Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

২৬


"কি হলো ওরকম বাঘের মাসির মতো চেয়ে আছিস কেন তুই? "

সুমনের হঠাত ভীষন রাগ হলো, শ্রাবনদা শয়তানি করতে করতে আজকাল মাত্রা হারিয়ে ফেলছে। অন্য সময় যেমন তেমন... কিন্তু বিয়ে নিয়েও কেউ শয়তানি করে! কথা নেই বার্তা নেই দুম করে মালা পরিয়ে দিলো,তাও আবার এখন লগ্ন চলছে.. সুমন ভেবে পেলো না.. শ্রাবনদার সত্যি বিয়ে হলে নতুন বৌদি এসে বউয়ের কর্তব্য সব পালন করবে নিশ্চই কিন্তু ও না মানলে কি শ্রাবনদার ক্ষতি হয়ে যাবে ? কিন্তু ও তো আর সত্যি বউ না.. খালি মালা পরালেই কি বউ হয়.. শাখা নেই সিঁদুর নেই.. সাত পাকে ঘোরা নেই।

সুমনকে বাস্তবিক অর্থেই চিন্তিত দেখালো।

"যাও একটু দেখার মতো লাগছিলো একটু আগে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সিয়ামিজ বেড়ালের নানি.. চোখ দুটো ঠিক শাঁকচুন্নির মতো... কি অতো ভাবছিস শুনি? " শ্রাবন হাসতে হাসতে সুমনের খোপাটা ধরে আলগোছে টান দিতেই, সুমনের চুলগুলো সারা পিঠ জুড়ে খেলে বেড়াতে লাগলো।

সুমনের এখন মেজাজ সত্যি খারাপ.. চট করে মালাটা খুলে শ্রাবণের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
" এটা প্রীতি তোমায় দিতে বলেছিলো... ।"

কিন্তু শ্রাবন মালাটা না নিয়ে উল্টো নিজের হাতদুটো বুকের উপর আড়াআড়ি শক্ত করে বাঁধলো," যে জন্য এটা চেয়েছিলাম সেটা হয়ে গেছে। "

উত্তর তো নয় যেন হুকুম জারি করলেন রাজা মশাই। সুমনের ঘটে ঢুকে না কেন অযথা শ্রাবনদা এমন করে সব পাকায়... ওর সাথে ঝামেলা করে কি সুখ পায় কে জানে, দুনিয়ার মেয়ে দেখে বেড়ায় অথচ একটাকেও বিয়ে করে না। ওকেই বা কত নম্বর গাধা মনে করে সেটাও এক কথা.. কিন্তু
সুমন ঠিকই জানে না যে ওর সাধ্য নেই শ্রাবণের পাশে থাকার, তবুও... শুধু শুধু শ্রাবনদা।

"আমি একটা ভুল করে ফেলেছি.. কিন্তু আমি তো ছোট শ্রাবনদা... তুমি গুরুজন, তোমার কি সেটা নিয়ে তামাশা করা মানায়? " সুমন কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো।

"তামাশা! তামাশা করলাম কখন?" শ্রাবন বিস্মিত।

" নয়? শ্রাবনদা বিয়ে সমানে সমানে হয়... আমার মতো অনাথ, আশ্রিতা.. একজন গলগ্রহের তোমার মতো রাজপুত্রের পাশে কি করে মানায়... আর না লোকে সেটা মানবে? বলবে ঘুঁটেকুড়ানি এসেছে রাজপ্রাসাদ দখল করতে "

শ্রাবন এতোক্ষণ হাসছিলো কিন্তু এবার সুমনের কথায় ওর হাসি মিলিয়ে গেল। এতো মোটেই ছোট বাচ্চাদের মতো অবুঝ কথা নয়, বরঞ্চ বেশ যুক্তিদিয়ে গোছানো কথা।

তাই শ্রাবনও এবার গম্ভীর হলো...

" আজকাল বেশ কথা বলতে শিখে গেছিস সুমো... এতো জানিস তো কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ সেটা কেন চিনতে শিখিস নি? "

সুমন, শ্রাবণের কথার অন্তর্নিহিত অর্থ ঠিক ধরতে পারলনা। এর মধ্যে আবার কিসের ভালো আর কিসের মন্দ? কিন্তু বাইরে যতোই দেখাক ভিতরে ভিতরে সুমন কাঁপছিলো... সত্যিই বুঝি ওরম হয়.. শ্রাবনদা সত্যি কখনো ওর হতে পারে বুঝি! ওগুলো তো কেবল সিনেমা, নাটকে হয়।

শ্রাবন, সুমনের হাত থেকে মালাটা নিয়ে আবার সুমনের গলায় পরিয়ে দিতেই সুমনের চোখদুটো নদীর মতো ছলছল করতে লাগলো, অভিমানে ঠোঁটজোড়া ফুলে ফুলে উঠতে লাগলো।

সুমন কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বিকৃত স্বরে বলে উঠলো, "বার বার এই অত্যাচার করে খুব সুখ হচ্ছে বুঝি... কেন আমাকে এতো ছোট করছো?"

"মোটেই অত্যাচার করছি না, আমার জিনিস খোলা পেয়ে মানুষ যেমন খুশি পরখ করে দেখছিলো... তাই সুযোগ পেয়ে আজ সেই পথটাই আগে বন্ধ করলাম, এতে ছোট করার, কান্নাকাটি করার মতো কিছু হয়নি," শ্রাবন থমথমে সুরে জবাব দিলো।

" মানে? " সুমন অবাক, গরীব বলে শ্রাবনদা ওকে জিনিস ভাবে!

" কোন মানে নেই, তোকে অত বুঝতে হবে না "

" কেন... কেন বুঝতে হবে না, আমি এখন এতোও ছোট না, বুঝুয়ে দিলে সব বুঝতে পারি।"

"তাই.. সব বুঝিস?" সরু চাঁদের মতো একফালি হাসি ঝলকে উঠে দ্রুত মিলিয়ে গেল শ্রাবণের ঠোঁটের কোনে।

"হ্যাঁ... বুঝই তো "

এরপর কথা নেই বার্তা নেই আচমকা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো শ্রাবন, সুমনকে জড়িয়ে ধরে ওর নরম কোমল ঠোঁটের উপর নিজের শুষ্ক খসখসে ঠোঁটজোড়া সজোরে চেপে ধরলো।

সুমন, শ্রাবনের এমন আচরনে বস্তুতো একশ তলা বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়লো কিন্তু ওর মরন হলো না। তবে সুমন পুরোপুরি ভড়কে গেলো। এরকম কিছু কখনো ওর সাথে বাস্তবে হতে পারে সেটা একেতো ওর কল্পনারও অতীত আর তার উপর আবার সেটা যদি হয় স্বয়ং শ্রাবনদা... যাকে হিসেবে সুমন যমের পরেই ভয় পায় তা সে মনে মনে যতোই ও তাকে ভালোবাসুক।

কিন্তু শ্রাবন তখন ভিন্ন জগতের আমোঘ আকর্ষনে ডুবে গিয়েছে। প্রিয়তমার অধরসুধা পান করার যে তীব্র ইচ্ছা এতোদিন ধরে একটু একটু করে সে নিজের ভিতরে লালন করছিলো... সেটা এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্তের সুযোগে মহীরুহর মতো ডালপালা ছড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো শ্রাবন সমস্তটাই কেবল ওর নিজের আবেগ দিয়ে একতরফা ভাবে বিবেচনা করলো... অপরপক্ষ কি ভাবে পুরো বিষয়টা নিবে বা নিলো সেটা তখন ওর চিন্তারও বাইরে।

কয়েকটা মুহুর্ত সুমনের মনে হলো পৃথিবী স্থির আর ও বন বন করে ঘুরছে কিন্তু তারপরই অনুভব হলো, না... ও জায়গাতেই আছে কিন্তু ওর চারপাশের পৃথিবী নিজ অক্ষে ষোলশ কিলোমিটারের চাইতে বেশি বেগে ঘুরছে। মাথা ভালো করে ঘুরে উঠার আগেই এরকম অদ্ভুত মুহূর্ত থেকে মুক্তির জন্য সর্বোচ্চ গতিতে আঘাত হানলো সুমন।

শ্রাবন তখন কতটা বেসামাল ছিলো বলা মুশকিল
তবে এরকম অবস্থানে থেকে অতর্কিত আঘাত ওকে দুম করে বাস্তবে ফিরতে বাধ্য করলো।

থাপ্পরটা নিজে অতোটা বলশালী না হলেও শ্রাবণের মনের দেয়ালে তা বেশ জোরেশোরেই আঘাত হানলো।

একেত সুমনকে একান্তই তার নিজের অধিকারের বলেই মনে করে শ্রাবন, তার উপর এরকম রোমাঞ্চকর মুহুর্ত যখন মাথার উপরে চাঁদের আলোর ঢল নেমেছে, গলায় ভালোবাসার সাক্ষী সরূপ রজনীগন্ধার মালা ঝুলছে.. চোখের সাম্রাজ্যে হাজারো ফুটন্ত পদ্মের চাইতেও রক্তিম দুটো ঠোঁটের অভিমান ঝরে পড়ছে.. এমন অবস্থায় নিজেকে ধরে রাখা বড্ডো কঠিন ছিলো শ্রাবনের জন্য। তাই সুমনের ছোট্ট প্রতিরোধটি থামানোর বদলে উল্টো মৌচাকে ঢিল ছোড়ার কাজ করলো। বাঁধা পেয়ে আহত বাঘ আরও বেশি আক্রমনাত্মক হয়ে উঠলো।

সুমন সম্পূর্ণ বুঝে ওঠার আগেই এবার ছাদের চিলেকোঠার দেয়ালে ওকে চেপে ধরলো শ্রাবন।

"বড্ডো ঘেন্না হচ্ছে বুঝি? আমি না হয়ে আদিত্য হলে বোধহয় ভালো লাগতো তাই না? "

সুমন, শ্রাবণের এমন ভয়ঙ্কর রাপের সাথে একেবারেই পরিচিত নয়। ছোটবেলা থেকেই শ্রাবণের কিছুটা শাসন আর কিছুটা স্নেহের সংমিশ্রণেই বড় হয়েছে সে কিন্তু তার কোনটার সাথেই আজকের শ্রাবনের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছিলো না সুমন... এ যেন নতুন কেউ।

শ্রাবন যেন কোন মানুষ নয়, বিষধর সাপের মতোই ফোঁস ফোঁস করছিলো সে। সুমন এবার সত্যি ভয় পেলো।

"তু..তুত.. তুমি এমন কেন করছো শ্রাবনদা? " ভয়ে কান্নার বেগ আরও বাড়লো সুমনের।

"কেন করলাম!.. তোর সাহস হলো কি করে আমার গায়ে হাত তোলার? তোকে আজ জ্যান্ত খেয়ে ফেলবো আমি শয়তান মেয়ে।"

সুমন এবার মাথা নিচু করলো, সত্যিই তো.. ওর এতো সাহস হলো কি করে শ্রাবনদার গায়ে হাত তোলার... অথচ ওই গালে সে প্রতিরাতে কতবার করে চুমু খায়, আর আজ সুযোগ পেয়েও হেলায় হারালো... আর কোনদিন হয়তো গালটা ছুঁয়ে দেখারও সুযোগ হবেনা।

"কি হলো জবাব দিচ্ছিস না কেন? "

"আ.. আমি ইচ্ছে করে করিনি, ভুলে হয়ে গিয়েছে "

সুমনের কান্নায় একটু নরম হলো শ্রাবন। কিন্তু তারপরও সদ্য ভালেবাসা জাহির করা প্রেমিক হৃদয়ের জ্বালাপোড়া তখনও বিদ্যমান। সেখানে ক্রোধের বদলে অভিযোগ আর অনুরাগ তখনও রেশারেশি করে নিজেদের জায়গা দখলের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে... এমন অবস্থায় কাঁপতে থাকা ওষ্ঠপুট আর ভয়ার্ত দুটো চোখ শ্রাবণের মনের অবস্থার চৌদ্দটা বাজালো।

" তুই আজ আদিত্যর সাথে ডিলাক্সের ভিতর ঢুকেছিলি? "

এই রে.. সুমনের হাত পায়ের তালু এবার জং ধরলো। কে ওর সাথে এমন শত্রুতা করলো যে শ্রাবনদার কাছে এই সামান্য খবরটাও চলে এলো। একদিনই মাত্তর ঢুকেছে..

"ও... ও.. আদিত্যবাবু জোর করলো, আমি তো যেতে চাইনি কিন্তু উনি জোর করে খাওয়াবেনই তো আমি কি করবো? " মনে মনে আদিত্যর পিন্ডি চটকালো সুমন.. কি দরকার ছিলো ওকে নিয়ে ডিলাক্সের ঢোকার.. যত্তোসব।

" তাই... আদিত্যবাবু খুব জোর করলো বুঝি? "

" তা নয় তো কি.. আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে ওই ভর দুপুরে বৃষ্টিতে ভিজে রেস্তোরায় ঢুকবো, কিন্তু উনি এতো অনুরোধ করছিলেন , "বাকিটুকু মিনমিন করে বললো সুমন।
" তাই যেতে হলো।"

" হমম.. তারমানে তোর মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ফালুদাটা খেলি তাইতো? "

শ্রাবণের স্বরে জিজ্ঞাসা না বিদ্রূপ ধরতে পারলনা সুমন তবে যাই হোক না কেন সেটা যে বিশেষ সুখকর কিছু নয় সেটা বুঝতে বিশেষ বেগ পেতে হলোনা সুমনের।

সুমন আসলে তখন ওর পায়ের নিচের মাটি খুঁজতে ব্যাস্ত... ফালুদার খবর শ্রাবনদা জানলো কি করে? দোকানের মালিক কি তাহলে শ্রাবনদার বন্ধু? শ্রাবনদাকে কি ও একবার জিজ্ঞেস করবে?

কিন্তু সুমন প্রশ্ন করার আগেই শ্রাবনের হিম শীতল চোখদুটো ফলার মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে এফোড় ওফোড় করতে লাগলো। সুমন উত্তর দিবে না নিজের পতন ঠেকাবে... ভয়ে জিহ্বাটাও যে ওর একচুল নড়তে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।

"কি হলো বল? "

"ও আমি খাইনি... বিশ্বাস করো শ্রাবনদা "

"কেন... আদিত্য কতো যত্ন করে তোর জন্য অর্ডার করলো দেখলাম "

" কি! তুমি দেখলে? " সুমনের চোখদুটো ছিটকে বের হয়ে আসতে চাইলো।

"হমম.. দেখলাম তো "

" মিথ্যে কথা.. আমি যখন ডিলাক্সে ছিলাম তখন তুমি যে আমায় ফোন দিলে? "

" দিলাম তো? দেয়া মানা নাকি... না আদিত্যর সাথে থাকলে তোকে বিরক্ত করা যাবে না? "

"এ আবার কেমন কথা... কিন্তু তুমি তখন ওখানে সত্যি ছিলে? "

"ছিলাম... কোনার কেবিনে এক ক্লায়েন্টের সাথে আলোচনা করছিলাম "

"ওহ..... "

সুমনের মুখটা সত্যি সত্যি এবার ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। কিন্তু আদিত্যর সাথে খেলে ওর অপরাধ হবে কেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন করার দুঃসাহস ওর হলোনা, যেন এটাই হওয়ার কথা ছিলো.... খুবই স্বাভাবিক।

সুমনের আধমরা চেহারাটা শ্রাবণের কাঠিন্যকে তরলে দ্রবীভূত করতে খুব বেশী সময় নিলো না যদিও সুমনের উপর অভিমানটা তখনও জারি আছে। দুপুরে মিস্টার অনিমেষ রায়ের সাথে ডিলাক্সে কথা বলে বের হবার সময় আদিত্যকে চোখে পড়ে শ্রাবনের। তার সূত্র ধরেই সামনে তাকাতে দূর থেকে সুমোকেও চোখে পড়ে ওর।

" আমি ফালুদা খাইনি শ্রাবনদা... একদম সত্যি বলছি।"

" কেন... ডিলাক্সের ফালুদাতো সবার পছন্দ "

"তা তো পছন্দ কিন্তু আদিত্যবাবু একটা আনালো"

"ওহ তাই বুঝি খেতে পারিসনি... "

" না না, ওতো আমার জন্যই আনালো "

" তবে..."

" আরে আমি খেতে যাবো তার আগেই আদিত্যবাবু হুট করে খানিকটা খেয়ে নিলো,আরেকজনের এঁটো খাবার.. ইয়াক.. দেখেই আমার গা গুলোচ্ছিলো "

"তাই নাকি? "

"তা নয়তো কি? নইলে ডিলাক্সের ফালুদা আমারো অনেক পছন্দ "

" হমম.. বুঝলাম " শ্রাবন আনমনে বললো।

" হমম "

এরপর খানিকটা সময় দুজনেই আর বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিলো না। হঠাত করে ঝোঁকের বশে যে সত্যটা শ্রাবন স্বীকার করে নিলো.. সুমনের কাছে সেটার উপস্থাপন তো হলো কিন্তু এই স্বীকারোক্তির মূল কারন যে প্রনয়ঘটিত জটিলতা, তার গভীরতা সুমন কতটুকু অনুধাবন করতে পারলো সেটা খোলাখুলি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত বোঝা দায়, শ্রাবনের ভিতরের মাতাল হৃদয়টা ঘড়ির পেন্ডুলামের মতোই আশায়- নিরাশায় দুলতে লাগলো।

কিন্তু সুমনের মাথায় তখন হাজারো প্রশ্ন ডানা ঝাপটাচ্ছে। সত্যি কি ওর বিয়ে হয়ে গেল? আগের কালে নাকি শুধু মালা বদল করেও বিয়ে হয়ে যেত.. শকুন্তলা আর রাজা দুষ্মন্তর যেমনটি হয়েছিলো কিন্তু ওতে তো বর আর কনের মধ্যে ভালোবাসা থাকতে হয়... এমন খালি মালা পরালেই হলো নাকি.. তাহলে তো সিনেমা আর থিয়েটারে গন্ডায় গন্ডায় বিয়ে হতো। ওরা তো আবার নকল নকল শাঁখা আর সিঁদুরও পরায়।

প্রীতি বাটিতে করে একটা মিষ্টি নিয়ে পিঁপড়ের মতো সারা বাড়িতে শ্রাবনকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলো... হাজার হোক ওর মেয়ের বিয়ের মিষ্টি বলে কথা কিন্তু শ্রাবনকে প্রীতি কোথাও খুঁজেই পেলনা। শেষকালে রামনাথের দূর সম্পর্কের এক বিধবা ভাগ্নীকে সামনে পেয়ে তাকে থামালো প্রীতি।

"ও নিমুদি "

" কি প্রীতি? "

"শ্রাবনদা কোথায়.. খুঁজেই পাচ্ছিনা।"

"আছে দেখোগে.. আধাঘন্টা আগে তো সুমনকে শ্রাবণের ঘরে যেতে দেখলাম "

তাইতো সুমনদি তো মালা দিতে এসেছিলো.. প্রীতি আবারো শ্রাবনকে খুঁজতে লাগলো।

সুমন ভেবেই পাচ্ছিলো না, এখন আসলে ওর কি করা উচিত। তখন দুম করে ওর রাগ হয়ে গিয়েছিলো তাই কিন্তু এখন শ্রাবনদার পাশে দাড়িয়ে সুমন জ্বরো রোগীর মতো কাঁপছিলো। শ্রাবনদা ওকে চুমু খেয়েছে সজ্ঞানে এতো রীতিমতো দিনের বেলা তারা দেখার মতো অবিশ্বাস্য বিষয় সুমনের কাছে.. ঘটনাটা কি সত্যি হয়েছিলো.. সুমন ঠিকমতো ঠাহরই করতে পারছিলনা।

"সুমনদি... "

আচমকা চিলেকোঠার দরজা কাছে প্রীতির গলাটা শুনতে পেয়ে ধ্বক করে উঠলো সুমনের বুকটা। প্রীতু সবটা দেখে ফেলেনিতো?

" কিক.. কিরে? "

" তোমরা এখানে আর আমি সারা বাড়ি চরকির মতো ঘুরলাম "

"তোর মেয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে বুঝি প্রীতি? " এতক্ষণে শ্রাবন মুখ খুললো।

" না শ্রাবনদা... বর পক্ষ মাত্র খাচ্ছে, আমি তো কতো কাজ ফেলল শুধু মেয়ের বিয়ের মিষ্টি বলে তোমাকে দিতে এলাম " প্রীতি ব্যাস্ত ভাবে উত্তর দিলো।

" তাই বুঝি... আহ দেতো দেখি... শুভ কাজে মানুষকে মিষ্টি খাওয়াতে হয় এটা আবার অনেকে জানেই না, " শ্রাবন হাত বাড়িয়ে মিষ্টির বাটিটা নিলো তাড়াতাড়ি।

"এ আবার না জানার কি হলো, আমি এগুলো কক্ষোনো ভুলি না শ্রাবনদা.. কতগুলো মেয়ে পার করলাম এ পর্যন্ত কিন্তু কখনো কেউ এতোটুকু ভুল ধরতে পারেনি, " প্রীতি বিজ্ঞের মতো উত্তর দিলো।

" হমম.. তোকে দিয়ে হবে.. ভাবছি আমার বিয়ের দায় দায়িত্বও তোকেই দিয়ে দিবো " শ্রাবন মুচকি হাসলো।

" সত্যিই শ্রাবনদা... আমি না বড় হয়ে ওয়েডিং প্ল্যানার হবো কেমন হবে বলতো? "

" দারুন.. মিষ্টিটা ভালো কোথ থেকে আনালি রে?"

"ওই মোড়ের দোকান থেকে.. প্রীতি তুই এবার নিচে যা, আমরা এখুনি আসছি, " সুমন তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে দিলো, আদিত্য মিষ্টি এনেছে শুনলে সেটা নিয়ে আবার কোন যুদ্ধ শুরু হয় কে জানে।

"আচ্ছা আমি তবে গেলাম, সুমনদি তুমি খাওয়া হলে বাটিটা সাথে করে নিয়ে এসো না হলে মা আবার চিল্লিয়ে বাড়ি মাথায় তুলবে "

"আনছি তুই যা "

প্রীতি চলে যেতেই সুমনও নিচে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো...

শ্রাবন তখনও খুটিয়ে খুটিয়ে মিষ্টিটা খাচ্ছে।

"সুমো "

" বলো শুনছি "

" নিচে নেমে আগে মাকে যেয়ে প্রনাম করে আশীর্বাদ নিবি, যদি জানতে চায় হঠাত প্রনাম করলি কেন বলবি আমি নিতে বলেছি..বলবি ছেলেমেয়ের জন্য মায়ের আশীর্বাদ সবচেয়ে বেশি জরুরি "

" আচ্ছা..."

"এটা নে.. মিষ্টিটা ভালই.. খা.. "

শ্রাবন আর দাড়ালো না, তরতর করে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।

সুমন নির্নিমেষে বাটির অর্ধেক মিষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো, মিষ্টিটা খেতে ওর সত্যি বড় লোভ হচ্ছে... কিন্তু ও খেলে শ্রাবনদার অকল্যান হবে না তো? কিন্তু..

কিন্তু স্ত্রী, স্বামীর এঁটো খেলে পাপ হয়না.. নইলে শ্রাবনদা ওকে নিজের আধা খাওয়া মিষ্টি খেতে দিতো নাকি?

চলবে.....

( ভুল ত্রুটি থাকতে পারে... চোখে পড়লে কমেন্ট করে ধরিয়ে দিলে খুশি হবো)

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro