শিরোনামহীন গল্প ৩
আজ বৃষ্টিতে খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে। মনে পড়েনা শেষ কবে বৃষ্টির পানিতে নিজের দেহমন সিক্ত হয়েছিল। সিফাতের সাথে শেষবার যখন রিকশায় করে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম? নাকি যখন ওর বাসার সামনে টানা দুঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলাম? ঠাণ্ডা লেগে যা অবস্থা হয়েছিল আমার! 'গেট ওয়েল সুন' এর বদলে যোগাযোগ না করার অনুরোধ করেছিল টেক্সট করে।
কিন্তু নিজেকে বেধে রাখতে পারিনি আমি। নির্লজ্জের মত বার বার ছুটে গিয়েছি। মিনতি করেছি যাতে ডিভোর্স না দেয়। ঘরে না হোক অন্তত মনে যেন আমাকে ঠাই দেয়। ও ছাড়া আমার ছিলই বা কি? আট বছরের চেনা মানুষটা নিমিষেই অচেনা হয়ে গেলো।
রিমি হাত ধরে বাইরে নিয়ে এলো আমাকে।
-চলে যা। এরপর আর যেন তোকে সিফাতের ধারেকাছে না দেখি।
-রিমি, তুই আমার সাথে-
গলার কাছে কান্নাটা দলা পাকিয়ে উঠলো। কেউ নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে এমনটা করতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমার আড়ালে ওদের মেলামেশার কথা অনেক বান্ধবীরাই বলেছে আমাকে। কিন্তু আমি উল্টো ওদের বকে দিয়েছি ফালতু গসিপ করার জন্য।
-আজ থেকে আমি তোর কেউ না। সিন ক্রিয়েট করিস না। প্লিজ চলে যা এখান থেকে।
*****************
কফির মগ হাতে নিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম। ঠিক যেরকম সিফাত আর আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে টুকুর টুকুর কথা বলতাম। কখনোবা সিফাত পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরত। মগ থেকে কিছু কফি ছিটকে পড়ত আমার হাতের ওপর। কিন্ত ওর দেহের স্পর্শ সব ব্যথা ভুলিয়ে দিত। ইচ্ছে হত অনন্তকাল এভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখুক আমায়।
কলিং বেলের শব্দে সম্ভিত ফিরে পেলাম আমি। দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলেদিলাম। হামিদ অফিস থেকে ফিরে এসেছে।
না। একা জীবন আমিও পার করছিনা। হামিদের স্ত্রী আমি। প্রায় দুবছর আগে বিপত্নীক হামিদ আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। চুন খেয়ে মুখ পুড়লে যেমন দই দেখলেও ভয় করে, আমারও তেমনি ভয় করছিল। কিন্তু জীবন কোন সিনেমা নয়। আমাদের দুজনেরই কাউকে দরকার ছিল। একে অপরকে আঁকড়ে নতুন করে বাঁচার সপ্ন দেখছি আমরা।
হামিদ অসুখী রাখেনি আমায়। যখন তখন ভালোবাসি বলে আদরে আদরে সিক্ত করে দেহমন। আমি জানি আমিও ওকে ভালোবাসি। কিন্ত কতটা? আর কতটা ভালোবাসলে সিফাতকে মুছে ফেলতে পারবো মন থেকে?
*******************
ভদ্রমহিলাকে বিদায় দিয়ে দরজাটা লক করে ঘুরে দাঁড়াতেই চোখ ডলতে ডলতে হামিদ শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
-কোনও মহিলার গলার আওয়াজ শুনলাম মনে হলো?
-সিফাতের মা এসেছিলেন।
কোনো ভণিতা না করে জবাব দিলাম আমি। বিয়ের আগেই সব বলে রেখেছিলাম ওকে। উত্তরে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল শুধু।
-ও আচ্ছা। চা খাবে?
-না। সিফাতের মার সাথে খেয়েছি।
হাতের কাপের দিকে ইশারা করলাম। আমার হাত থেকে ট্রে টা প্রায় কেড়ে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।
-তুমি জানতে চাও না উনি কেন এসেছিলেন?
সাত মাসের ভারী পেট নিয়ে ওর পেছন পেছন রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলাম।
-তুমি কি কখনো আমাকে কিছু না বলে থাকতে পেরেছ? আমি জিজ্ঞেস না করলেও তুমি নিজ থেকে বলবে।
আমার চেয়ারের পাশে রাখা মোড়াটায় বসে আমার ডান পা নিজের কোলে তুলে নিলো। আলতো হাতে পায়ের পাতা ম্যাসাজ করতে করতে হটাত এগিয়ে এসে আমার পেটে চুমু খেল।
-উনি আমার সাথে দূরব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছিলেন। রিমির জরায়ুতে ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
-তুমি কি বললে?
-ক্ষমা করে বিদায় দিয়েছি।
-রিমিকে দেখতে যাবে না?
আমার কি যাওয়া উচিত হবে? বছর চারেক আগে যখন ওর এবরশন হলো, তখনো তো দেখতে গিয়েছিলাম ওকে। হসপিটালের বিছানায় শুয়ে কি ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল রিমি টা। সিফাত আর ওর মাও বেশ অসস্থিবোধ করছিলেন। কিন্ত তাদের চোখের ভাষাটাও ছিল ঠিক রিমির মত। নিজেকে তখন খুব ছোট মনে হচ্ছিল।
-তুমি যাবে আমার সাথে?
এবার যদি ওরা নির্লজ্জ বেহায়া বলে তাড়িয়ে দেয় তাহলে আর নিজেকে এতটা ছোট মনে হবে না।
★★★★★★★★
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro