Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

"কিরে সুমো... কি হয়েছে তোর, মুখ অমন করে আছিস কেন? "

শ্রাবণের প্রশ্নে সুমন আরও সংকুচিত হলো।

"কিছুনা....  কিছুনা তুমি তাড়াতাড়ি আমায় বাড়ি নিয়ে চলো। এখানে সবকিছু দিয়ে কি ভীষন ওষুধ ওষুধ গন্ধ মাগো...  " সুমন নাক মুখ কুঁচকে ফেললো।

"তো হাসপাতালে কি তুই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর চিকেন পাস্তার গন্ধ পেতে চাস? " শ্রাবণ গাড়ি স্টার্ট করলো।

"না... "

"তবে? "

"কিছু না শ্রাবণদা তুমি তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাও তো... আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমি বাড়ি যেয়ে শোব।"

"তোর কি বমি পাচ্ছে সুমো ? "

এবার শ্রাবণ সত্যি সত্যি উদ্বিগ্ন হলো। যতোই বকুক সুমনের জন্য ওর একটা বাড়তি দায়িত্ববোধ কাজ করে সব সময়, কেন করে সেটা নিয়ে শ্রাবণ কোনদিন মাথা ঘামায়নি তবে করে এটাই ওর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আর সে জন্যই এই এতো এতো কাজ ফেলে শ্রাবণ, সুমনের সাথে হাসপাতালে এসে পড়ে আছে। বাইরের যে কেউ দেখলে অবলীলায় বলবে নিশ্চই সুমন ওর মায়ের পেটের বোন আর এটা শুনতে শ্রাবণের মোটেই কোন সমস্যা নেই। সুমনের দারিদ্র্যতা শ্রাবণকে ছোঁয় না, তাইতো সুমনের সব ছোট বড় আবদার ওর কাছে ভীষন গুরুত্বপূর্ণ।

"শ্রাবণ, একটু দেখতো....  ওই কোনার দোকান থেকে একশো গ্রাম সাগুদানা আর দুটো ম্যাগী নুডুলস নেয়া যায় কিনা? আমি তো সেই বিকেল থেকে এনার কাছে এসে বসে আছি। ওদিকে ছেলেটা আমার স্কুলে গেল কিনা কে জানে," মঞ্জু বিরস মুখে বললেন। " বুড়ো ধারী মেয়ের শখ হয়েছিলো ফড়িং নিয়ে নাচবার... আর এখন বাড়ি শুদ্ধ লোক সকলে মিলে তাই নিয়ে মরো।"

মামীর কথাগুলো মৌমাছির হুলের মতো সুমনের গায়ে এসে বিঁধলো। মামী এমন কথা যে আজ নতুন বলছে তা নয় তবে  আজ কেন যেন খুব বেশি করে কথাগুলো লাগলো ওর।

সত্যিই তো.. ওর মতো মানুষের কেন যে হঠাৎ হঠাৎ এতো আকাশ ছুঁতে ইচ্ছে হয়। সুমন প্রানপনে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বুকের ভিতরের উঠে আসা কান্নাটাকে ঠেকালো। কেন যে মাঝে মাঝে নিজের ভিতরের অবুঝ মনটা লাগামহীন হয়, ভুলে যায় ওর কেউ নেই, ওর চেয়ে আশ্রয়হীন কেউ নেই... ওর বয়সী অন্য মেয়েগুলোর মতো খোলা চুলে হাত ভর্তি চুড়ি পড়ে গাঢ় রঙের জামদানী ওর জন্য নয়, ওর দিনের শুরু আর সন্ধ্যের আলো মানে হচ্ছে ঘুপচি রান্নাঘরের ঘুলঘুলির ফোকর...  নিজের উপরই ভীষন এক আক্রোশ জন্মালো ওর। ওর সাহস হয় কি করে রঙিন প্রজাপতি হয়ে উড়বার.... শ্রাবণদার দিকে চোখ তুলে তাকানোর মতো যোগ্যতাই তো ওর নেই... তারপরও কেন? ফুঁপিয়ে কান্না আসতে চায় সুমনের।

হাতের উপর আলতো চাপ পড়তেই পাশে ফিরে তাকালো সুমন। শ্রাবণ চোখের ইশারায় ওকে অভয় দিচ্ছে...  দুঃখটা আরও বাড়লো সুমনের। দুঃখে আর লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর। ওর মতো চালচুলোহীন মেয়ের আবার কাউকে ভালোও লাগে.. এই লজ্জাই বা সুমন  কোথায় লুকায়। আর ভালোও বা যেটুকু লাগে তার আগে সেই ভালো লাগার মানুষটার সাথে ওর যোগ্যতার মাপকাঠি কতোটা ঠুনকো ভেবে শ্রাবণের দিক থেকে দ্রুত চোখ সরালো সুমন। কিছু একটা করতে হবে ওকে... দ্রুত, আর তাতে  কে কি  বললো তাতে কিছু যায় আসেনা সুমনের,  কিন্তু বড়মা  বা চৌধুরী বাড়ির সকলের কাছে সুমনের অনেক ঋণ, বিশেষ করে শ্রাবণদার কাছে... অসংখ্য আবদার আর স্নেহ শর্তহীন ভাবে পূরণ করে এসেছে সে সুমনের জন্য।

সেই স্নেহের এমন অপমান করলো ও.... সুমন নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলো। এতোটা অকৃতজ্ঞ কি করে হল ও? এর চেয়েতো  মরে যাওয়া ঢের ভালো ছিলো ওর জন্য।

............................................

সুমোর জন্য মনটা খুব  খারাপ হলো  শ্রাবণের। যদিও দু'দিন আগে সে নিজেও বকেছিলো সুমনকে। কিন্তু এখন মঞ্জু মামী বকতেই দুম করে  ভীষন এক রাগ এসে ভর করলো ওর উপর।

কিন্তু রাগ হলেও আসলে মেয়েটাকে এর থেকে পাকাপোক্ত ভাবে  বাঁচানোর উপায় ওর জানা নেই। কারনে অকারনে সুমোকে দু'চার কথা শোনানো মঞ্জু মামীর রুটিন কাজ। এই যে এতো অসুস্থ তারপরও ঠিকই ঠোনা মেরে কথা বলবে। শ্রাবণ আগে মাঝে মাঝে সহ্য করতে না পেরে রেগে গিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করতো, কিন্তু একেতো কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না সাথে  সেদিন মায়ের বলা কথাগুলোও খুব বেশি আকারে লেগেছিলো শ্রাবণের। সত্যি কথা ওই পরপুরুষ শব্দটা কিছুতেই হজম হয়নি ওর, সুমোর আর ওর মধ্যে এমন বিদঘুটে শব্দের উপস্থিতি এতো বাজে লেগেছিলো যে,  শব্দটা শোনার সাথে সাথেই গায়ে জ্বালা ধরছিলো ওর।

যে সুমনের  নাক দিয়ে শর্দি পড়লেও কিনা এই শ্রাবণকেই  ডাক্তারের কাছে ছুটতে হয় মাঝরাতে  সেই মেয়ে ঠিকমতো ওষুধ খেলো কিনা তার হিসেব শ্রাবণ জানতে চাইতে পারবেনা... আর সেটা যদি ও পারে তবে সুমনের পড়ার হিসেব কেন ও নিবে না আর না পড়লে কেন ও তাকে শাসন করতে পারবে না?

শাসনের বেলায় শ্রাবণ তখন তুমি বাইরের মানুষ। মানে হলো শ্রাবণ তুমি কাজের বেলায় কাজি আর কাজ ফুরোলে পাঁজি।

তাই শ্রাবণ এখন থেকে পরপুরুষ হয়েই থাকবে। কেবল এই বারটা ছুটে না আসলে হাসপাতালের এতো সব বাজে ঝামেলা মেটাতো কে? কিন্তু এই শেষ। এর পর থেকে সুমোর জন্য শ্রাবণ চৌধুরী  পরপুরুষ, একটা কথাও আর সুমোর জন্য খরচ করবে না শ্রাবণ।

আর অসুস্থ মানুষের জন্য  মানবতার খাতিরেই অনেক কিছু করা সম্ভব। তার জন্য কাছের কেউ হওয়ার প্রয়োজন পরে না। তাই আজই বাড়ি গিয়ে বাকি ওষুধ কিনে দিয়ে  শ্রাবণ নিজের দায়িত্ব শেষ করবে। তারপর টা টা বাই বাই।  এরপর সুমনের কি হলো না হলো সেটা দেখার দায়িত্ব শ্রাবণের না।

কিন্তু কথাটা মুখে বলা যতো সহজ কাজের বেলায় করে দেখানোটা কি ততটা সহজ?  বিশেষ করে ওই রকম ফুলে ফুলে কেঁপে কেঁপে উঠা ঠোঁটগুলো দেখে। বোঝাই যাচ্ছে কথাগুলো খুব কষ্ট দিয়েছে সুমোকে। শ্রাবণ তাই সুমোর হাতে হাত রেখে  সামাল দেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু কেন যেন ফল উল্টো হলো... লালচে চোখ জোড়ার উপচে পড়া নোনাজল শ্রাবণের বুকের মধ্যে এসে খচ করে তীরের মতো বিঁধলো। বুকের মধ্যে ফেনিয়ে উঠা অনুভূতিটাকে জোর করে দাবিয়ে দিলো শ্রাবণ, ভীষন... ভীষন রকমের কষ্ট হচ্ছে ওর..  স্টিয়ারিং টা শক্ত করে দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো শ্রাবণ।

.........................................

"দাদাবাবু মা নাস্তা খেতে ডাকছেন.... " কাজের ছেলে রাজুর ডাকে চোখ মেললো শ্রাবণ। কাল অনেক রাত অব্দি কাজ করেছে ও। মাঝখানে সুমনকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ির কারনে বেশ অনেকগুলো কাজ জমে গিয়েছিল, গত চার পাঁচদিন যাবৎ সেই কাজগুলো শেষ করলো ও।

"রাজু, সুমো কে একবার আসতে বলতো এ ঘরে?"

"সুমন দিদিমনিকে তো আজ দেখিনি দাদাবাবু, মনে হয় কেলাস করতে গিয়েছে।"

"এতো সকালে কিসের ক্লাস!"

"তা তো জানিনা দাদাবাবু.... মা বলছিলেন সুমন দিদিমনি কে আপনি নাকি কি সব কেলাসে ভর্তি হতে বলেছেন..  তাই বললাম আর কি," বলেই সামনের এলোমেলো টেবিলটা গোছানোর জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল রাজু।

রাজুকে টেবিলের দিকে এগুতে দেখে রে রে করে উঠে বসলো শ্রাবণ।

" এই খবরদার তুই সর ওখান থেকে, সুমো আসুক... ওই গুছিয়ে রাখবে। তা না হলে তুই কোথায় কোন ফাইল ঢুকিয়ে ফেলবি, শেষে আমার খুঁজতে খুঁজতে জান হালুয়া হবে।"

"জ্বী.. "রাজু কথা না বাড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। এই ঘর ও যতদিনই গুছাতে এসেছে ততদিনই ছোট দাদাবাবু ওকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত সুমন দিদিমনি এসে প্রতিবার ঘরটা গুছিয়েছে। রাজুর মনে হয় সুমন দিদিমনিকে দাদাবাবু ভালোবাসে, তবে সেটা কেবলই স্নেহ নয়....  কিন্তু ওর ছোট মুখে বড় কথা মানায় না, সাথে আবার সুমন দিদিমনি অনাথ। এমন ঘরে ছোট দাদাবাবুর সম্মন্ধ বড় কর্তা কিছুতেই করবেন না।

রাজু ঘর থেকে বের হয়ে যেতেই শ্রাবণ গুম হয়ে বসে রইলো। সত্যি সত্যি কোন কোচিং এ ভর্তি হলো নাকি সুমো? তা হলে হোক.…  শ্রাবণ কি গিয়ে আটকাচ্ছে নাকি... যে ওকে না জানিয়েই সুমনকে কোচিং এ ভর্তি হতে হলো। অসন্তুষ্ট চিত্তে পায়ে স্যান্ডেল গলালো শ্রাবণ।

এই মুহূর্তে সুমোকে কাছে পেলে ওর চুলের বেনী টেনে দিতো শ্রাবণ খুব করে, বড্ড বার বেড়েছে ওর। দুমদাম করে রান্নাঘরে মায়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো শ্রাবণ।

"মা সুমোকে একবার ডেকে পাঠাও তো.. বলো আমার একটা জরুরি কাগজ কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা।"

"নিজে একটিবার ফোন করে সুমনকে ডাকতে পারিস না বাপু.. আমার মাত্র দুটো হাত আর সেদুটো সবসময় তোদের সেবাতেই ব্যাস্ত থাকে," নির্মলা বড় কড়াইটা চুলায় চাপালেন। ভীষন ব্যস্ত তিনি আজ।

আজ রাতে বাড়িতে মেহমান খাবে। রামনাথ চৌধুরীর পরিচিত কিছু গন্যমান্য লোকের সাথে শ্রাবণের জন্য দেখা সেই পাত্রীটির বড় মামাবাবুও আজ আসছেন দাওয়াতে শ্রাবণের সাথে পরিচিত হতে। পাত্রীর মামা আমেরিকায় থাকেন পরিবার সহ। এখন তার বিবেচনার উপরই এই বিয়ে নির্ধারন হবে বলে জানিয়েছেন মেয়ের বাবা। রামনাথ চৌধুরী তাই নির্মলাকে নিজের হাতে সমস্ত রান্না করতে বলেছেন। সকাল থেকে  নির্মলা তাই দম নেওয়ারও ফুরসত পাচ্ছেন না..  এমন অবস্থায় ছোট ছেলের মর্জি মোতাবেক আবদার শুনে কপাল চাপড়ালেন তিনি। এই ছেলের ভবিষ্যতে কি হবে... একটা দরকারি কাগজও সে নিজে দেখে রাখতে পারে না।

"আমার ফোনে একদম চার্জ নেই মা,ফোনটা  মাত্রই চার্জে দিয়ে আসলাম।"

ইচ্ছে করেই এখন সুমনকে ফোন করেনি শ্রাবণ। সেদিন হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকে তেমন একটা কথা হয়নি ওর সুমনের সাথে। তাছাড়া এই ক'দিন শ্রাবণের কাজের চাপও ছিলো প্রচুর, সাথে সুমনের শরীরও ভালো ছিলো না। কিন্তু আজ শ্রাবণের কাজের চাপ কমে গেছে, আজ কেনো এতো বেলা পর্যন্ত সুমন ওর ঘরে আসলো না...  সাথে আবার বলে সে কোন কেলাস জুটিয়েছে, সব মিলিয়ে  শ্রাবণের ভিতরটা একদম আঁকুপাঁকু করতে থাকলো সবটা জানার জন্য।

আর এই কথাগুলো লোকমুখে শুনলে শ্রাবণের মোটেই স্বস্তি হবেনা, সুমনকে একদম সরাসরি জিজ্ঞেস করে জানতে হবে ওর, কিন্তু কতক্ষণে দেখা মিলবে সেটাই এখন আসল ব্যাপার।

"তা তোরই বা অত কি কাগজ সুমন রাখে যে ও না আসলে খুঁজে পাবিনা। এ কয়দিন তো ও ঠিকমতো আসেই নি... খুঁজে দেখ তুই যেমন রেখেছিলি তেমনটাই হয়তো পড়ে আছে," নির্মলা বললেন।

"নেই আমি খুঁজেছি পুরো টেবিল।"

শ্রাবণ অধৈর্য হয়ে উত্তর দিলো। মাকে কি বলা যায় যে কাগজ নয়, সকাল থেকে উঠে শান্তি নামের জিনিসটা ও খুঁজে পাচ্ছেনা। সেদিন রাগ করে দু'চার কথা কি বলেছে ও আর অমনি মেয়ের রাগ হয়েছে। জন্মের স্বার্থপরের স্বার্থপর.... সেই অতটুকুন থেকে যে শ্রাবণ ওকে রোজ পড়ায় কি সুন্দর সেটা  বেমালুম ভুলে বসে আছে বেঈমানটা।

" কাউকে  বল সুমনকে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসতে, আমার এখন চুলোর কাছ থেকে নড়ার কায়দা নেই।"

"হুমম.."

কাজের মেয়েটাকে  ওবাড়ি যেয়ে সুমনকে ডেকে নিয়ে আসতে বললো শ্রাবণ।

"একটা কথা... সন্ধ্যার পর আজ বাড়ি থাকিস। দিপ্তী বলে মেয়েটার মামা আজ আসছে রাতে তোকে দেখতে।"

"হাহ...  এবার মনে হচ্ছে তোমরা আমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বে মা।"

"তা নয়তো কি... বুড়ো দাদু হয়ে বিয়ে করবি বুঝি।"

"মা আমার বয়স কিন্তু মোটেই অনেক বেশি নয়... তোমরাই শুধু  দাদু দাদু করতে থাকো। জানো  আমার অনেক বন্ধুরাই এখনো ভালো কোন চাকরি পায়নি পাশ করার পরে। "

"রক্ষে করো তোমার এসব ফিরিস্তি শোনার আমার সময় নেই। বড় হয়েছো, ভালো আয় করছো এখন বিয়ে করে সংসারী হও, আমরাও একটু নাতি নাতনীর মুখ দেখি। "

"তো দেখো না... দাদার বাচ্চা তো হচ্ছেই কয়দিনের মধ্যে, খামোখাই আমাকে নিয়ে টানাটানি কেনো? "

মা আর ছেলের কথার ফাঁকেই কাজের মেয়েটা ও বাড়ি ঘুরে এসে জানালো সুমন এখনো  বাসায় ফিরে আসেনি। সামনের কোন গলিতে ওর বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে। সেখানে নাকি ওই বান্ধবীর মামার কাছে একসাথে তিন - চারজন মিলে ব্যাচ করে পড়ছে সুমনরা।

"ওহ... তাহলে আর কি, খুব ভালো কথা," অস্পষ্ট  স্বরে কথাগুলো বলেই সেখান থেকে চলে এলো শ্রাবণ। কথাটা শুনে কেমন হতভম্ব হয়ে গেছে ও। কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগলো শ্রাবণের, সুমন অন্য কারো কাছে পড়তে গেছে ওকে না বলেই।

প্রথমে কথাটা শ্রাবনের কেবল কান দিয়েই ভিতরে ঢুকেছিলো কিন্তু সেটার প্রতিফলনটা মাথা অব্দি পৌছুতে সময় লাগলো আরো কয়েক মিনিট। এরপর কেমন নিঃস্ব মানুষের মতো বিছানার কোনায় বসে পড়লো।

সুমো কার কাছে... কি পড়ছে? আর কেন পড়ছে? শ্রাবণ বকেছে বলেই পড়তে চলে যেতে হবে যার তার কাছে.. একবার ওর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন পরলো না সুমোর। কিন্তু এটাও ঠিক যে সুমনকে সেদিন শ্রাবণ নিজেই বলেছিলো সমীর মামাকে সাথে নিয়ে কোনও কোচিং এ ভর্তি হয়ে যেতে।

কিন্তু সেটাতো শ্রাবণ রাগের মাথায় অভিমান করে বলেছিলো... তাই বলে সুমন সত্যি সত্যি আরেকজনের কাছে পড়তে চলে যাবে। এতে যে শ্রাবণের অপমান হলো এটা একবারও ভাবলো না ও।

আর সুমো এখন বড় হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা তো কেবল শরীরে, বুদ্ধিতে তো একেবারে বেয়াক্কলের বেয়াক্কল। গর্দভটার নিজের তো কোন জ্ঞান বুদ্ধি নাই, দেখা গেলো যার কাছে পড়তে যাচ্ছে সে লোক ভালো না... তখন!

শ্রাবণের অস্থিরতা চরমে উঠলো। এক্ষুনি কি ফোন দিবে ও? কিন্তু পড়ার মাঝখানে ফোন ধরলে যদি ওই মাস্টার ব্যাটা সুমোকে বকে। তার চেয়ে বরং  বাড়ি আসলে সুমোকে ডেকে সব শুনবে ও। কিন্তু কি শুনবে শ্রাবণ...  সুমো কেন ওর কাছে না পড়ে বান্ধবীর মামার কাছে পড়তে গেলো? আর এই মামাটাই বা  হুট করে ম্যাজিকের মতো জুটল কি করে....  অসহ্য রকম এক অস্থিরতা যেন ঘোড়দৌড় করাতে লাগলো শ্রাবণকে।

..................................

"এই সুমো তুই এখানটায় অমন করে টান দিস কেন রে? " চারু, সুমনের খাতার অঙ্কের ফলাফলের শেষের লম্বা টানটা দেখে জিজ্ঞেস করলো।

চারুর প্রশ্নে নিজের খাতার দিকে তাকালো সুমন, তারপর হেসে ফেললো। ওর এই বদ অভ্যাসের জন্য প্রায় প্রতিদিনই কম বেশি শ্রাবনদার হাতে বকা খায় সুমন। কিছু লিখেই লম্বা এক টান দেয় ও নিজের অজান্তেই।

কিন্তু গত তিনদিন ধরে চারুর মামা আদিত্যর কাছে পড়ছে ওরা চার বান্ধবী মিলে.. তাতে একবারও বকা খায়নি সুমন এখনো।

চারুর মামা আদিত্য পড়াটা বেশ ভালোই বোঝায়, একদম শান্ত ধরনের মানুষ আদিত্য আর ভীষন হাসিখুশিও, কোন কিছুতেই বোধহয় তেমন বিরক্ত হয় না।

কিন্তু সুমন থেকে থেকে আনমনা হয়ে যায়। বেশিদিন হয়নি হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছে ও কিন্তু মনে হচ্ছে কতোদিন শ্রাবণদার বকাটা শুনে না ও... বড্ড মন কেমন কেমন করছে কিন্তু শ্রাবণদা যদি ওর মনের চোরাগলির রাস্তাটা চিনে ফেলে তখন...  না, না সুমন কিছুতেই অমন কোন খারাপ কাজ আর কোনদিনও করবে না। কি বিচ্ছিরি একটা ইচ্ছা হচ্ছিলো ওর সেদিন... সেই ভয়েই তো শ্রাবনদার ঘরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সুমন।

চলবে........

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro