২৭
সুমন বুঝতে পারছেনা মৌমিতাদির বিয়েতে ওকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য শ্রাবনদা এতো খেপেছে কেন?
এমনিতে আজ বহুদিন পর বাড়িতে সরিষা ইলিশ রান্না হচ্ছে, তার উপর আবার আদিত্য তার এক বন্ধু সহ রাতে এ বাড়িতে খাবে। মঞ্জু মামী সকাল থেকে বাড়ি মাথায় করে রেখেছে... তার মধ্যে সুমন কি করে বলে যে ও আজ বেড়াতে যাবে?
"বড়মা আজ রাতে বাড়িতে বাইরের লোক খাবে, আমি গেলে যদি মামী রাগ করে? " সুমন যথা। সাধ্য চেষ্টা করতে লাগলো বিয়েটা এড়ানোর কিন্তু বিশেষ লাভ হলো না।
বড়মা জানালো সে মঞ্জুমামীকে সাহায্য করার জন্য পরানের মাকে পাঠিয়ে দিবে। মৌমিতাদি নাকি বারবার করে সুমনকে যেতে বলেছে নিজের বিয়েতে । সুমন কিছুক্ষন গাইগুঁই করে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিলো।
শ্রাবন যখন অফিস শেষে বাসায় ফিরলো তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। নিজের ঘরে পা দিতেই
পিচ ফলের রঙের বাহারি শাড়ি পরা রাজকন্যাকে দেখতে পেয়ে দরজাতেই থমকে দাড়িয়ে গেল সে।
কমলাটে রঙের সূর্যটা হঠাত ওর ঘরে কি করে এলো সেটাই বিরতি নিয়ে দেখলো কিছুক্ষন... টুংটাং চুড়ির শব্দ আর মসৃন শাড়ির আলতো খসখসে শব্দও যে কারও নিস্তব্ধ ঘরকে জীবন্ত করে তুলতে পারে সেটা যেন আবারো অনুভব হলো শ্রাবনের। সুমন ওর কাছে ভর দুপুরের স্নিগ্ধ বাতাস... বাতাসটা তাই বুক ভরে টেনে নিলো ও।
সুমন এমনিতে দেখতে ভারি ফর্সা নয়, উজ্জল শ্যামলা বললে বরং ঠিকঠাক মানায় কিন্তু এই মুহুর্তে সুমনকে দেখে শ্রাবণের হাল বেহাল। কাজল দেয়া চোখ দুটো যেমন তেমন, পিঠের উপর তাল করে রাখা খোঁপার কাঁটার তিনটে বল দেয়া সরু চেইনগুলো যেন হিল্লোল তুলছে ওর ধমনীতে... আগুনের ফুলকি উঠলো... সেই আগুনে রক্ত বলকে উঠতে সময় লাগলো সেকেন্ডেরও এক শতাংশ, আজকাল বেঁচে থাকাটাই যেন দায় হয়ে উঠছে শ্রাবনের।
"কি হয়েছে শ্রাবনদা? "
"কই... কিছু হয়নিতো "
" তবে দরজায় অমন ভাবে দাড়িয়ে রইলে কেন? শরীর খারাপ লাগছে বুঝি? "
শ্রাবণ অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো।
সুমন খুব মনযোগ দিয়ে কিছু একটা আটকানোর চেষ্টা করছে... ওর স্ট্যাম্পবুকটায় নতুন কোন সদস্যের আর্বিভাব ঘটেছে হয়তো... শ্রাবণের মোহগ্রস্থ চোখের চাউনি তাই সুমনের ভিতরে কোন ভাবান্তর ঘটাল না, গভীর মনযোগ দিয়ে সে তার কাজ করে যেতে লাগলো।
শ্রাবনের একবার লোভ হলো, সুমনের কানের ঝুমকোটা একবার নেড়েচেড়ে দেখে... নরম ঠোঁটদুটো আলতো করে একটু আঙ্গুল ছুঁইয়ে দেয় কিন্তু পরে এক রকম জোর করেই নিজেকে সামলে নিলো সে নিজেকে। এই সাতদিনে সুমো ওর সাথে মোটে কথাই বলেনি...এড়িয়ে গেছে বুঝতে পেরে শ্রাবণও আর জোর করেনি।
যা একান্তই নিজের বলে মনে করেছে এতোকাল তার উপরই সে অধিকার খাটিয়েছে, তা না হলে শ্রাবন নিজেও জানে যে ভালোবাসা জোর করে আদায়ের জিনিস নয়। এখন নিজের পক্ষ থেকে যেটুকু ওর বলার ছিলো শ্রাবন বলেছে... বাকি পথটা একসাথে চলতে চাইলে এখন সুমোকেও হাত বাড়াতে হবে। নয়তো সময়ের টানে দুজন দুদিকে ছিটকে যাবে... সময় এসেছে কোন একটা জরুরি সিদ্ধান্ত নেবার।
তাছাড়া সুমোর মত ছাড়া মায়ের কাছেই বা কিভাবে কথা তুলবে শ্রাবণ?
" দাদাবাবু মা আপনাকে খেতে ডাকছে "রাজুর ডাক শুনে ধ্যান ভাঙ্গলো শ্রাবনের।
" আসছি যা.. "
শ্রাবন কাপড় পাল্টে এসেও দেখলো সুমন একমনে তার কাজ করে যাচ্ছে।
" এতো কি করছিস শুনি? "
" কিছু না একটা জিনিস বানানোর চেষ্টা করছি... মৌমিতাদিকে উপহার দিবো "
" উপহার! সে আবার কি? " শ্রাবনের মুখে এতক্ষনে হাসির চমক দেখা গেলো। তারমানে সুমো শেষ পর্যন্ত বিয়েতে যেতে রাজি হয়েছে৷ উহ শান্তি... গত তিনদিন যাবত বলে বলে কোন উত্তর পায়নি শ্রাবণ সুমোর কাছ থেকে।
"উপহার মানে উপহার... বিয়েতে গেলে উপহার দিতে হবেনা বুঝি? " সুমন মাথা না তুলেই জবাব দিলো, ও একটা কাগজের গিফট বক্স বানাচ্ছে মৌমিতাদির জন্য।
শ্রাবন আয়নায় দাড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে আড় চোখে এক নজর দেখার চেষ্টা করলো যে সুমন কি এমন মহার্ঘ বস্তু বানাচ্ছে.. কিন্তু সুমন এতো রেখে ঢেকে তার উপহার বানাচ্ছে যে দূর থেকে দাড়িয়ে সেটা শ্রাবণের পক্ষে দেখা সম্ভব হলো না।
পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে শ্রাবন বলে উঠলো, "উপহার দিতে চাচ্ছিস দে কিন্তু আমি দিলেই তো তোর উপহার দেয়া হয়ে যাবে, আলাদা করে কষ্ট করার কোন মানেই ছিলোনা।"
সুমন শুনেও কোন উত্তর করলনা। শ্রাবনদার যা একটা কিছু মনে হলেই হলো... সুমন ওর মতো করেই মৌমিতাদিকে উপহার দিবে তা সে যতো ঠুনকো হোক না কেন।
.............................................
মৌমিতা আজ কনের সাজেও বারবার ফোন ধরছিলো। আসলে ওর আর অমিয়র বিয়েটা খুবই অল্প সময়ের মধ্যে একদম সাদামাটা ভাবে হচ্ছে.. যে টুকু লোকাচার না করলেই নয় কেবল সেটুকুরই ব্যাবস্থা করা হয়েছে। তাই আত্মীয়- স্বজন বাদে কাছের কিছু বন্ধু- বান্ধবকেই কেবল দাওয়াত করতে পেরেছে ও।
"মৌমি তুই দয়া করে ফোনটা কান থেকে
নামাতো, " লাবন্যর কণ্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়লো।
"ফোনটা আমার দেখলেই মেজাজ খারাপ হচ্ছে। "
লাবণ্যর চেহারা দেখে মৌমিতা এবার সত্যি সত্যি ফোনটা ভয়ে পাশে রেখে দিলো। একটু আগে শ্রাবণের ফোন এসেছিলো ওর কাছে। বিয়েতে শ্রাবন একলা নয় তার সাথে সুমনও আসছে খবরটা কানে যেতেই লাবণ্যর মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মৌমিতারই বা এ বিষয়ে কি করার আছে? বিয়ের দাওয়াত পেয়ে শ্রাবণ প্রথমেই ওর কাছ থেকে সুমনের জন্য দাওয়াত চেয়ে নিয়েছিলো। মৌমিতা অনেক করে চেয়েও শ্রাবনকে না বলতে পারেনি... এখন তাই চেয়ে চেয়ে লাবন্যর রাগ দেখা ছাড়া মৌমিতার আর কিছু করার নেই।
সুমনরা যখন বিয়ে বাড়িতে পৌছালো তখন মৌমিতার হাতে বিয়ের জন্য শাখা পড়ানো হচ্ছে। সুমন পিপাসার্তের মতো কনের কাছে দাড়িয়ে বিয়ের সব আচার অনুষ্ঠান দেখছিলো... এরমধ্যে হঠাত পাশ থেকে নিচু গলার ধমক খেয়ে চেয়ে দেখলো লাবণ্যদি গম্ভীর সুরে ওকে ওখান থেকে বের হয়ে যেতে বলছে। সুমনের একবার মনে হলো বলে যে এখানে ও কেবল একলা ভীড় করে নেই, আরও অনেক লোক এই ঘরে আছে কিন্তু পরে আবার চুপ করে থাকাটাই ও ঠিক মনে করলো।
এদিক সুমনকে মৌমিতার আশে পাশে না পেয়ে শ্রাবন, সুমনের ফোনে বার বার কল করতে লাগলো কিন্তু ওর কোন কলই সুমনের ফোনে ঢুকলো না। বিয়ে বাড়িতে ঢুকে মৌমিতার ঘরে মেয়েদের ঢল দেখে সুমনকে ওখানে রেখেই শ্রাবণ বের হয়ে এসেছিল, কিন্তু এখন সুমনকে সেখানে খুঁজে না পেয়ে ভয়ে ওর বুক কাঁপতে লাগলো ।
" কিরে শ্রাবণ বার বার এতো কোথায় যাচ্ছিস? "
সিড়ির গোড়ায় সুজয়কে দেখতে পেয়ে দাড়িয়ে পড়লো শ্রাবন, " সুমোকে খুঁজছি... ওকে দেখেছিস কোথাও। "
" সুমো.. মানে যে মেয়েটা তোর সাথে এলো "
" হুমমম " দুশ্চিন্তায় শ্রাবণের বুদ্ধি লোপ পাচ্ছিলো।
"ওকে তো মনে হয় অমিয়র বোনের পাশে বসা দেখলাম "
শুনে শ্রাবণ হতবাক, "সেকি আমি ওকে মৌমির ঘরে রেখে এলাম আর... এই মেয়ে, বড্ডো তুরতুরি হয়েছে আজকাল , চেনেনা জানেনা কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, শেষে হারিয়ে গেলে। "
শ্রাবন দ্রুত বরকে যেখানে বসানো হয়েছে সেখানে ছুটলো।
সুমনের খুব কান্না পাচ্ছিলো, শ্রাবনদাকে ও খুঁজেই পাচ্ছে না। ওদিকে ওর ফোনটা হাত থেকে পড়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেলো .. হতভাগাটা এখন চালুও হচ্ছে না।
"কি ব্যাপার সুমো.... তুই ফোন ধরছিস না কেন? "
শ্রাবনদা..! উহ... শ্রাবনদার বাজখাই গলার ধমকও যে এতো সুন্দর জানা ছিলো না সুমনের। বাপরে.... সুমনের জানে পানি এলো এবার।
"আ...আমি তোমাকে খুঁজেই পাচ্ছিলাম না " চোখের পলকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো সুমন।
"তো একটা ফোন দিলেই তো আমি হাজির হতাম "
জলে টলমল দুটো চোখ দেখে শ্রাবণ মুহুর্তেই গলে আইসক্রিম .. ভিতরের আগুনে ছাই চাপা পড়লো।
"ফোনটা বন্ধ হয়ে গেলো যে "
" কি করে... চার্জ দিয়ে আনিস নি? "
"তা নয়.. সিড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাত হাত ফসকে পড়ে গেল, তারপর থেকে আর চলছে না, " মিনমিন করে বলে উঠলো সুমন, জানে এবার দু ঘা পরতে পারে ফোন ভাঙ্গার অপরাধে।
কিন্তু সুমনের আজ কপাল ভালো, শ্রাবন হাসতে জানতে চাইলো, " খুব ভালো... তা মৌমির ঘর থেকে এখানে আসতে তোকে কে বলেছিলো পন্ডিতি করে। আমি এ পর্যন্ত কত বার ও ঘরে তোকে খুঁজে এসেছি তুই জানিস? "
এতো মন খারাপের মধ্যেও শ্রাবণের এই জেরা করাটা সুমনের খুব ভালো লাগলো। এই যে শ্রাবনদা ওকে খুব করে শাসন করছে, ওকে খুঁজে না পেয়ে রাগ হচ্ছে... এটা সুমন খুব করে চায়। কি যেন এক সময় হয়তো এটুকুর অভাবেই ও মরে কাঠ হয়ে যাবে... সুমন চায়না শ্রাবনদা আর কাউকে এমন করে বকুক, এই বকাগুলো শুধু ওর একার হয়ে থেকে যাক।
" অ্যাই তুই কি আজকাল দিবাস্বপ্ন দেখিস নাকি... হাবার মতো খালি খালি হাসছিস কেন? " শ্রাবন চট করে সুমনের নাকটা টেনে দিলো।
" কোথায় হাসছি... আর হাসবো না তো কি বিয়ে বাড়ি এসে গাল ফুলিয়ে রাখবো? "
" তোর যা মুখের চেহারা তাতে গাল ফুলো থাকলেই ঠিক লাগে "
" শ্রাবনদা..." রেগে উঠলো সুমন, খালি যত্তোসব ইয়ে...
" আস্তে.. তুই দয়া করে আমায় শ্রাবনদা বলা বন্ধ করবি এবার, নিজের বউয়ের মুখে দাদা শুনতে শুনতে আমার কানদুটো পচে যাচ্ছে।"
সুমন মুহুর্তের জন্য মরে গেলো... লজ্জায় মরে গেলো.. আরেকবার শুনতে ভারি লোভ হচ্ছে কিন্তু শ্রাবনদাকে সেটা বলা যাবেনা একদম।
" যাও আবার তুমি শয়তানি শুরু করে দিয়েছো, " সুমন ঠোঁট ফোলালো।
" তারমানে কি... তোর কাছে আমার মালা পড়ানোটা ফালতু বলে মনে হয়েছে? কিন্তু আমি কিন্তু মোটেই শয়তানি করছি না সুমো.. সত্যি তখন তোকেই বিয়ে করে নিয়েছি। "
"আ.. আমার না বড্ডো ক্ষুধা পেয়েছে শ্রাবনদা, কিছু খাবার ব্যাবস্থা করোনা প্লিজ "
শ্রাবণের খুব জেদ হলো, মনে হলো যে সুমনের বসার চেয়ারটা এক লাথি দিয়ে ভাঙ্গে কিন্তু হলঘরে অনেক লোক বসা তাই আর কোন কথা বাড়ালো না, সামনে যেয়ে খাবারের খোঁজ করতে চলে গেলো।
"ওরা অনেক দামী বউ তাইনা শ্রাবনদা? " সুমন বিয়ের মন্ডপের তাকিয়ে জানতে চাইলো। সামনে মৌমিতা আর অমিয়র বিয়ের জন্য সুন্দর করে মন্ডপ সাজানো হয়েছে। তাতে জোরেসোরে বিয়ের আয়োজন চলছে... মৌমিতার বাড়ির লোকজন সবাই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে ছুটোছুটি করছে.. কনেকে পিড়িতে বসানোর জন্য।
" মানে... " শ্রাবন অবাক হয়ে জানতে চাইলো। সুমো ইদানিং খুব অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু প্রশ্ন করে.. শ্রাবণ ঠিক বুঝতে পারে না সেগুলো।
"ওদের জন্য কত সুন্দর বিয়ের শাড়ি, শাখা পলা.. সিঁদুর আরো কত কিছু " সুমন মনমরা সুরে বলে যায়।
এলোমেলো টুকরো টুকরো দুএকটা কথা... কিন্তু তার গভীরতা অনেক, সুমনের আনমনে বলা কথাগুলো শ্রাবনকে নাড়িয়ে দেয় প্রচন্ড ভাবে। সুমো কি তাহলে এ জন্য দুঃখ পাচ্ছে? ওর কাছে কি শুধু এসব শাড়ি চুড়ি এগুলোরই মূল্য আছে, শ্রাবণের মুখের কথার কোন দাম নেই! এই যে শ্রাবন ওকে মনে মনে নিজের বলে মনে করে সেটার কোন গুরুত্ব নেই সুমোর কাছে !
প্রথমে রাগ, তারপর জেদ আর তারপরে অভিমান একে একে সাপের মতো ফনা তুলতে শুরু করলো শ্রাবণের মন জুড়ে। তারমানে কি দাড়ালো... শ্রাবন ঠকবাজ, বিয়ে না করে সুমোকে ঠকানের মতলব করেছে তাই ওসব শাড়ি, চুড়ির ধার ধারেনি ?
" সুমো আয়তো দেখি " শ্রাবন হঠাত সুমনের হাত ধরে টান দেয়।
" এখন! এখনতো মাত্র বিয়ে শুরু হবে শ্রাবনদা " সুমন বিস্মিত।
শ্রাবনদা শুনে এবার মেজাজ তুঙ্গে উঠলো শ্রাবনের, ওর সাথে ফাজলামো করা এখনি ঘুচাবে ও সুমোর। হনহন করে হাটতে লাগলো ও বিয়ের আসর ছেড়ে৷
সুমন বুঝতেই পারলোনা শ্রাবনদার মাথায় হঠাত কিসের ভূত চাপলো... বিয়ে না খেয়েই কেন ওরা আবার বাড়ি চলে যাচ্ছে সেটা শ্রাবনদাই ভালো জানে।
কিন্তু শ্রাবণ গাড়ি যেখানে দাড় করালো সেদিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো সুমন, এ তো মন্দির! বিয়ে ফেলে এই অসময়ে ওরা মন্দিরে কেন এলো?
"চুপ করে করে বসে থাকবি একদম আমি আসছি "
সুমন কেন বলারও সময় পেলো না তার আগেই দুম করে গাড়ির দরজাটা জোরে বন্ধ হয়ে গেলো ওর মুখের উপরে। সুমন জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে শ্রাবন কোথায় গেলো বোঝার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না, অগত্যা বসে অপেক্ষা করা ছাড়া ওর আর কোন উপায় রইলো না।
কিছুক্ষণ পরে শ্রাবন এসে সুমনকে নিয়ে সোজা মন্দিরে গিয়ে ঢুকলো। ওখানে ঢুকে সুমন যা দেখলো তার জন্য ও মোটেই প্রস্তুত ছিলো না... মন্দিরে কারো বিয়ের আয়োজন চলছে।
" এ..এগুলো কি? "
"তোর শাড়ি, শাখা পলা... "
" মানে? "
" মানে তুই দামী বউ হতে চাস... তার বন্দোবস্ত হচ্ছে "
" শ্রাবনদা তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? "
" হ্যা..কারন তোর মালা বদলে হবে না... শাখা পলা, সিঁদুরেও হবেনা... তোর আয়োজন করে বিয়ে চাই,তাই তো? তো ঠিক আছে তাই সই... আমি মাকে নিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে এসে সেটাও না হয় করে দেখাবো, " শ্রাবনের গলার সুরে ঝড়ের আভাস।
সুমন হা করে তাকিয়ে রইলো.. শ্রাবনদার ভিতর কিছু একটা ভর করেছে.. কি সব আজব আজব কাজ করছে সে একের পর এক।
" শ্রাবনদা শোন বাড়ি চলো... আমার কিছুই চাইনা। তুমি কেবল দাদুর কাছে আমার হাতটা চেয়ে নিয়ো আর বড়মা আর কাকাবাবুর অনুমতি নিয়ো আর কোন আয়োজনই চাইনা।'
কিন্তু শ্রাবনের ভিতরে আজ রাক্ষস ভর করেছে.. গায়ের রক্ত গুমড়ে গুমড়ে মরছে .. আজ তাকে থামায় সাধ্যি কার।
চলবে......
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro