৪০
"তোরা পারসিও? " মিতুলকে প্যাম্পার্স পরাতে যেয়ে অমিয়র নাকানিচুবানি অবস্থা দেখে, শ্রাবন হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো। মৌমিতা আর অমিয়র মেয়ে মিতুল। আজ তার এক বৎসরের জন্মদিন। তাই তার ড্রেসআপ আজ পরীর মতো, কিন্তু পরীর পাখা তো দূর... জামা কাপড় পরাতেই মৌমিতা আর অমিয়র ঘাম ছুটে যাচ্ছে।
"এতো দাঁত বের করিস না.. বিয়েটা একবার হোক, বাচ্চা তো দূর লাবন্যর প্যারা সামলাতে সামলাতেই তোর জান হালুয়া হবে," অমিয় মেয়েকে এবার কোনমতে হাত মুঠিতে ধরে প্যাম্পার্সটা আটকাতে সমর্থ হলো।
" আমি এসব ফালতু ঝামেলাতে যাবোই না। মায়ের আবদার ছিলো বাবা মারা যাবার পরে সে সংসারের কাজ থেকে অবসর নেবে,সো বিয়ে করতে মত দিয়েছি কিন্তু বাচ্চা কাচ্চা নো ওয়ে, ওসব আমাকে দিয়ে হবেনা," শ্রাবণের কন্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ে।
"আগে বিয়েটা কর, তারপর বাচ্চা কি করে পালতে হয় তাও শিখিয়ে দিবো,"মৌমিতা হাসে। বহু কাঠখর পোড়াতে হয়েছে ওকে আর মাসিমাকে, শ্রাবণকে এই বিয়েতে রাজি করাতে। প্রায় চার বছর হয়ে গেছে সুমনের বিয়ের কিন্তু এই গারলটা এখনও সেই ধরে বসে আছে। তার সুমনের উপর অভিযোগ আর অভিমান মোটেই কমেনি, ওদিকে লাবণ্যও আশা ছাড়েনা। শেষমেশ এবার মাসিমা মরার দোহাই দেয়াতে গড়িমসি করতে করতে কোন রকমে হ্যাঁ বলেছে শ্রাবণ। কিন্তু মৌমিতা কেন যেন দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে পারেনি,কিছু একটা কারন তো ছিলো সুমনের এমন আচরনের যেটা হয়তো ওরা কেউ জানেনা। কিন্তু এখন ওসব পাস্ট টেন্স তাছাড়া লাবণ্যর খুশি মৌমিতার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সবসময়।
মিতুলের জন্মদিনের কেকটা কাটা হলো, সবাই যার যার মতো ফটোসেশনে ব্যাস্ত। মৌমিতা একদম হাওয়ায় উড়ছে মেয়েকে কোলে নিয়ে আর অমিয় ওদের পিছে পিছে। লাবন্য সোফায় বসে ওদের দেখছিলো। কবে ও আর শ্রাবন এমন ব্যাস্ত সময় পার করবে? বিয়ের তারিখটা অবশ্য কাছিয়ে এসেছে এবার সত্যি সত্যি। ভাবতেই দু'গালে ঈষৎ লালিমা ছড়ালো লাবণ্যর। অবশেষে শ্রাবণ বাবু ওর কাছে ধরা দিচ্ছে, তাও আবার স্বেচ্ছায়... ভাবা যায়!
সুজয়কে ঢুকতে দেখে শ্রাবণের খাওয়ার গতিটা স্তিমিত হয়ে এলো। আচ্ছা সুজয় আর ওর মধ্যে আদৌ কোন পার্থক্য আছে কি ? মাঝে মাঝে মনে হয় ওরা দুটোই আসলে শব শুধু বাইরে থেকে সেটা বোঝা যায়না। মাঝে মাঝে শ্রাবণের মনে হয়, এই যে আগুন বুকের ভিতরে অহর্নিশি ধিকি ধিকি করে জ্বলে, তার কিছু স্ফুলিঙ্গের তেজ বড়ো বেশি। সুজয়ের জ্বালাটা বোধহয় তেমন আর ওর নিজেরটা ছাইচাপা আগুন। সুজয়ের ব্যাথায় সবাই মলম দেয় আর ও জ্বলে জ্বলে অঙ্গার।
তবে সুজয়কে লাবন্য কখনো ঠকায়নি, কিন্তু সুমো... উহ এই নাম, এই নামটাই যতো যন্ত্রনার উৎস। একদম নির্মূল করে দিবে, একেবারে সমূলে উপরে ফেলবে সব স্মৃতি। লাবণ্যপ্রভাকে তাই ও স্বীকৃতি দেবে, ওর স্ত্রী, সন্তানের মা... সব। সুমো ওকে দেখাতে চেয়েছে নিজের বড়লোক স্বামী আর তার ক্ষমতার বহর, ঔ দেখিয়ে দেবে সুখী হওয়া কাকে বলে। বৈধতা অবৈধতার দায় যখন সুমোর ছিলো না মেয়ে হয়ে, শ্রাবণেরই বা এতো কি দায় পড়েছে সেটা খুঁচিয়ে উঠাবার? অন্তত মন ভাঙ্গার অপরাধ তো আর ও করেনি।
"আমাকে একটু বাসায় ড্রপ করে দেবে, বাবার এক জায়গায় কাজ ছিলো বলে ড্রাইভারকে ছেড়ে দিয়েছি বিকেলেই," লাবণ্য এসে শ্রাবণের পাশে দাড়াল।
"হমম, আমার খাওয়া প্রায় শেষ। তোমার হলে এখনি বের হতে পারি।"
লাবন্য সাথে সাথে ওর পার্সটা আনতে ছুটলো মৌমিতার রুম থেকে। আসলে সুজয়কে দেখলে ওর ভারী ইরিটেশন হয়। এতো বেহায়া, লাবন্য ডিরেক্ট না করে দেওয়া সত্বেও ওর পিছ ছাড়ে না।
গাড়িতে শ্রাবণের পাশের সীটটা দখল করে বসতেই অদ্ভুত এক অনুভূতিতে ছেয়ে যায় লাবণ্যর মন। চরম অশান্তির পর খুব বেশি শান্তির আভাস পাওয়া গেলে মনটা যেমন চনমনে হয়ে উঠে তেমন। লাবণ্যর খুব ইচ্ছে হয় শ্রাবণের কাঁধে মাথা রাখতে কিন্তু এতো খটখটে ছেলেটা, কবে ওর সাথে একদম সহজ হবে কে জানে? হাতটাও ছুঁতে দেয়না,আজব।
পুরোটা পথ কোন কথা নেই তবুও অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে ছেয়ে থাকলো লাবণ্যর মন। বাড়ির গেটে শ্রাবণের গাড়ির হর্ণ শুনতেই দারোয়ান দরজা খুলে সরে দাড়ালো। শ্রাবণ যে এবাড়ির হবু ছোট জামাই সেটা এখন এবাড়ির সবারই জানা।
লাবণ্য গাড়ি থেকে নামতেই ফোনটা উৎকট ভাবে গুড়গুড় শব্দ করে বাজতে লাগলো শ্রাবণের। স্ক্রীনে তাকাতেই ওর ভ্রু দুটো একটু বাঁকা হলো। অভিজিৎ! এতোদিন বাদে অভিজিৎ কোথা থেকে ফোন করছে ওকে ?
"হ্যালো"
" শ্রাবন "
"হ্যাঁ, বলছি।"
" আমি অভিজিৎ বলছি, আমাকে চিনতে পারছিস,আমরা একসাথে কোচিং করতাম বসুদার কাছে।"
" পারছি, এতোদিন বাদে হঠাত," শ্রাবন জানতে চায়।
"আসলে একটা ইনফরমেশন দরকার ছিলো।"
" কি ব্যাপারে? "
" আসলে একটা বাড়ি বিক্রি হবে, পজিশনটা তোদের বাসার আশপাশে, আমাকে একটু বাড়িটা সম্মন্ধে তথ্য দিতে পারিস। বাড়ির মালিক বীরেন বাবু বোধহয় তোর মতো উকিল ছিলেন, দেখতো ভাই একটু চিনতে পারিস নাকি? "
শ্রাবণের মনে হলো অনেক অনেক দিন আগের কোন কাহিনী, যেখানে এক রাজা ছিল আর ছিলো এক রানী। ভুলেই তো গিয়েছিলো বেশ ওকে, আবার এতোদিন পরে কেন দুঃস্বপ্ন হয়ে আঘাত করতে আসছে সুমন? বীরেন বাবু বলতে তো সুমনের দাদুকেই চেনে ও।
লাবণ্য তখনও গাড়ির দরজা ধরে দাড়িয়ে, শ্রাবন হাতের ইশারায় জানিয়ে দিলো ও জরুরি ফোনে ব্যাস্ত তাই নামতে পারবেনা। লাবণ্য একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে পার্সটা সীট থেকে তুলে নিয়ে সজোরে দরজাটা বন্ধ করে গেটের ভিতরে ঢুকে পড়লো। মেজাজটা মনে হলো ওর গ্যাস বেলুনের মতোই উপরে কেবল উড়ছে আর উড়ছে... শ্রাবন একদম রাস্তার কুকুরের মতো আচরন করে ওর সাথে, এতোদিন হয়ে গেলো তবু লাবন্য, শ্রাবণের মন পেলো না।
.
.
.
.
বাড়িতে ঢুকতে সবচেয়ে বড়ো ধাক্কা খেলো শ্রাবণ। বাসায় কোথাও মাকে খুঁজে পেলনা। এই চার বছরে অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে চৌধুরী বাড়িতে। বাবার অবর্তমানে দাদাই এখন ওদের পারিবারিক ব্যবসাটা পুরোপুরি দেখে, বৌদি দিব্যকে নিয়ে ব্যাস্ত... এ বছরই তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়েছে, বৌদি তাই নিয়ে সর্বদা ব্যাস্ত। শ্রাবণ দুপুরে বাড়ি ফিরে কদাচিত, নির্মলার হাতে তাই এখন অগাধ সময়। রান্নাবারার পরে তাই হয় একটু বই পড়ে বা টিভি দেখে সময় কাটান তিনি।
মাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে জোরে জোরে রাজুকে ডাকতেই উত্তর আসলো, "মা ও বাড়ি গিয়েছেন ছোট দাদাবাবু। "
" ও বাড়ি! সেটা আবার কোথায়? " গায়ের কোটটা অবহেলায় ছুড়ে মারলো শ্রাবন সোফার উপরে, মোজা খুলে জুতোতে ঢোকাতেই হাতটা থেমে গেলো।
" পাশের সুমন দিদিমনিদের বাড়ি, ওরা সব আজ সকাল সকাল এখানে চলে এসেছে।"
শ্রাবন নিশ্চল হয়ে বসে রইলো বিছানায়। সবাই এসেছে! সুমনের বিয়ের পরে কি কারনে জানে না শ্রাবন, তবে প্রীতিরা কেউ আর ফিরে আসেনি এখানে। তারপর থেকে ওই বাড়িতে এক স্কুলের শিক্ষক ভাড়া থাকেন তার পরিবার নিয়ে। এসব তথ্যের বেশিরভাগই অবশ্য সামনের বাড়ির রুমা বৌদির কল্যানে শ্রাবণের কানে এসেছে। সুযোগ পেলে এখনো সুমনের নামে দু'চারটে বিষাক্ত কথা বলতে ভুলেন না তিনি সময় করে কিন্তু শ্রাবন এখন ওসব মন দিয়ে শোনেও না, মনেও রাখার চেষ্টা করেনা। কিন্তু এতোদিন পরে সেই বিষফোঁড়ার আবার ওকে প্যারা দেয়ার শখ হলো কেন সেটাই শ্রাবনকে বেশ করে ভাবাতে লাগলো।
আচ্ছা এতোদিন পরে হিপোক্রেটটার সাথে দেখা হলে কি করা উচিত শ্রাবণের? বেশ অনেক ভেবে ভেবে নিজের বিয়ের কার্ডটা ওর মুখের উপর ছুড়ে মারার শখটা সামলালেও নিজের হাতে দেবার লোভটা কেন যেন সামলাতে পারলনা। কাপড়চোপড় ছেড়ে তাই মায়ের ঘরে যেয়েই বসে রইলো শ্রাবণ খবর শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে।
নির্মলা আজ বহুদিন বাদে একটু শান্তি পেলেন মনে। কতগুলো দিন পরে মেয়েটাকে দেখলেন তিনি, চোখের শান্তি এক আলাদা জিনিস। আগের চেয়ে লম্বায় অনেকটাই বেড়ে গেছে সুমন, চেহারায় চপলতা ছাড়িয়ে গাম্ভীর্যের ছড়াছড়ি, দক্ষহাতে সুমনকে প্রতিবেশীদের চা- নাস্তা পরিবেশন করাতে দেখলেন তিনি সোফার এক কোনে বসে বসে।
.
.
.
"জানিস ছোট, সমীর ঠাকুরপো নেই এ খবরটা শুনে আমিতো কোন কথাই বলতে পারছিলাম না প্রথমে। পরে সুমন তাড়াতাড়ি এসে মাথায় একটু পানি চেপে ধরলো তাই মনে হলো বেঁচে আছি। "
মায়ের মুখে সমীর মামার মৃত্যুর খবর শুনে শ্রাবনেরও চোখ ভিজে এলো। লোকটা বড্ডো সাধাসিধা ধরনের ছিলো, বেঁচে থাকতে আনন্দের চেয়ে কষ্টই বেশি করে গিয়েছেন। অনুজ এখন পাকাপোক্ত ভাবে আমেরিকাতেই থাকে, সামনের বছর এসে তাই মঞ্জুকে নিজের সাথে ওখানেই নিয়ে যেতে চায় সে।
শ্রাবণের একবার মনে হলো তাহলে বীরেন দাদুর কি হবে... কিন্তু পরে নিজেকে সামলে নিলো। কি দরকার ওর আগ বাড়িয়ে কিছু শোনার, যাদের দায়িত্ব তারা যা বুঝে করবে। ওর কি?
কথা প্রসঙ্গে মা ওদের বাড়ির জামাই আদিত্যর কথা তুলতেই দ্রুত উঠে দাঁড়ালো শ্রাবন, যেনো ঘুমে পড়ে যাচ্ছে। নিজের ঘরে ঢুকে শক্ত করে দরজা বন্ধ করলো যেনো স্মৃতিরা চাইলেও আর এ ঘরে ঢুকতে না পারে। সুমো নামের কাউকে ও চিনতো এক সময়, এমনকি চোখ বুঁজেও ওর গন্ধ টের পেতো কিন্তু আজ আর এ নামে কাউকে চেনে না শ্রাবন, চিনতেও চায় না।
"হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে
কুড়ায়ে ঝরা ফুল একেলা আমি
তুমি কেন হায় আসিলে হেথায়
সুখের স্বরগ হইতে নামি ।
চারিদিকে মোর উড়িছে কেবল
শুকানো পাতা মলীণ ফুল দল
বৃথাই সেথা হায় তব আঁখিজল
ছিটাও অবিরল দিবসযামী ।"
- কাজী নজরুল ইসলাম।
চার কি পাঁচ দিন পরের কোন এক দুপুরে কোর্ট ফেরত শ্রাবণের ডাক পড়লো মায়ের ঘরে। শান্তনু তার ম্যানেজারের হাত দিয়ে শ্রাবণের বৌভাতের কার্ডের স্যাম্পল পাঠিয়েছে। কালকের মধ্যেই কার্ড ফাইনাল করার তাগাদা দিয়েছে শান্তনু, পরশু সব ঠিক থাকলে কার্ড শুভ কাজের জন্য ছাপানো শুরু হবে।
শ্রাবন লঘু পায়ে মায়ের ঘরের কাছাকাছি আসতেই খুব পরিচিত একটি মেয়েলি কন্ঠস্বর ওর আপাদমস্তক নাড়িয়ে দিলো। ঠিক কত বছর পর কন্ঠস্বরটা শুনলো ও? পা বাড়াবে কি বাড়াবে না এই দ্বিধায় দুলতে দুলতে অবশেষে... মা ডেকেছে বলে অনিচ্ছা সত্বেও আসলো এমন চেহারা করে ঘরের দরজায় জুতো জোড়া খুললো শ্রাবন। ঢুকেই এক পাশের সোফায় যেয়ে বসলো। সুমন একভাবে নিচে বসে যে কাজ করছিলো সেটাই করতে লাগলো। যেন শ্রাবণের আসা না আসায় ওর কিছু আসে যায় না,হাত একই গতিতে চলছে।
স্রষ্টা জানেন, হয়তো আড়চোখে দু'পক্ষই একজন আরেকজনকে দেখার সর্বোচ্চে চেষ্টা করছিলো কিন্তু আচরনে তাদের মধ্যকার অবস্থানের তাপমাত্রা ছিলো মাইনাস চার ডিগ্রী হিমাঙ্কেরও উপরে।
শেষ পর্যন্ত নির্মলার প্রশ্নে বরফখণ্ড থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় এলো শ্রাবন, তবু জিভ এতো আড়ষ্ট যে কথা বলতেই কষ্ট হচ্ছিল ওর। আসলে ভিতরে গলে একাকার আর বাইরে জমে পাহাড়, দুটোকে এক করতে যেয়ে শ্রাবণের অবস্থা জলবৎ তরলং।
অথচ বেঈমানটা দেখো দিব্যি মায়ের পাশে বসে কাপড়ের স্তুপ তৈরি করছে। আহা... সুমোর পরনের কাপড়গুলো দেখে ভিতরে ভিতরে হেসে সারা হলো শ্রাবন। যত্তোসব ঢঙ... এখনও কি দারুন নাটক করে বেড়ায় সুমো ম্যাডাম, সহানুভতি কাড়বার অনবদ্য সব আইডিয়া বুঝি এর ঝুড়িতে স্টক করাই থাকে... হিপোক্রেটের চুড়ান্ত। এতো বড়োলোক স্বামী আর তার বউ কি একটা কাপড় পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগুলো যে সুমনের ওর মায়ের কাছ থেকে সহানুভূতি পাওয়ার এক একটা রাস্তা সেটা এখন বেশ ভালই জানে শ্রাবণ।
" হ্যাঁরে ছোট তুই একটা কার্ড বেছে ঠিক করতো দেখি... আমার তো সবগুলোই এতো সুন্দর লাগছে যে মনে হচ্ছে সবগুলোই একখানা করে ছাপতে দেই, আমার ছোট বাবাটার বিয়ে বলে কথা।"
নির্মলার মুখটা আনন্দে চকচক করছে, শ্রাবণের এতো কষ্টের মধ্যে কষ্টটা আরো যেন কয়কগুন বাড়লো। মা জানবেও না এগুলো ওর আনন্দের নয় বরঞ্চ সব ওর মরনের পরোয়ানা জারি করতে হাজির হয়েছে আর বিচারক হলো ওই... ওপাশের ঘাড় গুঁজে বসে থাকা লিকলিকে শয়তান ডাইনিটা। ওর গলাটা একবার মন মতো চেপে ধরতে পারলে বেশ হতো, মরার আগে কিছুটা শান্তি করে মরতে পারতো শ্রাবণ।
"সুমনকেও জিজ্ঞেস করলাম, ওই পাগলেরও একই উত্তর। বলে বড়মা সবগুলো পঞ্চাশটা করে ছাপালে কেমন হয়? " নির্মলা বলে দুলে দুলে হাসতে লাগলেন।
শ্রাবণের মনে হলো এতক্ষণে যুতসই প্রশ্ন পেয়েছে ও। উত্তরটাও তাই বেশ সময় নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে দিতে লাগলো সে......
" কিছু কিছু মানুষ আছে মা কোনভাবেই একটাতে সন্তুষ্ট হয়না, তা সে যতো ভালো জিনিসই হোক না কেন। জিনিস কেনার আগে তাই তারা হাজারোবার বাজারে যায়, ভালোটা দেখে বাছাই করে। ভাব এমন ধরে যে মনে হয় এই বুঝি তার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস, দোকানিও এদের মন ঠিক ভালো বুঝে উঠতে পারে না কিন্তু নেয়ার সময় এরা পাশ কাটিয়ে ঠিক অন্য একটা জিনিস নিয়ে সটকে পরে।"
" তা বাপু জিনিস পছন্দ না হলে খারাপ জিনিস কিনে ঠকবে কেন? আমি তো বরং বাজার যাচাই করে জিনিস কেনার পক্ষে," নির্মলা ছেলেকে নিজের রায় জানান মন খুলে, এতো প্যাঁচঘোচ তার আসে না।
"আমিও পক্ষে মা, তবে প্রতিটা জিনিসেরই একটা ন্যূনতম মূল্য আছে, ব্যবহার করে ভালো না লাগলেই তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়া উচিত না।"
কথাটা বলে শ্রাবন আর দাড়ায় না, হনহন করে বের হয়ে আসে ও ঘর থেকে।
চলবে.......
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro