১১
"নির্মলা...... ছেলেকে বলেছো সময় মতো বাসায়, থাকতে? " রামনাথ পাঞ্জাবীর বোতাম লাগাতে লাগাতে জিজ্ঞেস করলেন। একটু পরেই সব মেহমান আসতে শুরু করবে।
"বলেছি... "
"তারপরও যদি তোমার গুনধর ছেলে মনের ভুলে হাওয়া খেতে চলে যায় তাহলে তুমি আমায় কিছু বলতে পারবে না," জোরোর সাথে আলমারির দরাজাটা বন্ধ করলেন নির্মলা।
আজ সকাল থেকে প্রচন্ড গরমে নেয়ে একাকার হচ্ছেন তিনি। ওদিকে বড় বৌমা কিছুই খেতে পারেনা, একেবারেই দুর্বল হয়ে গেছে। কাল তাই তার বাপ- মা এসে নিয়ে গেছে। তার একটা খবর যে তিনি নেবেন সে সময়টা অব্দি নির্মলা করতে পারছে না। এখন সুমন আসলে তাকে দিয়েই বন্দনার একটা খবর নেয়াতে হবে ভাবলেন তিনি।
"হমম, " বলে ঘর থেকে বের হলেন রামনাথ। আজকাল ছাব্বিশ, সাতাশ স্কোয়ার ফিটের উপর যে ফ্ল্যাট বাড়ি গুলোই দেখেন সবগুলোই বেশ মনে ধরে তার। ইচ্ছে আছে দুই ছেলের জন্য দুটো আলাদা প্লটে বাড়ি তুলে দেবার। ছড়ান ছেটানো এতো জায়গা ফেলে না রেখে ফ্ল্যাট করলে ওদের পক্ষে মেইনটেইন করাটা অনেক সহজ হবে।
আসলে রামানাথ চৌধুরী অপেক্ষা করছেন পাশের বাড়ির বীরেন বাবুর বাড়িটি কিনবার জন্য। এক সময় বীরেন বাবুও বেশ দুদে উকিল ছিলেন। কিন্তু বীরেন বাবুর ছেলে সমীর তেমন উন্নতি করতে পারেনি, কোনমতে এম এ পাশ করে একটা বেসরকারি চাকরিতে ঢুকেছে। বেতন যদিও তেমন ভালো না তবু সমীর চাকরিটা করছে বহু বছর, কারন বর্তমান বাজারে চাকরির বড় অভাব আর বেকারের সংখ্যা অগুনিত। এছাড়া ছেলে অনুজকে বিদেশে পাঠাবার সময় অনেক টাকা লোন করতে হয়েছে সমীরকে, তার সিংহভাগই রামনাথের কাছ থেকে নেয়া। রামনাথও খুশি হয়েই দিয়েছে। একটা সময় এতো বড় বাড়ি ওরা আর চালাতে পারবেনা। তখন এমনিও বেচবে আর অমনিও বেচেবে। তাই সুযোগের অপেক্ষায় আছেন রামনাথ। সমীর আরও একটু অভাবে পড়লেই তিনি মোচড়টা দিবেন টাকার জন্য। আর হুট করে বেশি টাকা যে সমীর যোগাড় করতে পারবেনা সেটা রামনাথ স্পটই জানেন। তার কেবল দরকার একটু ধৈর্য ধরবার অপেক্ষা।
বীরেন বাবুর বাড়িটা কেনা হলেই দুই ছেলের নামে দুটো আট তলা বাড়ি তুলে ফেলবেন রামনাথ। বড় ছেলে শান্তনু এমনিতেই বৈষয়িক,তাকে নিয়ে রামনাথের তেমন কোন টেনশন নেই, যতো টেনশন এই ছোট ছেলেটাকে নিয়ে। দেয়া থোয়ায় সে ওস্তাদ, বন্ধু- বান্ধবরা কেবল চাইতে যা দেরি, নইলে শ্রাবণের কাছে চেয়ে পাবেনা এমন লোক খুব কম আছে। তাই বন্ধু মহলে সে বেশ সুপরিচিত।
শ্রাবণের যেন সর্বদা দেয়ার তাড়া থাকে। সমীরের ভাগ্নিটাকে ওই টাকা পয়সা দিয়ে মানুষ করে দিলো। ভবিষ্যতে বিয়ের খরচাটাও হয়তো চৌধুরী বাড়িকেই বইতে হবে। রামনাথের স্ত্রী নির্মলাও সুমন মেয়েটাকে যথার্থ ভালেবাসে। তাই বিয়ের খরচটা দিতে রামনাথের বিশেষ কোন আপত্তি নেই। এলাকায় তারা বিত্তশালী হিসেবেই সুপরিচিত। রামনাথের চাওয়া কেবল একটাই, কোন ক্রমেই ও বাড়িটা যেন বেহাত না হয়।
"কেউ কথা রাখেনি ভালোবাসেনি
কেউ চুপি চুপি পায় কাছে আসেনি,
কেউ গোধূলি বেলায় দু'হাত বাড়িয়ে
খুব আদর মেখে আর ডাকেনি।
আর ডাকেনি.."
সুমন চুপচাপ বিছানায় শুয়ে শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবছিলো। ওর এমন কেন হলো? সুমন এখন কি করবে? কে ওকে বাঁচাবে, কে ওকে উপায় বলে দিবে... কি করলে এমন যন্ত্রনা কমে। সুমন এতোকাল যে কোন ধরনের সমস্যায় একটা লোকের উপরই নির্দ্বিধায় নির্ভর করে এসেছে, তার শ্রাবণদার উপর। আজ সেই মানুষটার কাছে একটা সৎ বুদ্ধি নেবার উপায় ওর নেই .. এর চেয়ে বড় বিপদ আর কি হতে পারে।
খানিক আগে ও বাড়ির কাজের লোক এসে ডেকে গেছে একবার সুমনকে। বন্দনা বৌদিকে ফোন করে বড়মার সাথে কথা বলিয়ে দিতে হবে। কিন্তু গেলেই যে আবার শ্রাবণদার সাথে দেখা হবে... আর দেখা হলেই ওর বুকে ভালো লাগার অনুভূতির ছোট ছোট দুলুনি উঠবে আর সেই দুলুনির ধাক্কায় ওর ছোট্ট পালের নৌকটা কোন ঘাটে গিয়ে ভীড়বে তার কোন ঠিক আছে?
আজ বাদে কাল শ্রাবনদার বিয়ে হয়ে যাবে দিপ্তী নামের মেয়েটার সাথে। এমন অবস্থায় কোথায় সুমন, শ্রাবনদার বিয়েতে নাচবে, গাইবে, ফূর্তি করবে কি.... উটকো এক রোগ বাঁধিয়ে বসে আছে। নিজেকে তুই তোকারি করতে করতে মেরে ফেলছে সুমন... রাগে কতক্ষণ নিজের চুল মুঠি করে টেনেছেও, ও অন্ধ কেন হলোনা?
"সুমনদি তুমি এখনও শুয়ে আছো? বড়মা যে তোমায় ডাকতে লোক পাঠিয়েছে। "
প্রীতির কথাটা শুনে হুড়মুড় করে উঠে বসলো সুমন।
"কে এসেছে... তাকে বল আমি যাচ্ছি এক্ষুনি।"
"বাগানের মালীর মেয়ে নয়ন, আমি এমনি বলে দিয়েছি যে তুমি যাচ্ছো।"
সুমন পেটের কাছের বালিশটা সরিয়ে উঠে দাড়ালো। চারদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে। পাখির ডাকগুলো কেমন অস্থির, যেন দিন শেষে ভীষন ঘরে ফেরার তাড়া ছিলো। তারপর একদম চুপচাপ,কেবল ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। সুমন চোখের জলটুকু মুছে নিলো। ওরও ভীষন ঘরে যেতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু সত্যিকারের ঘর মেলা যে সহজ নয়... অনেক সাধ্য সাধনার ব্যাপার, বড় কপাল করে আসতে হয় ঘর পেতে হলে।
সুমনকে দেখেই বাটিতে গাজরের হালুয়া তুলে দিলেন নির্মলা। সুমন কথা না বলে বাটিটা হাতে নিয়ে খেতে বসে গেলো। আজ সারাদিন ব্যাথার জ্বালায় ও বিছানাতেই পড়ে ছিলো শ্রাবণের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে। এখন খাবার দেখেই পেটে ছুঁচো নাচা শুরু করেছে।
"সুমনদিদি দাদাবাবু ডাকছে... " রাজু চায়ের কাপ বেসিনে ধুতে ধুতে বলে গেলো।
"শ্রাবনদা কি এখন রেগে আছে বড়মা? "
"রেগে আছে কি না জানিনা তবে তোর কাকাবাবু আজ ওকে বাসার বাইরে বের হতে দেননি, সেই রাগে বাবু দুপুরে কিছু খায়নি, বিকেলে অবশ্য লুচি করে দিয়েছিলাম। এখন রাগ পড়েছে কি উঠেছে তা জানি না। "
"সেকি দুপুরে কিচ্ছু খায়নি?" সুমনের মুখের হালুয়া মুখে রয়ে গেলো।
"খেয়েছে লুচি, সে নাকি বাড়ির কেউ না।"
"আমি কি একটু হালুয়া নিয়ে যাবো বড়মা... খেতে ভালো স্বাদ হয়েছে," সুমনের মনটা খারাপ হয়ে গেছে। শ্রাবনদা সহজে খাবার বন্ধ করেনা। কাকাবাবু কি অনেক বকলো?
"নিয়ে গিয়ে দেখ... খেলে তো ভালই। বাবার উপর রাগ সেটা আমার উপর ঝাড়া কেন বাপু... আমি তো তাই বলেছি যা আমাকে হুকুম করেছে।"
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নির্মলা। শান্তনুটা বাবা কিছু বললে নির্বিচারে মেনে নেয় কিন্তু শ্রাবনটা শুধু গোল বাধায়। এই ছেলে নিয়ে হয়েছে তার যতো জ্বালা।
সুমন ঘরে ঢুকে দেখে শ্রাবণের আলমারি মোটামুটি লন্ডভন্ড।
"তুমি কি খুঁজে পাচ্ছোনা?"
"ও তুই এসে গেছিস, দেখতো কোন পাঞ্জাবিটা পরি?"
সুমন হেসে ফেললো। মেহমান আসবে বলে কাকাবাবু নিশ্চই ভালো কিছু পরতে বলেছে। তবে বাবুর রাগ পড়েছে।
"তুমি পাঞ্জাবি পরবে না শার্ট... সেদিন যে মেয়ে দেখতে যাবে বলে শার্ট বানাতে দিলে, ওগুলো হয়ে গেছে... আমি নিয়ে এসেছি টেইলার্স থেকে।"
"তোকে এই কথা কে বললো যে আমি পাত্রী দেখার জন্য শার্ট বানাতে দিয়েছি... যত্তোসব ফালতু কথা, " শ্রাবণের ভ্রু ততক্ষণে কুঁচকে গেছে। অস্থির ভাবে নিচের ঠোঁটে নিচে আঙ্গুল ঘষছে সে।
"না কেউ বলেনি... আমি নিজেই মনে করেছিলাম।
কিন্তু ওগুলো একদম নতুন আর আয়রন করা আছে, পরলে পরতে পারো কিন্তু।"
"না থাক আজ পাঞ্জাবি পরি, তুই একটা ঠিক করে দে দেখি, আমার মাথা গুলাচ্ছে।"
"তো এত্তো গাদা খানিক কাপড় আরও বের করো... খালি যত্তোসব উল্টাফুল্টা কাজ করবে আর সুমো সুমো বলে চেঁচাবে। "
"ওই... আজকে কখন চ্যাচালামরে তোর সাথে.. হ্যা... পটপট বেশি না করে আমার কাপড় ঠিক করে দিয়ে এখান থেকে ফোট।"
সুমন হালুয়ার বাটিটা ঠক করে টেবিলের এক পাশে রেখে কাপড় বাছতে লাগলো। কি সব কাপড় বের করেছে... নিশ্চই নিচের তাকের কাপড়ও সব বের করেছে। সুমন, শ্রাবণের কতগুলো কাপড় আলাদা করেছিলো রিপেয়ারিং করতে হবে বলে। সেগুলো ও আলাদা করে সরিয়েও ছিলো কিন্তু মাঝখানে কিছু দিন নানা কারনে সেগুলো ঠিক করতে দেওয়া হয়নি। শ্রাবণ সেগুলো সহ সব ঘেটে একাকার করে রেখেছে। কপাল......
সুমন খুঁজে খুঁজে গত পূজোর একটা পাঞ্জাবি শ্রাবণের হাতে ধরিয়ে দিলো," এটা পরো এর ভাঁজ এখনো ভাঙ্গা হয়নি।"
"তোর ব্যাথা কমেছে?"
সুমন মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। বেশি কথা না বলাই শ্রেয়, শেষে আবার লেখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফ্যাসাদ শুরু হবে।
"ভালো... ওষুধ নিয়ম করে খাচ্ছিস? "
শ্রাবণ গায়ের শার্টটা খোলার জন্য বোতামে হাত দিতেই সুমন দ্রুত কিছু কাপড় বিছানা থেকে তুলে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো।
"খাচ্ছি... তুমি কাপড় পাল্টে হালুয়াটুকু খাও। আমি এই কাপড়গুলো রিপায়েরিংয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করি।"
"হমম,"শ্রাবণ কাপড় পরায় মনযোগ দিলো।
সুমন এক দৌড়ে ঘরের বাইরে এসে দম ফেললো। এর আগে ওর সামনে হাজার দিন শ্রাবনদা শার্ট পাল্টিয়েছে কিন্তু সুমন না কোনদিন সেটা খেয়াল করে দেখেছে না ওর বুক এরকম ধুকধুক করেছে। কিন্তু আজ শার্টের বোতামে হাত দিতেই ওর নাক, কান গরম হচ্ছিলো... দৌড়ে না এসে ওর উপায় ছিলো না। শ্রাবনদা জানেও না সুমন আগের সেই লক্ষী মেয়েটা নেই, বড্ড খারাপ হয়ে গেছে।
আটটা বাজার পরপরই রামনাথ চৌধুরীর পরিচিত গণ্যমাণ্য লোকজন চৌধুরী বাড়ির গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকা শুরু করেছে। রামনাথ ছোট ছেলেকে সাথে নিয়ে হলরুমের দরজায় এসে দাড়ালেন।
সুমন বাসার পিছনের গেট দিয়ে শ্রাবণদের বাড়িতে এসে ঢুকলো। এখন বাসার সামনের গেটে গাড়ির হাট বসেছে। সুমন তাই ওইদিকের পথই মাড়ায়নি।
সুমন শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে চলে আসতে চাইছিলো, যে আজ রাতে ও আর আসবে না চৌধুরী বাড়ি। একেতো সুমনের মন ভালোনা.... সাথে শরীরও খারাপ। কিন্তু বড়মা বলে বসলেন, "তুই একটা ব্যাথার ওষুধ খেয়ে, কাপড়টা পাল্টে চলে আয় সুমন।"
অগত্যা সুমনকে আসতেই হলো। বড়মাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা ওর নেই। মাথায় হাত দিয়ে খোঁপার কাটা গুলো ঠিক আছে কিনা একবার দেখলো সুমন।
ও কাপড় পরে চারুদের বাসায় ঢুকতেই মনোরমা মাসি বললেন, "চুলগুলো একটু ভালো করে খোঁপা কর সুমন, ভারী সুন্দর লাগবে। "
সুমনের ইচ্ছে না থাকা সত্বেও তাই মনোরমার কাছে গিয়ে বসেতে হয়েছে। গুরুজনের কথা উপেক্ষা করা বেয়াদবি হয়ে যায়।
মনোরমার বিউটিশিয়ান কোর্স করা আছে। চারুর চুল তিনি নিজেই কেটে দেন, মাঝেমাঝে এই সুবিধাটা সুমনও নেয়। মনোরমা খুব যত্নের সাথে বেনি করে করে সুন্দর একটা খোঁপা করলেন সুমনের লম্বা চুলগুলো নিয়ে,সাথে নিজের কয়েকটা ঝুনঝুনি দেয়া রূপার কাটাও সুমনের খোঁপায় গুঁজে দিলেন। সুমন কাটাগুলো আবারো হাত দিয়ে দেখলো ঠিকঠাক আছে কিনা।
পিছনের গোল প্যাঁচানো সিড়ি বেয়ে দোতালায় উঠতেই শান্তনুদার সাথে দেখা হলো সুমনের।
"কিরে সুমন, তোর বৌদির খোঁজ নিয়েছিলি একবারো? "
"নিয়েছি খানিক আগেই... বৌদি বলেছে তোমার সাথে আর কোনদিন কথা বলবে না।"
"কেন আমি আবার কি করলাম? "
"বৌটাকে বাপের বাড়ি পাঠালে বুঝি একবার খবর নিতে হয়না? "
"আমি তো পাঠাইনি, সে নিজে সেচ্ছায় গেছে... তাহলে আবার এখন এতো তলব কেন?"
"সে যাই হোক তুমি যেয়ো কিন্তু "
"দেখি। কিন্তু তুই আজ এতো সাজুগুজু করেছিস কেনরে ?"
"ওমা সাজগোজ কই করলাম, কেবল চোখে একটু কাজল টেনেছি।"
"কি জানি আমার তো মনে হচ্ছে পা থেকে মাথা অব্দি সেজেছিস, " বলতে বলতে শান্তনু হলরুমের দিকে এগুলো। আরও দেরি করলে বাবার কাছে ভয়নক ধমক খেতে হবে।
হলরুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে শ্রাবণ বাবার পাশে উুসখুশ করতে লাগলো।
"কি হলো.. এমন করছো কেন? "
"কিছু না, পায়ে মনে হয় মশা বসছে।"
"তুমি তাহলে সৌরভ বাবুর সাথে গিয়ে কথা বলো, আমি আসছি।"
"আচ্ছা..., " শ্রাবণ কথা না বাড়িয়ে সৌরভ বাবুর কাছে এসে দাড়ালো। সৌরভ সম্পর্কে পাত্রীর বড়মামা হন আর স্বপরিবারে বিদেশে থাকেন।এর চেয়ে বেশি শ্রাবণ আর বেশি কিছু জানেনা।
শ্রাবণ এগিয়ে গিয়ে সৌরভ বাবুর কুশল জানতে চাইলো। কথায় কথায় সৌরভ জানালেন তার ভাগ্নী দিপ্তী সর্ব গুনে গুণান্বিতা। শ্রাবণ সব কথাতেই কেবল হেসে হেসে মাথা নাড়াতে লাগলো। না বুঝে উল্টোেপাল্টা কিছু না বলাই ভালো, এছাড়া এতো গুনে গুনান্বিতা মেয়ের প্রসংশা কি করে করে... শ্রাবণ এ ব্যাপারে তেমন পটু না।
"তোমার কি এখানেই থেকে যাবার ইচ্ছা না বাইরে সেটেল হতে চাও? " সৌরভ জিজ্ঞেস করলেন। শ্রাবণ ছেলেটা দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম, ভাগ্নীর সাথে মানাবে ভালো।
"আপাতত বাইরে যাবার কোন ইচ্ছে নেই। তাছাড়া আমরা মাত্র দুটো ভাই। একজন, আরেকজনকে না দেখে বেশিদিন থাকতে পারিনা।"
"ওহহোহো... হোম সিকনেস আছে তাহলে ভালোমতো। "
"জ্বী তাও বলতে পারেন।"
শ্রাবণের সাথে আরও টুকটাক নানা বিষয়ে কথা বলছিলো সৌরভ। হঠাৎ করেই পাশের থেকে একটা বাচ্চা এসে শ্রাবণের উপর পড়লো। বাচ্চাটার হাতে সফট ড্রিংসের গ্লাস ছিলো। গ্লাসটা ভেঙ্গে গিয়ে চুরচুর হলো, কিন্তু জুসটুকু গিয়ে ছিটকে পড়লো সৌরভের গায়ে। দামী একটা পাঞ্জাবি পরে এসেছিলেন তিনি। বেচারার মনটা যারপরনাই দুঃখিত হয়ে গেলো। রামনাথ চৌধুরী দ্রুত শ্রাবণকে বললেন সৌরভকে তার রুমে নিয়ে যেতে।
শ্রাবণ, সৌরভকে নিয়ে নিজের ঘরে যাওয়ার মুখে নির্মলা আর সুমনকে দেখে থমকে দাড়ালো।
"সুমো শোন তো.... "
"কি হয়েছে শ্রাবণদা? সুমন, শ্রাবণের সাথের লোকটিকে চিনতে না পারলেও বুঝতে পারলো ইনিই হয়তো নতুন বৌদির মামা।
"একটা কাজ করতে হবে যে,জুস পড়ে উনার কাপড়টা নষ্ট হয়ে গেছে। চট করে আমার আলমারি থেকে একটা পাঞ্জাবি বের করে দে।"
সুমন ততক্ষণে নতুন বৌদির মামাটিকে ভালো মতো দেখে নিয়েছে। লোকটি, শ্রাবনদার মতো অতো লম্বা না হলেও কাছাকাছি তবে পেটটা একটু সৌখিন। সুমন চাবি দিয়ে আলমারি খুলে ভালো একটা পাঞ্জাবি খুঁজে বের করে দিলো দ্রুত হাতে। সৌরভ পরিচ্ছন্ন হয়ে কাপড় পাল্টে আসতে আসতে একবার পিছন ফিরে চাইলেন। শ্রাবণ তখন মাথা নিচু করে সুমন নামের মেয়েটিকে কি যেন বলছে।
...............................................
"শোন"
"বলো "
"বলছি আমার কিন্তু পাত্রকে তেমন সুবিধার ঠেকছে না, শেষে দেবদাস - পার্বতী কেস না হয়। ওই মেয়ের তো দেখি শ্রাবণের কি খেলে অ্যালার্জি হয় সব মুখস্থ, এরকম হলে তোমার ভাগ্নী এবাড়ি এসে করবেটা কি?"
"মানে? "সৌরভ তার স্ত্রী লতার কথায় যথেষ্ট বিপদের গন্ধ পেলেন।
"মানে ওই মেয়েতো মনে হচ্ছে তোমাদের জামাইবাবুর ব্যাংকের ক্যাশিয়ার কাম বাবুর্চি।"
"কি বলছো?"
"হ্যাগো, আমি আড়ি পেতে শুনলাম মাত্রই। শ্রাবণ মেয়েটাকে বলছে আমার ড্রয়ারে কত টাকা থাকে কার্ডের টাকা জমা দিলে? আর মেয়েটা কিরম সব গড়গড় করে হিসেব দিয়ে দিলো। ওই মেয়ের সাথে নির্ঘাত লটর পটর আছে এই ছেলের। "
"হমম... ব্যাপারটা একটু গোলমেলেই লাগছে।" সৌরভের চোখের সামনে খানিক আগে দেখে আসা ব্যাপারটা ভেসে উঠলো।
"একটু না অনেক, আমি বলি কি তুমি বরং ওদের না করে দাও। এই ছেলের চাইতে মহিম কিন্তু ঢের ভালো আর দিপ্তীকে মহিম অনেক পছন্দও করে।"
"দেখছি, কিন্তু দিদিকে বলবোটা কি?"
"সে আমি দেখছি, দিদিকে বুঝিয়ে বললে কোনমতেই এখানে মেয়ে দিতে রাজি হবে না। বিয়ের পরে জানলে না হয় ভিন্ন কথা, এখানে তো সতীন বিয়ের আগেই খেলেধূলে বেড়াচ্ছে।"
সৌরভও ব্যাপরটা গুরুত্বের সাথেই নিলেন। ছোটখাট অনেক ঘটনা অনেক সময় অনেক বড়বড় ঝড়ের পূর্বাভাস দেয়, এটাকে তাচ্ছিল্য করা মোটেই উচিত হবেনা।
চলবে....
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro