কটন বাড
#কটন_বাড
তিনি মেঝ আপার দেবর। সেই সূত্রেই পরিচয়। আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া। এত ভালো লাগে উনাকে! নাম রায়হান। কথাবার্তা খুব কম হয়। ভালো লাগার কথাটা সাহস করে কখনো বলতে পারিনি।
উনিও খুব একটা সহজ নয় আমার সাথে। মাঝে মাঝে তো এলেও আমার সাথে কথা হয় না। চা-নাশতা দিতে গেলে আমি ঠকঠক করে কাঁপি। তিনি দেখেনই না। একদিন চায়ের কাপ দেবার সময় আঙুলে ছুঁয়ে গেল উনার হাত। আমি মরে গিয়েছিলাম সুখে তখনি।
উনি টের পেলেন না বোধহয়। সহজভাবে চায়ে চুমুক দিয়েছিলেন। মায়ের কিছু একটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। আর আমি এক প্লাটুন সৈন্যকে এক ছুড়িকাঘাতে যুদ্ধে হারিয়ে দেওয়া আনন্দ মনে নিয়ে সেই আঙুল দেখে কাঁপছিলাম। আমাদের প্রথম ছোঁয়া।
এর মাঝে সেঝ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হলো। উনি বেড়াতে এলেন। রাতে থাকলেনও। সেদিনকারই ঘটনা। আমার কান চুলকানোর একটা ছোটখাটো বদঅভ্যাস আছে। চব্বিশ ঘন্টা আমার কাছে কটন বাড থাকে।যে সময় চুলকায় আমার কটন বাড চাই-ই চাই। বাড়ির সবাই বলে এটা আমার মানসিক সমস্যা! ডাক্তারের কড়া নিষেধ, তাও আমি শুনি না। সবাই এই নিয়ে বকে, ধমক দেয়। উঁহু। আমার এই বদ অভ্যাস যায় না। বিয়ের দিন রাতে এমনটা হলো।মাঝরাতে ঘুম ভেঙে কানে চুলকানি।বাড়িভর্তি মেহমান। জিনিসপত্র ছানাবড়া। কটন বাড খুঁজে পাই না।আমি এ ঘর ওঘর, এ ড্রয়ার সে ড্রয়ার খুঁজছি। উনি যে ঘরে শুয়েছেন সেটা ছোটভাইয়ার ঘর। সে ঘরে গিয়েও খুঁজছি। ভাইয়া রেগে গেল। ধমকালো।
---মিমি... এখানে খটখট করছিস কেন?
---কটন বাড খুঁজি ভাইয়া।
---কতবার বলেছি সঙ্গে রাখতে।
--- ড্রয়ারে ছিল এখন নেই।
---ঘরে গেস্ট শুয়ে, তাও তু...
ভাইয়া ঘুম ভেঙে উঠে গিয়ে বাইরে থেকে কটন বাড এনে দিলেন। আমি কান চুলকে শান্তি হলাম।
দিন কাটতে লাগলো। উনাকে ভালো লাগার ব্যাপারটাও বাড়তে লাগলো।
আমাদের যৌথ পরিবার। মুখ ফুটে কিছু বলার সুযোগ নেই। এখানে সবার কথা ভাবতে হয়। সবার মনের দিকে তাকাতে হয়। একদিকে বোনের সংসার৷ একদিকে আমার পরিবার।আমি ব্যাপারটা চুপচাপ সয়ে যেতে থাকলাম।
এর কিছুদিন পরের কথা। রোজার ঈদে আপার বাড়িতে বেড়াতে গেছি। সবাই ঈদি দিচ্ছে। উনিও দিলেন। অদ্ভুত ঈদি! আমার জন্য এক কার্টন কটন বাড!
কার্টনের উপর লিখা,
“মিমি, তোমার ইদি!
আমি তোমার জন্য সারাজীবন কটনবাড কিনতে চাই।”
ব্যস! তারপর তো সব অন্যরকম।
আমরা কিন্তু কেউ কাউকে এখনো ভালোবাসি বলিনি। এখন সম্পর্কের বয়স তিন বছর। আর কিছু বিশেষ নেই আমাদের মাঝে।
শুধু 'ও' আমায় ইদি দেয় কটনবাড। এখন অবশ্য আমার ওই কান চুলকানোর অভ্যাসটা নেই। তাও সে দেয়। বলে, ভাগ্যিস কটনবাডটা ছিল নাহলে তো কোনোদিন বলাই হতো না। হয়তো এই ব্যাপারটা চাপাই থাকতো।
#তৃধা_আনিকা
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro