জলরঙা স্বপ্ন-৩
এতক্ষণ অলি আর নীতু বারান্দা থেকে সবকিছু দেখছিল। তারা ঘরে ঢুকতেই অলি গান গেয়ে উঠল ‚
“চুরাকে দিল মেরা...গোরিয়া চালি...তা রা রা রা রা ”
নীতু হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই জিজ্ঞেস করল‚ “কেমন হলো লং ড্রাইভ? ”
“জঘন্য। বাড়ির সামনে তোর ভাই ১৫ মিনিট ধরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে ঘুমন্ত আর জাগ্রত তারার তফাৎ খুঁজছে!”,তারা বিরক্তির সাথে বলল।
অলি আবার গান ধরলো‚“আমি একটি তারাকে পাব বলে যুদ্ধ করি...আমি একটি তারার হাসির জন্য অস্ত্র ধরি...”
তারা ধমক দিয়ে অলিকে থামিয়ে দিল।নীতু বলল‚
“ও তোকে ভালোবাসে‚ তুইও বাসিস। খবরদার অস্বীকার করবি না”,হাত উঠিয়ে তারাকে বলতে নিষেধ করল নীতু‚ “তোরা দুজনই যখন একে অপরকে ভালোবাসিস তাহলে সমস্যাটা কোথায়? এত কাহিনী কিসের? ”
তারা শান্ত গলায় বলল‚“কাহিনী? একটা অন্ধকে বিয়ে করে নীল কেন তার জীবন নষ্ট করবে‚বলতে পারিস?”
নীতু তারাকে থামাতে গেল।দরজায় কেউ একজন নক করছে। কিন্তু এদের তিনজনের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। বাধ্য হয়ে নীরাকেই তার মূল্যবান পড়া বাদ দিয়ে দরজা খুলতে হল।
“এভাবে বলিস না‚ তারা”,অলির চোখে পানি এসে গেছে।
নীতুর অবস্থাও অলির মতই। সেও অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রাখতে চেষ্টা করছে।
তারা বাঁধ ভাঙা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল “তোর কি মনে হয়?আমার চোখের মণি দিনদিন রঙহীন হয়ে যাচ্ছে। একদিন সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যাবে‚আমি আর দেখতে পাবো না।এসব কথা শুনলে নীলের আমার জন্য এরকমই ভালোবাসা থাকবে?”
“কথাটা আগে বলে দেখতে”,নীল দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখও সিক্ত।
“তোমার ফোনটা গাড়িতে ফেলে এসেছিলে। ভাগ্যিস ফেলে এসেছিলে! নইলে তো কখনো জানতেও পারতাম না তুমি আমাকে এতটা ছোট মনের মানুষ মনে কর!”,তারার হাতে ফোনটা দিয়ে নীল ঝড়ের গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। নীতু শত ডেকেও আটকাতে পারলো না।
তারা নীতু আর অলির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অলি পেছন পেছন যেতে গেলে নীতু বাধা দিল। তারার এখন কিছুক্ষণ একা থাকাই ভাল।
**********************************************
সকাল থেকে অলির ভালোবাসা দিবসের সাজগোজ চলছে। গত তিনদিন ধরে সে সব প্ল্যান করেছে আর নীতু অসীম ধৈর্যের সাথে শুনেছে।
উফ্ফ...মেয়েটা পারেও বটে!! এত এনার্জি তো মনে হয় এনার্জি প্লাস বিস্কুট খেলেও পাওয়া যায় না!!
তারা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। একটা পলাশ গাছের ডাল এসে পড়েছে ছাদের উপর। ফুলে ভরে আছে ডালটা। তার আগুন রঙে প্রকৃতি যেন সেজে উঠেছে।
“তারা”
ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকিয়েই নীলকে দেখতে পেল তারা।নীল তারার দিকে একটা বাঁধাই করা ছবি এগিয়ে দিল। হাতে আঁকা ছবিটিতে একটা ছেলে একটা অন্ধ মেয়েকে গাছের নীচে বসে বই পড়ে শোনাচ্ছে। মেয়েটার চোখে কালো চশমা। কিন্তু মুখে লেগে রয়েছে অকৃত্রিম হাসি।
তারার চোখ ভিজে যাচ্ছে। নীল এগিয়ে এসে চশমাটা খুলে তারার চোখের জল মুছিয়ে দিল।
নীতু আর অলি দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। দুজনেরই চোখে জল। নীতু চট করে হাতের ফোনটা দিয়ে একটা ছবি তুলে ফেলল।এই ছবিটা বিধাতার রঙ-তুলিতে আঁকা‚ যেখানে দুজন মানুষ একসাথে এক অজানা পথ পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পলাশ ফুলের আড়ালে কোকিলটা এতক্ষণ লুকিয়ে ছিল চুপচাপ। এবার সময় বুঝে গান গেয়ে উঠলো। নীল আরা তারাকে নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছে...
************** সমাপ্ত ***************
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro