জলরঙা স্বপ্ন-১
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের 'শঙ্খমালা' নামের গাছপালায় ঘেরা দোতলা বাড়ির ২য় তলায় এখনও সূর্য ওঠেনি।যদিও ঘন্টার কাঁটা সাড়ে নয়টায় গিয়ে হাঁপিয়ে গেছে। ছুটির দিন বলেই এই অবস্থা।
তারা‚অলি আর নীতু ম্যারাথন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশের ঘরে নীতুর ছোট বোন নীরা পড়াশোনা করছে। নীরা ছুটির দিনের সম্পূর্ণ বিপক্ষে। তার কাছে সবই পড়ার দিন। তাই সে তার আপু আর আপুর দুই বান্ধবীর কর্মকাণ্ড দেখে রীতিমতো আশ্চর্য হয়। এরা কিভাবে হলিক্রসের মত কলেজে টিকে ছিল! আর কিভাবেই বা বুয়েটে আর্কিটেকচারে চান্স পেল!! অতি আশ্চর্য!!! নিউটন স্যারের ভাষায় যাকে বলে‚ 'খ্যাইসে সম্ভব!'
এদিকে বেচারি নীরার মাথা যখন চিন্তায় খারাপ হবার যোগাড়‚তখন আমাদের গল্পের বিখ্যাত তিন কন্যা ফ্লোরে বিছানা করে আরামসে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ অলির ফোন বেজে উঠল। অলি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।
"কে ফোন করল? ডলফিন?",তারা চোখ না খুলেই ঘুম জড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করল।
"হুমম। দিল ভোরবেলার আরামের ঘুমটাকে চটকে। খচ্চর!",মেজাজ বিগড়ে গেছে অলির।অলি জীবনে সব কিছু করতে রাজি‚কিন্তু ঘুমের সাথে 'নো কম্প্রমাইজ'।
সবেমাত্র নতুন 'খচ্চর' নামপ্রাপ্ত অসহায় ব্যক্তিটি আর কেউ নয়‚অলির গোবেচারা বয়ফ্রেন্ড। ওর আসল নাম 'সাফিন'। তারা আর নীতু তাকে ডাকে 'ডলফিন' বলে।কারণ বেচারা একদম ডলফিনের মত নিরীহ আর অলির অত্যন্ত বাধ্যগত। আর সেই সাথে কিছুটা ছটফটে স্বভাবের। তাই একদম উপযুক্ত নাম।
নীতু এতক্ষণ উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছিল। এবার পাশ ফিরলো এবং সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গ টেনে আনল‚
"নীরা কি ঘুম থেকে উঠে পড়েছে নাকি? "
"তোর বোন কি আমাদের ক্যাটেগরির নাকি?", অলি বলল‚" পিওর আঁতেল।একটা মানুষ এত আরামের ঘুম বাদ দিয়ে কিভাবে সারারাত পড়তে পারে! আবার পরদিন ভোর ছয়টায় উঠতেই বা পারে কিভাবে!! "
"তোদের বাসায় তুই বাদে সবাই আঁতেল। একমাত্র তুই-ই সুস্থ মস্তিষ্কের ",তারা উঠে বসল। অযথা ঘুমের ভান করে পড়ে থাকার কোনো মানে হয় না।
অলির ফোন আবার বেজে উঠল।অলি বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করল‚"কি সমস্যা....."
অলির প্রেমালাপ শেষ হলে সে আবার শুয়ে পড়ল। নীতু উঠে বসল।
"কি বলে সাফিন? দেখা করতে?"
"হুমম ",অলি এখনও শুয়েই আছে।
"আরে শুয়ে থেকে আর কি করবি ; ঘুমের অলরেডি চোদ্দটা বেজে গেছে। উঠে পড়।"
"নাহ‚ এত পাত্তা পেলে মাথায় উঠে নাচবে। তার চেয়ে বরং চল আমরা তিনজন বইমেলা থেকে ঘুরে আসি।"
তারা লাফিয়ে উঠল‚"এই তো এতক্ষণে লাইনে এসেছিস। চল্।"
নীতুও সায় দিল।
"তাহলে নীলকে বলি গাড়ি নিয়ে আসতে। কি বলিস‚অলি?",নীতু আড়চোখে তারার দিকে তাকালো।
তারাকে টিজ করার এত ভাল সুযোগ কি করে হাতছাড়া করে অলি! সেও সকৌতুক দৃষ্টিতে তারা দিকে তাকিয়ে বলল‚
"মন্দ হয় না কিন্তু। তাছাড়া ফ্রিতে এত ভাল আর কেয়ারিং ড্রাইভার কোথায় পাব বল! কিরে তারা‚ঠিক বললাম তো?"
তারা শান্ত গলায় বলল‚"আমরা বাসেই যেতে পারবো‚ নীতু। তোর মামাতো ভাইকে ডাকতে হবে না।"
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বই মেলায় আর যাওয়া হল না। অলি গেল ডলফিন ডেটে। আর নীতু নীরাকে নিয়ে গেল মামার বাসায়।
**********************************************
আজকে পড়ানো শেষ করতে করতে নয়টা বেজে গেল। স্টুডেন্টের পরীক্ষা দেখে তারাও একটু বেশি সময় ধরে পড়ালো। কিন্তু এখন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে মহা সমস্যায় পড়েছে। এমনিতেই এই বাস স্টপে হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র বাস থামে। তার উপর এখন এই সময়ে বাস পাওয়াটা নিতান্তই ভাগ্যের ব্যাপার। গত আধা ঘন্টা ধরে তারা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। একটা বাস যদি আসে! হেঁটেও তো যাওয়া যাবে না।
তারা যখন এইসব আকাশ-পাতাল ভাবছে‚ তখন হঠাৎ তারার সামনে এসে থামল গাড়িটা।
"আরে তুমি এখানে? এই সময়ে?"
চলবে......
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro