পাসপোর্ট সাইজের ছবি
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই একটার পর একটা ঝামেলা আমাকে হাই হ্যালো বলতে আসে। তো ওইদিন আরেকটা আসছে - পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। ১৭ তারিখে কুইজ শেষ আর ১৮ তারিখে জমা দিতে হবে (পাসপোর্ট সাইজের ছবি সহ)। আমি থাকি ফেনীতে আর কলেজ হচ্ছে ঢাকায়।
অনেক খড় কুটো আর সাথে কয়েক কেজি ধান পোড়ানোর পড়ে সিদ্ধান্ত হল আমরা ৬ জন ১৮ তারিখ সকাল পাঁচটায় রওয়ানা দিবো। কুইজ, ছবি জমা দিয়ে শেষতক ৩ টার গাড়িতে সওয়ার হব।
তো কোথায় যেন ছিলাম? ও হ্যা... পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
বাসায় বসে কয়েকশ' ছবি তুললাম। কোনোটায় নাক বাঁকা তো কোনোটায় চোখ বন্ধ - SD কার্ড প্রায় ফিল আপ হয়ে যাচ্ছে, এমন সময় পারফেক্ট ছবিটা হাতে আসে। আলহামদুলিল্লাহ।
আচ্ছা যাক - পরের দিন ১৬ তারিখ। কথা হচ্ছে আব্বু গিয়ে প্রিন্ট আউট করে আনবে, কিন্তু আমি আল্লাহর অসীম মেহেরবানিতে সকাল ১০ টায় উঠে চোখ কচলাচ্ছি। এতক্ষণে আব্বু বাসার বাইরে। অগত্যা আমাকেই বের হতে হলো।
যারা আমাকে চেনেন, তারা জানেন - কোনো কারনে আমার বাইরে বেরোনোর ওপর এলার্জি আছে, বাইরে বেরুতে ইচ্ছা করে না। এমন না যে বাইরে আমার ভালো লাগে না - জাস্ট বাসা থেকে বাইরে বেরোনোর মধ্যে যে কয়েক সেকেন্ড সময়টা আছে - ওটা বড় বিরক্ত লাগে।
ডিসেম্বর মাস। কিন্তু বাইরে তো রোদ দেখা যাচ্ছে, সুয়েটার পরব? ওইযে একটু কুয়াশাও দেখা যাচ্ছে - ওইটা কুয়াশা নাকি ধোয়া? নাহ কুয়াশাই। সুয়েটার গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
বেরিয়ে প্রথমেই যেটা চোখে পড়ল, সেটা হচ্ছে কারো গায়েই সুয়েটার নেই। (-_-)। ওই আংকেল হাফ হাতা শার্ট পড়ে আছে - সারসে পিচ্চি তো খালি গায়ে তিড়িংতিড়িং করতেসে, আর আমি এদিকে সুয়েটার গায়ে দিয়ে সিদ্ধ হতে বের হইসি। চমৎকার।
বাইরে গরম। মানে প্রচুউউর গরম। সুয়েটারের নিচে আমি ঘামতে ঘামতে শেষ। হিউমিলিয়েটেড ফিল করলে আমার গায়ে পিন ফোটানোর মত ফিলিং হয় - সেই ভাবে চুলকাতে মন চায়। কিন্তু পাছে লোকে আবার বাদর ভেবে বসে তাই দাতে দাত চিপে আর্মি স্টাইলে মার্চ করতে থাকলাম।
মান ইজ্জত কিছুটা বাচানোর লক্ষ্যে আমি সোজা রাস্তা দিয়ে না গিয়ে গলিতে ঢুকে পরলাম। কম মানুষের সামনে পরব এবার। ওই গলির পাশেই একটা ব্যাডমিন্টন কোর্ট আছে। কমসেকম ২০ টা পিচ্চি ব্যাডমিন্টন খেলছে। খালিগায়ে। আমি পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় সবাই খেলা বন্ধ করে হা করে তাকিয়ে রইলো। জীবনে কখনো সুয়েটার দেখস নাই? হারাম*দা। তাড়াতাড়ি পালাতে গিয়ে উস্ঠা খেয়ে প্রায় পরে গেসিলাম।
গলি থেকে বের হয়ে আবার মেইন রোডে উঠলাম। ওইযে - ওই বাইকার এর গায়েও সুয়েটার আছে। সস্তির নিশ্বাস ফেললাম। ভালো করে তাকিয়ে দেখি বাইকার বেচারাও আমার দিকে তাকিয়ে সস্তির নিশ্বাস ফেলছে-
রাস্তা পার হতে গিয়ে আরেক ঝামেলা। আমি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হই সবসময়, কিন্ত ড্রাইভার বলদরা জেব্রা ক্রসিং কে আলপনা মনে করে। থাকা আর না থাকা একই কথা। এক পা আগাই তো দুই পা পেছোনো লাগে, আর রিকশাওয়ালারা এত আস্তে আস্তে চালায় যেনো কি দুনিয়ার সব সময় এদের হাতে। এতক্ষণে আমার মাথা এত গরম যে ডিম সেদ্ধ করা যাবে।
রেগেমেগে একটা সিএনজির সামনে দিয়ে হাটা ধরলাম। সিএনজি চালক ধমক দেওয়া শুরু করতেই এমন ভাবে তাকালাম, বেচারা মুখ বন্ধ করে অপেক্ষা করতে লাগল আমার রাস্তা পার হওয়ার জন্য। আগে অনেক ড্রাইভার কে লেকচার দিয়েছি জেব্রা ক্রসিং নিয়ে - সম্ভবত এই ড্রাইভার কেও দিসিলাম একবার।
রাস্তা পার হয়ে আবার হাটতে লাগলাম। মানুষ আমাকে ফ্রেন্ডলি বলে - কেও আবার বলে আমি ওভার-ফ্রেন্ডলি... কিন্তু আমার মেজাজ গরম থাকলে রাস্তায় পরে থাকা পলিথিনের টুকরা যেটা আমার জুতো ছাড়তে অস্বীকার করছে, সেটাকেও গালি দেওয়া শুরু করি - বলা বাহুল্য, ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটল আবার।
একটা মিস্টির দোকানের পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় গ্লাস ডোরে আমার ফুল বডি ইমেজ দেখলাম - বাহ কুল লাগতেসে আমাকে - মেজাজ একটু ঠাণ্ডা হলো।
শেষমেশ বত্রিশ লিটার ঘাম ঘেমে ফটোস্টুডিওতে পৌঁছলাম।
দেখি দোকান বন্ধ -
[আজকে অনেক দিন পরে আরেক কাপ চা বানালাম - এখানে কোনো মোরাল নেই - জাস্ট ফান। সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা!]
আজ আসি~
-RealPirateKing🍂
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro