Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৪১


শ্রাবন আর লাবণ্যর বিয়ের কার্ডটা যত্ন করে তুলে রাখলো সুমন ড্রইংরুমের বইয়ের আলমারিতে। শ্রাবন আজ নিজে এসেছিলো ওদের সবাইকে বিয়েতে দাওয়াত করতে। বিয়ের পরেই দুই সপ্তাহের জন্য সুইজারল্যান্ডে যাবে সে বউ নিয়ে, এসে হয়তো আর দেখা নাও হতে পারে মঞ্জুদের  সাথে আর এই মুহূর্তে তো সে ভারী ব্যাস্ত। বদ্দা খাবার দায়িত্বে তাই শ্রাবনকেই ছোটাছুটি করতে হচ্ছে নিজের বিয়ের নিমন্ত্রন করতে, মাঝে মাঝে অবশ্য নির্মলা সাথে যাচ্ছেন ছেলের। বৌভাতে তো বটেই, বিয়েতেও ওদের সবাইকে অবশ্যই যেতে হবে একথা বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেলো শ্রাবণ।

এতোকাল পরে মঞ্জু এবার সত্যি একটু চিন্তায় পড়লেন। শ্রাবণের বিয়েতে কি উপহার দেওয়া যায়? এতোকাল না হয় সমীরের অজুহাতে একদম সস্তা কিছু দিতেন, কিন্তু এখন?

শান্তনুর বিয়েতে একসেট গ্লাস আর একটা জগ দিয়েছিলেন কাচের। কিন্তু এখন আদিত্যকে সাথে নিয়ে অমন গ্লাস, প্লেট নিয়ে কি করে যান? জামাইর একটা মান সম্মান তো আছে। অনেক ভেবে ভেবে শেষ পর্যন্ত সুমনকে ডাকলেন মঞ্জু।

" বলছি দাওয়াতের কার্ড তো দেখলি, শ্রাবণের বিয়েতে কি দেয়া যায় বল দেখি? "

মঞ্জুমামীর এমন প্রশ্নে সুমন সত্যি বিপাকে পড়লো। সত্যি তো  বাড়ি ভর্তি লোক নিয়ে দাওয়াতে গেলে আজকের দিনে ভালো কিছু উপহার তো নিতেই হবে।

" ভালো কিছুই তো দেয়া উচিত মামী। সবাইকে যখন  বলেছে তাও আবার দু'দুটো অনুষ্ঠানে,  একদম সস্তা কিছু দিলে মান সম্মানটা আমাদের চেয়ে আদিত্যর বেশি যাবে।"

মঞ্জুও এটাই ভাবছিলেন। তাই আর ইতস্তত না করে সুমনকে বলে বসলেন, "এখন তো আমার হাতে পয়সা কড়ি তেমন নেই... বাড়িটা বেচলেই তবে হাতে টাকা আসবে। বলছি তোর একজোড়া পাতলা কানের ঝুমকো উঠনো ছিলনা, ওটা দিবি? পরে আমি টাকা পেয়েই তোকে ঠিক ওরকম এক জোড়া বানিয়ে এনে দেব।"

সুমন, মঞ্জুর কথা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো। তারপর হাসিমুখে বললো, "আচ্ছা। শ্রাবনদার বিয়েতে আমারো ভালো একটা কিছু দেয়ার ইচ্ছে ছিলো তার বউকে। এটাই বেশ হবে, আর আমাকে নতুন করে বানিয়ে দিতে হবেনা মামী। ও বাড়িতে আদিত্যর মান সম্মান রক্ষা হলেই  আমার  হলো, তা না হলে ওসব গয়না পরার আমার সময় কই? "

সুমনের সম্মতিতে মঞ্জু যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বহুকাল পরে সুমনের উপর আজ মঞ্জু মন থেকে খুশি হলেন।

.

.

.

শ্রাবণের মাথাটা যন্ত্রনায় ফেটে যাচ্ছিলো। চা, কফি কোন কিছুতেই সে জ্বালা একটুও কমছিলো না। কপালের দু"পাশের রগ চেপে ধরে তাই মরার মতো পড়ে রইলো শ্রাবণ ইজিচেয়ারে।

আজ শ্রাবণ মনে মনে নিজেকে বেশ গুছিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো শত্রুর দুর্গে আঘাত হানবে বলে, কিন্তু গিয়ে কি দেখলো? সুমন দিব্যি আদিত্যর কোলে ছেলেকে বুঝিয়ে দিয়ে ওকে নাস্তা দিতে ছুটছে... আর হাজির হলো এক বাটি পায়েশ আর বড়ো এক টুকরো পিজার কোন নিয়ে। শ্রাবণের ইচ্ছে হচ্ছিলো পুরো ট্রেটা সুমনের মুখের উপর ছুঁড়ে মারে, কিন্তু নেহায়েত ওদের ড্রয়ইরুমে আদিত্যর সামনে বসা ছিলো বলে আর কোন দুর্ঘটনা আজ ঘটেনি। কিন্তু ছেলে যখন আদিত্যর কোলে বসে ' বাবাই, মাল কাতে দাবো ' বলছিলো, শ্রাবণের তখন মনে হচ্ছিলো ওর ফুসফুসের বাতাস সব বেরিয়ে চিরদিনের জন্য শূন্য হয়ে গিয়েছে, বহুকষ্টে বাটির পায়েশের এক দুই চামচ  মুখে দিয়েছিলো ... মুখটা ততক্ষনে এক অদ্ভুত বিষাদে ভরে গিয়েছে।

.................................

লাবন্যর বুকটা ঢিপ ঢিপ করছিলো আনন্দে। আজ ওর বিয়ে! সত্যি সত্যি শ্রাবণ আজ বর সেজে ওকে  নিতে এসেছে। ওই তো লোকজন সব বর আসার আনন্দে গেটের কাছে ছুটে গেছে। শব্দের তালে পুরো এলাকা এখন বিয়ের আসর... কত রকম গান বাজনা আর হৈ হুল্লোড়, আশেপাশের বাড়ির লোকেরাও পর্দা সরিয়ে বর দেখতে ব্যাস্ত। লাবণ্যর ইচ্ছে হচ্ছিলো আনন্দে কাঁদে।

" অ্যাই খবরদার যদি কাঁদিস লাবণ্য, তোর শাশুড়ির কাছে যেয়ে একদম বদনাম করে আসবো ছিঁচকাদুনে বলে," লাবণ্যর কানটা একটু টেনে দিলো মৌমিতা। কি সুন্দর লাগছে আজ লাবণ্যকে।

মৌমিতার কথায় আজ একটুও রাগ হলোনা লাবণ্যর। স্বপ্নের রাজকুমার ঘোড়ায় চড়ে চলে এসেছে যে ওকে নিতে, আজ ও স্বপ্নপুরী যাবে। আর কারুর উপর রাগ নেই লাবণ্যর, আজ ও সব ব্যাথা ভুলে গেছে।

বসে থেকে থেকে মেজাজ বিগরাচ্ছে শ্রাবণের। লাবণ্যর বাবা দুনিয়ার সব  মানুষ এনে পরিচয় করাচ্ছেন নতুন জামাইয়ের সাথে,মিথ্যা হাসি হাসতে হাসতে মুখ বাঁকা হয়ে গেলো ওর।
ওয়াশরুমের কথা বলে এই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অমিয়কে ধরলো শ্রাবণ, সত্যি ওর একটু খোলা বাতাস দরকার।

আসলে দেখতে না চাইলেও দু' একবার মায়ের আশেপাশে বেঈমানটাকে দেখেছে ও। সেই এক ঢং ধরে মায়ের সাথে একই গাড়িতে করে এসেছে। কত বড়ো নির্লজ্জের নির্লজ্জ, ওর বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছে।

"তুই একটু বোস, আমি দেখছি, " অমিয় লাবণ্যদের বাড়ির কার  সাথে যেন আলাপ করলো। সে শ্রাবনকে উপরে নিয়ে চললো ওয়াশরুম দেখাতে। মাঝ সিড়িতে যেয়ে শ্রাবণ আর উঠতে পারছিলনা। সুমন ছেলে কোলে করে নিচে নামছে সিড়ি বেয়ে। এতো ঘেন্না করে ওকে দেখলে আজকাল শ্রাবণের যে পাশ ঘেষে নেমে যাবে মনে হলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা ওর জন্য কঠিন হয়ে দাড়ায়, মন হয় সুমনের আশেপাশের বাতাসটাও ওর জন্য বিষাক্ত। মুখ শক্ত করে সুমনকে পাশ কাটিয়ে উপরে ওঠার জন্য তৈরি হলো শ্রাবণ।

"একটু কথা ছিলো... " ক্ষীন একটা শব্দ এসে আছড়ে পড়লো শ্রাবণের কানের দেয়ালে।

শ্রাবণের মনে হলো ও ভুল শুনছে, কিন্তু দ্বিতীয়বার  একই কন্ঠস্বর শুনে থমকে দাড়াতে বাধ্য হলো ও। বিস্ময়ের সাথে জানতে চাইলো,

" কথা, আমার সাথে? "

" হ্যাঁ, একটা জরুরি বিষয়ে কথা ছিলো। " সুমন কাতর চোখে তাকালো।

"আমার সাথে আবার কি জরুরি কথা, " কথাটা বলেই শ্রাবন না দাড়িয়ে যতোটা সম্ভব দ্রুত সিড়ি ভাঙ্গতে লাগলো।

"বাড়ি বিক্রির বিষয়টা তুমি যদি একটু দেখতে তবে তাড়াতাড়ি ওটা বিক্রি করে দেয়া যেতো," সুমন মরিয়া হয়ে শেষ চেষ্টা করলো।

সুমনের আস্পর্ধায় শ্রাবণ এখন হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য। মনে মনে বললো বাড়ি বিক্রি তো দূর, তোর ওই ভিটে তে একটা কাকও আমি বসতে দেবনা, দেখি তোর আদিত্য ওটা কি করে বেচে।

সুমন প্রশ্নের কোন উত্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে নিচে নেমে গেলো।

...........…....…........

শ্রাবণ দুইবার করে মুখ ধুয়েও নিজের মেজাজ ঠান্ডা করতে পারছিলনা, মনে হচ্ছিলো দুনিয়ার সব বিষ ওর মনের মধ্যে।

কুল শ্রাবণ কুল, আজ থেকে সুমো বলে কেউ নেই তোর জীবনে। যা আছে তার সবটাই লাবণ্য। লাবণ্যকে নিয়ে সুখী হতে চেষ্টা কর, তাতে বরং লাইফে শান্তি আসবে। ওই  বেহায়া, লোভী মেয়েটা শুধু অকৃতজ্ঞ নয় বরং চরম কৃতঘ্ন ধরনের একটা মানুষ। দেখছিস না এতোদিন বাদে দেখা অথচ কি বলতে চাইলো? আর বললোই যখন, কেমন আছো সেটা তো জিজ্ঞেস করা যেতো নাকি? কিন্তু ওই যে নিজের ফায়দা বুঝে খালি, আসলে কতোটা লোভী এই মেয়ে তাতো আগেই বোঝা গেছে।

বেশ অনেকটা সময় গড়িয়ে গেল।

ওয়াশরুম থেকে বের নিচে নামতে গিয়ে কোনার রুম থেকে খিলখিল করে ভেসে আসা হাসির আওয়াজ বিভ্রান্ত করে দিলো শ্রাবণকে। এই ফ্লোরটা মোটামুটি ফাঁকা, লোকজন সব নিচেই। মাঝেমধ্যে কিছু মহিলারা বাচ্চা নিয়ে উঠানামা করছে ওয়াশরুমে যাচ্ছে বলে  আর রান্নার বড়ো বড়ো হাড়িগুলো তুলে এনে রাখা হচ্ছে এক ঘরে। শ্রাবণ সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়েও আবার থমকে দাড়ালো। ফাঁকা জায়গায় একা হলে যে কেউ বিপদে পড়তে পারে। আসলে হাসির শব্দটা কেমন যেনো, শ্রাবণের কৌতুহল বাড়িয়ে দিলো।

.

.

.

প্রথমে শ্রাবণের কথার কিছুই সুমনের মাথায় ঢুকলোনা। কিন্তু তারচেয়ে বড়ো বিপদ হলো ও কিছুতেই শ্রাবণকে ধরে রাখতে পারছিলনা। শ্রাবণ  পারলে আদিত্যর মুখে আরো দুটো কিল মারে। এতো অসহায় সুমন কোনদিন বোধ করেনি। কান্নায় চোখমুখ ভাসছিলো ওর।

প্রায় সর্বশক্তি দিয়ে এবার সুমন, শ্রাবণের হাত চেপে ধরলো," ওকে মেরো না প্লিজ, ওর কোন দোষ নেই। "

"দোষ নেই মানে! সুমো আমাকে ছাড়। ওর নাক মুখ আজ আমি থেতলে দিবো কালপ্রিট কোথাকার..  খুন করে ফেলবো সোজা।"

" তুমি ওর কিছুই করবে না, ছাড়ো ওকে।"

শ্রাবণের রাগ এবার যেন সাপের মতো ফনা তুললো। সুমো এতোটা অন্ধ আদিত্যর প্রেমে যে চোখের সামনে এসব দেখেও সেগুলো মেনে নিচ্ছে? এতো ভালোবাসা ওর ওই কুকুরটার জন্য।! "

সুমনের প্রতি ঘৃণা আবার দ্বিগুন বেগে জমা হতে লাগলো শ্রাবণের মনে। সুমন সবার সামনে ওকে নিচু দেখাতে বিন্দু মাত্র কুন্ঠা বোধ করেনা অথচ আদিত্যর জন্য কি কেয়ার! ভিতরে ভিতরে কি এক দুর্দমনীয় ব্যাথায় শ্রাবণ ভেঙ্গে যাচ্ছিলো, সুমন এক বারের জন্যও যদি ওকে বুঝতো।

শ্রাবণ আর দাড়ালো না, ঘুরে হাটতে লাগলো। গোল্লায় যাক সুমন আর গোল্লায় যাক ওর বিবাহিত জীবন, শ্রাবণের কি?

" দাড়ান শ্রাবণবাবু, আপনাকে একটা কথা বলতে চাই, " আদিত্য, শ্রাবণের পিছু পিছু সিড়িতে এসে দাড়ালো।

কিন্তু শ্রাবন দাড়ালো না, নামতেই লাগলো। আদিত্যর মতো লম্পটের সাথে ওর কোন কথা নেই।

" আপনি যা দেখেছেন আমরা তার জন্য খুবই লজ্জিত কিন্তু আমরা অন্যায় কিছু করিনি, আপনি বিশ্বাস করুন। "

শ্রাবণের ইচ্ছে হলো পায়ের জুতোটা তুলে আদিত্যর মুখে ছুড়ে মারে, আদিত্যর তো ন্যায় - অন্যায় বোধই নেই দেখা যাচ্ছে, লম্পটের চূড়ান্ত।
আর এর জন্য সুমো... ছি..।

" শ্রাবনবাবু প্রীতি আমার স্ত্রী। "

ঝমঝম শব্দ করে কাচের ঝাড়বাতি ভেঙ্গে পড়লো যেনো। শ্রাবণ পা ফেলতে গিয়েও প্রায় অনেকটা  সময় শূন্যে ঝুলিয়ে রাখলো ডান পা টা। আদিত্য ঠিক কি বললো ঠাহর করতে পারলোনা। ঘুরবোনা ঘুরবোনা করেও একসময় ঘুরেই দাড়ালো শ্রাবণ।

" তার মানে! "

" মানে প্রীতির সাথে আমার বিয়ে হয়েছে, চার বছর হলো। ওর ওয়াশরুমে কাজ ছিলো বলে আমি সাথে এসেছিলাম আর তার মধ্যে ওর কানের দুলের পুশটা গড়িয়ে নিচে...."

" প্রীতির সাথে মানে? " শ্রাবণের মনযোগ তখন কেবল এই কথাটুকুর উপরে, বাকি আর একটা শব্দও ওর মাথায় ঢুকলো না।

প্রীতিও ততক্ষনে আদিত্যর পাশে এসে দাড়িয়েছে। প্রীতির কপালের লম্বা চওড়া সিঁদুরের দিকে এতক্ষনে চোখে পড়লো শ্রাবণের। কিন্তু তাতে সবকিছু পরিস্কার হওয়ার বদলে আরও তালগোল পাকিয়ে গেলো ওর। আদিত্যর সাথে প্রীতির বিয়ে হলে, সুমোর কার সাথে বিয়ে হয়েছে? মা যে বলেছিলো, সুমোর সাথে আদিত্যর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।


কেমন একটা শীত শীত করছে শ্রাবণের। মনে হচ্ছে ও বোর্ড পরীক্ষা দিতে এসেছে, হাত পা সমানে থরথর করে কাঁপছে ওর।

অথচ সুমন ওর সামনে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বসে আছে, পরিস্থিতিটা ভীষন অদ্ভুত।

শ্রাবণ, সুমনকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যেয়েও চুপ হয়ে গেলো। সুমনের শূন্য সিঁথি আর পরনের সাজ পোশাক ততক্ষণে ওকে সব স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছে,
কিন্তু শ্রাবণ কোন কিছুর কোন হিসেব মেলাতে পারছেনা... ঘটনা দুইয়ে, দুইয়ে চার না হয়ে বার বার অঙ্কটা ভুল কেন বলছে?

চলবে........

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro