শিরোনামহীন গল্প - ৪
A/n: উৎসর্গ করছি আমার বন্ধু মাহফুজকে। সে আমার লেখালেখির ব্যাপারে খুবই কৌতূহলী। আফসুস সে ওয়াটপ্যাড ব্যবহার করে না. . .
***********
শেষ পর্ব:
লোকটার অভিনয় ক্ষমতা দেখে অবাক হবার পাশাপাশি প্রচণ্ড রাগ হতে লাগল।
-আপনি হয়তো আমার কথায় রেগে যাচ্ছেন। কিন্তু একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুনতো, কোন বাবা সুখী হতে পারে যখন তার একমাত্র সন্তান বাবার পেনশনের টাকায় ফ্ল্যাট কিনে অথচ বাবা মাকে থাকতে হয় দুরুমের চিলেকোঠায়?
-আপ... আপনি এসব-
-এসব আপনার বাবাই আমাকে বলেছেন।
-আপনি মিথ্যা বলছেন। আন্দাজে ঢিল ছুড়েছেন মাত্র।
-গ্রাজুয়েশনের ঠিক আগমুহূর্তে আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন কক্সবাজার। তারপর যখন আপনি কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে বাসায় ফিরলেন, আপনার বাবা মি. জনাথন দুজনকেই বুকে টেনে নিয়েছিলেন। তার সপ্তাহখানেক পরই তড়িঘড়ি করে আপনাদের আবার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছে কারন আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট ছিলেন।
আমার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। কুল কুল করে ঘামতে লাগলাম আমি। পালিয়ে যাবার কথা আমাদের দুই ফ্যামেলির সবাই জানলেও ডায়ানার প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা আমি, ডায়ানা আর আমার মা বাবা ছাড়া কেউই জানতো না। এইলোক এটা জানার প্রশ্নই আসে না। তাহলে কি লোকটা সত্যিই...?
-আর বলবো? আপনার বাবা খুবই সৎ মানুষ ছিলেন। একমাত্র ছেলেকে মানুষ করতে গিয়ে স্ত্রীর জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেন নি। আর তার মৃত্যুর পর আপনার মার যখন ভাড়া বাসাটা ছেড়ে দিতে হল, আপনি তাকে নিজের বাসায় নিয়ে আসার পরিবর্তে ওল্ড এজ হোমে রেখে আসলেন। তাদের এতবছরের কষ্ট আর যন্ত্রণার সেরা প্রতিদানটাই দিলেন।
মাথায় যেন বাজ পড়লো আমার। বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল একদম। এ কি করেছি আমি? যন্ত্রের মত উঠে দাঁড়ালাম আমি। একদৌড়ে গ্রেভইয়ার্ড পেরিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলাম। পিছন ফিরে হেনরির দিকে তাকাবার সাহস বা ইচ্ছা কোনটাই আমার ছিল না।
আমাকে মায়ের কাছে যেতে হবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পরিশিষ্ট : অলিভার পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পেত হেনরি একগাল হাসি নিয়ে মোবাইল ফোনটা কানে চেপে রেখেছে।
-হ্যাঁ মিসেস হ্যামিং, আপনার লাগেজ গুছিয়ে ফেলুন। অলিভার রওনা দিয়েছে।
ষাট পেরোনো বৃদ্ধা আদ্র নয়নে হেনরিকে ধন্যবাদ জানালেন। হেনরি যখন ওল্ড এজ হোমের ওপর প্রতিবেদন লিখতে এদেশে আসে তখনই মিসেস হ্যামিংয়ের সাথে তার দেখা।
হেনরি ওল্ড এজ হোমের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে না। ওর রাগটা তখনই হয়েছে যখন জানতে পেরেছে অলিভার মায়ের খরচাপাতি কিছুই পাঠায় না। মিসেস হ্যামিং তার চিকিৎসা ও যাবতীয় খরচাপাতির জন্য অন্যের দান দক্ষিণার ওপর নির্ভরশীল। তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাটাকে একটা শিক্ষা না দিলেই নয়। অলিভারের মায়ের থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে সব তথ্য জেনে নেয়, এমনকি ডায়ানার কনসিভ করার ব্যাপারটাও।
হেনরি প্রথমে ভেবেছে মায়ের সাথে যোগাযোগ না রাখলেও বাবার কবরে অলিভার না এসে পারেই না। মিসেস হ্যামিংয়েরও তাই ধারণা ছিল। ওর ভিসার মেয়াদ ছিল দুই সপ্তাহ, সেটা গিয়ে ঠেকেছে দুই মাসে। অবশেষে অলিভার বাবার মৃত্যুদিবসে গ্রেভইয়ার্ডে পা রাখল। আজ যদি অলিভার না আসত তাহলে কাজ অসমাপ্ত রেখেই হেনরিকে নিউজিল্যান্ডে ফিরতে হত।
দুই মাস এদেশে অবস্থান করার কারনে হোক অথবা সম্পূর্ণ নিজের ইন্সটিংক্ট থেকেই হোক, হেনরি জানত এদেশের মানুষ হিসেবে অলিভার সুপার ন্যাচারাল পাওয়ারে বিশ্বাস করার সম্ভাবনা প্রবল। আর হলোও তাই। ব্যাকআপ প্ল্যান বলতে তেমন কিছু ছিল না ওর। যদি অলিভার এই টোপটা না গিলত তাহলে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করার চিন্তা করে রেখেছিল। থ্যাংক গড সেদিকে যেতে হয়নি।
অবশ্য মিসেস হ্যামিংয়ের কাছ থেকে যতদূর জেনেছে মানুষ হিসেবে খারাপ না অলিভার। হয়তো ভুল করে ভুল পথে পা দিয়েছিল। আর সঠিক পথ দেখিয়ে দেবার জন্য তেমন গাইডও কেউ ছিল না। অলিভারের মাঝে নিজের ছায়া যেন দেখতে পেয়েছিল সে। তাই তো নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর জন্য এতকিছু করতে হল।
ফ্লাইট টেক অফ করার সাথে সাথে হেনরি সীট টাকে পেছনে হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে অলিভার আর তার মায়ের সাক্ষাতের দৃশ্য কল্পনা করলো।
আচ্ছা অলিভার কি এখন ছোটবেলার মত মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে? নাকি মায়ের হাতে খাবার জন্য বায়না করছে? মিসেস হ্যামিং কি অলিভারের প্রিয় খাবারটা রান্না করছেন?
হেনরি মনে করতে চেষ্টা করলো কতদিন হয় সে মায়ের তৈরি আপেল পাই খায় নি। পুরোনো কথা মনে করে আর কাজ নেই। একটা মানুষকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে.....
********************
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro