জীনের বাদশা হান্টিং
গ্রামে কথিত আছে, কেউ যদি অমাবস্যার রাতে- একেবারে গভীর মধ্য রাতে কবর স্থানে একলা গিয়ে কোনো এক কবরের উপর থেকে লজ্জাবতী গাছ তুলে এনে নিজের বাড়ির পিছনে লাগাতে পারে, তাহলে জীনের বাদশাহ নাকি তার গোলাম হয়ে যায়। জীনের বাদশা অথবা রাণীদের বলা হয় সোরসোরাস বা মায়াবিনী। তারা যাদুবিদ্যা জানে এবং তাদের ক্ষমতাও নাকি অনেক।
গ্রামের মানুষ পর্যন্ত এই কাজ করার চিন্তা করলে ভয়ে কেঁপে উঠে, অথচ কেবল ক্লাস ফাইবে পড়া আমার আম্মু ঠিক করলেন, তিনি এই অসম্ভব সাহসিকতার কাজটি করবেন।
তো ছোট বেলা থেকেই আমার আম্মু প্রচন্ড সাহসী একজন মানুষ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না! বাসায় এখনো আমাদের গায়ে যখন তেলাপোকা ওঠে আমরা প্রায় চটকে উঠে আতংকে একটা খেমটা নৃত্য দিয়ে ফেলি। অথচ, আম্মু খুব স্বাভাবিক ভাবে খপ করে খামচে ধরে তেলাপোকার এন্টেনা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাইরে ছুঁড়ে দেয়।
ছোটো বেলায় একবার তার পায়ে বিশাল সাইজের একটা বৈশা জোঁক ধরেছিল। বৈশা জোঁক সাইজে অন্যান্য জোঁকের চেয়ে অনেক বড় হয়। শহরের মানুষ যদি দেখে দুই হাতের মুঠোয় নেওয়ার মত এতো বড় জোঁক পায়ের ভিতর মাথা ঢুকিয়ে রক্ত চুষে খাচ্ছে, নির্ঘাত সে অজ্ঞান হয়ে যাবে ।
কিন্তু আম্মু সেটাকে হাত দিয়ে টেনে ছোটালেন। তারপর সেটাকে মাটিতে রেখে - সেটার মাথার মধ্যে একটা পেরেকের মত কিছু একটা ঢুকিয়ে গেঁথে দিলেন, তারপর টেনে লম্বা করে সেটার লেজের মধ্যে আরেকটা গেঁথে দিলেন! তারপর আরেকটা বাঁশের টুকরো পেটের নীচ দিয়ে ঢুকিয়ে ভড়াস করে টান দিয়ে পেট নাড়িভুঁড়ি সব বাস্ট করে দিলেন। রক্ত খাওয়ার এমন নির্মম শাস্তি বোধহয় ইতিহাসে আর একটাও পাওয়া যাবে না!
যাই হোক, আমি তখন ক্লাস টু তে কি থ্রী তে পড়ি। আমি উঠোনে হাটছি। আম্মু রান্নাঘর থেকে ডেকচি নিয়ে বেরোতেই দেখলো তিনটা সাপ ফোণা তুলে আম্মুর দিকে তাকিয়ে মাথা দোলাচ্ছে তালে তালে সব একসাথে। হয়তো মনে মনে বলছে, "এইবার কই যাবি?"
আম্মু আস্তে করে ডেকচিটা মাটিতে রেখে, রান্নাঘরের পাশ থেকে বেড়ার একটা বাঁশ খুলে এক বাড়িতে তিনটা সাপ উড়িয়ে দিয়েছেন! আমি পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা!
আম্মু তারপর এক এক করে তিনটা সাপকে মেরে খালের পাড়ে ফেলে দিয়ে এলেন। ঘটনাটা আমার কাছে স্বপ্নের মত ছিলো।
আমি অবশ্য সারারাত ঘুমোতে পারলাম না! সাপগুলি যদি না মরে? আর মাঝরাতে এসে কামড় দিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে নেয়? আমাদের বংশ ছারখার করে যদি নির্বংশ করে দেয়? ( যদিও আমি তখন জানিনা নির্বংশ কেমনে করে)
যাই হোক সাইড গল্প বাদ দিয়ে মূল গল্পে আসা যাক। আশা করি আম্মুর সাহস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিয়ে পাঠকের কাছে ঘটনার বিশ্বাস যোগ্যতা কিছুটা আদায় করা গেছে।
ঘটনা সংক্ষেপেই বলছি,
গ্রামের মানুষ আটটা বাজলেই ঘুমাতে চলে যায়। রাত বারোটা সেখানে অনেক রাত। তাই বুকে অনেক বেশি সাহস সঞ্চার করতে হলো। কারণ যে কাজটা দিনের আলোয় খুব সহজ মনে হয়েছে তা রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আত্মায় কাঁপন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আম্মু দিনের বেলায় কবর স্থানে গিয়ে অনেক পুরোনো একটা কবরের উপর লজ্জাবতী গাছ দেখে এসেছে। এখন গভীর রাতে সেটা খুঁজে পেলেই হয়।
যে কবর স্থানের পাশ দিয়ে দিনের বেলায় হেঁটে যেতেও আমরা অস্বস্তি ও ভীতি অনুভব করি, সেখানে আম্মু সত্যি সত্যি অমাবস্যার গভীর রাতে কবর স্থানে গিয়ে কবরের উপর থেকে ঠিকই লজ্জাবতী গাছ তুলে এনেছিলেন বাসায়।
কিন্তু পাঠকগণ অন্তত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে আমার মা সেই লজ্জাবতী গাছ বাড়ির পিছনে লাগানোর আর সাহস সঞ্চার করতে আর পারেন নি।
উনার মনে হয়েছে, উনি যদি গাছটা লাগান, আর সাথে সাথে ভয়ংকর দেখতে কোনো বিশাল দানব সাইজের একটা জীন যদি সামনে এসে হঠাৎ হাত উঁচিয়ে মুখের কাছে এসে চোখ বড় বড় করে বলে, "আসসালামু আলাইকুম"
আমার আম্মু তখনই হার্টফেল হয়ে যাবে...
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro