৩৩
শ্রাবণ কলেজগেটে দাড়িয়ে সুমনকে খুঁজে না পেয়ে, দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতেই.. দারোয়ান বললো, সুমন বাড়ি চলে গিয়েছে একটু আগেই।
শ্রাবণের রাগ এবার বাড়ার বদলে কমলো। সুমো ওকে এড়াচ্ছে কেনো? শ্রাবণ ওকে এমন কিছুকি বলেছে যে সুমো রাগ হয়ে গিয়েছে। আচ্ছা হয়তো এমন হলোই কিন্তু তাতে ওর সাথে সুমোর দেখা না করার কি হলো? নাকি এটা শ্রাবণের শাস্তি।
হমম.. সেটাই মনে হয়। দগদগে ঘায়ের মধ্যে একটু শান্তির প্রলেপ পড়লো শ্রাবণের। সুমোটা একটা পাগল... কতক্ষন ওর হাত থেকে পালিয়ে বাঁচবে, সারাদিন বাইরে বাইরে থাকলেও রাতে তো সে ফিরবে না কি?
হাসতে হাসতে গাড়ির কাছে ফিরে আসলো শ্রাবণ। শেষ চেষ্টার মতো আর একবার সুমনকে ফোনে পাওয়ার চেষ্টা কিন্তু লাভ হলোনা। রিং বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেলো।
"তোকে হাতে পেয়ে নেই একবার, কাঁচা চিবিয়ে খাবো," গজগজ করতে করতে ঠোঁট বেকাত্যাড়া করে গাড়ির দরজাটা খুলতে যাচ্ছিলো শ্রাবণ, কিন্তু কিছু একটা ওর চোখের কোনে আটকে গেলো। একটা গাড়ি সাঁই করে ওর সামনে দিয়ে বামে মোড় ঘুরলো। শ্রাবন এতো অবাক বহুকাল হয়নি। সুমো, আদিত্যর সাথে গাড়িতে বসা... দুজনে একসাথে কোথাও যাচ্ছে।
গাড়িটা ওর দৃষ্টিসীমা থেকে হারিয়ে যাবার পরও শ্রাবণ অনেকটা সময় হতবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলো। সুমো, আদিত্যর সঙ্গে কেন? ভিতরে ভিতরে একটা প্রলয় শুরু হলো, আগুন বলকে উঠতে লাগলো।
" সুমো...., " রাগে অন্ধ হয়ে এবার দাঁতে দাঁত ঘষলো শ্রাবণ।
সুমনের মাথা তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো আদিত্যর কথায়। বীরেন বাবু অসুস্থ, বাড়িতে ডাক্তার এসেছে। সুমন বইয়ের ব্যাগটা দুহাতে চেপে ধরেও কাঁপুনি থামাতে পারছিলনা।
দাদু ছাড়া আসলে ওর সত্যিকারের আপন বলে কেউ নেই আর। দাদুর কিছু হলে এই এতোবড় পৃথিবীতে সুমন কার কাছে গিয়ে দাড়াবে?
সুমনের সবচেয়ে রাগ হলো অনুজদার উপর। স্বার্থপরের মতো পরিবারের কারো কথা চিন্তা না করে একা একা বিদেশি এক ইংরেজ বিয়ে করে নিয়ে এসেছে সে। সেই নিয়ে ওদের বাড়িতে তোলপাড় তো হচ্ছেই সাথে পাড়ার সব বাড়িতে ছি ছি পড়ে গেছে।
সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে, সুমন সেদিন শান্তনুদার ছেলেটাকে দেখতে যাচ্ছিলো চৌধুরী বাড়ি, কিন্তু রামনাথ ওকে মাঝ সিরিতে দাড় করিয়ে পরিস্কার বলে দিয়েছে, ও যেন আর শ্রাবণের সাথে মেলামেশা না করে। অনুজদা বিধর্মী বিয়ে করে ভিন্ন জাতের হয়ে গেছে, চৌধুরী বাড়ির কেউ আর ওদের সাথে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নয়।
সুমন সেদিন থেকে অনেকবার শ্রাবণকে কথাগুলো বলতে চেয়েছে। কিন্তু শ্রাবন ওর ফোন ঠিকমতো ধরছিলোই না, ধরলেও কোনমতে দায়সারাভাবে কথা বলছিলো। সুমনও তাই আর জোর করেনি।
কিন্তু গত পরশু কাকাবাবু নিজেই সুমনকে তার ঘরে ডেকেছিলেন। সুমন বুঝতেই পারছিলনা মানা করার পর কাকাবাবু ওকে নিজেই কেন আবার চৌধুরী বাড়ি যেতে বলেছেন। ভয়ে সুমনের হাত পা সেধিয়ে যাচ্ছিলো, রামনাথের সামনে। কিন্তু রামনাথের কথা শুনে ও ভয় পাওয়া তো বটেই, নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গিয়েছিলে। রামনাথ কিভাবে ওদের মন্দিরে বিয়ের খবর জেনে গিয়েছেন কে জানে?
সুমন বোকার মতো দাড়িয়ে কেবল রামনাথের কথা শুনছিলো। রামনাথ ওকে কড়াভাবে শ্রাবণের জীবন থেকে সরে যেতে বলেছে। সাথে এটাও বলেছে," কটা টাকার জন্যই তো এসব করেছো.... ঠিক আছে টাকা দেবো কিন্তু শ্রাবণের জীবন থেকে চিরদিনের জন্য সরে যাবে। "
সুমন প্রথমে শুধু শুনেছে। রামনাথ ওদের বিয়ের খবর জেনে ফেলেছে শুনে প্রথমে ভয়ও পেয়েছে। কিন্তু টাকার জন্য বিয়ে করেছে! সেই প্রথম সুমনের ভিতরে একটা আগুন জ্বলে উঠেছিলো। শ্রাবণের কাছ থেকে সরে যাবে... তাউ আবার চিরদিনের জন্য। তখন প্রথম সুমন শান্ত গলায় উত্তর দিয়েছিলো যে, " আমি আপনার ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকবো কিন্তু সে আমার স্বামী। সে ডাকলে আমি তার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য।"
সুমন উত্তর দিবে একথা রামনাথের স্বপ্নেরও বাইরে। রাগে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো সে।
" স্বামী! কিসের স্বামী.... ওরকম চুরি করে একা একা নিজেরা যা ইচ্ছা করলেই কি বিয়ে হয় নাকি?"
সুমনের আস্পর্ধা দেখে রাগে কাঁপছিলেন রামনাথ।
" যা ইচ্ছে তো করিনি আর আপনার ছেলে সজ্ঞানে আমার কপালে সিঁদুর দিয়েছে, আপনি না মানলেই তো সব মিথ্যে হয়ে যাবে না? "
"সিঁদুর পরালেই বা কি? রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে? প্রমান কই যে মন্দিরে বিয়ে হয়েছিলো? "
রামনাথের গলায় চ্যালেঞ্জ।
সুমন বাকশূন্য হয়ে তাকিয়ে রইলো। প্রমান.. কিসের প্রমান দিবে ও? ওরা স্বামী- স্ত্রী সেটার প্রমান দেয়া লাগবে ওকে পুরো দুনিয়ার কাছে! সুমন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলনা। বুঝতে পারছিলো চারদিক অন্ধকার করে ঝড় আসছে ওর জীবনে। প্রিয় মুখটা তাতে হারিয়ে যাবার ভয় সুমনকে ক্রমশ বিহ্বল করে তুলছিলো।
সুমনের অন্ধকার মুখ দেখে রামনাথ একটু একটু করে ভরসা পাচ্ছিলেন।
" আমার কথা শোন সুমন। তোমার বয়স এখনো অল্প, অযথা শ্রাবণের সাথে জড়িয়ে নিজের জীবনটাকে জটিল করে তুলোনা। তোমার মামাকে বলে যে কোন ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে ফেলো, ভালো থাকবে। "
খসখস করে একটা চেক লিখে, সুমনের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন রামনাথ। সাথে আবারো সতর্ক করেছিলেন, শ্রাবনের থেকে দূরে থাকতে। শ্রাবণ চাইলেও যেন সুমন নিজে থেকে কোন রকম যোগাযোগে না রাখে।"
সুমন ঝাপসা চোখে রামনাথের কার্যকলাপ দেখছিলো। শেষের কথাগুলো রামনাথ মোটেও সহজ সুরে শুভাকাঙ্ক্ষীর মতো বলেননি, রীতিমতো হুমকি দিচ্ছিলেন। সুমনেরও আর কোন কথা বলার রুচি হয়নি। নিজের ছেলের বিয়ে করা বউকে যে অন্য পুরুষ দেখে বিয়ে করতে বলে, তার সাথে কথা বলার প্রবৃত্তি সুমনের আর ছিলোনা। বাড়ি ফেরার পথে কেবল এটাই মাথার মধ্যে ঘুরছিলো যে শ্রাবন দেশে ফিরে এলে ও তাকে কি জবাব দিবে? কি করে ওর কাছে আসা ফিরাবে?
"সুমন!"
"উমম...."
"আমরা তোমাদের বাসায় চলে এসেছি।"
"ধন্যবাদ আদিত্য... আ.. আমি ভিতরে যাই।"
"আমিও আসছি।"
সুমন আর আদিত্য যখন ঘরে ঢুকলো, বীরেন বাবু তখন বিপদ কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেন। ডাক্তার চলে গেলেন।
সমীর, অনুজ আর তার বউকে বীরেন বাবুর ঘরে আসতে সম্পূর্ন নিষেধ করে দিয়েছেন। অনুজ বাবার বকাবকিতে বউ নিয়ে হোটেলে গিয়ে উঠেছে আর সেই ক্ষোভে মঞ্জু রান্না খাওয়া সব ছেড়েছেন।
সুমন গিয়ে দাদুর মাথার কাছে বসলো।
বীরেন বাবুর অবস্থা ভালো নয়। আদিত্য কাছে যেয়ে বসতেই তিনি আদিত্যর দিকে ভেজা চোখে তাকিয়ে রইলেন।
শ্রাবণ বাড়ি এসে গুম হয়ে বসেছিলো। সুস্থ কোন চিন্তা ওর মাথায় আসছিলনা। সুমনকে আদিত্যর সাথে দেখে ওর বিদঘুটে চিন্তা গুলো একেক সময় একেক রূপ নিচ্ছে। কিন্তু মন মানছেনা... ওর সুমো ফাঁকি দিয়ে আদিত্যর হয় কি করে... সুমোতো ওকে ভালোবাসে।
কিন্তু নিজের কথাটাই যেন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে ওর কাছে।
ভালোবাসে! সত্যিই ভালোবাসেতো? নাকি এতোদিন অভিনয় করেছে? কিন্তু সুমোকে ও এতোটুকু থেকে চেনে.... সেই চেনাকি তাহলে ভুল ছিলো?
অজস্র চিন্তা কিলবিল করে ওর মাথার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়াতে থাকে বিষধর সাপের মতো।
"শ্রাবণ! "
নির্মলা শ্রাবনকে এমন বিদ্ধ্যস্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে অবাক হলেন। ছেলেটা এসেই কোথায় বাইরে ছুটলো আর এখন আবার এমন উস্কোখুস্কো চেহারায় করে শুয়ে আছে।
মাকে দেখে শ্রাবন উঠে বসলো, চোখের কোন আলতো করে মুছে নিলো। দুঃখরা সব আজ একসাথে মিছিল শুরু করে দিয়েছে, বাইরে আসতে ওরা আজ বদ্ধ পরিপক্ব।
" কিরে এমন করে শুয়ে আছিস কেন? এসেই বাইরে ছুটলি আর এখন না খেয়ে শুয়ে আছিস। "
" খিদে নেই, লাগলে খাবো।"
" খিদে নেই! বাইরে কিছু খেয়েছিস বুঝি? আমি আরও তোর জন্য মাংস রাঁধলাম। "
মাংস... শ্রাবণের গলা দিয়ে এখন একফোঁটা জলও ঢুকবেনা। মাথাটা মনে হলো ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে ওর।
" তাহলে তুই এক্ষুনি তোর বাবা বাড়ি আসার আগে একটু সুমনদের বাড়ি ঘুরে আয়।"
সুমন নামটা শুনতেই মেজাজ আবার খিচড়ে গেলো শ্রাবণের। ঝাঁজিয়ে মাকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু তার আগেই নির্মলার কথায় থমকে গেল ও, বোকার মতো মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।
"কে অসুস্থ?"
" বীরেন কাকাবাবু। তুই এক্ষুনি একবার যা দেখি। "
শ্রাবন কোনমতে পায়ে স্যান্ডেল গলিয়েই প্রীতিদের বাড়ি ছুটলো। সুমো তাহলে এ জন্য আদিত্যর সাথে বাড়ি ফিরেছে! আর ও কি সব উল্টাপাল্টা ভাবছিলো। এই গাধা বউটা ওকে কোনদিনও শান্তিতে থাকতে দিবেনা।
সুমন রান্না শেষ করে এসে দেখে আদিত্য তখনও বসা। দাদু ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ায় ঘুমাচ্ছে.. সমীর আর আদিত্য কথা বলছে।
"মামাবাবু.... "
সুমনের পা থেকে মাথা অব্দি কেঁপে উঠলো। কতদিন পর শুনলো স্বরটা এতো স্পষ্ট করে। আস্তে আস্তে পিছনে ফিরে তাকালো সুমন। শ্রাবন সত্যি এসেছে, সুমনের ইচ্ছা হচ্ছিলো দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিন্তু সেটা সম্ভব না। হাতটা মুঠি করে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো সুমন শোকেসের একপাশটা ধরে।
"আরে শ্রাবন এসো এসো.. কি সৌভাগ্য.. আমি তো মনে করেছিলাম তোমরা আর আমাদের সাথে কোন সম্পর্কই রাখবে না বাবা। এসো.. "
নিজের চেয়ারটা খালি করে বিছানার একপাশে চেপে বসলেন সমীর।
শ্রাবণ বীরেনবাবুর খবর নেয়ার ফাঁকে সুমনকে দেখছিলো। অনেক শুকিয়ে গেছে সুমন আর সেটা যে বিভিন্ন রকম টেনশনে সেটা বুঝতে কষ্ট হয়নি ওর। রাগে দাঁত কিড়মিড় করছিলো ওর। গাধী, উল্লুক, ফালতু একটা মেয়ে কোথাকার। কোথ থেকে একগাদা বাজে বাজে ঢং শিখেছে আর সেগুলো ওর উপরে এপ্লাই করে এই শয়তান মেয়েটা।
" সুমন যাতো মা, শ্রাবন আর আদিত্যর জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা কর। এক কাজ কর ভাতই দে।"
" আদিত্যবাবুর খাবার টেবিলে দেয়া হয়েছে কিন্তু আর কেউ খাবে তাতো জানা ছিলোনা। তাই বসানো হয়নি," সুমন স্পষ্ট কাটা কাটা স্বরে বললো।
সুমনের কথায় সমীর লজ্জা পেয়ে বোকার মতো হাসলেন," ওহ, আসলে বুঝলে শ্রাবণ তোমার মামী, অনুজ হোটেলে যেয়ে ওঠায় সন্ন্যাস নিয়েছেন। আমিতো সেই সকালে দুমুঠো খেয়ে অফিসে গিয়েছিলাম আর সেই সন্ধ্যায় খাবো, তুমি বাবা হালকা চা নাস্তাই তাহলে খাও।"
সমীরকে বিপাকে পড়তে দেখে আদিত্য তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, "আমি বরং বাসায় যেয়ে খাই। সেই সকালে বেড়িয়েছি... মনোদিদি দুশ্চিন্তা করবে।"
শ্রাবন, সুমনকে দেখছিলো। সুমো ইচ্ছে করে ওকে অপমান করতে চাইছে কেন ওর মাথায় এলো না। খাবার নেই এটা ওকে আস্তে করে বলা যেতো, খাবার খেতে তো এ বাড়ি আসেনি ও।
" আমি মাত্রই খেয়ে এলাম সমীর মামা, এখন আর এক দানা ভাত ওতে ঢুকবেনা। আপনারা বরং খান আমি ততক্ষন দাদুর কাছে বসি।"
আদিত্য যখন খাবার ঘরে গেলো, সমীরের সাথে সাথে সুমনও চলে গেলো। শ্রাবন অনেকটা সময় অনাহুতোর মতো বসে রইলো। বুঝতে বাকি রইলো না যে, সুমো একদম জেনেবুঝে ওকে অবহেলা করছে।
বের হয়ে যাবার সময় কি মনে করে আবার সুমনের ঘরের দিকে তাকাতেই রোখ চাপলো শ্রাবণের। নিঃশব্দে সুমনের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো ঘরের।
সুমন ও ঘর থেকে এসে কেবল মাত্র খোঁপাটা খুলছিলো, হ্যাচকা টানে শ্রাবনের বুকের উপরে যেয়ে পড়তেই ভয় পেয়ে গেলো ও।
"এসব কি হচ্ছে.. তু.. তুমি এঘরে কেন এসেছো? " দূরে ঠেলার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ব্যার্থ হলো সুমন। গলা ভেঙ্গে যাচ্ছে আবেগে।
কিন্তু কথার উত্তর দেয়া দূরে থাক উল্টো সুমনের থুতনি চেপে ধরে একভাবে তাকিয়ে রইলো শ্রাবণ। সুমনের মুখটা যেনো চোখ দিয়ে গিলছে।
"ছাড়ো, ব্যাথা পাচ্ছি। " কাঁকিয়ে উঠলো সুমন।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। ছেড়ে দেয়া দূরে থাক সেকেন্ডের মধ্যে সুমনের ঠোঁট দুটোর উপর নিজের পুরু ঠোঁট দুটো চেপে ধরলো শ্রাবন। সুমন টের পেলো আচ্ছন্ন হয়ে উঠছে শরীর চির চেনা স্পর্শে৷ জোর করে নিজেকে ছাড়াতে মরিয়া হলো ও। রামনাথের কথাগুলো কানে বিষের মতো বেজে উটলো তখন। শ্রাবনের জীবন থেকে দূরে থাকো, টাকার জন্য ভদ্র ঘরের ছেলে গুলোকে ফাঁসাও তোমরা। নিজের অজান্তেই কখন হাতটা অবাধ্য হয়ে শ্রাবণের গালের উপর জোরের সাথে যেয়ে পড়লো... সুমন নিজেই ঠিক করে বুঝে উঠতে পারলনা।
সুমন অপমান করছে ইচ্ছে করে সেটা শ্রাবন বুঝতে পেরেছিলো কিন্তু তখনও ওর মনে হচ্ছিলো বউ ওর রাগ হয়ে আছে। কিন্তু এখন যা ঘটলো তাতে শ্রাবণের বিস্ময়ের সীমা রইলো না। সুমন ওর গায়ে হাত তুলতে পারলো!
"আমি বার বার বলছি ছাড়ো অথচ তুমি ছাড়ছিলেনা, অসভ্যর মতো আচরন করছিলে তাই হাত উঠাতে বাধ্য হলাম।"
সুমন যথেষ্ট রূঢ় স্বরে কথাগুলো বললো।
শ্রাবন তখনও নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সুমনের আচরন আজ এতোই অপরিচিতো লাগছিলো যে শ্রাবন সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছিলো।
সুমন তখন মনে মনে লজ্জায় মরে যাচ্ছে। রামনাথের রাগ শ্রাবনের উপর ঢালার কোন মানে হয়না, কিন্তু ও শ্রাবণের থেকে দূরে থাকবে সে কথাও তো ও রামনাথকে দিয়েছে। কিন্তু ওর মন যুক্তি দিলো তুই তো যাসনি, শ্রাবন নিজে তোর কাছে সেধে এসেছে। তাহলে?
" ভাত নেই, তুমি চা টা কিছু খাবে? " নরম গলায় বললো সুমন। বড্ডো বড় ভুল করে ফেলেছে আজ।
"নাহ.. " সুমনকে ছেড়ে দরজা খুললো শ্রাবন। বের হয়ে যাবার সময় অভিমান ভরা গলায় বলে গেলো, " ভোরে প্লেনে ওঠার পর হালকা কিছু খেয়েছিলাম তারপর আর পেটে কিছু পড়েনি।"
সুমনেরও আর তারপর কিছু খাওয়ার রুচি হলোনা। কষ্টগুলো বড় বড় ফোঁটায় বালিশের উপরই গড়িয়ে পড়তে লাগলো। চোখ বন্ধ করলেই মুখখানা ভেসে উঠে অথচ জগত বলে সেটা দেখা ওর বারন।
চলবে.......
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro