re: বামন দৈত্য
এক বিয়ে উপলক্ষে বেড়াতে গিয়েছি চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের খুব সাদামাটা একটা গ্রামে আমাদের নানির বাড়ি। উঁহু, বোধহয় একটু ভুল বললাম, চট্টগ্রাম মানেই গাছগাছালি, পাহাড়, সমূদ্র, বন নানান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক অন্যরকম জগৎ। সাদামাটা বলার কোনো চান্স নেই।
যাই হোক শেষবারের মত বিয়ের বাজার শেষে বাড়িতে ফিরে দেখা গেলো বেশ কিছু জিনিসপত্র এখনো ঘাটতি রয়েছে। যেহেতু আগামীকালই বিয়ে তাই এখনি কমরালি বাজার যেতে হবে। পায়ে হেঁটে প্রায় কয়েক কিলোমিটার দূরের পথ। নিশুথি রাত, বাজে প্রায় ১২ টার উপরে। দোকানদারকে ঘুম থেকে তুলে দোকান খুলিয়ে তারপর সদাই কিনতে হবে। মেলা ক্যাচাল।
গ্রামে ৮ বা ৯ টার পর আর কেউ জেগে থাকেনা। তো বাজারে যাওয়ার দায়িত্ব পড়েছে আমার দুই খালাতো ভাই রনি ভাই আর সজল ভাইয়ের উপর। তারা খুব সম্ভবত ক্লাস এইট কি নাইনে পড়ে।
তারা যেহুতু শহুরে টাইপ ছেলে তাই মাঝরাতে এরকম দুঃসাহসিক যাত্রার কথা শুনলে তাদের রক্ত হিম হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুই করার নেই, যেতেই হবে।
শিয়ালের ডাক এবং কিছুক্ষণ পরপর অদ্ভুত অদ্ভুত সব পশুপাখির গা ছমছম করা ডাক উপেক্ষা করে তারা দুজন এগিয়ে যেতে থাকলো।
একটু দূরেই কবর স্থান। রাস্তার ধারে বেড়া দেওয়া কবরগুলিকে অতিক্রম না করে বাজারে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। এরকম রাতে আর যাই হোক কবর স্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা কারো থাকার কোনো কারণ নেই। দিনের বেলা হলে ভিন্ন কথা ছিলো।
হালকা চাঁদের আলোয় আর মৃদু হিম বাতাসে প্রকৃতি যতটা রহস্যময় হতে পারতো কবরস্থান আর শিয়ালের ডাক তারচেয়ে শতগুন ভৌতিক।
রনি আর সজল ভাই কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা সামনে হাটা দিয়েছে। কোথাও কিছু শব্দ হলেই মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। তারা আরো জোড়ে হাটতে থাকে। 'আমি কিছু দেখি নাই', 'কিচ্ছু দেখি নাই' টাইপ।
কোনোরকমে বুকে হাত দিয়ে তাড়াতাড়ি কবরস্থান পার করতে পেরে লম্বা দম নিল দুজনে। আর ভয় নেই ভেবে একটু আশ্বস্ত হতে না হতেই সামনের দিকে তাকিয়ে একেবারে পিলে চমকে গেল তাদের। ঠিক রাস্তার মাঝখানে কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে।
উল্টোদিক ঘুরে ঝেড়ে দৌড় দেবার তীব্র ইচ্ছাকে খুব কষ্টে দমন করে তারাও স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। পিছনে কবরস্থান আর সামনে এটা কি জিনিস কে জানে, ভাইরে ভাই!
জিনিসটা সাইজে খুব ছোট এবং মিশমিশে কালো রঙের, নড়াচড়া একদম করছে না। প্রচলিত আছে গ্রামের রাস্তায় মাঝরাতে বামন দৈত্যরা ঘোরাফেরা করে। গ্রামের কিছু মানুষ এইসব দৈত্যদের পুষে। এবং দৈত্যরা তাদের হয়ে অনেক খারাপ কাজ করে দেয়। নরহত্যা চালায়। কিন্তু বিনিময়ে তাদেরকেও কিছু দিতে হয়। খুব ভয়ানক কিছুই নিশ্চয়ই দিতে হয়।
যাই হোক, তারা স্তম্ভের মত দাঁড়িয়ে আছে। কি করা যায়, মাথায় কিছুই আসছেনা কারোই! রাস্তা থেকে নেমে যাওয়া সম্ভব না। পিছনে যাওয়ার সাহস নেই, আবার সামনে যাওয়ার উপায় নেই।
সজল ভাইয়া প্রথম স্টেপটা নিলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে সাবধানে একটা ছোট ঢিল তুলে নিলো। বস্তুটা তখনও স্থির। ঢিলটা সজোরে ওটাকে নিক্ষেপ করতেই তার নিজের গায়েই কি জানি উড়ে এসে পড়লো। অথচ বস্তুটাকে নড়তে পর্যন্ত দেখা গেলো না।
বস্তুটাও তাদের গায়ে কিছু একটা ছুড়ে মেরেছে বুঝতে পেরে, দুজনেই আরো বেশি জড়সড় হয়ে গেলো ভয়ে।
রনি ভাইয়া এবারে একটু সাহস করে একটু একটু করে বস্তুটার দিকে এগিয়ে গেলো। বস্তুটা তখনো নড়াচড়া করছে না। আরেকটু আগালো। না এখনো নড়ছে না। খুব কাছে গেলেই হটাৎ ঘাড় মটকে দেবে কিনা কে জানে।
একদম কাছে গিয়ে বস্তুটার গায়ে হাত দিতেই রনি ভাইয়া আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করতে শুরু করলো।
"ছি ছি ছি ছি ছি"
সজল ভাইয়া ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,
"কি হইছে রনি?"
রনি ভাইয়া প্রায় লাফাচ্ছে তখন,
"আরে ছি ছি ছি... গোবর এগুলা। শালার গরু হেগে হেগে স্তুপ বানায় রাখছে রাস্তার উপর। "
ঢিল মারার সময় এই গোবরই তাদের গায়ে ছিটকে এসে পড়েছে। ইয়াক থু।
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro