শেষ পর্যন্ত-১
কয়েকদিন ধরে সূর্যের প্রচন্ড তাপে প্রকৃতি তার সজীবতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে উঠেছিল।শেষ রাতে বৃষ্টিটা হয়ে এখন বেশ আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভোরের দিকে বৃষ্টি থেমে গেছে। এখন ঠান্ডা বাতাস বইছে ঝিরঝির করে।
আজমেরি বেগম বারান্দায় চেয়ার টেনে বসলেন। শিলুর মা বোধহয় এখনও ওঠে নি ঘুম থেকে। না হলে এক কাপ চা পাওয়া যেত।
"দাদী, ধরেন চা আনছি",দরজায় চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আসমানী।
"ওমা! তুই চা বানালি নাকি?"
"হ", চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ালো আসমানী।
"আপামণিকে দিয়েছিস? অবশ্য সে কি উঠেছে? "
"হ। আফামণি তো সেই কখন উঠছে। ছাদে গিয়া দাঁড়ায়া আছে। কইছে চা খাবে না "
আসমানীর চোখে-মুখে দুঃখের লেশমাত্র নেই দেখে খুশি হলেন আজমেরি বেগম। কে বলবে, গতরাতে এই পনের বছরের মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছিল!!
আজমেরি বেগম চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, " কাল যে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এলি ; তা এত সাহস পেলি কোথায়? "
"তয় কি করুম! যার সাথে বিয়া দিতাছিল, তার তো মেলা বয়স। তার উপর আবার দাবি-দাওয়ার শেষ নাই। আমি কি বাজারের সবজি নাকি? টেকা নাই বইলা কি ইজ্জত নাই!"
নাহ,মেয়েটার বেশ আত্মসম্মান আছে! ভাল।
*************************************************************************
আরশির মনে হচ্ছে সে যেন এক অন্য জগতে চলে এসেছে। বৃষ্টির স্পর্শ পেয়ে চারদিকে গাছপালা ঘেরা এই বাড়িটার চেহারাই যেন বদলে গেছে। বাড়ির ছাদটা আরশির খুব পছন্দের জায়গা। ছাদে দাঁড়ালে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়।আজ প্রকৃতির উপর নীল আর ধূসরের একটা আবরণ পরে এক অন্যরকম জগতের সৃষ্টি করেছে। এই জগৎ ধুলো-মাটির পৃথিবী থেকে যেন অনেক দূরে!
ঢাকার কংক্রিটের জগৎ ছেড়ে এখানে এসে আরশি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। গ্রামের প্রকৃতি,আলো,বাতাস,মানুষজন সব মিলিয়ে কোন দিক দিয়ে যে একটা বছর কেটে গেল টেরই পায় নি সে।
সময় কত দ্রুত চলে যায়!!!
হঠাৎ একদিন ঘড়ির কাঁটা জানান দেবে, এইবার যে ফিরে যাওয়ার সময় হল!
"উৎস যেথায়, মিলবো সেথায়
সেই তো পুণ্যস্থান..."
চলবে.....
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro