
অপেক্ষা-০১
মেঘের চাদরে আকাশটা ঢেকে আছে। মনে হচ্ছে এখনই চারদিক ভাসিয়ে বৃষ্টি নামবে। ভেসে যাবে মাঠ-ঘাট। গাছপালার সবুজ রঙ নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে। সেদিনও তো এমনই হয়েছিল। তুমুল বৃষ্টি‚সাথে ঝোড়ো হাওয়া‚ আর তুর্জ....
- "তিথি আপু‚ এই তিথি আপু...উফ্! কখন থেকে ডাকছি‚ শুনতে পাচ্ছ না?"
আচমকা বাস্তবে ফিরে এল তিথি। এতক্ষণ যেন এক অন্য জগতে ছিল।
- "ওহ‚মিলি তুই! খেয়ালই করি নি। আজকে একটু বেশি সকাল সকাল উঠে পড়েছিস মনে হচ্ছে।
- "খেয়াল যে করোনি তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু তাই বলে সময়টাও টের পাবে না! সকাল দশটা বাজে। চল‚ ব্রেকফাস্ট করবে। আর হ্যাঁ‚ বাবা তোমার সাথে কি যেন কথা বলবে।"
- " মামা? মামা আবার কি বলবে রে? দরকারি কিছু?"
- "তোমার মামা তুমি বুঝবে। আমি কি জানি? কিন্তু আমার মারাত্মক খিদে পেয়েছে। এখন চল নিচে।"
ব্রেকফাস্টের পর রায়হান সাহেব বারান্দায় ইজি চেয়ারে আরাম করে বসলেন। তিনি নামকরা ব্যবসায়ী‚অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। আজ নেহাত ছুটির দিন বলেই দু'দন্ড আরাম করে বসার সুযোগ পেয়েছেন। চায়ের কাপে একাটা চুমুক দিতেই প্রাণটা যেন জুড়িয়ে গেল। তার ভাগ্নীটার রান্নার হাতটা বেশ!
- "মামা‚ আসব?"
- " ও‚ তিথি! হ্যাঁ এসো। তোমার সাথে কথা ছিল। বসো।"
- "হ্যাঁ‚ মিলি বলছিল আপনি ডেকেছেন।", চেয়ার টেনে নিয়ে বসল তিথি।
- "দেখো তিথি‚ তোমার মা-বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে এত চিন্তা করতে হত না। কিন্তু এখন তোমার অভিভাবক হিসেবে আমাকেই ভাবতে হচ্ছে। আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।"
তিথি কোনো কথা বলছে না দেখে তিনি আবার বললেন‚
- "ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। দেখতেও বেশ। ফ্যামিলিও অত্যন্ত ভাল। আর তুমি হয়ত জান না ছেলে তোমাকে দেখেছে এবং পছন্দও করেছে৷ আসলে ছেলেপক্ষই তো প্রস্তাবটা এনেছে! আর ছেলে আমারও বেশ পছন্দই হয়েছে। এখন তুমি কি বল?"
তিথি চুপচাপ শুনছিল। কথা বলার ভাষা খুঁজে
পাচ্ছে না। আর কি-ই বা বলবে? যে বিষয়ে সে নিজেই নিশ্চিত না‚ সে বিষয়ে মামাকে কি করে বলবে!
তিথির বয়স এখন ২৫। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আর দশটা অভিভাবকের মত মামা তার জন্য পাত্র দেখছে। তিথি নিজেও জানে তার এই অপেক্ষা নেহাতই বোকামি। কিন্তু কেন জানি তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় 'দেখিনা আর একটু ‚ যদি সে আসে!'
তিথির চুপ করে থাকা দেখে রায়হান সাহেব নিজেই বলে উঠলেন‚
- " আচ্ছা ঠিক আছে ‚ এখনই কিছু বলতে হবে না। আর শোনো‚ ছেলে তোমার সাথে দেখা করতে চায়। আজ- কালের মধ্যে একবার গিয়ে দেখা করে এসো। তারপর না হয় তোমার মতামত জানিও। দেখা করতে তো কোন অসুবিধা নেই ‚ কি বল?"
মামার কথা তিথি কিছুতেই ফেলতে পারবে না। তাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। তিথি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াতেই রায়হান সাহেব বলে উঠলেন‚
- " শোনো তিথি‚ আমি তোমার উপর কোন কিছুই চাপিয়ে দেব না। তাই এত বেশি দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। দেখা করো আগে। তারপর তোমার যদি মনে হয় তুমি বিয়ে করবে না‚ আমার পূর্ণ সাপোর্ট তুমি পাবে।"
তিথি জানে মামা সত্যিই তাকে কখনও জোর করবে না। তাই একবার মামার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
চলবে.......
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro