অপরিচিত-২
অনিলার মামাবাড়িতে সবাই রুহীকে হাসিমুখে স্বাগত জানালো।চিলেকোঠার ঘরে অনিলার সাথে রুহীর থাকার জায়গা হল।
ঘরটা খুব বেশি বড় না। জানালায় সাদা পর্দা টাঙানো। দেয়ালগুলোর রঙ উঠে প্লাস্টার খসে পড়ছে। এসি তো দূরে থাক‚একটা ফ্যান পর্যন্ত নেই! এমন ঘর রুহী কেবল সিনেমায় দেখেছে।
সিনেমাই তো বটে! গত কয়েক ঘন্টায় রুহীর জীবন হুবহু সিনেমায় রূপ নিয়েছে।
অনিলার এসব দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে গান গাইতে গাইতে মামীর দেয়া সাদা চাদরটা খাটে বিছিয়ে দিচ্ছে। রুহীর হতভম্ব মুখের দিকে নজর যেতেই হেসে উঠল অনিলা।
“জানি তোর অভ্যেস নেই ;বাট কিছু করার নেই‚মেরি জান। যা আছে তাতেই কাজ চালাতে হবে”
রুহীর ভাবভঙ্গির কোন পরিবর্তন নেই দেখে অনিলা নিজেই বলল‚“নীচে যে এত খাতির দেখলি‚তা কেন পেলাম জানিস? বাবা-মা মারা যাবার পর থেকে হোস্টেলে-অর্ফানেজে জীবন কাটিয়ে দিলাম। মাঝে মাঝে এখানে আসি‚তাও এরা ডাকলে। এজন্যই খাতির”
রুহী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অনিলার দিকে। কত সহজেই হাসিমুখে এই কঠিন কথাগুলো বলে দিল মেয়েটা!
“অনিলা‚মা তোদের খেতে ডাকছে”‚ অর্নবের কথায় বাস্তবে ফিরে এল রুহী। অর্নব অনিলার বড় মামার ছেলে। চেহারায় বেশ একটা ছটফটে ব্যাপার আছে।
“তুই যা‚আমরা আসছি। আর হ্যাঁ শোন‚ খাওয়ার পর তুই কিন্তু আমাদের গাইড হয়ে গ্রাম ঘুরাবি”,অনিলা আদেশ করার ভঙ্গিতে বলল।
অর্নব হেসে সায় দিল‚“জো হুকুম‚মহারাণী অনিলা”
অর্নব চলে যেতেই অনিলা রুহীকে বলল‚“ও আমার বড়। বাট আমি সম্মান দেখাই না। তুইও দেখাবি না।”
রুহী কিছু না বলে শুধু হাসল। এই মেয়েটাকে তার সত্যিই ভাল লাগছে।
***********************************************
রুহী জীবনে প্রথমবার গ্রাম দেখছে। গত রাতের বৃষ্টিতে প্রকৃতি যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কি সুন্দর সৃষ্টি বিধাতার!
অনিলা যেরকম উদাস ভঙ্গিতে হাঁটছে‚ঢাকায় হলে এতক্ষণে গাড়ির চাপায় শহীদ হত। অর্নব আর তার ছোটভাই শিহাব ওদের পেছন পেছন আসছে। যেন ওদেরকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অনিলার ঘোর আপত্তি।
“আমরা কি ছোট বাচ্চা নাকি যে এভাবে পাহারা দিচ্ছিস?”
“আরে কে বলল তোমরা বাচ্চা? তোমরা তো বুড়ি! কখন কোথায় পড়ে টড়ে গিয়ে কোমর ভাঙবে‚ তাই তো আমি আর ভাইয়া পাহারা দিচ্ছি”,শিহাব উত্তর দিল।
ব্যাস আর যায় কোথায়! শুরু হয়ে গেল ৩য় বিশ্বযুদ্ধ। অনিলা বনাম শিহাব! দেখা যাক‚কে জেতে।
রুহীর মনটা খুব ভাল হয়ে গেছে। এখানকার মানুষজন এত ভাল‚তার উপর অনিলার মত একটা বান্ধবী! ইশ‚কেন যে ওর সাথে আগে দেখা হয়নি!
এতসব ভাবতে ভাবতে কখন যে নদীর পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করে নি রুহী। অর্নবের কথায় পৃথিবীতে ফিরে এল।
“আপনি বোধহয় আগে কখনো গ্রাম দেখেননি”
“হ্যাঁ‚এই প্রথম”
“কিছুদিন থাকুন‚ ভালো লাগবে”
“আমাকে আপনি বলতে হবে না। অনিলার মত তুই বলুন। আমিও তাই বলি। নো সম্মান ”
অর্নব এক ঝলক রুহীর দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখ কাঁচে ঢাকা বলে মনের ভাবটা বোঝা যাচ্ছে না। সে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল‚
“ঠিক আছে‚তুই-ই চলুক”
ওদের কথোপকথন অন্য দুজনের কান এড়ায় নি। শিহাব ফিসফিস করে বলল‚
“অনিলা আপু‚ রুহী আপু তো প্রথম দিনেই তুই তোকারি শুরু করেছে!”
“তাতে তোর কি? ছোট ছোটর মত থাক। এত বুঝে তোর কাজ নেই”
চলবে.....
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro