Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

১৪

"কিরে সুমন তোর মুখটা এমন কেন দেখাচ্ছে?"

"কেমন দেখাচ্ছে? "

সুমন ইচ্ছে করেই মুখটা দেয়ালের পাশে লুকাতে
চাইলো, কিন্তু চারুর সন্দিহান চোখে সেটা ততক্ষনে ধরা পড়ে গিয়েছে।

"সত্যি করে বলতো সুমন, মঞ্জুমামী আবার বকেছে তাই না?"

সুমন নিচের ঠোঁটজোড়া কামড়ে ধরে অতি কষ্টে নিজের কান্না ঠেকালো। মামীর কথায় সুমনের চোখে জল আসা বন্ধ হয়ে গেছে সেই কব্বে। ওর তো কান্না আসছে ভিন্ন কারনে... আর এই কথা ও চারুকে কিছুতেই বলতে পারবেনা। শ্রাবণদা ওকে বাসার কাজের মানুষ মনে করে, এই কথাটা সুমন বলে কি করে? শুনলে সুমন নিজে তো হাসির পাত্র হবেই সাথে শ্রাবণদাকেও ছি ছি করবে। আর এটা সুমন কোনভাবেই হতে দিতে পারবেনা। গরিব হওয়া দোষের এটা সুমন আজ বুঝে গেছে, কিন্তু তার সাথে অকৃতজ্ঞ হয়ে নিজের মৃত বাবা-মাকে নরক যন্ত্রনা দেওয়া... এ সুমন কিছুতেই পারবেনা।

আস্তে করে চোখের কোনটা মুছলো সুমন। আপাতত চারুর সামনে চুপ করে থাকাই ভাল, এতে সরাসরি সত্যি বলা না হলেও মিথ্যাও বলা হবে না, আর মামী তো ওকে হরহামেশাই উঠতে বসতে একগাদা গালাগালি করে... ওগুলো সুমনের এমনি হজম হয়ে যায়।

"চারু আমায় একটু ঠান্ডা জল দিবি, গলা একদম শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। "

"বোস আনছি, "চারু দরজার পাল্লাটা একপাশে ঠেলে সরিয়ে দিলো।

সুমন এলোমেলো পায়ে চারুর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। চোখটা আবার পানিতে ভরে আসছে।
সেই কোন ছোটবেলায় যে সুমন, শ্রাবণের হাতটা মুঠিতে চেপে ধরেছিলো মনে নেই, কিন্তু সেই
লোকটার আশকারা পেয়ে পেয়ে ও যে নিজেই নিজের অবস্থান ভুলে গিয়ে গাছের মগডালে উঠে বসেছিলো আর নিজেকে রাজ্যের মহারানী ভাবছিলো... তা যে কতোটা ঠুনকো, কত বড় ভুল ছিলো.... সেটাই আজ শ্রাবণ তার অসতর্ক আর চরম বিরক্ত মুহুর্তে, সুমনের সামনে  তুলে ধরেছে। সুমনের মনে হলো ও একটা নতুন আয়নায় নিজেকে দেখেছে আজ আর সুমন জানে আয়নাটা মিথ্যা বলছেনা। বরং সুমন নিজে ভুল ছিলো, তাই নিজের মনের রঙ মিশিয়ে একটা আকাশ কুসুম কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেবার বৃথা চেষ্টা করছিলো।

"তোর শরীর খারাপ করছে বুঝি? " চারু, সুমনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো, কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করলো।

"আরে না, ব্যাঙের আবার সর্দি... ওসব বড়লোকি অসুখ আমাদের হয় না। "

"তুই.. বড়লোক না তো কি ? শ্রাবণদার আলমারির চাবির গোছা তো সবসময় তোর কাছেই থাকে।"

চারুর কথাটা যে কোথায় গিয়ে লাগলো সেটা যদি একবার সুমন বোঝাতে পারতো চারুকে, "ক্যাশিয়ারের কাছে যতোই টাকা থাকুক দিন শেষে কিন্তু তাকে পই পই করে সবটার হিসেব দিতে হয়।"

"কেন রে.... তবে যে তুই বলিশ শ্রাবণদা তোর কাছ থেকে কোনদিন টাকার হিসেব নেয়না।"

"সে নেয়না বলে আমি দেই না তাতো বলিনি। বরং আমি খরচগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব দেই বলেই শ্রাবণদা নিজে যেচে কখনো সেটা শুনতে চায় না। কিন্তু আমি সবসময় নিয়ম করে হিসেব দেই সেটা যতো অল্পই হোক।"

"বুঝলাম, আচ্ছা এখন এই ফালতু প্যাচাল রাখ, আয় একটা কাজ করি।"

"কি কাজ? "

"ছাদে যাই চল.... অনেকদিন ছাদের রেলিঙে পা ঝুলিয়ে বসিনা। "

"না না বাবা... দেয়ালে পা ঝুলিয়ে বসলে শ্রাবণদা আমার বেনী কেটে এইটুকু করে দিবে বলেছে," সুমন দুই আঙ্গুলের ফাঁকের দূরত্বটা দেখাল।

"আচ্ছা আগে চল তো ছাদে, বসাটা আমরা না হয় পাটি বিছিয়েই বসবো।"

অনিচ্ছাসত্বেও চারুর সঙ্গী হলো সুমন। এখন বাসায় গেলেও মন খারাপ থাকবে, তারচেয়ে এ বাড়ি থাকাই ভালো, অন্তত কিছুটা সময় তো শ্রাবনদার কথাগুলো ভুলে থাকতে পারবে।

.........................................

শ্রাবণ নিজের উপর এতোটা রাগ হয় খুব কমই। আর আজ সেটা প্রায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে।

তখন বদ্দার ঘর থেকে একদৌড়ে নিজের ঘরে এসে দেখে সুমন অনুপস্থিত। না পেরে শ্রাবণ সুমনদের বাড়িও গিয়েছে। কিন্তু প্রায় একঘন্টা বসে থেকেও সেখানে সুমনের কোন খোঁজ না পেয়ে শেষে চলে আসতে একরকম বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তারপর দুই ঘন্টা হয়ে গেছে এখনও সুমনের কোন খবর শ্রাবণ পেল না। ভিতরে ভিতরে অকারন এক অস্থিরতা ওকে মেরে ফেলছে। সুমোকে বাসার কাজের লোক ও জীবনেও কখনো ভাবেনি আর এটা সত্যি... একচুল মিথ্যে নেই। সুমো অসহায় বলে হয়তো ওর জন্য বাড়তি একটা দুশ্চিন্তা কাজ করে সববসময় শ্রাবণের, তবে এটা স্নেহ কোনমতেই করুনা নয়। কিন্তু তারপরও নিজের মুখ ফস্কে এমন কথাটা কেন ও বললো শ্রাবণ নিজেই নিজের কাছে স্পষ্ট নয়। সমাধান না পেয়ে নিজের ঘরের মধ্যেই ক্রমাগত পায়চারি করতে লাগলো শ্রাবণ।

'এক নাম্বারের একটা বেহদ্দ আর বেয়াদবীর উপর ডিগ্রী নেয়া ধুরন্ধর তিন শিং ওয়ালা শয়তান একটা মেয়ে ... আমাকে এমন অত্যাচার করার ফল তুই হাতেনাতে একদিন পাবি দেখিস মুখ পুরি। উফফ.... " দু'হাতে কপাল চেপে বসে পড়লো শ্রাবণ। রীতিমতো এখন কপালের দুপাশের শিরাদুটো দাপাচ্ছে ওর। দুপুরে বাবার দেওয়া বকাটাই এখনও হজম করতে পারলনা ও... উল্টো কাল বৈশাখীর ঝড়ের মতো সুমোরানীর তান্ডব শুরু... এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। অসহ্য... কোথায় ওকে একটু ভালো কথা বলে স্বান্তনা দেবে কি, নিজেই এলাকা থেকে উধাও হয়েছে।

মনেমনে গজগজ করতে করতে ছাদে চললো শ্রাবণ। ছাদের দোলনাটায় বসলে ওর মনটা ভালো হয়ে যায়, পুরো শহরের একটা চেহারা দেখা যায় যে দোলনায় বসলে। হাতে আজকের পত্রিকাটাও সাথে নিলো।

কিন্তু বিধি বাম, দোলনায় বসতে গিয়ে আর বসা হলোনা শ্রাবনের। কোন কারনে আজ দোলনাটা বাড়ির কাজের লোকেরা পরিস্কার করেনি ভালো করে....তাতে দুই এক জায়গায় কবুতরের বিষ্ঠা লেগে আছে এখনো। দোলনায় বসতে ব্যার্থ হয়ে মন খারাপ করে নিচে নামতে যাচ্ছিল শ্রাবণ... কিন্তু ছাদের রেলিঙের মাথা ছুঁয়ে দূরে একটা বাড়ির ছাদে চোখটা আঁটকে গেলো ওর।

সুমো না ওটা? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো শ্রাবণ। সাথে আরো একটা মেয়ে বসা। খুব সম্ভবত ওটা চারুদের বাড়ি। শ্রাবণ চলে আসতে গিয়েও আসতে পারলনা। পাটিতে বসে কিছু একটা খেলা হচ্ছে লুডু জাতীয়। আর সেখানে যে পুরুষ মানুষটি ওদের সাথে বসে আছে সেটা সম্ভবত আদিত্য নামের লোকটা। শ্রাবণের তাৎক্ষণিক অনুভূতিটা মোটেই সুখকর নয় তবু ওখান থেকে সহসা সরে আসতে পারলনা সে, ভ্রু জোড়া কুঁচকে যতোক্ষণ আলো ছিলো ঠায় রেলিং ধরে দাড়িয়ে রইলো।

সুমন যখন বাড়ি ফিরলো তখন ঘরে ঘরে আলো জ্বলছে। ওকে দেখেই বকাবকি শুরু করে দিলেন মামী। সুমনও চুপচাপ দাড়িয়ে বকাগুলো শুনতে লাগলো, আজ সত্যিই দেরী হয়ে গিয়েছে ওর.... বকাগুলো তাই পাওনা ছিলো সবখান থেকেই।
এর ফাঁকেই প্রীতি এসে জানালো শ্রাবণদা নাকি ওকে খুঁজছে.... বেশ অনেকটা সময় নাকি বাড়ি এসেও বসে ছিলো।

কিন্তু সুমনের যে যাওয়ার উপায় নেই। কথাগুলো যে ভীষন সত্য ছিলো শ্রাবণদার আর সত্য সবসময়ই অপ্রিয়, সুমন তাই নিজের মতো করে চেষ্টা করছে সেটা সইবার।

................................

পাঁচ - ছ'দিন পর হঠাৎ চায়ের কাপ হাতে সুমনকে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের চেয়ার থেকে দ্রুত উঠে দাড়ালো শ্রাবণ।

" তোমার চা, " সুমন ট্রেটা শ্রাবণের সামনে এগিয়ে ধরলো।

শ্রাবণ কি বলবে, কি জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছিলনা। পাঁচ - ছয়দিন একেবারেই দেখেনি সুমনকে... একেবারে মানে একেবারেই, একদম ছায়াটা পর্যন্ত দেখেনি ও। সুমো কি একটু রোগাটে হয়ে গেছে? চোখের কোন কালো হয়েছে? কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করবে কি শ্রাবণের উল্টো রাগ হলো। রোগা হয়েছে তো হয়েছে, বেশ হয়েছে। আসেনি কেন সেদিন, খুব মউজ মেরে খেলা হচ্ছিল আর বলে কিনা রোজ আদিত্যর কাছে পড়তে যায়। কত যে পড়ে সে বোঝা হয়ে গেছে শ্রাবণের। আর আদিত্যই বা কেন অতো আগ্রহ করে সুমোকে পড়ায় একটু দেখতে হবে, বোকা আর অসহায় মনে করে সুমোর দিকে কুনজর দিলে চোখ উপরে নিবে একদম শ্রাবণ।

"চা টা নিয়ে নিলে আমি রান্নাঘরে যেতাম, বড়মা একা পেরে উঠছেনা।"

"তবে চা নিয়ে এলি কেন? অন্য কাউকে দিতিস।"

"কেউ বসে নেই আর আমিও এ বাড়ির কাজের মানুষ.... তাই আমিই নিয়ে এলাম," উদাসীন ভাবে বললো সুমন।

চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই চুমুক দিতে যাচ্ছিলো শ্রাবণ। সুমন ঠেকাল," একটু পরে খাও... বড় হাড়িতে চা করা হয়েছে, অনেক বেশি গরম... জিভ পুড়বে।"

" তুই এ বাড়ির কাজের মানুষ, এই কথাটা এখনো মাথায় নিয়ে ঘুরছিস তুই সুমো ?"

"তুমিই তো সেদিন বললে.... " কাঠখোট্টা উত্তর।

"তো.. আমি বললাম বলেই কি সব সত্যি হতে হবে? আমি কি যুধিষ্ঠির। আজ আমি যদি বলি যে আমাদের মোড়ের মাথায় যে চায়ের দোকান ওটা আসলে চায়ের দোকান নয়, প্রাইম মিনিস্টারের বাসভবন আর চা বিক্রেতা কানাইদা হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তুই মানবি। না তো? তাহলে এতোকিছু থাকতে ওই মুখ ফস্কে বলা কথাটাকেই বা এতো গুরুত্ব দিতে হবে কেন? আমি তো বলছি আমার ভুল হয়েছে, "মেজাজটাই তিরিক্ষি হয়ে গেলো শ্রাবণের। বড্ড চটাং চটাং কথা বলা শিখেছে সুমন আজকাল। আগে কিছু হলেই সুমন গাল ফুলাতো কিন্তু দুটো চকলেটেই আবার কাজ হয়ে যেতো। আসলে মেয়েগুলোর বড় হওয়াই উচিত না, বড় হলে এগুলো একঘাট বেশি বোঝে সবকিছু।

শ্রাবনের এমন অদ্ভুত উদাহরন শুনে সুমন কি বলবে না বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলো।সেদিনের পর তো ও আর কোন প্রশ্নই করেনি শ্রাবণদাকে, এমনকি আসেওনি খুব একটা। মামীর দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় এসেছে তার ছেলেকে নিয়ে। ওনারা প্রীতির সাথে ওই ছেলের সম্মন্ধ করতে আগ্রহী। মামীও আগ্রহী,এই নিয়ে বাসায় লঙ্কাকান্ড চলছে। বাসার ছেলেদের কারো মত নেই ,অনুজদা তো শুনতেই ঝেড়ে না করে দিয়েছে। মামী সেই নিয়ে অভিমান করে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ওদিকে অতিথিরা বাড়িতেই আছেন, তিনবেলা বাড়তি লোকের রান্না করতে হচ্ছে আর সমস্ত রান্নার দায়িত্ব এখন সুমনের।

"সুমো তুই কি বুঝছিস আমি কি বলছি।" শ্রাবণ বিরক্ত না হয়ে পারলনা। সুমন ওর কোন কথারই ঠিকমতো কোন উত্তর দিচ্ছে না, কেমন ছাড়া ছাড়া একটা ভাব।

"না... আর আমার এতো বুঝে কাজ নেই, আমি এখন চললাম।"

"আরে তুই......," শ্রাবণ দ্বিতীয় কিছু বলার আগেই সুমন দ্রুত ট্রে হাতে বের হয়ে গেলো। শ্রাবণ বুঝলো না এখন ওর ঠিক কি করা উচিত। শ্রাবন তো ওর সাধ্যমতো চেষ্টা করছে, নিজের ভুল স্বীকারও করছে। শ্রাবণ কথাটা না বুঝে ভুলে বলে ফেলেছে,ওর যে তখন বাবার কাছ থেকে ঝাড়ি খেয়ে মাতালের মতো অবস্থা... সুমো সেটা বুঝবে না! আশ্চর্য.. উল্টো নিমের মতো তিতেবুড়ি হবার কায়দা রপ্ত করছে, বেয়াদব একটা।

আর মানুষ কি ভুল করে না? তাই বলে সেই ভুল ধরে কেউ বসে থাকে? আর সুমো ওর থেকে কত ছোট তারপরও শ্রাবণ বার বার ওর কাছে মাফ চাইছে আর ওই একরত্তি মেয়ে দেখো কত তেজ দেখিয়ে বেরাচ্ছে। একদম তুলে ধরে একটা আছাড় মারা উচিত ছিলো শ্রাবণের... কত বড় আস্পর্ধা, দুদিনের চেনা নেই জানা নেই তার সাথে হা হা হি হি.... কান দুটো টেনে কুলোর মতো করে দেয়া উচিত একদম।

বুকের ভিতরে টগবগ করতে থাকা চাপা ঈর্ষার বাষ্পগুলো কেমন গতিময় ট্রেনের হুইসেলের মতো সতর্কবার্তা দিচ্ছিলো শ্রাবণকে, কিন্তু এখন কিছু বলা যাবে না... পাশার উল্টো দান এখন তৃতীয় পক্ষের হাতে, দরকার হলে মাথায় বরফ ঢেলে হলেও শ্রাবণকে ঠান্ডা হতে হবে। আসলে শ্রাবণ নিজেই এসবের জন্য দায়ী। বেশি বেশি লাই দিয়ে ত্যাদর বানিয়ে ফেলেছে সুমনকে।

কিন্তু যতোই নিজেকে খোড়া যুক্তি শ্রাবণ দেখাক, সুমন ওর উপর অভিমান করেছে এই জিনিসটাতে শ্রাবণ মোটেই অভ্যস্ত নয়। সুমন অন্যায় করলে একটু পর সরি বলবে, কিন্ত এবার স্বয়ং শ্রাবণ চৌধুরীর ভুল... তারপর আবার ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে অপরাধীর মতো আর সুমন সেটা একেবারে গ্রাহ্যিই করছেনা, বিরক্তি আর দুরুদুরু বক্ষে ভয় দুটোই শ্রাবণকে সমানতালে পিষ্ট করতে লাগলো।

কতদিন দূরে দূরে থাকবি... কতদিন কথা বলবিনা? কিছুর দরকার পরলে তো এই শ্রাবণের কাছেই আসতে হবে...... না। তখন আবার ক্ষমা চেয়ে নিলেই হবে। একথা মনে হতেই এক মূহুর্তের জন্য অবর্ণনীয় এক আত্মতুষ্টি বোধ হলো শ্রাবণের। খামাখোই বেশি বেশি চিন্তা করছে ও, পরিস্থিতি আসলে অতটাও খারাপ না যতোটা ও ভাবছে।

কিন্তু কাল থেকে মৌমির কথাগুলোও যে একভাবে ওর মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, তার কি করবে শ্রাবন। মৌমিতা আজেবাজে কি সব উল্টাপাল্টা চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছে ওর মাথায়। এখন সেগুলোই থেকে থেকে কিলবিল করে ওর মাথা খাচ্ছে।

লাবণ্য নাকি সেদিন মৌমিতার বাসায় গিয়ে কেঁদেছে। মৌমিকে বলেছে, "আমি কেন শ্রাবনের অভ্যাস হলাম নারে মৌমি?"

কাল সেকথা বলতে এসে মৌমিতা শ্রাবণের সাথে রীতিমতো ঝগড়াই করেছে,বলেছে "শ্রাবন আমার মনে হয় তুই তোর অভ্যাস আর ভালোবাসাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলছিস। তাই আগে তুই নিজে ডিসাইড কর কে তোর লাইফে মোস্ট ইম্পরট্যান্ট। তারপর ডিসিশন নে।"

"মানে? " শ্রাবণ এমন অবাক হয়নি বহুদিন।

"মানে তুই ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ যে সুমো তোর অভ্যাস নাকি ভালোবাসা।"

শ্রাবণ মৌমিতার কথায় কি রিঅ্যাকশন দেখাবে বুঝতে পারছিলনা। মৌমির মাথাটা বোধহয় একেবারে গেছে। এই মেয়েগুলো দিনরাত রোমান্টিক মুভি দেখে দেখে পুরো আউলে গেছে। সুমোকে, শ্রাবণ ভালোবাসে তো অবশ্যই কিন্তু এর সাথে ওর অভ্যাসের বা অনাভ্যাসের কি হলো.....

" বোকার মতো হাসবি না তো "

" আশ্চর্য তুই বোকার মতো বলতে পারবি আর আমি হাসতেও পারবো না?"

"পারবি কিন্তু বোকা কেবলার মতো নয়।"

"আচ্ছা আমি কি বোকামি করলাম একটু শুনি।"

"এই যে তুই এখনো এই ফারাকটাই ধরতে পারিস না যে তুই সুমনকে ভালোবাসিস না... ও শুধু তোর নিত্যকার একটা অভ্যাস।"

"আশ্চর্য ভালোবাসবো না কেন? সুমোকে তো অনেক অনেক ভালোবাসি.... মেয়েটা ছোটবেলা থেকে আমাদের বাসাতেই প্রায় বড় হলো। আর ও তো আসলে একটু দুষ্টু হলেও ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে।"

"তাই অনেক মিষ্টি? " মৌমিতা ঝাঁঝের সাথে বলে উঠেছিলো।

"না একটু টকও আছে সাথে... তাই টকমিষ্টি। "

"আর বউ হিসেবে তোর সুমো কেমন মিষ্টি হবে?"

"হা হা হা.. ওই হাড় জ্বালানিটাকে বিয়ে করবে কোন বুদ্ধু... তার জীবন একদম ভাজা ভাজা করে ফেলবে গর্দভটা।"

"আর কেউ করবে কিনা জানিনা তবে তুই করবি এটা শিওর। ভালোবাসিস ভালোবাসিস বলিস সারাক্ষণ অথচ কেমন ভালোবাসিস নিজেই সেটা বুঝিস না। সুমনকে নিজের গলার সাথে ঘন্টার মতো ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে তোর সবচেয়ে বড় প্যাশন।"

"আহ! মৌমি কি সব বলছিস? বন্ধু বলেই কিন্তু লিমিট ক্রস করা ঠিক না। সুমো আমাকে দাদা বলে।"

"দাদা বলে তো কি হয়েছে... সুমন তোর কোন কাজিন দূরে থাক লতায় পাতায়ও রিলেটিভ না। আর লিমিটের কথা বললি, লিমিট আমি ক্রস করছি না তুই... বন্ধুত্বে ধোঁকা আমি দিচ্ছি না তুই, একবার নিজেই নিজেকে এই প্রশ্নগুলো কর। তারপর বল আমি তোকে সাহায্য করছি কি না? তুই তো একটা অন্ধ ... লাবন্যর মতো মেয়ে তোর পিছে পিছে ঘুরছে তা বাদ দিয়ে ওই সুমো কি খেলো, কার কাছে পড়লো তাই নিয়ে তোর যতো জ্বালা। বলবো না তো কি... তোকে আয়না দেখানোটা আমার ধর্ম হয়ে দাড়িয়েছে এখন।"

কথাগুলো ছুড়ে দিয়ে গটগট করে শ্রাবনের ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো মৌমি। কিন্তু ফিরে তাকালে দেখতে পেত শ্রাবণের মুখটা বিস্ময়ে কেমন হতবাক হয়ে গিয়েছিলো।

মৌমি ওকে কি বলতে চাইছে....  শ্রাবণ সুমোকে ভালেবাসে... মানে অন্যরকম ভাবে ভালোবাসে! কিন্তু তা কি করে হয়.... ওরকম হলে শ্রাবণ জানবেনা?

চলবে.......

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro