১২
"সুমো এটা কিরে? "
"খোঁপার কাটা। "
"খোঁপার আবার কাটাও হয় নাকি, দেখিস বিড়াল যেনো ভুল করে খেয়ে না ফেলে।"
"এটা রূপোর তৈরী, বিড়াল খাবে কি করে?"
"আসল বিড়াল না খাক মানুষ বিড়াল তো খেতে পারে।"
"মানে? "
"মানে এটা কার খোঁপার কাটা?" শ্রাবণ আঙ্গুল দিয়ে নাড়িয়ে দিতেই কাটার মাথায় সরু চেইনের শেষে ঝুলে থাকা বলগুলো রুমঝুম করে বেজে উঠলো।
"মনোরমা মাসির। "
"মানে তোর ওই বান্ধবীর... কি যেন নাম? "
"চারু কিন্তু এগুলো ওর নয়, মাসিরই।"
"কালই এটা ফেরত দিয়ে দিবি আর নিজে গিয়ে অল্প কিছু টাকা জমা দিয়ে বানাতে দিয়ে আসবি। বাকিটা আমি নিয়ে আসার সময় দিয়ে দিবো।"
"তার কোন দরকার নেই, আমি কালই দিয়ে আসবো কাটাগুলো।"
"হমম... কিন্তু দোকানে যেয়ে বানাতেও দিয়ে আসবি। খোঁপায় কাটা গুলো দেখতে ভালো লাগছে, "বলেই পায়ে স্যান্ডেল গলিয়ে সেখান থেকে উঠে গেল শ্রাবণ।
সুমন স্থির হয়ে বসে রইলো। এই একটা কথায় ওর ভিতরে জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে নড়লেই ও সোফা থেকে পড়ে যাবে,কিন্তু খোঁপায় কাটা পড়ায় ওকে ভালো লাগছে না শুধু কাটাগুলোই সুন্দর! আর... আর কাটাগুলো কার জন্য বানাতে বললো শ্রাবনদা... সুমনের জন্য না নতুন বউয়ের জন্য !!!
..............................
"এতো কি ভাবছো বলতো...... "
মঞ্জু মাথার বালিশটা ঝাড়তে ঝাড়তে সমীরের দিকে তাকাল। সমীর সেই তখন থেকে চুপ মেরে আছে। কি এতে ভাবে আজকাল মঞ্জু বোঝে না। এদিকে মঞ্জু, অনুজের বিয়ের জন্য একটা মেয়ে দেখেছে প্রিয়তি নাম, কিন্তু ও সেই কথাটা তোলার কোন সুযোগ পাচ্ছে না। প্রিয়তি মঞ্জুর বান্ধবী শোভার বড় মেয়ে। মেয়েটা বেশ সুন্দরী আর ভদ্র। অনুজের সাথে মানাবে বেশ।
মঞ্জুর কথায় কপাল থেকে হাত সরাল সমীর। রামনাথ চৌধুরী যদিও সরাসরি কিছু বলেননি তবু উনার সামনে গেলেই ভীষন একটা অস্বস্তি ঘিরে ধরে সমীরকে। মনে করেছিল বড় ছেলে অনুজ স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশে গেছে, পাশ করে বের হলে সে নিজেই লোনের টাকাটা শোধ করে দিবে। কিন্তু এখনও অনুজের ভালো কোন চাকরি হয়নি। আপাতত একটা বইয়ের দোকানে কাজ করছে সে টেম্পোরারি , ভালো চাকরি কবে পাবে জানা নেই, এর মধ্যে যদি রামনাথ চৌধুরী হুট করে টাকাটা চেয়ে বসেন... লজ্জার সীমা থাকবনা।
"কি হলো... কথা বলছোনা কেন? "
"কিছু না.. ভাবছি রামনাথদার টাকাগুলো শোধ করতে পারবো কবে। "
মঞ্জুকেও চিন্তত দেখালো।
"আচ্ছা এ ব্যাপারে শ্রাবনের সাথে একটু আলাপ করলে হতো না? ওতো বাবার সাথে প্রায়ই কি সব নিয়ে আলাপ আলোচনা করে।"
"সে তো করবেই , দুজনেই একই প্রফেশনের লোক। বাবার একসময় কত জনপ্রিয়তা ছিলো,"
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সমীর। সে নিজে ছেলে হয়ে বাবার সেই নামটাকে উজ্জ্বল করতে পারেনি, সারাজীবন ছোট চাকরি করে গেল। তাই নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়েও ছেলেকে বাইরে পড়তে যাওয়ার টাকা জোগাড় করে দিয়েছে।
"আহা আমি তা বলছি না। আরও অন্য বিষয় নিয়েও ওদের আলোচনা হয়, যেমন সুমনের বিয়ে নিয়ে বাবা একদিন শ্রাবণকে পাত্র দেখার কথা বলেছিলেন। শ্রাবণও বলছিলো ওসব নিয়ে বাবাকে ভাবতে হবে না।"
"কি বলো তুমি... সুমনের বিয়ে? " সমীর বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করেন। " সুমনের বয়স কত হলো... বিয়ের বয়স কি হয়েছে ওর?"
"ওমা.... এতে এতো চমকানোর কি হলো, মেয়ে তলে তলে কত বড় হয়ে গিয়েছে... বিয়ে দিবেনা কি ঘরে বসিয়ে পূজো করবে? যতো সব আদিখ্যেতা। আর কোথ থেকে এসব ফালতু নিয়ম চালু হয়েছে কে জানে, আঠারোর আগে বলে বিয়ে দেয়া যাবেনা... হুহ। আমাকে বিয়ে করার সময় এসব নিয়ম কানুনগুলো কোন চুলোয় ছিলো শুনি... ষোল বছর তো তখন কোন সমস্যা মনে হয়নি তোমার।"
মঞ্জুর বিরক্ত মুখ দেখে চুপসে গেলেন সমীর। ষোল বছর কেন, বাবা বললে সে সময় দশ বছরের মেয়েকেই বিয়ে করতেন তিনি। মেরুদন্ডী প্রানী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়ার কথা ভাবতেও লজ্জা করে তার।
সমীর আসলে সারাটা জীবন ঝামেলা ভয় পান। আর তার কপালেই এই মুখরা মহিলাটির আাবির্ভাব হয়েছে। এই মঞ্জুর ভয়েই সুমনের জন্য কিছু করতে পারেন না তিনি কখনও, আর সুমনের জন্য করেন না বলে প্রীতিটাও বাদ পড়ে
যায়।
...........................................
"বল কি বলবি " শ্রাবণ চেয়ার টেনে বসলো।
"বলবো তোর আন্ডা "
মৌমিতার কথায় বিপদের গন্ধ পেল শ্রাবণ। আবার অমীয়র সাথে নির্ঘাত কিছু বাজিয়েছে।
" আচ্ছা কথা তোর পেটেই থাক আমাকে বরং একটা মোগলাই খাওয়া... অনেক খিদে লেগেছে।"
"শ্রাবণ, আমি কিন্তু সিরিয়াস।"
"আমিও সিরিয়াস "
মৌমিতা রেগে গিয়ে মুখ ফোলাল।
"আচ্ছা বল...."
"তুই লাবণ্যকে পছন্দ করিস?"
অতর্কিত প্রশ্ন, তবে কথাটা একটু প্যাঁচালো শ্রাবণ।
"অপছন্দের কারন... না মানে আমাদের ইয়ারের ছেলেদের ক্রাশ ছিলো তো লাবণ্য।"
"তার মানে তোরও ছিলো "
শ্রাবণ উত্তর না দিয়ে হাসলো।
"হাসবি না... আমি লাবণ্যর হয়ে তোকে একটা কথা বলতে চাই। "
"মানে, লাবণ্য কি কথা বলা ভুলে গেছে? "
"কি মানে... তুই কি অন্ধ শ্রাবণ? মেয়েটা তোর বাড়ি আসলো, তুই স্নেহ করিস বলে তোর সিক নেইবারকে ও দেখতে পর্যন্ত গেলো। আর তুই তার সাথে কি বিহেভ করছিস। তোর কি বোঝা উচিত না যে মেয়েটা কেন এগুলো করছে।
শ্রাবণ এবার সত্যি মৌমিতার দিকে অনিশ্চয়তার দৃষ্টিতে তাকাল। ওর নিজের কাছেও যে লাবণ্যর আচরন অন্যরকম লাগেনি তা নয় কিন্তু সেটা কি আসলেই সিরিয়াস কিছু? সেদিন ওর দিদির বিয়েতেও কিসব বলছিলো।
"কি হলো...। দেখ, শ্রাবণ তুই যথেষ্ট বুদ্ধিমান একটা মানুষ। আমার মনে হয়না লাবণ্যর চোখমুখ দেখে তুই কিছু আঁচ করিসনি।"
শ্রাবণের মনে হলো এর পরের কথাগুলো আসলে লাবণ্যর সাথেই হওয়া উচিত।
" তুই সবটা ঠিক ঠিক জানিস তো মৌমি।"
"অবশ্যই। কোন কনফিউশান থাকলে কি আমি তোকে কথাটা এভাবে বলতাম, আর আমি তোদের দুজনকেই খুব ভালোবাসি। এখন তুই বল তুই কি চাস।"
শ্রাবণ কি চায়? শ্রাবণ বেশ অনেকটা সময় নিয়ে রেস্টুরেন্টের জানালার ওপাশে হাটাতে থাকা মানুষগুলোকে দেখলো। লাবণ্যকে ভালো লাগেনা এটা বললে মিথ্যা হবে, কলেজের নবীন বরনের দিনে গাঢ় সবুজ রঙের জামদানী পড়া মেয়েটি মনে ভীষন দাগ কেটেছিলো, মুগ্ধতায় ছেয়ে গিয়েছিলো চারপাশটা। পরে জানতে পেরেছিলো মেয়েটি ওদের সাথেই পড়ে। মাঝামাঝে টুকটাক কথা হতো, ব্যাস। কিন্তু সেটুকুর গন্ডী পেরিয়ে আরও বিশেষ হবার সময় বা সুযোগ কোনটাই ওর বা লাবণ্যর হয়ে উঠোনি। কিন্তু এখন এতোদিন পর সেই মেয়েটি নিজে যেচে ওকে কিছু বলতে চায়, সুযোগটা কি শ্রাবণের হারান উচিত?
"লাবণ্যকে তুই বল যে , কাল আমি বিকেলের পরে
নিউমার্কেটের প্রথম গেইটে ওর জন্য অপেক্ষা করবো।"
"তুই শিওর তো যে আসবি?"
"শিওর "
"আর আই লাভ ইউটা...... "
"এটাও তোর কাছেই কনফার্ম করতে হবে?"
"হি হি হি.. না না ঠিক আছে ওটা ঠিক মানুষটাকে বললেই হবে।"
......................................
"সুমন কি কখনও দেশের বাইরে গিয়েছো? "
আদিত্যর প্রশ্নে সুমন মাথা নেড়ে না করলো।
"কখনো যেতে ইচ্ছে করেনা?"
"খুব করে... কিন্তু বেড়াতে যেতে, থাকার জন্য একটুও ভালো লাগে না।"
"বারে না থেকেই কি করে বলছো যে ভালো লাগবে না, লাগতেও তো পারে।"
"লাগবেনা কারন আমি আমার নানুকে ছাড়া থাকতে পারিনা। "
"তাহলে তো একসময় এ দেশেও থাকতে পারবেনা।"
আদিত্য কথাটা বলার সাথে সাথে সুমন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। লোকটা এমন কথা কি করে বললো...
"রাগ হলে? আমি কিন্তু জাস্ট ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য উল্লেখ করলাম," আদিত্য বললো।
"নানু ছাড়া আমার সত্যিকার অর্থে কেউ নেই। এসব কথা শুনলে আমার তাই খুব মন খারাপ হয়। আর কখনো এই কথা না বললে খুশি হবো।"
আদিত্য, সুমনের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। সুমন তো ভীষন আবেগপ্রবন... মেয়েটার চোখ দুটো ছলছল করছে।
"আরে.. তুমি তো সিরিয়াসলি মাইন্ড করেছ দেখছি। আই অ্যাম সরি... আর কখনো বলবো না," আদিত্য সাথে সাথে দু'হাত দিয়ে কান ধরলো।
সুমনের কিন্তু আসলেও খুব রাগ হয়েছিলো। তবে আদিত্য লোকটা মোটেও খারাপ না, সুমন নিজেও সেটা জানে। তা না হলে একেবারে বিনে পয়সায় সময় নষ্ট করে এতোগুলো মানুষকে পড়াতো না। কথাটা মনে হতেই লজ্জা লাগলো সুমনের।
আদিত্যর সাথে এই আচরন করা আসলে ওর মানায় না। আসলে...সব দোষ শ্রাবনদার। খাতা ভরে কি সব ছাইপাঁশ লিখতে দিয়েছে ওকে, তাই নিয়ে প্রীতি হেসেই বাঁচছে না। সুমনের খুব রাগ হচ্ছে এই নিয়ে।
"আ..আমাকে মাফ করবেন প্লিজ, আমি দুঃখিত।"
"আরে এই মেয়ে.. তুমি কি পাগল নাকি। আমার কাছে মাফ চাইছো কেন? "
"আপনার সাথে এভাবে কথা বলা আমার ঠিক হয়নি। আমি খুবই দুঃখিত, আমায় মাফ করবেন প্লিজ। "
"উমম... এক শর্তে মাফ করবো।"
"কি সেটা? "
"তোমাদের বাড়িতে গিয়ে তোমার নানুর সাথে পরিচিত হতে চাই, সাথে তোমার হাতের এক কাপ চা যদি হয়.. বেটার।"
"আচ্ছা... কিন্তু আপনি সত্যি আমাদের বাসায় যাবেন? "
"হ্যা, তোমার নানুর সাথে পরিচিত হতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।"
"আমরা কিন্তু আপনাদের মতো অতো বড়লোক নই। "
"কিন্তু আমিতো তোমার নানুর কাছে গিয়ে আমার কাজের পারিশ্রমিক চাইবো।"
"মানে? আপনি না বলেছিলেন কোন টাকা- পয়সা নেবেন না।"
"টাকা নিবো সেটা কখন বললাম, চাইলাম তো পারিশ্রমিক।"
"কি পারিশ্রমিক চাইবেন? " কৌতূহল হলো ভীষন সুমনের।
"সে যার কাছে চাইবো তার কাছেই বলবো, আপাতত আমি কবে তোমাদের বাড়ি যাবো সেটা বলো।"
"আপনি আসুন যখন আপনার মন চায়। "
"তাহলে পরশু বিকেলে... কেমন? "
সুমন সম্মতি জানিয়ে দ্রুত হাটতে লাগলো। এসেছিলো কাল সকালে পড়তে আসতে পারবেনা সেটা জানাতে। কাল মাঞ্জু মামীর আত্মীয় আসবে গ্রামের বাড়ি থেকে। কিন্তু এখন দ্রুত বাসায় যেতে হবে।এখন আবার নতুন আইন জারি হয়েছে ওর উপরে, প্রতিদিন সকালের বদলে ওকে এখন রাত সাতটার পরে বইখাতা নিয়ে হাজির হতে হয় শ্রাবণের দরবারে। সুমনের দশ মিনিট দেরী হলে তার সাজা চলে অতিরিক্ত বিশ মিনিট। পনের হলে ত্রিশ মিনিট... পারলে সুমন এখন এক দৌড়ে শ্রাবণের ঘরে পৌছাত।
...........................................
লাবণ্য আজ চুলটা বেশ অনেক সময় নিয়ে বেঁধেছে। হালকার উপর মেকাপও দিয়েছে। কিন্তু বুকের ঢিপঢিপটা কেন যেন কিছুতেই কমাতে পারছেনা।
"আর কিছু দিতে বলবো?" হালকা স্বরে জিজ্ঞেস করলো শ্রাবণ।
"নাহ..."
"তাহলে শুধু কফিটাই থাক। "
লাবণ্য স্মিত হাসে। শ্রাবণ এখনও কফি খাবে কিনা এই নিয়ে পড়ে আছে, ওকি এতো সেজেগুজে এসেছে এই কফি খাবার জন্য।
"উহহ..," শ্রাবণ নিজেও খুব অদ্ভুত ফিল করছে। আসলে লাবণ্যকে দেখলে একটা অদ্ভুত জড়তা ওকে ছেয়ে ধরে। মনে হয় অতিরিক্ত নার্ভাসনেসে ওর সব উল্টেপাল্টে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও থেকে শুরুটা করা দরকার আর আজ প্রথম পদক্ষেপটা বোধহয় ওকেই নিতেই হবে। " মৌমি বলছিলো...."
"আমিই বলতে বলেছিলাম "
লাবণ্যর কথাটা খুব স্পষ্ট, শ্রাবণের অদ্ভুত লাগলো, একদম খাপ খোলা তলোয়ার। কোন রাখ ঢাক নেই।
"আসলে বাসায় বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে... দিদির বিয়েটা হয়ে গেলোতো। তুমি কি একবার বাবার সাথে দেখা করবে?"
"লাবণ্য আমি আসলে এক্ষুনি তোমাকে ফাইনাল কিছু বলতে পারছিনা, আমার সময় চাই।"
"কেন? তোমার কি আমাকে পছন্দ নয়? "
"আসলে বাবা এক জায়গায় আমার জন্য পাত্রী দেখেছে। ওরা এখনও কিছু জানায়ইনি। আর বাবার মান- সম্মানকে আমি ছোট করতে পারবনা।"
"তারমানে কি ওদের হ্যা বা না এর উপর আমাদের ফিউচার নির্ভর করছে। "
"শুনতে ভালো না লাগলেও আপাতত এটাই সত্যি।"
"কিন্তু তোমার পার্সোনাল পছন্দটা... আমার সাথে এই দেখা করতে আসাটা, এটাকে আমি ঠিক কি হিসেবে নিব? "
"আসলে সত্যিটা কি জানো লাবণ্য, আমি....."
কথাটা শেষ করার আগেই শ্রাবণের ফোনটা ভাইব্রেট করা শুরু করলো। লাবণ্য স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ছবিটা সুমনের। চট করে বিরক্তিটা আকাশে গিয়ে ঠেকল লাবণ্যর। আসলে গোল টেবিলে বসার জন্য খাবারের ট্রে সরাতে গিয়ে শ্রাবণের ফোনটা শ্রাবনের চেয়ে লাবণ্যর কাছে বেশি চলে গিয়েছে, তাই আড়চোখেও ' কলিং ফ্রম হোম ' শব্দটা পড়তে কোন বেগ পেতে হলোনা লাবণ্যর। এই মেয়ে সিসিটিভির মতো সব জায়গায় শ্রাবণকে ফলো করে নাকি? আগেও যখন কথা বলতে গিয়েছিলো তখন নিজে না পারলেও নিজের দূত পাঠিয়ে দিয়েছিলো আর এখন স্বয়ং নিজেই এসে হাজির হয়েছে।
.................….......................
"সুমো আজ তুই কি খেয়েছিস রে? "
"কেন বলতো? "
সুমন ভয়ে ভয়ে তাকালো। আবার কোন ভুল হলো ওর... হুসস এতো কষ্ট করে মুখস্থ করলো আর এখন আবার সেই ভুল। এরকম হলে পড়াশুনা ছেড়ে বিবাগী হবে সুমন।
"কি হয়নি তাই বল"
"কোনটা হয়নি? " সুমন কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো।
"তুই তো আজ হান্ড্রেড পারসেন্ট কারেক্ট দেখছি... নাকি আমার চোখই গেলো।"
"সত্যি.... "
"সত্যি, ভুল খুঁজে পাচ্ছিনা যে কোথাও।"
"আদি স্যার ইউ আর এ জিনিয়াস, থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ।" সুমন নিজের অজান্তেই আঙ্গুলের মাথা ঠোঁটে ছুঁইয়ে ফ্লাইং কিস ছুড়লো।
ঠাস শব্দ করে কলমটা নিচে গড়িয়ে পড়ে গেল শ্রাবণের কাছ থেকে। আদি স্যার, তারমানে ওই চারুর মামা লাগে যে লোকটা তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে সুমো। অবশ্য সেই আজকাল সুমনকে সকাল বেলাটা পড়ায়। শ্রাবণ তাই কাজ শেষে সন্ধ্যায় এসে সুমনকে নিয়ে বসে। কিন্তু সুমনের এমন ঝলমলে চেহারায় 'আদি স্যার' শব্দটা শুনতেই শ্রাবণের মুখটা ঘোর অন্ধকার হয়ে আসলো, তার উপর আবার ফ্লাইং কিস।
সুমনের মুখে ওই নামটা শুনলেই চিরবির করে জ্বালা ধরে শ্রাবণের আর সুমোটা শুধু ওই নাম জপ করতে থাকে... অসহ্য।
সুমনের চোখেমুখ তখন নতুন আলোয় উদ্ভাসিত।
চলবে.....
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro