Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

১৯

সমীরের চেহারা দেখে কাজ ফেলে দ্রুত উঠে এলো মঞ্জু।

"বলি হলোটা কী? মুখের দিকে তো একেবারে তাকানো যাচ্ছে না... চাকুরীটা খোয়াওনিতো?"

সমীর একবার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বিমর্ষ মুখে মাথা নাড়লো, তারপর ধীরে ধীরে খাটের কিনারায় গিয়ে বসে পড়লো। মঞ্জু এমনিতে যথেষ্ট মুখরা আর তর্কবাগীশ হলেও সমীরকে ছাড়া দ্বিতীয় কোন পুরুষের  কথা কোনদিন  ভাবেনি। চব্বিশ বছরের বিবাহিত জীবনে ঝড় ঝাপটাও কম সহ্য করেনি দুজনে মিলে কিন্তু আজ কেমন যেন ছন্দপতন ঠেকলো মঞ্জুর সেই পথচলায়। সমীর লোকটা বড্ড ঠান্ডা ধরনের আর শান্তিপ্রিয়। কোন ধরনের প্যাঁচঘোচ সে জানেনা।

"কিছু যদি নাই হবে তাহলে মুখটা এমন হয়ে আছে কেন? " মঞ্জু চিন্তিত ভঙ্গীতে সমীরের কপালে হাত দিয়ে দেখলো। " নাহ.. জ্বর জ্বর তো লাগছে না। "

"জ্বর আসেনি মঞ্জু, আমার মনটা এমনি ভাল লাগছে না।"

"এমনিই ভালো লাগছে না! বললেই হলো নাকি... কি হয়েছে আমায় বলো নাগো। " মঞ্জু উৎকন্ঠার সাথে জানতে চাইলো।

"বাহ মানুষের মন খারাপ হতে পারেনা?" সমীরের কন্ঠেও এবার কিছুটা বিরক্তি  ঝরে পড়লো। কিন্তু তারপর আবার নিজেই নিজের আচরনে ক্ষুব্ধ হলো। আসলে দোষ মঞ্জুর নয়, দোষ হলো সমীরের কপালের। পরিবারে যথার্থ পয়সা দিতে না পারলে বউকেই খালি দোষারোপ করে কি হবে...  তবুতো মঞ্জু এভাবেই তার সাথে সংসার করে এলো এতোটা বছর, ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা তো কোনদিন বলেনি।

"হতে পারে অবশ্যই হতে পারে...  কিন্তু তোমাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি তাই কারনটা জানতে চাইছি, বলো এবার।"

মঞ্জু, সমীরের একটা হাত নিয়ে নিজের মাথার উপর দিয়ে বললো," আমার দিব্যি দিয়ে বলো কি হয়েছে? মিথ্যে বললে আমার মরা মুখ দেখবে তুমি।"

"আহ কি যন্ত্রনা শুরু করলে তুমি অনুজের মা..  এমনিতে আসার সময় রামনাথদা একগাদা কথা শুনিয়ে দিলেন রাস্তার উপর তার উপর তুমি আবার এসব নাটক শুরু করোনা, আমার ভালো লাগছে না। "

রামনাথের নাম শুনতেই মামার মন খারাপের কারনটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো সুমন। মামা অফিস থেকে ফিরতেই চা বানিয়ে খাবার টেবিলে আসার জন্য ডাকতে আসছিল সুমন। মামীর দিব্যি দেয়ার কথা শুনে আর ঘরে ঢোকাটা ঠিক মনে হয়নি ওর..  তাই দরজায় দাড়িয়ে সব শুনছিল। রামনাথ চৌধুরী যে কেমন ভাবে ওর মামাকে কথা শোনাতে পারে সেটা ধারনা করা সুমনের পক্ষে খুব বেশি কঠিন নয়।বড়মার একদম উল্টো  কাকাবাবু। এতো এতো টাকা তবু...

"সুমনদি.... "

"কি রে প্রীতি? "

"আদিত্য বাবু এসেছে.. ঠাকুরদার সাথে দেখা করতে এসেছে "

"আদিত্যর নাম শুনেই সুমন দ্রুত উপরের কামরায় ছুটলো। আদিত্য যখন দোতলার ঘরে ঢুকলো, ঘরটা তখন একদম ফিটফাট।

"কিহে দাদাভাই কেমন আছো?" বীরেন বাবুর চোখে মুখে আনন্দের ছটা। বৃদ্ধ বয়সে দুটো কথা বলার লোক পেয়ে আসলেই খুশি তিনি।

"একদম ভালো না, তাই তো আপনাকে দেখতে চলে এলাম, অবশ্য আমি মরে গেলেই বা কার কি আসে যায়, " কথাটা হাসতে হাসতে বললেও  সুমনের মনে হলো আদিত্যের চোখদুটোতে আজ অনেক অভিযোগ ছিল আর কথাগুলো যে ওকেই কেন্দ্র করে বলা সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি এখন ওর হয়েছে। সুমনের নিজেরও আসলে ভীষন লজ্জা লাগছিল আদিত্যকে দেখে। সেদিন কথা দিয়েও সুমন যেতে পারেনি অথচ আদিত্য বেশ কয়বার করে ওকে যেতে  অনুরোধ করেছিলো।

"আপনারা বসুন আমি চা নিয়ে আসি," সুমন চায়ের ছুতোয় আদিত্যকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে আসলো। আদিত্যকে বলার মতো যথার্থ উত্তর আসলে সুমনের র কাছে নেই। কি বলবে? ও যা করলে শ্রাবণদার  মন খারাপ হয়, সেই কাজ মরে গেলেও সুমন করতে পারবেনা। কিন্তু যদি উত্তর শুনে আদিত্য প্রশ্ন করে বসে যে কেন? তখন।

......................................

"কি করছিস ব্রো.....? "

"আরে এ আমি কি দেখছি? কাকে দেখছি?  গরীবের বাড়িতে হাতীর পারা... হাউ ইজ ইট পসিবল! "

"তেল মারিস না ব্রো... আই অ্যাম ফেডআপ " ধপাস করে বিছানার পাশের রকিং চেয়ারে বসে পড়লো সুজয়।

"ফেডআপ ফর হোয়াট? " শ্রাবণ কোলের উপর রাখা ভারী বইটা সরিয়ে সোজা হয়ে বসলো। গত চার পাঁচদিন ধরে ও এই বইটার সাথে যুদ্ধ করছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। মাথায় আজকাল শুধু অন্যকিছু ঘোরে, যা স্বস্তি দেয়না মোটেও।

"লাবণ্যটা চায় কি? আমার জুতার সুতো ছিড়ে যাবে কিন্তু এই মেয়েটা একটা হার্ডনাট। একটাবারের জন্যও সে আমার সাথে কোন ডিসকাশনে আসেনা। কোথাকার কোন এক ফালতু ছেলের পিছনে লেগে আছে, আমাকে তার নামও বলবেনা," সুজয় দাঁত কিড়মিড় করে বললো।

খুক খুক করে কয়বার কাশল শ্রাবণ। ফালতু ছেলে!

"লাবণ্য কি এখোনো ওই ছেলেকে বিয়ে করতে চায়? " ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো শ্রাবণ। এই মেয়ে তো ওর সাড়ে সর্বনাশ করে ছাড়বে।

"শুধু বিয়ে না ওই ছেলের পোলাপানের মাও হইতে চায়। ব্রো প্লিজ আমাকে একটা হেল্প কর তুই প্লিজ, ওই ছেলেটার এড্রেসটা আমাকে একটু  জোগাড় করে দে। একটু হিন্টস পেলে আমি নিজেই ছেলেটাকে খুঁজে নিতে পারতাম কিন্তু এখন বাবার বিজনেসে ঢুকে মাসের মধ্যে চৌদ্দবার আমাকে দেশের বাইরে যেতে হয়, ব্যবসা সামলাবো না বউ ? " দীর্ঘ করে একটা শ্বাস টানলো সুজয়। কিন্তু তাতে ওর ব্যাথা কমলো না বাড়লো শ্রাবণের বোধগম্য হলোনা।

শ্রাবণ হেসে ফেললো, "বাপরে... ডাইরেক্ট বউ?"

"কি করবো বল, এই মেয়ে মহা ধান্দাল বাট ওকে আমার চাই। প্রেম করার বয়স এখন আর নাই তাই ভাবছি সামনের মাসে বাবাকে দিয়ে সোজা ওর ফ্যামিলির কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিব। রাজী হলে ভালো নাহলে সোজা কিডন্যাপ করবো।"

"তুই তো দেখছি মহা সিরিয়াস? অবশ্য তুই ওর ব্যাপারে বরাবরই সিরিয়াস ছিলি।"

"আমার লাবন্যকে চাই শ্রাবণ, অনেক আগে থেকে ভালোবাসি। তুই শুধু ওই ছেলেটার ঠিকানাটা আমাকে জোগাড় করে দে দোস্ত, বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নিতে পারবো। তোর ঝামেলা করা লাগবে না। "

"আমি বুঝতেছিনা তোর ওই ছেলের ঠিকানা জানার এতো কী দরকার। তুই বিয়ে করতে চাস লাবন্যকে, তাইতো? এতে ওই ছেলেকে ইনভলভ করার কি আছে? ওই ছেলে তো আর লাবণ্যকে পছন্দ করেনা,বিয়েও করতে চায়না। তাহলে তোর ওকে দরকারটা কী?" শ্রাবণের বুকটা ততক্ষণে ঢিপ ঢিপ করছে, কি এক ফালতু ঝামেলা  পাকিয়েছে মৌমির বাচ্চা। আচ্ছা করে একটা রাম ধোলাই দিতে পারলে শান্তি হতো ওটাকে। জানে সুজয়ের পছন্দ লাবন্য তারপরও খামোখা ওর পিছনে লাগলো।

শ্রাবণের কথায় সুজয় কিছুক্ষণ চুপ হয়ে বসে রইলো। বেচারার চোখমুখ বলে দিচ্ছে সুজয় আসলে ভীষন হতাশ।

শ্রাবণ, সুজয়ের টেনশনটা ফিল করছিলো... আসলে ও আর সুজয় এখন একই অবস্থায় আছে। ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারো ভালোবাসা হতে পারে মনে হলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। শ্রাবনের ইচ্ছে হলো লাবন্য আর ওর ব্যাপারটা সুজয়কে খোলাখুলি বলে দেয় কিন্তু শ্রাবণ কিছুতেই সংকোচ কাটাতে পারছেনা। সুজয়, লাবণ্যকে ভালোবাসে এটা শ্রাবণ অনেক আগে থেকে জানে। তাহলে কেন ও অযথাই  লাবণ্যকে একটু বাজিয়ে দেখতে গেল?

নিজের সপক্ষে বলতে চাইলে অবশ্য অজুহাত একটা না একটা দাড় করানোই যায়, যে মৌমিতার ঠেলাঠেলিতেই ও সেদিন যেতে বাধ্য হয়েছিল লাবন্যর সাথে দেখা করতে অথচ তখনও লাবণ্যর প্রতি মনের ভিতরে কোন ভালোবাসা ও অনুভব করেনি, না কোন রকম টান। যেটা অনুভব  করেছে সেটা হলো লাবণ্যর প্রতি ওর একরাশ কৌতুহল। মেয়েটা একদম ঝকঝকে তলোয়ারের মতো, মনে হয় ছুঁলেই কেটে যাবে।

কিন্তু  তাহলে এতো কৌতুহল কেন? প্রশ্নটা এ'কদিন শ্রাবণকে বেশ জ্বালিয়েছে। শেষে ভেবে ভেবে ওর এটাই মনে হয়েছে যে, লাবণ্য বিশেষ সুন্দরী এটা ওর জন্য কখনোই লাবন্যর প্রতি ওর আগ্রহের মুখ্য বিষয় ছিল না। কিন্তু  ওদের পুরো ব্যাচটা যে মেয়েটাকে নিয়ে সারাক্ষণ ব্যাতিব্যাস্ত থাকতো সেই মেয়েটা হঠাৎ ওর প্রতি কেন এতোদিন পরে আগ্রহী হয়ে উঠলো এটা ওকে মনে মনে বেশ কৌতুহলী করে তুলেছিলো। তা না হলে এই যে সুজয় এসে ওর সামনে লাবন্যকে বিয়ে করার কথা বলছে এটা শুনে মনে মনে ওর স্বস্তি লাগার কথা না, কোথাও তো একটু হলেও ওর হিংসা লাগা উচিত অথচ বিন্দু মাত্রও হচ্ছেনা। সবচেয়ে বড় কথা এই কথাটা কেউ সুমোকে নিয়ে বললে শ্রাবণের ভিতরটা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো। পারলে তার নাক-মুখ মেরে রাস্তার মতো সমান করে দিতো বুলডোজার  দিয়ে।

একঅর্থে সুমনের উপর মাতব্বরি করার মতো এরকম অপরিসীম  অধিকারবোধ আর সুযোগ... শ্রাবন যেমন আর কারও উপর পায়নি তেমনি যে কেউ চাইলেই যে শ্রাবণের দখলকৃত দ্বীপ হতে পারবেনা এটাও বোধহয় উপর থেকেই নির্দেশিত ছিল। তা না হলে লাবণ্যর মতো গুনে গুণান্বিতা মেয়েকে কখনোই  এরকম ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে ফিরে যেতে হতো না।

"তুই কি শিওর যে ওই ছেলে লাবণ্যকে পছন্দ করে না? আমাকে নিশ্চিত হতে হবে যে বিয়ের পরে ওই ছেলে লাবণ্যর সাথে কোন রকম আনফেয়ার রিলেশন রাখবেনা।" সুজয়ের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। এই প্রথম সুজয়ের জন্য প্রচন্ড কষ্ট হতে লাগলো শ্রাবণের। ওর আসলেই ভীষন কষ্ট হচ্ছে। ভালোবাসার আরেক নাম বোধহয় কেবল সেধে সেধে কষ্ট পাওয়া অথচ এই জিনিস নিয়ন্ত্রণহীন, চোখে দেখা যায়না, অদৃশ্য অথচ ভীষন শক্তিশালী।

"আমি শিওর ওই ছেলে লাবণ্যকে পছন্দ করে না, এটলিষ্ট দে আর নট লাভার। তুই আঙ্কেলকে বলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠা, লাবণ্য রাজী হয়ে যেতেও পারে।"

"তুই বলছিস "

"হমম "

"কিন্তু ছেলেটা যদি বিট্রে করে?" সুজয়ের চোখদুটো ছলছল করছে। " শ্রাবণ তুই  পার্সোনসলি ছেলেটাকে চিনলে আমাকে বল,আমি প্রয়োজনে ওর কাছ থেকে ভিক্ষা করে নিব লাবন্যকে।"

" সুজয় তুই আমার উপর বিশ্বাস রাখ, ছেলেটা লাবণ্যর প্রতি আগ্রহী না। লাবন্যর ভালোলাগাটা একতরফা। "

"তাহলে তুই  অভয় দিচ্ছিস।"

"দিচ্ছি,  কিন্তু এখন অন্য কোন পাত্র এসে তোমার বউকে উড়িয়ে নিয়ে গেলে আমার সাথে ঝামেলা করতে এসো না। যতো তাড়াতাড়ি পারো বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও।"

শ্রাবণের মনে হলো সুজয় যদি কালই লাবন্যকে বিয়ে করতো তাহলে ও বেঁচে যেতো।

..................................................

"আপনি কিছু মনে না করলে আমি একটা প্রস্তাব রাখতে চাই মামাবাবু।"

"বলো আদিত্য, তুমি তো এখন আমাদের কাছের লোক... বাবা খুবই পছন্দ করে তোমাকে, তারপরও এতো সংকোচ কেন? "

সমীর বিছানায় শুয়েই কথাটা বললো। শরীরটা আজ তার বেশ খারাপ, সাথে মনখারাপও কিন্তু আদিত্য ছেলেটা নিজে থেকে এসে সমীরের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করছে, সেক্ষেত্রে  ভালোমুখে দু, একটা কথা না বললে তো রীতিমতো অভদ্রতা হয়।

"বলছিলাম কি... বিদেশে যাব বলে বাবার অনেকগুলো জমি আমি বিক্রি করেছিলাম। তার সবটাকা আমার এখনি লাগাবেনা। যদি  আপনি কিছু মনে না করেন তাহলে আমার বাকি টাকাগুলো দিয়ে আপনি রামনাথ চৌধুরীর ধারটা আপাতত শোধ করে দিন। পরে আপনি আপনার সুযোগ সুবিধামতো সেগুলো আস্তে আস্তে আমাকে শোধ করে দিবেন। আমার দিক থেকে কোন প্রকার চাপ থাকবে না টাকাটা পরিশোধের জন্য... এটুকু কথা দিতে পারি।"

আদিত্যর কথায় সমীর ফ্যালফ্যাল করে আদিত্যর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা কি পাগল! চেনে না জানে না অথচ নিজে থেকে যেচে ওদের দিকে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাহলে কী পৃথিবীর আনাচে কানাচেতে  অসংখ্য ভালো মানুষ এখনও রয়ে গেছে..... যাদের মাধ্যমে বিধাতা মাঝে মাঝে নিজের প্রকট অস্তিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন সকলকে।

সুমন দরজায় দাড়িয়ে আদিত্য আর সমীরের আলোচনার বিষয়বস্তু মনযোগ দিয়ে শুনছিল। বলতে নেই আদিত্যকে, সুমন  প্রথম থেকেই প্রচন্ড সম্মান করে কিন্তু আজ এইটুকু সময়ের মধ্যে সেই সম্মান যেন আকাশে যেয়ে ঠেকলো। আদিত্যকে মনে হতে লাগলো সাক্ষাত দেবদূত।

সুমনের স্মৃতিতে বাবা বলে আলাদা কোন শব্দ নেই। ওর কাছে সমীরই ওর মামাবাবু আবার সমীরই ওর বাবা। মনে আছে ছোটবেলায় দোকান থেকে লজেন্স কিনতে গেলে মামাবাবুর কাঁধটাই ছিল ওর এক দোক্কা গাড়ি। সেই একমুঠ লজেন্স নিয়ে মঞ্জু মামীর কটুকথাগুলোও এখনো তেমনি তাজা। তারপরও সমীর দমেননি, তেমনিভাবে সুমনকে স্নেহের ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছেন। সুমন জানে ওর মামার আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো নয়। কিন্তু ইদানিং অর্থাভাবের সেই রূক্ষ চেহারাটা যেন দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। অনুজদাকে আমেরিকায় পাঠানোর টাকাগুলো দ্রুত শোধ না করতে পারলে ওদের হয়তো রাস্তায় নেমে যেতে হবে এই বাড়িটা ছেড়ে দিয়ে। কথাগুলো ভাবলেই ভয়ে শরীর কাঁটা দেয় সুমনের। না খেয়ে ঘরের কোনে পড়ে থাকা এক কথা কিন্তু এই মাথা গোঁজার ঠাই বাড়িটাও যদি না থাকে তবে পুরো পরিবারটা যে একদম শেষ হয়ে যাবে ওর।

"সুমনদি... "

"বল... "

"শ্রাবণদা ডাকছে... "

"যাচ্ছি... "

"আহা কি এতো বড়দের কথা গিলছো...  তাড়াতাড়ি ওবাড়ি যাও, শ্রাবনদা মনে হয় আমাদের আজ কোথাও ঘোরাতে নিয়ে যাবে," প্রীতির কথার সুরে খুশির আমেজ। নিশ্চই সেদিন ওর কাছে শুনে শ্রাবনদারও আজ নদীতে ঘুরতে ইচ্ছে হয়েছে। ভাগ্যিস ও সেদিন ভালো করে ওদের ঘোরার বর্ননাটা শ্রাবনদাকে বলেছিলো।

বেড়াতে যাবার কথা শুনে সুমনের মুখটা একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠলেও, পরক্ষনেই আবার তার দ্বিগুন বেগে অন্ধকার হয়ে এলো। শ্রাবণদা বেড়াতে যাবে? তো যাক না, যেখানে খুশি সেখানে যাক...  তাতে সুমনের কী?

আধাঘন্টা ধরে একই জায়গায় পায়চারি করে করে ভীষন বিরক্ত লাগতে লাগলো শ্রাবণের। প্রীতি এতোটা সময় নিশ্চই লাগাবেনা সুমোকে কথাটা বলতে। কিন্তু তাহলে এখোনে সুমো আসছে না কেন? নাকি সুমো যেতে চায়না? নাকি কেবল ওর সাথেই যেতে চায়না? আদিত্য হলে যেতো?  সবগুলো সম্ভাবনাই যখন একসাথে হয়ে শ্রাবণের মাথার ভিতরে উলের বলের মতো জট পাকিয়ে দিচ্ছিলো, ঠিক তখনই সম্রাজ্ঞীর মতো হেলতে দুলতে দুলতে  ওর ঘরের  দরজায় এসে দাড়ালো সুমন।

শ্রাবণের চোখদুটো যেন হঠাৎই সদ্যআঁকা একটা ক্যানভাসে আটকে গেল। ছবিটার বুনন স্বপ্নের মতোই, যেন কি ভীষন আদুরে একটা দিন। তার সাথে পাল্লা দিয়ে সুমনের চোখদুটো বর্ষার মেঘের মতোই ভারী... কেবল একটু ঝড়ো হাওয়ার অপেক্ষা। তার সাথে তাল মিলিয়ে  সাদা খোলের লাল পেড়ে শাড়ি, বেনী করা একটা খোপা, রূপার ছোট্ট দুটো ঝুমকা, চোখের কোনে আলতো কাজলের টান আর সর সরু হাত দুটিতে দু,একটা কাঁচের চুড়ি। শিল্পী নয় তবুও আজ প্রথম বারের মতো তুলি দিয়ে কিছু একটা আঁকিবুকি কাটতে ভীষন ইচ্ছে হলো শ্রাবণের।

"আমায় ডাকছিলে? " শাড়ির আঁচল দিয়ে কপাল চুইয়ে আসা ঘামের ফোঁটাগুলো মুছলো সুমন। 

না করতে যাচ্ছিল শ্রাবন কিন্তু ততক্ষণে  মনেমনে খেই হারিয়ে ফেলেছে সে। বুকের ভিতরের চাওয়াগুলো দামাল হাওয়ার মতো ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কানদুটো দিয়ে শব্দ ঢুকছে আর বেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মাথায় তার অনুভব খুবই ক্ষীন।

"শ্রাবনদা... "

"অ্যা..."

"কোথায় নিয়ে যাবে বলছিলো প্রীতি "

"উহহ.. উহহ.. হ্যাঁ, ওই আরকি। " গলা অযথাই দু'একবার খাকড়ি দিয়ে নিজের বেসামাল ভাবটা কাটালো শ্রাবণ। নাহ, সুমোকে দেখলে আজ কাল যখন তখন ঝড় উঠে পদ্মার বুকে। দ্রুতই  ওকে কিছু একটা করতে হবে।

"কোথায় যাবে? "

"নদীতে। সবাই অনেক মজা করে শুনলাম ওখানে গিয়ে তাই আজ মাকে নিয়ে ঘুরবো ভাবলাম। "

শ্রাবণের চোখদুটো ততক্ষনে সুমনের জুতোর রঙটা পর্যন্ত মুখস্থ করে ফেলেছে।

"এটা ভালো করেছো, বড়মার অনেকদিন  কোথাও ঘোরা হয়না তুমি নিয়ে না গেলে।"

"হমম.. তুই খুশিতো? "

"আমি... " সুমন অনিশ্চিত ভাবে প্রশ্ন করলো। ওর খুশিতে শ্রাবনদার কি?

"হ্যাঁ,তোর ভালো লাগাটাও তো সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন আমার জন্য তোর যাওয়া হয়নি। আজ তার শোধবোধ হয়ে যাবে, " শ্রাবনের ঠোঁটে মুচকি মুচকি হাসির আভাস।

সুমন এতোক্ষণে শ্রাবণের এই অকারন ঘুরতে যাওয়ার কারনটা খুঁজে পেল। সুমন সেদিন চারুদের সাথে ঘুরতে যায়নি, তবুও শ্রাবনদা ওর সাথে কি খারাপ ব্যবহারটাই না করেছিল। কথাই বলেনি ভালো করে। অভিমানে চোখ দু'টো ছাপিয়ে আবার জল এলো সুমনের বানের পানির মতো.... নিষ্ঠুর একটা লোক, যেন ওকে কাঁদিয়ে মহা সুখ পায়। সেটাই গড়িয়ে গড়িয়ে সুমনের গাল বেয়ে ঝরে পড়তে লাগলো টুপ টুপ করে।

শ্রাবণের ভিতরে তখন নতুন করে তুফান শুরু হয়েছে, যুদ্ধের ডামাডোলে সমস্ত বিশ্বচরাচর গর্জে উঠেছে, নিজের অনুভূতির সাথে নিজের অস্তিত্বের এই প্রলঙ্কারী যুদ্ধে টিকে থাকাটা এতো কঠিন জানা ছিলনা শ্রাবণের। সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটা প্রতিদিন একটু একটু করে ওর সামনে প্রজাপতির মতো খোলস পাল্টে কিশোরী  থেকে নারীতে রূপান্তরিত হচ্ছে। সঙ্গে পাল্টাচ্ছে তার রঙ,রূপ আর সীমারেখা। শ্রাবণ চাইলেও এখন আর এই অভূতপূর্ব সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরাতে পারেনা।

পাশে থাকা চেয়ারটাকে আকড়ে ধরে কোনমতে নিজেকে সামলে নিলো শ্রাবণ, "আমি নিচে যাচ্ছি, তুই সবাইকে নিয়ে নিচে আয় তাড়াতাড়ি। "

চলবে......

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro