Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

৩৬

শ্রাবণ এসেছিলো শুনে সুমনের মনের মধ্যে মাদল বাজতে লাগলো। গা ঝিমঝিম করে ওঠে , শ্বাস আটকে আসতে চায়... এসেছিলো তবে নিষ্ঠুরটা অবশেষে।

প্রতিদিনই শ্রাবণ এখন সেই সকাল করে কাজের জন্য বের হয় আর সেই সন্ধ্যে করে বাড়ি ফেরে। সুমন তক্কে তক্কে থাকে, বাবু নেমে এলেই টুক করে গলা বাড়িয়ে একবার জানালা দিয়ে দেখে নেয় গাড়িতে ওঠার আগেই, এতে সুমনের স্বস্তি হয় কিন্তু জ্বালা কমেনা, চোখের জলও বাঁধা মানেনা।

কিন্তু আজ যে সে নিজে থেকে এসেছিলো ওকে খুঁজতে, নতুন চাঁদের মতো একফালি সরু হাসি ঝিকমিক করে উঠে সুমনের ঠোঁটের কোণে।অনেক করে নিজেকে বোঝায় যে ফোন করবেনা, করা মানা ... কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের লোভের কাছে হার মানে। বেহায়া মন আস্তে করে নিজের পক্ষ হয়ে ওকালতি করে, "তুই কোথায় যাচ্ছিস সুমো... সেই তো এসেছিলো রাগ ভেঙ্গে। আজ না বললে কিন্তু ভারী অন্যায় হবে বেচারার সাথে।"

সুমনের বুকের মধ্যে আনন্দের একটা হালকা ঢেউ উঠে কিন্তু তারপরই আবার সেই থাপ্পরটা কানে বাজে।

" কিন্তু সেদিনো তো সে নিজে থেকেই এসেছিলো? " মন চোখ রাঙ্গায়।

" ও... ও সেদিন আমার মাথার ঠিক ছিলোনা আর অমন রাক্ষসের মতো করছিলো সে, আমার হাত আতকা উঠে গিয়েছিলো," মিনমিন করে বলে সুমন। জানে ধোপে টিকবেনা এই যুক্তি, শ্রাবন বরাবরই অমন বুনো ছিলো।

" তা হলে আরকি... কর্মফল ভোগো, " মন ভেঙচি কাটে।

" ভুগছি নাতো কি... কবে থেকে মুখটা ভালো করে দেখিনা, কথাও শুনিনা। সারারাত ঘুমের মধ্যে ছটফট করি আর কাঁদি। আরও কত শাস্তি পাওনা আছে বলতো?" সুমন এবার সত্যি রেগে ওঠে। এক থাপ্পর দিলোই না হয়, ও সারাজীবন কম থাপ্পর খেয়েছে যে একটাতেই এতো রাগ হতে হবে?

" তা হলে আর কি শর্ত ভাঙ্গো।" কেউ উত্তরটা দিয়েই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

সুমন আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা করেনা, হাত গুলো ফড়িং এর মতো নাচতে থাকে পরিচিতো নামটা জুড়ে। ছুঁয়ে দিয়ে তবে শান্তি, অনেকদিন পর ফোনটা কানে চেপে ধরে মনে হয়, হাত বাড়ালেই প্রিয় মানুষটার গায়ের ঘ্রান পাওয়া যাবে।

আধো ঘুমে শ্রাবনের একবার দুবার মনে হলো ফোনটা ওর বালিশের নিচে বাজছে কিন্তু এখন ওর প্রচুর ঘুম দরকার। আর পারছে না এই যন্ত্রনা সহ্য করতে, ঘরে ফিরেই তাই আগে ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিয়েছে।

ফোন দিয়ে মনটা খারাপ হওয়া ছাড়া আর কিছুই হলোনা সুমনের। দশ বারের পর জেদ চাপলো, আরও দশবার টানা কল করলো কিন্তু ফলাফল শূন্য। মনটা এবার সত্যি ভার হয়ে এলো, আজ যে ওর শ্রাবণের সাথে কথা বলা সত্যি জরুরি ছিল।

.

.

.

মঞ্জু আজ ভারী ব্যাস্ত, আদিত্য কি করে, কোন জাদুবলে যে তার অমন জাঁদরেল শ্বশুরটাকে পটালো, কে জানে? তবে যেভাবেই হোক এতে অনুজ তার বউ নিয়ে আজ বাড়ি আসার অনুমতি পেয়েছে, মঞ্জু এতেই অনেক খুশি। সাথে মনোদিদি যা বললো সেটা হলে বাড়ির সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে, ব্যাস্তসমস্ত হয়ে মঞ্জু দ্রুত রান্নাঘরে যেয়ে ঢোকে।

আজ আর কোন কিছুর তোয়াক্কা করেনা সুমন। প্রয়োজন আজ ওর মাথার উপর দিয়ে উঠে যাচ্ছে, পারলে এক ছুটে শ্রাবণের সামনে গিয়ে দাড়ায় সুমন।

সুমনকে এরকম হাঁফাতে হাঁফাতে ছুটে আসতে দেখে থামতে বাধ্য হয় শ্রাবণ। আদিত্যর সাথে বিয়ের খবরটা সুমন এখনি দিবে নাকি ওকে?

" কি ব্যাপার? "

সুমনের শ্বাস টানতে রীতিমতো কষ্ট হয়। আজকাল প্রায়ই এমন হচ্ছে।

" একটা কথা ছিলো " সুমনের বুকটা মুচড়ে ওঠে, কতদিন পর সামনে থেকে দেখলো মানুষটাকে। এত্তো রাগ, ওর কপালে যে কি আছে কে জানে?

সুমনের কথায় গা গুলিয়ে আসে শ্রাবণের। মেয়ে মানুষ এতো নির্লজ্জ হয়!

" বল, কি বলবি।"

"এখানে না তুমি বাড়িতে চলো।"

সুমন আজ নারকেলের তক্তি বানিয়েছে মামীর সাথে বসে, অনুজদার বৌ লিলিয়ান আজ বাড়ি আসবে বলে। সুমন সেখান থেকে নিজের নাম করে তিনটে সরিয়ে রেখেছে শ্রাবণের জন্যে।

" এখন আমার সময় হবেনা সুমন, বাড়ি ফিরি তখন কথা হবে।"

সুমন নামটা কেমন পেরেক পোতার মতো কানে এসে লাগলো সুমনের। শ্রাবণতো তাহলে এখনও ওর উপরে রেগে আছে! কিন্তু প্রীতিযে বললো ওকে খুঁজতে এসেছিলো সে।

"আর কিছু? আমার লেইট হচ্ছে। " শ্রাবন হাত উল্টে নিজের ঘড়ি দেখে।

শ্রাবণের রুক্ষ স্বরে আরও খানিকটা টালমাটাল হয় সুমন। কিন্তু আজ যে ওর কথা বলা সত্যি বড় প্রয়োজন। মরিয়া হয়ে শেষ চেষ্টা করে সুমন," একটা জরুরি কথা শোনারো সময় হবে না ? "

" জরুরি! আমার সাথে আবার কি এতো জরুরি ? "

" বারে তাহলে কার সাথে থাকবে?"

" কেন আদিত্যর নাম ভুলে গেছিস নাকি, আজকাল তো তোদের চলা ফেরা, খাওয়া -দাওয়া, ঘোরাঘুরি সব একসাথেই হয়। জরুরি কথাগুলোও সেখানে বলাই ভালো।"

সুমন বুঝতে পারে কাল বাইরে গিয়েছিলো আদিত্যর সাথে, সেটা শুনেই ক্ষেপেছে। কিন্তু ওর যে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার আছে শ্রাবনকে।

"আমি কাল ইচ্ছে করে যাইনি, মামী নিয়ে গিয়েছিলো সাথে করে।"

" ওফফ... সরি সরি, সেজন্যই বুঝি আজকাল আমার বাড়িতে যাবার পথটা মাড়ানোও হয়না? "

শ্রাবনের উত্তপ্ত মস্তিষ্কে আজ সুন্দর স্বাভাবিক কথাগুলোও বিবর্ন আর কুৎসিত লাগছে, সুমনের কৈফিয়ত তাই শ্রাবনের কাছে একটা অজুহাত ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। একটানে গাড়ির দরজাটা খুলে সোজা গাড়িতে উঠে বসে সে সুমনকে কোন রকম কথা বলার সুযোগ না দিয়ে , তারপর সোজা অফিসের দিকে রওনা হয়।

"সুমন! "

সমীরের ডাক শুনে দ্রুত চোখের পানিটা মুছে নেয় সুমন। ওর কষ্টের ভার আসলে কেউ বইতে চায় না, শ্রাবনও না। ভীষন একদলা অভিমান পাকিয়ে উঠে সুমনের বুকের মধ্যে। এক ফোঁটা বিশ্বাস করেনা ওকে বর্বর, পাষন্ড ডাকাতটা।

"এখানে পথের মাঝে দাড়িয়ে কি করছিসরে মা ?"

" কিছু না, শ্রাবনদাকে বলছিলাম বড়মাকে একটু বাসায় নিয়ে আসতে।"

" ওহ... আচ্ছা আচ্ছা। তা ভালো করে বলেছিস তো? বৌদি না এলে তো অনুষ্ঠানই সম্পূর্ণ হবে না।"

" হমম.. বলেছি।"

" আচ্ছা, আমি অফিস থেকে আসার সময় আর একবার দেখা করার চেষ্টা করবো। এই অনুজটার জন্য তো মান সম্মান আর কিছুই বাকী রইলো না, পরিচিতো মানুষদের সাথে কথা বলতেও আজকাল লজ্জা লাগে।"

সুমন নিরুত্তর হয়ে দাড়িয়ে থাকে। অনুজদার কারন, কি অন্য কিছু কিন্তু ওর জীবনের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা স্পষ্ট দেখতে পায় সুমন।

নিজের কেবিনে এসে বসার পরেও শ্রাবণের মেজাজ ঠান্ডা হলো না। সুমনের এতো বড় সাহস... নিজের মুখে এসেছে আদিত্যর সাথে ওর বিয়ের খবর শ্রাবনকে শোনাতে। শ্রাবণের ইচ্ছে হচ্ছিলো জায়গাতেই গলা টিপে সুমনকে মেরে ফেলে কিন্তু পরে মনে হয়েছে, কোন একজন বেঈমানের জন্য ও কেন নিজের সুন্দর জীবনটা নষ্ট করবে? সুমনের যদি আদিত্যতে এতোই মুগ্ধতা কাজ করে তাহলে যাক, করুক তাকে বিয়ে। শ্রাবনও ওর জন্য আর বসে থেকে নিজের জীবন নষ্ট করবে না। আজই ও বাবার কথামতো জাপানে যাওয়ার প্লেনের টিকিট কাটবে।

.........................................

"সুমনদি শুনেছো? "

"কিরে? "

"তোমার শাশুড়ি আসছে আজ তোমায় দেখতে। "

গায়ে দেয়ার কাঁথাটা ভাজ করছিলো সুমন। প্রীতির কথা শুনে সেটা হাত থেকে খসে সোজা নিচে গিয়ে পড়ে।

"প্রীতি তুই কার কাছে শুনলি একথা? " সুমন কাঁদো কাঁদো সুরে জানতে চায়।

" মনোরমা মাসি এসেছেন, ঠাকুরদার ঘরে তোমার আর আদিত্যদার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে, কত লোক নেমতন্ন করবে, মেনুতে কি থাকবে সব। "

" প্রীতি তুই বিছানাটা একটু গোছাবি আমি একটু ও বাড়ি থেকে আসছি।"

"ও বাড়ি যাবে! কাকাবাবু যদি কিছু বলে,আজকাল ও বাড়ির দিকে তাকাতেও আমার ভয় করে।"

প্রীতির কথায় সুমনের বুকটাও যে কেঁপে উঠলো না তা নয়, কিন্তু এখন তো যে কোন ভাবে শ্রাবণের সাথে ওর কথা বলতে হবে। মান সম্মান ওর এখন এমনিতেই শিকেয় উঠছে, বাইরের লোকের চাইতে না হয় ঘরের লোকের কাছেই অপমানিতো হলো।

" তবুও একবার যাবো.... বড়মা, শ্রাবনদা তো সবটা জানেনা," গলা বুঁজে আসে সুমনের। কি কপাল ওর।

"হ্যাঁ বড়মাকে তো বাবা- মায়ের যেয়ে বলা উচিত। "

"সে উচিত কিন্তু আমি আগে যেয়ে বলে আসি। না হলে বড়মা আমার সাথে কথাই বলবে না কোনদিন আর শ্রাবনদার যে রাগ, বাব্বা।"

" আচ্ছা আচ্ছা তাহলে যাও কিন্তু শ্রাবনদাকে মনে হয় পাবেনা।"

" পাবনা....কেন! ... এতক্ষণে তো বাড়ি চলে আসার কথা।"

" বাড়ি এসে আবার এয়ারপোর্টে চলে যেতে দেখলাম যে।"

" এয়ারপোর্টে মানে? "

" জার্মান না জাপান কোথায় যেন গেলো শ্রাবনদা,বড়মা দেখলাম অনেক কিছু বলে দিলো যাবার সময়। দুটো বড়ো বড়ো সুটকেস নিলো সাথে,অনেকদিন থাকবে বোধহয় সেখনে শ্রাবনদা," প্রীতি বললো।

সুমনের আর এক পাও এগুতে ইচ্ছে হলোনা। ওর আর কোথাও যাওয়ার নেই, মানুষের যদি ইচ্ছেমৃত্যু হতো তবে আজ ওর সেটা হয়ে গেলো। এরপর বোধহয় দেহটাকে শুধু শুধু বয়ে বেড়াতে হবে ওকে অনন্তকাল।

আকাশের সীমানাটা যখন চোখের দেখার বাইরেও কেবল বাড়তে থাকে, শ্রাবন তখন একমনে পাশের দৃশ্যগুলো দেখছিলো। জানালার একদম পাশের সিটটা ওর বলে সূর্যের আলোর তীব্রতা হঠাত হঠাত খুব বেড়ে যাচ্ছিলো আবার কমছিলে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে চোখ বন্ধ করলেই কেন যেন সুমোর মুখটা ভেসে উঠছে বার বার । তাতে সুমোর চোখের কাজলটা একটুখানি লেপ্টে আছে, বেনীগুলো দুমড়ে মুচড়ে গোল হয়ে উঠেছে , চোখদুটো জলে ভরা কেবল সিঁথির কাছের সেই লাল ফোটা সিঁদুরটুকু অমনি আছে। শ্রাবণ অজান্তেই ঢোক গিললো, এখনতো সুমোর হাসি হাসি মুখটা ওর দেখার কথা, তার বদলে এমন মলিন চেহারাটাই কেন ওর বার বার মনে আসছে?

চলবে.....

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro