Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

১৩

"খুব খুশি হলাম ভাই. ... এই বয়সে তোমার মতো প্রানোচ্ছল একজন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পেরে। সুমন বার বার তোমার নাম করছিলো।"

বীরেন বাবু নিজের মাথার চকচকে টাকটাতে হাত বুলালেন।

"আমিও, ইনফ্যাক্ট আমি সুমনের মুখে আপনার কথা এতো শুনেছি যে আপনার সাথে পরিচয় হওয়ার খুবই শখ ছিলো।"

বীরেন বাবু হাসলেন, আদিত্য ছেলেটাকে এই এক ঘন্টায় ভীষন পছন্দ করে ফেলেছেন তিনি। খুবই খোলামনের আর হাসিখুশি একটা ছেলে। তার মধ্যে আবার বিদেশে যাচ্ছে উচ্চতর ডিগ্রীর শিক্ষায় শিক্ষিত হবার জন্য, বিদ্বান লোকের কদর করতে কোন কার্পন্য নেই বীরেন বাবুর।

এদিকে আসার পর থেকে এই এক ঘন্টায় রাজ্যের সব খবর নিজের থলিতে মজুদ করেছে আদিত্য। বীরেন বাবু সুমনকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই, সুমন ছুটলো নাস্তার ব্যবস্থা করতে।

ডাব্বুকে সাথে নিয়ে আগেই মোড়ের রাজকুমার মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে আধা কেজি মিষ্টি এনে রেখেছে সুমন। কিন্তু ঘরে নাস্তা নিয়ে ঢুকতে গিয়ে দেখলো বড় বিপদ, আষাঢ় মাসের বৃষ্টির মতো হুট করেই শ্রাবণ মহারাজের আগমন ঘটেছে বীরেন বাবুর ঘরে। সুমন তাড়াতাড়ি আর এক কাপ চায়ের বন্দোবস্ত করলো। সাথে একটা বাটিতে খানিকটা বুন্দিয়া নিলো।
শ্রাবণ খুব পছন্দ করে বলে নির্মলা মাঝে মাঝেই এই জিনিসটা বাড়িতে নিজ হাতে বানান। সাথে সুমন থাকলে সুমনও অনেক সময় এটা তৈরী করতে সাহায্য করে। কিন্তু আজ মিষ্টির দোকানে এতো রঙের বুন্দিয়া দেখে আর লোভ সামলাতে পারেনি সুমন, কিনে নিয়ে এসেছে খানিকটা। এটা সুমন আসলে শ্রাবণের জন্যই এনেছে, সেদিন পড়া পেরেছিলো বলে খুশিতে।

শ্রাবণ একমাস আগের একটা সংবাদপত্রের কাটিং হাতে নিয়ে জটিল একটা কেসের বিষয়ে শলাপরামর্শ করার জন্য বীরেন বাবুর ঘরে ঢুকেই থমকে গেল। সাধারনত বীরেন বাবুর রুমে বাইরের  লোক এখন আর সহজে ঢোকে না, বাসার সদস্য বাদে শ্রাবণই সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করে। সেখানে একেবারেই অপরিচিত একজন মানুষ বীরেন বাবুর একেবার পাশে বসে গল্প করছে, শ্রাবণ দাড়াবে না চলে আসবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না।

"আরে আরে শ্রাবন.... এদিকে এসো, তোমার সাথে এনার পরিচয় করিয়ে দেই। ইনি হচ্ছেন আদিত্য নারায়ন , সুমনের বান্ধবী চারুর মামা।"

দপ করে কিছু একটা জ্বলে উঠে পুড়তে লাগলো...  সেই পোড়ার গন্ধে আশে ওাশের প্রতিবেশি কম বেশি সজাগ হলেও বাড়ির মালিক যেমন নাক শুঁকে বলে কার বাড়ি আগুন লাগলো....  শ্রাবণের অবস্থাও কিছুটা তেমন।

আদিত্য নামটা শোনার সাথে সাথেই সামনে বসা ভদ্রলোকের সম্মন্ধে বাকি কিছু শোনার আগ্রহটা পুরোপুরি উবে গেছে শ্রাবণের। এমনকি এক ঝলক দেখার পর কাজ আছে বলে বাসায় যাবার উদ্দেশ্যে পাও বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু বাঁধ সাধলো সুমন, হাতে ট্রে আর তাতে তিন কাপ চা। ঈর্ষা, অহং সব মিলিয়ে .…. নিজে তাতে বেশ জ্বলে পুড়ে তেতে উঠতে লাগলো শ্রাবণ। বাহ, বেশ চা খাওয়া হয় তারমানে আজকাল, অবশ্য হবেই বা না কেন.... বান্ধবীর মামার কাছে পড়তে তো আর সারাবেলা লাগে না, বাকি সময়ে আড্ডাবাজিটা তো করাই যায়।

"ওই দেখো.. সুমন তোমার চা টাও নিয়ে এসেছে, কথা না বাড়িয়ে বরং সেটা খেয়েই যাও।"

বীরেন বাবুর অনুরোধে অনিচ্ছাকৃত ভাবেই বসতে হলো শ্রাবণকে।

"বুঝলে আদিত্য. … এই হলো আমাদের জেন্টলম্যান শ্রাবণ চৌধুরী, দুর্দান্ত একজন উকিল... যদি কোন মামলায় ফেঁসে যাও, সোজা ওর কাছে চলে আসবে, নিশ্চিত কেস জিতিয়ে দিবে।"

বীরেন বাবুকে, শ্রাবণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখে আদিত্য নিজ থেকেই শ্রাবণের সাথে কথা বলার আগ্রহ দেখাল। কিন্তু টুকটাক প্রশ্ন করার ফাঁকেই আদিত্য খেয়াল করলো, শ্রাবণ লোকটা অত্যন্ত গম্ভীর প্রকৃতির এবং সে আদিত্যর সাথে আলাপ করতে তেমন আগ্রহী নয়, তাই আদিত্য  চুপচাপ সুমনের দেয়া মিষ্টি খেতে লাগলো।

ওদিকে আদিত্যর সাধারন প্রশ্নেও শ্রাবণের কপাল কুঁচকে যাচ্ছে নিজের অজান্তেই। কিন্তু এতো জ্বলুনির কারনটা শ্রাবণ ধরতে পারছেনা কোনভাবেই।

তবে আচমকাই  মেজাজটা হঠাৎ ছেচল্লিশ ডীগ্রী থেকে চার ডীগ্রীতে নেমে আসলো সুমনের হাতের বাটিটা দেখে। বাটি ভরা বুন্দিয়া। এটা শ্রাবণের ফেভারিট একটা খাবার। সুমো এটা জানে, তারমানে চা টা তাহলে ওর জন্যই এনেছে সুমো। মুখের উপর রাগের ছোপটা আসি আসি করে আবার পালিয়ে গেলো শ্রাবনের।

আদিত্য মিষ্টি খেতে খেতে খুব মনযোগ দিয়ে খেয়াল করলো সুমন, শ্রাবণের চায়ের কাপে পুরো দুই চা চামচ চিনি মেশালো।

দুই চা চামচ চিনি...!

আদিত্য সেটা দেখেই বাঁধা দেবার কথা ভাবছিলো। আদিত্য নিজে মিষ্টি সাধারণত এড়িয়ে চলে, চায়ে চিনি সে খুবই সামান্য খায়। কিন্তু আদিত্য বলার আগেই সুমন নিজেই আদিত্যকে কতটুকু চিনি দিবে জিজ্ঞেস করলো।

"এক চা চামচই এনাফ। দুই চা চামচ চিনি আমার সহ্য হবেনা।"

আদিত্যর কথায় সুমন হেসে ফেললো, " আসলে শ্রাবণদা বরাবরই ওই দুই চা চামচ চিনি খায় চায়ে, ছোটবেলা থেকেই দেখছি।"

"বাহ... তাহলে তো শ্রাবণ বাবু সম্পর্কে কারও কিছু জানার থাকলে তাকে শুধু সুমনের কাছ পর্যন্ত আসলেই হবে।"

"হ্যা, তা বলতে পারো, নাতনির আমার চৌধুরী বাড়ির নাড়ি নক্ষত্র সব মুখস্থ। শ্রাবণের রুমাল থেকে শুরু করে ওদের বাড়ির বউ বন্দনার শাড়িও  সুমন ঠিক করে দেয়। শ্রাবণের মা নির্মলা তো সুমন বলতে পাগল, মোটে চোখের আড়াল করতে দিতে চায় না। একদম নিজের মেয়ের মতন  ভালোবাসে। "

বীরেন বাবুর মুখে নিজের মায়ের কথা শুনে আস্তে আস্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো শ্রাবণের মুখটা। বাবা - মা দুজনকেই সে খুব ভালোবাসে তবে মায়ের প্রতি টানটা শ্রাবণের বরাবরই একটু বেশি। যে কোন কাজে মায়ের সাপোর্টাই ও সবচেয়ে বেশি পেয়েছে,  এমনকি সুমোর জন্য টাকা -পয়সা দেয়ার ক্ষেত্রেও মা ওকে অনুমতি দিয়েছেন সবসময়।

কিন্তু আদিত্যর কাছে বীরেন বাবুর কথাগুলো একদমই সঠিক বলে মনে হলোনা, উল্টো শ্রাবণের উপর সন্দেহ জন্মাল। শ্রাবণ চৌধুরীর পরিবারের  যে আর্থিক বিবরন আদিত্য, বীরেন বাবুর কাছে শুনেছে তাতে সুমনের মতো গরীবকে যতসামান্য সাহায্য করার বিনিময় চৌধুরীরা যে বিশাল আকারের মুনাফা লুটে নেয় এই সন্দেহ তার দৃঢ় হলো। তা না হলে সুমনের পড়াশোনার দায়িত্ব নিশ্চই চৌধুরী পরিবার বহন করতো,আর সেক্ষেত্রে নিশ্চই সুমনকে বিনি পয়সায় মাস্টার খুঁজে বেড়াতে হতো না।

"আমি উঠছি... সুমো তোর কাজ শেষ হলে একবার আমার সাথে দেখা করিস," বলে শ্রাবন আর দাড়াল না। আগের বিরক্তিকর ভাবটা যদিও এই মুহুর্তে আর নেই তবু আদিত্যকে ওর পছন্দ হয়নি। কেমন গায়ে পড়া টাইপের লোক , শ্রাবণ দ্রুত ও বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।

আদিত্যও আর বেশি সময় থাকলো না। আবার একদিন আসবে বলে বীরেন বাবুর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

............................

"শ্রাবনদা কই গো বড়মা? "

"বাড়িতেই আছে, শান্তনুর ঘরে। দুটো মিলে কি যেন একটা পাকাচ্ছে। "

"দেখো... মনে হচ্ছে নাড়ুতে পাক দিচ্ছে। চলো গিয়ে দেখি।"

"তুই যেয়ে দেখে আয় যা,আমার ওসব নাটক দেখার সময় নেই," বলে নির্মলা একটা রান্নার ম্যাগাজিন নিয়ে বসলেন। এমনিতে তিনি খুব কম সময় বসে থাকেন, কিন্তু আজ সময় পেয়ে তিনি আর অন্যকিছু করতে রাজি নন।

"সত্যি যাব বড়মা? "

"যা বললাম তো।"

সুমন, শান্তনুর ঘরের দরজায় দাড়াতেই শুনতে পেলো, শ্রাবণ কি নিয়ে যেন খুব বিরক্ত। দরজায় সুমনের ছায়া দেখতে পেয়েই ভরাট স্বরে জিজ্ঞেস করলো, "কি চাই? "

শ্রাবণের মুখ থমথম করছে। প্রশ্ন শুনেই সুমন আধমরা হয়ে গেলো।

"শ্রাবনদা তুমি আমায় আসতে বলেছিলে। " সুমন মিনমিন করে উত্তর দিল।

"আসতে বলেছিলাম বলেই কি সব জায়গায় চলে আসতে হবে বুকটান করে ? এ বাড়িতে কোথাও যেয়ে যদি একটু শান্তি পাওয়া যায়, দফায় দফায় সবগুলো কাজেরলোক গোয়েন্দাগিরি করে বেড়ায়। প্রাইভেসি বলে এ বাড়িতে কোন জিনিসই নেই।"

শ্রাবণ, সুমনকে প্রচুর বকে বটে কিন্তু সেটা সুমন এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। শ্রাবণ ওকে বকবে এটা যেন একটা অলিখিত চুক্তি। কিন্তু আজ শ্রাবণের বলার ভঙ্গিতে কি একটা যেন ছিলো। সুমন উত্তর দেবার ভাষা হারিয়ে ফেললো। শ্রাবণদা কি তবে ওকে গরীব বলে ঘেন্না করে, না হলে ওকে কাজের মানুষদের সাথে তুলনা কেন করলো?

"আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি যাই।"

সুমন আর এক সেকেন্ডও সেখানে দাড়াল না।

"আশ্চর্য তুই বাবার রাগ সুমনের উপর ঝাড়ছিস কেন? ও কি জেনে কিছু করেছে ? আর পাত্রীর বাবা-মাই বাবার কাছে বলেছে যে, তাদের  মেয়ের বিয়ে তারা অনাত্র দিতে চান। এখন  এটা শুনেই বাবা চটে আগুন হয়ে গেছেন,তাই তোকে বকেছেন। "

"কেন আমি আবার সুমোকে কি বললাম ?

" কি বললাম মানে.... সুমনকি আমাদের বাড়ির কাজের বুয়া? "

শান্তুনুর কথায়  হুশ হলো শ্রাবনের।

শিট..... শিট।

প্রায় দৌড়ে ওঘর থেকে নিজের ঘরে আসলো শ্রাবণ। কিন্তু ঘর তো ফাঁকা, সুমন নামের মায়া হরিণের কোন অস্তিত্ব সেখানে নেই।

চলবে.........

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro