নিনীকা-২০ এবং ২১
ক্লাবে এসে অবধি বড় ফুফু সোহলেকে ধমকাচ্ছেন।
-------এই যে গাঁধা মেনেজার, গেস্ট ওয়েলকামের এই ব্যবস্থা? স্পষ্ট করে লিখা অাছে, এই সিড়ি দিয়ে কনেপক্ষ, এই সিড়ি দিয়ে বরপক্ষ! তোমার স্যারের সব নায়িকারা এই সিড়ি দিয়ে কেনো উপড়ে যাচ্ছে?তারা তো বরপক্ষ!? অার এই যে অামাদের যে মালা দেওয়া হলো, সব হলুদ গোলাপ কেনো?! লাল গোলাপ কি কম পড়েছে!?
-------ম্যাম, সবাই ভিঅাইপি গেস্ট! কিছু বললেই সমস্যা।উনারা যেভাবে কমফোর্টেবল ফিল করেন, সেই সিড়িতেই যাচ্ছেন!অার মালাতে ইয়েলো রোজটাকে থিম করা হয়েছে ম্যাম!দেখেন সবার ইয়েলো.....
-------থিমের কি ধরন? অার এইসব পেটখোলা, হাটুখোলা নায়িকাকে বিয়েতে ডেকেছো কেন? অামাদের পক্ষের কত মুরুব্বী এসেছে জানো? এদের পাহাড় পর্বতময় রূপ দেখতে তো এরা অাসে নাই।মুরুব্বিদের তো একটা মিনিমাম সম্মান দেখাবে!! এদের অালাদা করে রিসাপশানেও তো বলা যেতো!?
সোহেল মাথা নিচু করে ধমক শুনছে।
এই পাগলা মহিলার কি কোনদিনই অাক্কেল হবে না।বিয়েতে বলা এখানের সব স্টার স্যারের খুব কাছের। এরা স্যারের ফ্যামিলি ফ্রেন্ডস! এদের
বিয়েতে না বললেই না হত!অনলি রিসাপশানে বললে মাইন্ড করতো। রাগটা চেপে সোহেল বলল,
-------ম্যাম, ভুল হয়ে গেছে! অামি যাই??
------কোনো যাওয়াযাওয়ি নাই! এই সিড়ির ধারে দাঁড়িয়ে থাকবে।কনেপক্ষ বরপক্ষ অালাদা করে ওয়েলকাম।
অার এই যে, হাত ধোঁয়ার সব পানিতে গোলাপ পাপড়ি, টিস্যু পেপার সার্ভ করছে, তাও ভেতরে গোলাপ পাপড়ি।একগ্লাস ঠান্ডা পানিও কাউকে দিলে, ট্রেভর্তি গোলাপ পাপড়ি! এসবের মানে কি?ওয়াশরুমের বেসিন পর্যন্ত গোলাপে গোলপময়!
লাখ লাখ টাকার গোলাপ তো তুমি হাত ধোয়াধোয়ি, অার মোছামোছি করেই শেষ করেছো। টাকার মর্ম তুমি কি বুঝবে? তোমার টাকা তো অার যাচ্ছে না। সোহেল একটু হেসে বলল,
------ উনারা ভেরি ইম্পর্টেন্ট গেস্ট! উনাদের কাছে ডেকোরেশনটা অনেক মানে রাখে।অার
ম্যাম অাপনাদের জামাইর টাকার বিশাল একটা গাছ অাছে, গাছ কি বলি বাগান অাছে, ও এরকম হাজার বিয়েতেও ফুরাবে না। টেনশান করবেন না ম্যাম।
ফুফু অারো রেগে গেলেন।প্রায় লোকজন শুনিয়ে বলতে থাকলেন,
------- হাউ ডেয়ার ইউ! টাকার বাগান অাছে বলে, তুমি সব ওড়াতে শুরু করলে!! টাকা রোজগার কত কষ্টের জানো???অামি এক্ষুণি তোমার চাকরি খাচ্ছি দাঁড়াও। ভি অাই পি গেস্ট কি তোমাদের একার? অামাদের তরফে মিনিস্টৃ থেকে পর্যন্ত লোক অাসছে।মিনিস্টারই এসেছেন ৫জন।
সোহেল মনে মনে বলল,
এই দারোগা মহিলাকে অামি ছাড়বোনা। একটা সুযোগ দাও অাল্লাহপাক!!
বিয়ে পড়ানোর সময় নিনীকা যত তাড়াতাড়ি কবুল বলল, এত তাড়াতাড়ি চোখের পাতা ও পড়েনা।
বড়ফুফু এটা নিয়েও ক্ষেপলেন,
------একটু তো দাম দেখাবি নাকি?ফট করে বলে ফেললি কেনো? এত তাড়া!! হুহ
নিনীকা বিরক্তি চেঁপে বলল,
-------বিয়ে করতেই তো এলাম।মিটে গেলেই ভালো।অামার খুব ক্ষিদে পেয়েছে ফুফু।খাবো কখন? পাপা খেয়েছে??
ফুফু মাথায় প্রায় হাত দিয়ে বললেন,
-------কি সর্বনাশ নিনী!!এমন খাই খাই স্বভাবের বিয়ের কনে বোধহয় তুই প্রথম!
নিনীকা গলার স্বরটা অারো নামিয়ে বলল,
------তুমি প্লিজ যাও তো ফুফু।খাওয়ার ব্যাপারে তাঁড়া দেও।অার বলো, রওনক যেনো অালাদা খায়, ও পাশে বসলে খেতে লজ্জা করবে।
ফুফু বিরক্ত মুখে ম্যানেজারকে ডাকলেন....
------গাঁধাটা যে অাবার কোথায় গেলো?
খাওয়ায় নিনীকা একা বসতে পারলো না।রওনক বসেছে। রওনকের অনেক ক্লোজ হিরো-হিরোইন বসেছে। তাঁদের সামনে খাওয়া অসম্ভব! তারপরও একটু স্বাভাবিক লাগতো, যদি ইলাটা পাশে থাকতো। বিয়ে হওয়ার পর থেকে ইলার পাত্তা নেই, চলে গেছে? না বলেই? কাউকে জিজ্ঞেস করবে??
নিনীকা চুপচাপ বসে রওনকের সেলিব্রিটি বন্ধুবান্ধবীদের গালগল্প শুনলো, এবং খাবার নাড়াচাড়া করলো।
এ কেমন শাস্তির বিয়ে? যার বিয়ে, যাদের জন্য এই অায়োজন, তাদেরই কিনা ঠিক করে খাওয়ার সুযোগ নেই? এদিকে জুতোতে পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে।হাটতে কষ্ট! জুতো কি খুলে ফেলবে? পেটিকোটের নাড় অসম্ভব টাইট লাগছে ; একটু ঢিলা করা দরকার! ব্লাউজের ভেতরে পিঠের দিকে কি একটা খোঁচাচ্ছে খুব, কাউকে কি বলবে, একটু দেখতে?মাথার টায়রা অনেক কষ্ট দিচ্ছে, এক্ষুণি খুলে ফেলা উচিত।
পাপা কই?? মা কই?? কাউকেই তো দেখা যাচ্ছে না।এক গ্লাস ঠান্ডা কোক খাওয়ার দরকার, অাধখাওয়া পেটে, বিশ্রী ঢেকুর উঠছে।ওয়াশরুমে একবার যাওয়া দরকার। উফ! বিয়েতে এত কষ্ট কেনো?? নিনীকার এত বান্ধবী এসেছে বিয়েতে এরা সব কই? অাশেপাশে সব অাননোন ফেইস!
নিনীকা মোবাইল বের করলো, পাপাকে ফোন করা দরকার।কাছে অাসতে বলতে হবে।
পাপা অাসতেই, নিনীকা প্রথম যে কথাটা বললো,
------ রওনকদের তাড়াতাড়ি করতে বলো, অামি বাসায় যাবো। প্লিজ!
পাপা হেসে ফেললেন,
নিনীকার পাশে বসতে বসতে বললেন,
-------শশুড়বাড়ি যাবার এতো তাড়া মামণি! এখনো তো কিছু ফর্মালিটিস বাকি! তোমায় সঁপে দেয়া হয়নি! মুখ দেখাদেখি...রওনকের মা অাসেননি।ও'র তো গার্ডিয়ান কেউ নেই; তোমায় শশুড়বাড়ি রেখে অাসতে অামাকেই যেতে হবে।
নিচু হয়ে পায়ের জুতোর বেল্টটা খুলতে খুলতে নিনীকা মনে মনে বলল,
" অাই হেইট ফর্মালিটিস" এই পৃথিবীতে কিছুই "অামার" নয়। সব "অামাদের ফর্মালিটিসের"।
বিয়ে শেষে ক্লাব থেকে রওনকদের বাসায় অাসার সময়
পাপার সাথে সাথে
নিনীকাকে নামিয়ে দিতে বাড়ি শুদ্ধু সবাই প্রায় চলে এলো। দাদীমা, মা, নাসিদা খালা, অারো কিছু গেস্ট। সবাই নিনীকাদের পক্ষ থেকে।রওনকের একটি বোনের কথা সে শুনেছিলো,সেই বোনকেও বিয়েতে নিনীকা দেখেনি। রওনকদের নিজের লোক বলতে ইলা ছাড়া অার কেউ-ই ছিলোনা। বিয়ের মাঝখান থেকে ইলাও লা-পাত্তা।মানে কি??
পাপা নিজের বাড়ির মত করে সব গুছিয়ে দিয়ে গেলেন।রওনকের অসুস্থ মা।চাকর-বাকর সব সামলাচ্ছে। এই এত সুসজ্জিত শশুড়বাড়িটাকে নিনীকার খুব নিষ্ঠুর মনে হলো। খুবব.....
তবে রওনকদের
বাড়িতে সবচেয়ে হুলূস্থুল হলো নিনীকার বাসর ঘর দেখে। ঘরটা সাজানো হয়েছে ডিফারেন্টভাবে। সিলিং থেকে ফ্লোর অবধি ঘরের ভেতরে চারদেয়ালে অায়না লাগানো হয়েছে....দরজার পরশনটা ছাড়া। তাঁর উপর লম্বা করে ডিফারেন্ট কালারের গোলাপ লাইন করে ঝুলানো।ঘরের ভেতরে বিছানা ছাড়া অার কোনো ফার্নিচার নেই।ব্যবহার করা হয়েছে, মাল্টিকালার অালো। ঘরের যে প্রান্তেই কেউ দাঁড়াক না কেনো তাঁকে ফুলগুলোর মাঝে মাঝে ভিন্ন ভিন্ন রঙে চারদিকে সেই অায়নায় দেখা যায়।বিছানাটা রাখা হয়েছে ঘরের মাঝামাঝি! বিছানায় শুলেই দেখা যাচ্ছে।পুরো অন্য একটা জগৎ। দাদীমা তো ঘর দেখেই নিনীকার কানে কানে ফিসফিস করে বললেন,
------নিনী কাপড় খুলবি খুব হুশিয়ারে। বাতি নিভানোর পর। অায়নার যেই ব্যবস্থা তোর জামাই করে রেখেছে না, তুই যেদিকেই কাপড় খুলবি বেটা দেখবে।বুদ্ধি দেখেছিস! সব বেটা একরকম।ভিতরে ভিতরে খালি শয়তানি।চোখ দিয়েই খাওয়ার ব্যবস্থা।
নিনীকার অবশ্যি ঘরটা ভালো লেগেছে।বেশ ভালো লেগেছে।এরকম ঘরের থিম সে কখনো ভাবেইনি। নিনীকা বরং একেকসময় একেকভাবে বসে চেক করছে তাঁকে কেমন দেখাচ্ছে।
রওনকের ঘরে যেতে ইচ্ছে করছে না এখন।ক্লান্ত লাগছে। একটু ছাঁদে গেলে কেমন হয়? রওনক ছাঁদের দিকেই যাচ্ছিলো, নিনীকার ফোন! ফোনটা কেটে দিয়ে রওনক ঘরে এলো। নিনীকা এর মধ্যেই শাড়ি বদলে ফেলেছে! বদলায়নি ঠিক! ব্লাউজের সাথে, সেলোয়ার পড়ে অাছে।জামা কেনো পড়েনি মেয়েটা??
রওনককে দেখেই ব্যস্তভাবে বলল,
-------কাপড় জামা রাখবার এ ঘরে তো কিছু নেই!
রওনক বারান্দার দরজার এক পাশ দিয়ে অারেকটা সরু দরজা খুলতে খুলতে বলল,
------চেঞ্জিং রুম এটা। সব অাছে এতে।
নিজেই সুটকেসটা টেনে নিয়ে যেতে যেতে নিনীকা বলল,
--------অামরা কি রাতে অার খাবোনা? ভাত খাওয়া হয়নি অামার! প্লেইন মাছেরঝোল দিয়ে ভাত। পাওয়া যাবে?
রওনক হাসলো, নিনীকার অন্য সুটকেসটা নিজে এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
-------সোহেল এখন থেকে অাপনারও মেনেজার, ডক্টর! যা দরকার ফোন করে দিবেন। নাম্বার অাছে তো??
চেঞ্জিং রুমের দরজাটা অাটকে দিতে দিতে নিনীকা বলল,
-------মেনেজার দরকার নেই অামার....অান্টিকে বলুন! বারো হাত কাঁকুরের তেরো হাত বিঁচি। যত্তসব...
রওনক অাবার কপাল কুঁচকালো, বারো হাত কাকুর নিনীকা কাকে বলেছে? তেরো হাত বিচিটাই বা কে???
প্রায় সাথে সাথেই
নিনীকা চেঞ্জিং রুমের দরজাটা অাবার খুললো,
------কি ব্যাপার? অাপনি দরজার সামনে এরকম ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে অাছেন কেনো?? ভেতরে অাসবেন?
রওনক থতমত খেয়ে গেলো।কিছু বলতে যাচ্ছিলো,
নিনীকা থামিয়ে দিয়ে বলল,
------বিয়ের মাঝখান থেকে হঠাৎ ইলা উধাও। উনি কি খেয়ে গেছিলেন? অামায় বলে যাননি কেনো?? একটা ফোন করে দেখুন না।
রওনক যথাসাধ্য দৃঢ় গলায় বলল,
------অামি ফোন করতে পারবো না!
নিনীকা দরজা খোলা রেখেই গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে কাপড় ছাড়ছে। রওনক সড়ে এলো।
এই মেয়েটা এতো অদ্ভূত কেনো?
রওনক বেড়িয়ে নিচে এলো....
নিনীকাদের বাড়ির লোকেরা চলে যাচ্ছে। অাশ্চর্য! মেয়েটার খবরই নেই।
রওনক তাড়াহুড়োর সাথে ঘরে এলো অাবার।
নিনীকা চেঞ্জ করে ফেলেছে।এত দ্রুত! মিনি সাইজের একটা অায়না সামনে নিয়ে ফ্লোরে বিছিয়ে বসে গয়না খুলতে ব্যস্ত। চুড়ি খুলতে খুলতে নিনীকা বলল,
-------অাপনি ফ্রেশ হবেন না??নাকি শেরোয়ানি পড়েই থাকবেন চিরজীবন?
বিছানার এক পাশে বসতে বসতে রওনক বলল,
-------পাপারা চলে যাচ্ছেন।অাপনি বাই বলবেন না?
অায়না থেকে চোখ না সরিয়েই নিনীকা বলল,
------- পাপারা মানে?
-------অাপনাদের বাড়ির সবাই চলে যাচ্ছেন। নিনীকা উঠে এসে রওনকের পাশে বসলো।দেয়ালের
অায়নার দিকে অাঙুল দেখিয়ে বলল,
-------দেখুন তো, অামরা কয় জোড়া? কয়টা রওনক অার নিনীকা দেখা যাচ্ছে?
রওনক শেরোয়ানির বোতাম খুলতে খুলতে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল,
-------পরে বলা যাবে তো এসব।উনাদের বাই বলে অাসুন অাগে, নাকের নথ খুলতে খুলতে নিনীকা বলল,
------- তাদের যদি এঘরে অাসতে বলি অাপনি কি কিছু মনে করবেন?
পায়ের জুতোটা খুলতে খুলতে রওনক সোহেলকে ফোন করলো,
-------হ্যালো স্যার!
------- তোমার ম্যামের বাড়ির লোকদের নিয়ে এসো উপরে।অার বলবে কফি দিতে এ ঘরে।
তারপর নিনীকার দিকে তাঁকিয়ে বলল,
------তাদের কথার মাঝে কি অামি থাকতে পারি?
নিনীকা জবাব দিলোনা।সে চোখের কাজল তুলতে ব্যস্ত!
নিনীকাকে বাই বলতে এলো, নাসিদা খালা অার
পাপা। তারা অাসতেই রওনক চলে যেতে চাইলো, নিনীকার পাপা প্রায় হাত ধরে অাটকালেন।রওনক হাসিমুখে বলল,
-------কয়েকটা ফোন সাড়তে হবে অামার!
পাপার দিকে না তাকিয়েই নিনীকা বলল,
-------পাপা, ঘরটা ভালো সাজিয়েছে না বলো??
------হু খুব।হিরোদের সবকিছুই অালাদা।
পাপার কাছে এসে বসতে বসতে নিনীকা বলল,
-----মা, দাদীমা কোথায়? ঘরে এলোনা যে?
অাশিকুল সাহেব তাড়াহুড়ো করে বললেন,
--------নিচেই অাছেন।অাসতে চাইলেন না।মামণি ;অামি তোমায় সকালে ফোন করে নিবো....গুড নাইট।অাপাতত!!
অসহায় মুখ করে নিনীকা বলল,
--------অারেকটু থাকোনা তোমরা; পাপা।
পাপা হেসে তাঁকালেন! অভিমান ভরা অাকুলতায় নিনীকা তাকিয়ে বলল,
------তোমাদের সবার যাবার বড্ড তাড়াহুড়ো। শুধু অামারই কোনো তাড়া নেই। কেনো পাপা?
অাশিকুল সাহেব মেয়ের দুহাত এক করে চুমু খেলেন। বিড়বিড় করে বললেন,
-------অনেক দোঅা রইলো মামণি।করুনাময় যেনো তোমায় ভীষণ সুখী করেন। অামাদের তাড়াতাড়ি ফেরা দরকার! বুঝোই তো কত কাজ!
নাসিদা খালা চুপচাপ অনবরত কেঁদে যাচ্ছেন।
নিনীকা এগিয়ে গিয়ে নাসিদা খালাকে জড়িয়ে ধরলো।
--------এতো কাঁদছো কেনো খালা? অামি কি মারা গেছি?
কোনো মতে স্বর টেনে বললেন,
--------ঘর গুছাই দিবো কে অাপনার?
-------প্রতি সপ্তাহে এসে তুমি গুছিয়ে দিবে। নিজের গয়নাগাটি সামনে বাড়িয়ে দিয়ে নিনীকা বলল,
--------এর থেকে একটা পছন্দ করে নিয়ে যাও।যখনি অামার কথা মনে পড়বে, সেই গয়নাটা পড়বে।দেখবে অামি তোমায় দেখতে চলে অাসবো।যদি না নাও বুঝবো, তুমি অামার কথা কখনোই অার মনে করতে চাওনা!!
নাসিদা খালা মনে মনে বললেন,
------অামি অাপনারে মৃতু্্যর পরেও মনে করতে চাই গো অাপা।...
একটা চুড়ি তুলে নিয়ে,
নাসিদা খালা একছুটে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলেন। ছুডু মেডাম কি যে পাগল! বিয়ের গয়না কাউরে দেয়া যায় বুঝি?
রওনক বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোন করছিলো, অাশিকুল সাহেব ডাকলেন,
-------গুড নাইট তাহলে!
রওনক হাসিমুখে মাথা নাড়লো।
অাশিকুল সাহেব একটু গিয়ে অাবার ফিরে অাসলেন, বিব্রতভাবে রওনককে বললেন
-------ক্যান অাই হাগ ইউ ওয়ান্স মাই ডিয়ার সন??
রওনক নিজেই জড়িয়ে ধরলো।
কান্নায় অার্দ্র গলায় অাশিকুল সাহেব বললেন,
-------অামার বেঁচে থাকার সবচেয়ে সুন্দর কারণটি অামি তোমায় দিয়েছি বাবা। অামি চাইবো, তুমি তাঁর বেঁচে থাকবার সবচেয়ে সুন্দর কারণ হবে.....
মেয়েটির ধারালো বুদ্ধিই মেয়েটার কষ্টের ভার সবসময় বাড়িয়ে দিয়েছে...... এবার যাতে সে সব সত্য অার অানন্দের মধ্য দিয়েই খুঁজে পায়.....
------অামি চেষ্টা করবো পাপা.....
-------মেয়েটা কখনোই অামার কাছে, একটু সময় ছাড়া কিছু চায়নি, বুঝলে।অামি হয়তো সেভাবে দিতে পারিনি। অাজ খুব খারাপ লাগছে, জানো; অাজ খুব খারাপ লাগছে.......
চোখ মুছতে মুছতে অাশিকুল সাহেব দ্রুত সিড়ি নেমে যাচ্ছেন।
রওনকের চোখ ছলছল করছে।নিনীকার নিজের বাবাও কি অাজ এমন করতেন?নিজে করে এসে মেয়েকে রেখে যেতেন শশুড়বাড়িতে? অাচ্ছা, অাজ রওনকের নিজের বাবা থাকলে কেমন হতো?? ছেলের বাবারা বিয়ের দিন ছেলেকে কি বলে? ছেলেদের বাবারা বিয়ের দিনে কেমন হয়???
বাইরের অজস্র অালোর দিকে তাকিয়ে অাছে রওনক।এই এত অালো কি অাসলেই অন্ধকার কাটাতে পারছে???
(চলবে)
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro