পর্ব ১০
রওনকের মুভি দেখতে বসেই, নিনীকা বলল,
-----ভালো লাগছে না ফুফু। মুভি বন্ধ! চলো ওর ইন্টারভিউস গুলো দেখি;
-----কেনো মুভিতে খারাপ কি?
------খারাপ না, এমনিই..
----- তোর নায়ককে দেখ, দুমদাম নায়িকা কোলে নিয়ে নিচ্ছে, গুন্ডা মারছে, অামার তো দারুণই লাগছে।এঁই নাকটা দেখেছিস নিনী, কি খাড়া!!বিয়ের পর নাকটা টিপে ধরিস তো....
------ছিঃ ফুফু!
------- হিরোর ফুফুশাশুড়ি হচ্ছি, অামি তো ভাবছি, এই বুড়ো বয়সে রিবন্ডিং টা করিয়েই নিবো।
ও'র চোখদুটো দেখেছিস, যেনো সবসময়ই হাসছে..
------দেখাশোনাটা ভালো হওয়া কোনো ব্যাপারনা ফুফু। অামারতো চিন্তা হচ্ছে লোকটার বুদ্ধি নিয়ে.... এই যে ধরো অামি ফোন করলাম, সে কি বুঝতে পেরেছে? যদি বুঝেই থাকে, তাহলে সে কেনো ব্যাপারটা ঘাটালো না? হোয়াই?
------দু-ঘন্টা হলো ফোন করেছিস, রাত তো অার পেড়িয়ে যায়নি?
------এটা একটা নরমাল অাইকিউয়ের ব্যাপার ফুফু! এত সময় কেনো লাগবে? পরে যদি দেখা যায়, বোকার হদ্দ..
নিনীকা গভীর চিন্তায় পড়লো! টিভিটা সুইচ অফ করে ফুফুর মুখোমুখি হয়ে বসে বলল,
------ও ফুফু, সত্যিই যদি এরকম হয়?
সে কি ধরতে পারেনি?
এত বড় হিরো, দেখা গেলো মাথার ভেতরে বুদ্ধি শূন্য! একদম ঘাসে মুখ দিয়ে চলে, তো??
লম্বা হয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়তে পড়তে ফুফু বললেন,
------গরুটাইপ হলে খারাপ কি? যখনি হাম্বা হাম্বা করবে, মুখে ঘাস ঢুকিয়ে দিবি।ব্যস হাম্বা বন্ধ! তোর রান্নাবান্নার ঝামেলা ঘুঁচলো।গুড নাইট নিনী।বাতি নেভা তো!
এবং প্রায় সাথেই সাথেই পাশ ফিরে বললেন,
------তুই অাসলে রওনকের ফোনের অপেক্ষায় অস্থির হয়ে অাছিস নিনী। তোর মন চাচ্ছে, রওনক ফোন করুক।জিজ্ঞেস করুক, কৌতুহল দেখাক! কিন্তু তোর অাত্ম-অহংকার সেটা স্বীকার করতে চাচ্ছে না, এইজন্য তোর সাব-কনসাশ মাইন্ড যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে সে বোকা.....
ঘুমো তো??
নিনীকা শকডভাবে হাসলো!
সত্যিই কি ফুফুর কথা ঠিক??
না না এরকম হতেই পারেনা! চেনা নেই, জানা নেই, দেখা নেই, কথা নেই এরকম একজনের জন্য তাঁর মন কেমন করবে কেনো?? অাশ্চর্য!!
বাতিটা নিভিয়ে এসে অন্ধকার বারান্দার রেলিং ধরে নিনীকা স্টাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো....
অাগে কি কখনো তাঁর এমন ভেতরে ভাংছিলো, কই নাতো?
সোহেল, ব্যস্তভঙ্গিতে এসে বলল,
----- স্যার, কনফার্ম হয়েছে, অাপনার ধারণাই ঠিক।মোবাইল নাম্বারটা নিনীকা ম্যামের।
স্যার ভাবিকে কি ফোন করে বলবো, অাপনি উনাকে চিনতে পেরেছেন?
রওনক পানি খাচ্ছিলো, হাত থেকে পানি ছলকে পড়ে গেলো...
------তুমি এর মধ্যে ভাবি ডাকাডাকি ও শুরু করে দিয়েছো নাকি?
------ইয়ে মানে স্যার.....
------অামরা দেশে ফিরছি কবে?
------ডে অাফটার টুমোরো স্যার..
------তাঁর সাথে একটা ভেরি পার্সোনাল মিটিং ফিক্স করো।একদমই ব্যক্তিগত এবং সিক্রেট ... বলবে, উনি চাইলে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত ২জনকে রাখতে পারে, এর বেশি না। অার মিডিয়া থেকে সেইফ প্লেসটা নিশ্চিত করো...
মা'কে দিয়ে কথা বলাও দরকার হলে...
------অাচ্ছা! ডিজাইনার পাঠানোর কথা ছিলো স্যার?এনগেজমেন্টের পার্টির ড্রেস এর মধ্যে করে ফেলতে হবে।অামি কি এটাও কানফার্ম করবো?
------- বাকি যা খুশি করো সোহেল....শুধু মিটিং টা ফিক্স করে নাও অাগে...
এখনি একটা ফোন করে দেখো, ক'টা বাজে, একটা বাজতে পাঁচ....
না থাক কাল করো.. এত রাতে জেগে না থাকে যদি??
অথচ নিনীকা কিন্তু সেই সারারাত ফোনের অপেক্ষায় জেগেই ছিলো....
রওনক স্যার অার নিনীকা ম্যামের
দ্য ভেরি পার্সোনাল মিটিং ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে সোহেল পড়েছে বিরাট সমস্যায়, নিনীকা ম্যামের একজন জাঁদরেল ফুফু খুবই ঝামেলা করছেন।ফার্স্টে তিনি বললেন, সাথে শুধু তিনি অাসবেন।এই পর্যন্ত ঠিক ছিলো!
কিন্তু ঘন্টাখানেক পরেই ফোন দিয়ে বললেন, গেস্ট সেভেনটি থ্রি।সবাই নিনীকা ম্যামের ক্লোজ।বাদ দেয়া যাচ্ছে না।
অারো বাড়তে পারে...
এক ঘন্টার মধ্যে এত লোক জেনে গেছে?
এই কথা শোনাবার পর থেকেই ক্ষনে ক্ষণে সোহেলের পেট পাঁক দিয়ে উঠছে।সে দৌড়ে বাথরুমে যাচ্ছে, দরজার কাছে যাওয়া মাত্রই মোচর শেষ! স্যারকে সে কি বলবে?কিভাবে বলবে? এই প্রথম সোহেলের নিজের চাকরিটাকে ভীষণ কঠিন মনে হচ্ছে, এতোদিন সিংগেল রওনক রাজকে মেনেজ করতে তাকে মোটেও বেগ পেতে হয়নি, কিন্তু নিনীকা ম্যাম অাসতে না অাসতেই সে কুপোকাত! সোহেল বিড়বিড় করে বলল,
"উইমেন অার ভেরি ড্যান্জারাস ডিজেস্টার"
সোহেলের ভাবনা থামাতে হলো।রওনক স্যার ডাকছেন, এবার তাঁর পেটের সাথে মাথাও পাক দিয়ে উঠছে,
------মিটিং কখন কনফার্ম করেছো?? প্রেস যে নট এলাউ ব্যাপারটা কি এনশিওর হয়েছে?
ঢোঁক গিলে অামতা অামতা করে সোহেল বলল,
------একটু প্রবলেম হয়ে গেছে স্যার।গেস্ট একটু বেশি।
------তুমি বলোনি খুবই পার্সোনাল দেখা..??
------ অাসলে স্যার, ম্যামের কিছু ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি মেম্বারও অাপনাকে মিট করতে চাচ্ছেন, এরকম হিরো অাত্মীয় হচ্ছে... ক্রেজ তো থাকবেই! উনারা একটা ওয়েলকাম পার্টির মত করতে চাচ্ছেন।এ অবস্থায় "না"করলে তো অানফেয়ার দেখায়..
------ গেস্ট বেশি মানে? ক'জন?
সোহেল চোখ বন্ধ করে রোবটের মত বলল,
------মে বি সেভেন্টি অাপ..স্যার তারা ম্যামের কাছের খুব....একচুয়েলি অাপনি এত ফেমাস ম্যান, রিলেটিভরা সব এক্সাইটেড। প্রেস্টিজ ইস্যু! এমন অবস্থায় মিটিং ক্যানসেল করলে, পুরো ব্যাপারটাই অানফেয়ার হয়ে যায়।অফারটা কিন্তু অামরাই ফার্স্ট করেছি...
------তোমার নিনীকা ম্যাম তো দেখছি, জননেত্রী! তাঁর তো দেখছি বিশাল ভক্তকুল।মা'কে বলেছো এই গুণী জননেত্রীর কথা?
দু হাত কচলে অাসামীর মত গলায় সোহেল বলল,
-----বলেছি স্যার! তিনি বললেন, অামার পুত্রবধূ! দরকার হলে একহাজার লোক অাসবে সাথে।সব এরেঞ্জ করো।
রওনক হতাশভাবে বললো,
------কি মেয়েরে বাবা! একটা পার্সোনাল মিটিং কে পুরো জনসভা বানিয়ে ফেললো...
দেখি ফোন করো..অামি কথা বলবো,
রওনকের নাম্বার থেকে ফোন দেখে নিনীকা চমকালো খুব.....মনে মনে বলল, বাবু মিটিং ফিক্স করতেই পাগল হয়ে গেলে...
নিনীকা খুব মিষ্টি করে বলল,
-----হ্যালো! কে বলছেন? অামি কিন্তু স্বরাষ্ট্র মণ্ত্রণালায়ের অতিরিক্ত সচিব, নাসরিন সুলতানা বলছি...
রওনক বিব্রত অবস্থায় পড়লো! তাঁর কি বলা উচিত জবাবে??
-------অামি রওনক..একটু জরুরী কথা ছিলো।
নিনীকার খুব লাগলো বুকে।এত অানন্দ তাঁর কেনো হচ্ছে?সে মনে মনে বলল, তোমার জরুরি কথা তো অামি জানি বাবু; সব খাতির জমানোর ধান্দা! ঢং
...
মুখে বলল,
------অামি এখন কোনো জরুরী কথা শুনবো না নায়কসাহেব, সব জরুরি কথা জমিয়ে রাখুন।পরে বলবেন।অনেক সময় অাছে বলার।
রওনক রেগে যাচ্ছিলো, নিজেকে কন্ট্রোল করলো,
------মিটিং ব্যাপারে কথা, এত লোক! প্রেস জেনেই যাবে।নিউজ লিক করে দিবে। অামি চাচ্ছিলাম একটা প্রাইমারী মিট হোক অাগে। অফিশিয়াল নিউজটা এনগেজমেন্টের পর সবার সামনে অাসুক।মানে অামার কিছু কথা বলার.....
রওনককে কমপ্লিট না করতে দিয়ে নিনীকা বলল
------ নিউজ হলে হবে। এমনিতেও তো জানবেই সবাই।অামি তো চাই সবাই জানুক...হিরোসাহেব... অামাদের প্রথম দেখা... ইট মিনস সামথিং ভেরি স্পেশাল...
------অাসলে প্রেসের লোকদের ভরসা নেই! বানিয়ে বানিয়ে এমন সব লিখে দিবে, বলবে চুটিয়ে প্রেম করছি অামরা, ঘুরে বেড়াচ্ছি.. ইমেজের ব্যাপার.....
------অাপনি এত প্রেস ভয় পান কেনো বলুন তো??অামার তো বরং নিজেরই সবাইকে বলতে মন চাইছে....
এছাড়া অামার ফ্রেন্ডসরা পরে অামায় খুব খোঁটা দিবে..
বিয়ের মত অানন্দের একটা ব্যাপার...
প্রেসকে বরং জানিয়েই দিন...
নিনীকা গান ধরলো..
"মুখে মুখে রটে যাক অামাদের প্রেমকাহিনী..
অবাক হয়ে দেখুক দুনিয়া, করুক সবাই কানাকানি...
রওনক ভাবলেশহীনভাবে ফোন রেখে দিলো.....
জামা-কাপড় ছাড়তে ছাড়তে বলল,
------ফোন করে কোনো লাভ হয়নি সোহেল, তোমার মহানেত্রী ম্যাম তাঁর সাঙ্গ পাঙ্গ ছাড়া অাসবেন না। নিউজ হবার ভীষণ শখ উনার। ডিজাইনারকে নক করো।বলো এখনি তোমার ম্যামের বাসায় কন্টাক্ট করতে।প্রেস থাকবে, ফটোসহ নিউজ হবে, সো মাথায় রাখবে ডিরেকশান কি দিতে হবে?কোনো বিষয় যেনো...
সোহেল তড়িঘড়ি করে ডিজাইনারকে ফোন করতে করতে বেড়িয়ে গেলো...,
কফির মগটা হাতে করে রওনক বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।অাজকের রাত এত অন্ধকার কেনো? অমাবস্যা নাকি??অাচ্ছা নিনীকা নামের অর্থ কি? অমাবস্যা না অন্ধকার?
মেয়েটার সাথে কথা বলতেই রাত এত গাঢ় কালো হয়ে গেলো......?
নিনীকা গান গাওয়া শেষ করে দেখলো, রওনক অনেক অাগেই ফোন কেটে দিয়েছে....সে খেয়ালই করেনি।
ইশ বৌয়ের গান শুনতে নায়কসাহেবের কি লজ্জা! বুঝি বুঝি সবই বুঝি...
জানালার ধারে গিয়ে অাকাশের দিকে তাকিয়ে নিনীকা অাতঁকে উঠলো, বাবারে কি অন্ধকার!...একটাও তারা নেই অাকাশে.....
তাঁদের দুজনের অাজ প্রথম অালাপ, রাত তো অালোকিত হয়ে যাবার কথা.....
অন্ধকার কেনো?
(চলবে)
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro