবে অাবার ফোনস্ক্রিনটা দেখলো.. নিনীকাই তো.. এমন অদ্ভূত কেনো মেয়েটা??
-------এখন ফোন কেনো??
-------অাপনার মা অাজ রাতে অামার সাথে থাকছেন। অাপনি রাতে ভয় পেলেই ফোন করবেন কিন্তু।
------রাতে থাকছেন মানে?? মা কোথায়? ফোনটা দিন তো তাঁকে...
-----উনি ঘুমিয়ে অাছেন। ভিডিও কল দিন দেখাই।
------না থাক দরকার নেই! রাখছি..
------শুনুন শুনুন...রাখবেন না..
-------অার কি বাকি?
-------গুড নাইট বলা বাকি!
-----অাচ্ছা, গুড নাইট!
-------অারেকটু বাকি...
-------হু বলুন...
চোখ বন্ধ করে নিনীকা দ্রুত বলল,
--------অামায় মিষ্টি করে একটা গুড নাইট কিস দিন তো.......
-------মানে?
-------মানে হলো, হে চুমু দূষিত নায়ক অামায় একটা শুভরাত্রির চুমু দিন।
রওনক কোনোমতে বলল,
------অামি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-------ঢং! বুঝতে পারছেন না।ফোনে একটা চুমু দিবেন; এত দাম দেখাচ্ছেন কেনো?
-------পারবো না....
রওনক ফোন রেখে বিস্মিতভাবে সোহেলকে ডাকলো,
------সোহেল, এক্ষুণি গাড়ি নিয়ে যাও। মা'কে নিয়ে অাসো...
সোহেল এসে পড়লো মহাবিপদে! নিনীকা ম্যামের বড় ফুফু তাঁকে নিয়ে বিয়ের লিস্টি করতে বসেছেন। সে যেতে পারছেনা। রওনক ফোন করতেই, ফুফু বলে দিলেন,
-----সোহেল অাজ এখানেই থাকবে। তোমার সমস্যা নেই তো, জামাই???
রওনকের সব হ-য-ব-র-ল লাগছে।এই নিনীকা মেয়েটার সমস্যা কি? যেই তাঁর বাড়ি যাচ্ছে, অাটকে যাচ্ছে!
নিনীকা কি একদিন তাঁকেও অাটকে ফেলবে??
(চলবে)
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro