চেনা-অচেনা-১
“আমার ছেলেটা এত ভাল চাকরি করে‚কত বেতন পায়! আমার কি ইচ্ছে করে না এবার তার বিয়ে দিয়ে একটা লাল টুকটকে বউ নিয়ে আসি!”,মা বারান্দায় বসে শান্তিভরে চায়ে চুমুক দিলেন আর আবিরের শান্তি কেড়ে নিলেন।
“আমার সুন্দর ছেলের একটা সুন্দরী বউ আসবে ; যার চুলের রঙ হবে কালোজিরার কালো‚চোখ পটলচেরা....”
“দাঁত মূলার মত‚ মুখের ভাষা করলার মত‚ মাথাটা কুমড়ার মত...বলে যাও। কিন্তু মা‚এই সবজিওয়ালিকে আমি পাব কোথায়? আর আমি বিয়ে করলে বউ চারবেলা তোমার সাথে ঝগড়া করবে। কি দরকার সুস্থ জীবন ব্যস্ত করার?”
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে আবির বাইরে বেরিয়ে গেল। এখন মায়ের সামনে থাকা মানেই বাঘের খাঁচায় যেচে হাত বাড়ানো। ইদানিং মা তাকে সামনে পেলেই কোনো না কোনোভাবে বিয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।উফ্...
আবির আপনমনে রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটছে। অবশ্য ঢাকা শহরে আপন মনের কোন জায়গা নেই। ফুটপাতেই বেশি ভিড়। কিন্তু এখন কোথায় যাওয়া যায়? ভাবতেই সোহেলের কথা মাথায় এল।ওদের বাসায় যাওয়া যাক। ছুটির দিনে বেশ জম্পেস করে আড্ডাও দেয়া যাবে আর তার সাথে আন্টির হাতের নাশতা! আহা!
একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়লো আবির। অবশ্য তার আগে যে ভাড়া নিয়ে রেসলিং করতে হল‚তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রিকশা চলা শুরু করতেই ফোনটা বেজে উঠলো।
“কি রে‚ কি খবর? জীবিত না মৃত?”
“দুটোই একসাথে”,মায়ের ঘটকালিতে আবির এখনও বিরক্ত। তাই কথায়ও বিরক্তির সুর চলে এসেছে।
“মেজাজ খাট্টা নাকি?”
“মেজাজ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। মায়ের সাথে একচোট বক্সিং হলো।মায়ের মূলাদাঁতী‚করলাভাষী মেয়ে লাগবে।”
ফোনের ওপারে সাফার ভুবন ভুলানো হাসি শোনা গেল। সে হাসে ম্যারাথন স্টাইলে‚দীর্ঘক্ষণ ধরে। হাসি থামিয়ে বলল‚
“মায়ের কথায় বিয়ে করলেই পারিস”
আবির রিকশার ভাড়া মিটিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে বলল‚
“তোর কি মাথা খারাপ নাকি? কে বিয়ে করছে এখন! আর ফালতু বকিস না। ফোন রাখ।”
সোহেলকে নির্ঘুম অবস্থায় পাওয়া গেল। ওর মা বলল সোহেল ছাদে আছে। ঘরে না ঢুকে আবির সোজা ছাদে উঠতে লাগল। আর উঠতে গিয়েই কারো সাথে জোরে ধাক্কা খেল।
একটু সামলে নিতেই মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হলো। আবিরের মনে হল এই মেয়ে ভুল করে এই ধুলাবালির পৃথিবীতে নেমে এসেছে।গায়ের রঙ ফরসা নয়‚উজ্জ্বল ধরনের। কাঁচে ঢাকা চোখ সমুদ্রের মত গভীর‚হ্রদের মত স্বচ্ছ।
মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরে আবিরকে বকাঝকা করে নেমে গেল। আশ্চর্য! বকা শুনতেও ভালো লাগছিলো!
*********************************************
সোহেল আবিরের ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করছিল।
“কি রে ব্যাটা‚কি ভাবিস?”
আবির কিছুই উত্তর দিল না। হঠাৎ বলে উঠল‚
“সাফাকে ফোন দিতে হবে।”
সোহেল কিছুক্ষণ ভেবে বলল‚“সাফা....মানে তোর সেই ক্লাস ফাইভের ফ্রেন্ড‚যে রাজশাহী চলে গিয়েছিল‚তাই তো?”
“হুমম”
“এত বছর ধরে চেহারা না দেখে যে কিভাবে যোগাযোগ করিস!”
“চেহারা দিয়ে কি করবো? ফোনেই ঠিক আছে।সাফাকে জরুরি কথা বলা দরকার।”,বলেই আবির উঠে বেরিয়ে গেল।
সোহেল বুঝতে পারছে না‚কি কারণে তার এই চীজের সাথে বন্ধুত্ব করার শখ হয়েছিল!
চলবে........
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro