জলরঙা স্বপ্ন-২
“আরে তুমি এখানে? এই সময়ে?”,গাড়ির ভেতর থেকে নীল বলল।
“ওই ‚স্টুডেন্ট পড়াতে এসেছিলাম ”,তারা উত্তর দিল। নীলের প্রশ্ন শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। যেন আগে কখনও কাউকে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেনি!
“চল‚গাড়িতে ওঠো। তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি”
“তার কোনো দরকার হবে না। আমি একাই চলে যেতে পারবো”
নীলের মুখে হালকা হাসির রেখা।
“আমি সেটা খুব ভাল করেই জানি।কিন্তু রাত তো কম হয়নি। আর এত সুন্দর জায়গায় বাসস্ট্যান্ড যে তোমাকে কেউ এখানে খুন করে রেখে গেলেও কারো জানবার কোনো উপায় নেই। তাই বলছি‚গাড়িতে উঠে এস”
নীলের মুখে এসব কথা শোনার পর তারা সত্যিই একটু ঘাবড়ে গেছে। তাছাড়া কথাগুলো যে খুব ভুল তাও নয়। জায়গাটা আসলেই নির্জন।কিন্তু এত সহজে নীলের কাছে হেরে যাবে? কাভি নেহি!
“আমার কথা আপনাকে ভাবতে হবে না। আমি নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি”
“আজকের জন্য না হয় এই কাজটা আমাকেই করতে দাও ”,নীলের মুখে মিষ্টি হাসি।
অবশেষে অনেক কথার পর তারাকে রাজি হতে হল।এত রাতে বাস পাওয়া যাবে না।আর নীলের মত নাছোড়বান্দা বস্তু তাকে কোনোভাবেই একা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে দেবে না।
গাড়ি চালাতে চালাতে নীল বলল‚“এত কষ্ট করে কেন যে ধানমন্ডি থেকে আব্দুল্লাহপুর পড়াতে যাও!”
নীল আসলে বলার মত কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। এই মেয়েটার সামনে আসলেই তার কেমন যেন সব ওলট পালট হয়ে যায়। কখন যে কি বলে তার ঠিক নেই!
তারা একনজর নীলের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে ফিরল। গাধার মতো প্রশ্ন। যে মেয়ের মা-বাবা থাকে না‚ সারাজীবন চাচার গলগ্রহ হয়ে কথা শুনতে হয়‚ তার এসব বিলাসিতা মানায় না।
তারা তো বেশ আছে অলি আর নীতুকে নিয়ে। তিনটে টিউশনি করে যা পায় তাতে তার খুব ভালোভাবেই চলে যায়। তার জীবনের শুধু এখন একটাই লক্ষ্য ; ভালো একটা রেজাল্ট নিয়ে বের হয়ে ভালো কোনো একটা চাকরির খোঁজ করা।ব্যস‚আর কিছু চাই না তার। কিন্তু নীল যে কেন মাঝে মাঝে তার সব চিন্তা ভাবনা গন্ডগোল করে দেয়!
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর তারা শান্ত গলায় বলল ‚“যখন আমরা জ্যামে পড়ব‚তখন আমার দিকে ভালো করে তাকিও। এখন ড্রাইভ করতে করতে তাকালে অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যাবে”
তারা কখনোই নিজের মনের কথা নীলকে বুঝতে দেয় না। তার মত মেয়ের জীবনের সঙ্গে বড়লোক ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলের জীবনকে জড়ানো কোনোভাবেই উচিত নয়।
গাড়িটা ১৫ মিনিট ধরে নীতুদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে তারা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। নীল অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তারার মুখের দিকে। কি মিষ্টি মেয়েটার মুখ! চশমার আড়ালে চোখ দুটো যেন এক নিমেষেই কত কথা বলে দিতে পারে!
তারার মুখের উপর পড়ে থাকা একগুচ্ছ চুল আলতো করে সরিয়ে দিল নীল।আকাশে অনেক তারা জ্বলছে।আজ বোধহয় অমাবস্যা।
হঠাৎ তারা জেগে উঠল।নীলের হাত তখনো আলতো করে তার গালে ঠেকানো। তারাকে উঠতে দেখে নীল হাত সরিয়ে নিল।
“আমি ঘুমিয়ে পড়লাম কখন? আর এখানেই বা এসেছি কতক্ষণ? আমাকে ডাক নি কেন?”
নীল গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বলল‚“জাগ্রত আর ঘুমন্ত তারার মধ্যে পার্থক্য খুঁজছিলাম”
উফ্ফ..অসহ্য!!
তারা কিছু না বলেই নেমে চলে যেতে গিয়েও আবার পিছন ফিরে তাকালো।
“থ্যাংক ইউ‚ পৌঁছে দেবার জন্য ”,কঠিন গলায় বলল তারা।
“অলওয়েজ ওয়েলকাম ইন মাই লাইফ”, নীল হাসতে হাসতে উত্তর দিল। সে বুঝতে পারছে তারা রেগে যাচ্ছে। আর রাগলে এই মেয়েকে আরও সুন্দর দেখায়।
কথা বলার কোনো মানেই হয় না। তারা চশমাটা ঠিক করে নীলের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
নীল হেসে উঠল। এই মেয়ে অনেক চেষ্টা করেও নীলের প্রতি ভালোলাগাটা কোনোভাবেই আড়াল করতে পারেনি। নীল ঠিকই বুঝেছে।
চলবে.....
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro