সমাপ্তি
শ্রাবণ :সুমো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। আমার চেম্বারে যেতে হবে। তোকে কলেজে রেখে, আমাকে যেতে হবে।
সুমন: এইতো আমি রেডি। এই নাও তোমার দুপুরের খাবার, চলো।
শ্রাবণ : চল।
কলেজে পৌছানোর পর,
শ্রাবণ : শোন তুই ক্লাস শেষ হওয়ার পর ওয়েট করবি। আমি তোকে হসপিটাল থেকে যাওয়ার পথে নিয়ে যাবো। আজ সকালে খেয়েছিস তুই?
সুমন: তুমি আবারো ভুলে গেলে?
শ্রাবণ : স্যরি! আজ তো সোমবার আমার মনে ছিলনা ।
<<<প্রত্যেক সপ্তাহের সোমবার সুমো উপোস করে>>>
ক্লাসের শেষ হতে প্রায় সাড়ে পাঁচটা বেজে গেল। এক্সট্রা ক্লাস ছিল, আর সুমো এতটাই ব্যস্ত ছিল যে শ্রাবণ দুপুরে খেয়েছে কিনা সেটাও জানা হয়নি। ফোনটা বের করে শ্রাবণকে কল করতে যাবে এমন সময় দেখল ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে। ওর বান্ধবীর ফোন থেকে বেশ কয়েকবার শ্রাবণকে কল করলো রিং হলেও রিসিভ করলোনা শ্রাবণ।
সুমোর বান্ধবীরাও চলে গেল। সুমো আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। কিন্তু শ্রাবণের আসার কোনো খোঁজই নেই। আর এমন সময়ে ওর মতো একটা মেয়ের একা দাড়িয়ে থাকাটা ঠিক হবে না মনে হল । তাই সুমো একাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ভাবল। কিন্তু ওর কাছে তো ভাড়ার টাকা নেই। আসলে সবসময় শ্রাবণের সাথে আসা-যাওয়া করে তাই কখনো টাকা নিয়ে আসে না। এসব ভাবতে ভাবতেই এক রিকশাওয়ালা ওর সামনে এসে দাড়ালো।ও আর কিছু না ভেবে রিকশায় উঠে পড়ল। বাড়ি যেয়ে ভাড়া দিয়ে দেবে মনে করল।
সুমোর বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে ৭টা বেজে গেল। ও শুধু এক গ্লাস পানি খেয়ে তারপর গোসল সেরে নিল।
রাত প্রায় বারোটা বাজতে চলল শ্রাবণের আসার কোনো খবরই নেই। এদিকে সুমন বাড়ি আসার পর থেকে লোডশেডিং। তাই ও ফোনটা চার্জে দিতে পারেনি। সুমো অস্থির হয়ে পড়েছে শ্রাবণের টেনশনে। এদিকে বাড়িতে ও কেউ নেই। মা শান্তনুদার শশুড়বাড়ি গেছেন।
গাড়ির হর্ণের আওয়াজ পেয়ে সুমো তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। শ্রাবণ ঘরে এসে সুমোকে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মারল।
সুমন : কি হয়েছে? শ্রাবণ আবার সুমোকে একটা থাপ্পর মারল।
সুমন কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ওর সাথে এসব কি হচ্ছে।যে কিনা ওর গায়ে ফুলের টোকাও লাগতে দেই না সে ওর গায়ে হাত তুলল ।
শ্রাবণ: তোকে বলেছিলাম অপেক্ষা করতে?
সুমন: কিন্তু তুমি তো
শ্রাবণ: চুপ! একদম চুপ। তর্ক করবি না তোর ফোন অফ কেন? জানিস কি অবস্থা হয়েছিল আমার? কতটা টেনশনে ছিলাম আমি।৬ঘন্টা ধরে তোকে পুরো শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি।
সুমো আর কোন কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। শ্রাবণের এখনও মাথা গরম হয়ে আছে। ও বাথরুমে গেলো এক ঘন্টা দাড়িয়ে থাকল শাওয়ারের নিচে। একটা সিগারেট ধরালো খুব রাগ হলে ও সিগারেট খাই। সিগারেটটা শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল দুইটা বাজে। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি।ওর মনে পড়ল সুমোও সারাদিন উপোস ছিল। নিশ্চয় ও কিছু খাইনি। শ্রাবণ সোজা তিনতলায় চলে গেল। কারণ সুমন যখন রাগ বা অভিমান করে তখন তিনতলার ঘরে যেয়ে কাঁদে, শ্রাবণ চেয়ে দেখল সুমো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। শাড়ি ও এলোমেলো হয়ে আছে। চুলগুলোও কিছুটা মুখের উপর এসে পড়েছে। শ্রাবণ ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারল যে সুমো কিছু খাইনি। শ্রাবণ নিচে যেয়ে দেখল ডাইনিং এ খাবার রাখা আছে। খাবার গুলো নিয়ে ও উপরে চলে গেল। শ্রাবণ সুমোকে ডাকার জন্যে ওর গায়ে হাত দিতেই দেখলে গা গরম। বুঝতে পারল সুমোর জ্বর এসেছে। সুমোর চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ওকে ডাকলো।
সুমো ঘুম থেকে উঠে দেখল শ্রাবণ ওকে ডাকছে।সুমো শ্রাবণের সাথে কোন কথা বলছে না।
শ্রাবণ:খেয়ে নাও।
সুমন: আমি খাবো না।
শ্রাবণ : থাপ্পড়ের কথা এর মাঝেই ভুলে গেলি?
সুমো থাপ্পরের কথা শুনে গালে হাত দিল।
সুমন:আমি বললাম তো খাব না।
শ্রাবণ: আর একটা কথা বললে প্রত্যেকটা কথার জন্য থাপ্পর খাবি।
সুমো দেখল শ্রাবণের রাগ এখনো কমেনি। শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তাছাড়া খিদেও পেয়েছে। খেয়ে নেওয়াই ভালো হবে। শ্রাবণ সুমো কে খাইয়ে দিলো আর নিজেও খেয়ে নিল। খাবার পর সুমোকে জ্বরের ওষুধ খাইয়ে দিল। চিরুনি এনে সুমোর চুলগুলো বেঁধে দিল। এবার সুমো নিজেকে ধরে রাখতে পারল না কেঁদে দিল।
শ্রাবণ : কেঁদো না প্লিজ।
সুমন: নিজেই মারবে আবার ঔষধ ও খাওয়াবে। কি পেয়েছো তুমি আমাকে?
শ্রাবণ: তুই জানিস আমি কতটা টেনশন এ ছিলাম? রোগী দেখা শেষ করে দেখলাম ছয়টা বেজে গেছে। ফোনটা হাতে নিতেই দেখলাম চারুর ফোন থেকে কল এসেছে তিনবার । ওকে কল করতেই বলল কলেজ পাঁচটায় ছুটি হয়ে গেছে তুই কলেজে আছিস। আমি তখনই কলেজে গেলাম তোকে কল করলাম ফোন সুইচ অফ পেলাম।
আমার মাথায় কিছু কাজ করছিলনা তখন। পুরো কলেজ তোকে পাগলের মত খুজছি এমনকি প্রীতিকেও কল করেছি তুই ওখানে গেছিস কিনা?
সুমন : হায়রে বুদ্ধু বাড়িতে কেন একবার এলে না।
শ্রাবণ : ওটাই তো বেরিয়ে গেছিল মাথা থেকে।
শ্রাবণ সুমোর গালে হাত দিল। ফর্সা গালে চড় মারার জন্য রক্তের মত লাল হয়ে আছে।
শ্রাবণ সুমোর দুগালে হাত রেখে বলল সুমো I am really very sorry. আমি রাগের মাথায় এটা করে ফেলেছি। কলেজে তোকে না পেয়ে আমার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা আসছিল। যদি তোর কিছু হয়ে যেত। তুই আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ।
সুমন: ছি এসব কি বলছো তুমি? আমার স্বামী তুমি। আমাকে শাসন করার অধিকার অবশ্যই আছে তোমার।
শ্রাবণ : সত্যি তুই খুব ভালো। আচ্ছা আমার সব রাগ কিভাবে সহ্য করিস তুই? আমিতো ভাবতাম আমার এই রাগের জন্য আমি কখনও কারো সাথে এক সপ্তাহের বেশি থাকতেই পারবো না সংসার করা তো দূরের কথা।
সুমন : আমারও তো কতো সমস্যা আছে। সেগুলো তো তুমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছো। তবে আমি কেন তোমার রাগটা সহ্য করতে পারবোনা?
শ্রাবণ : তবে আজ মা বাসায় থাকলে নির্ঘাত আমায় বের করে দিত তোর গালে চড়ের দাগ দেখে।
সুমন : তা তুমি ঠিকই বলেছো। অনেক তো রাত হলো।
শ্রাবণ: রাত কি বলছো সুমোরাণী সকাল হতে চলেছে।
সুমন : আমার কিন্তু খুব ঘুম পাচ্ছে।
শ্রাবণ : আচ্ছা ঘুমাবি। তার আগে আমাদের ঘরে তো চল।
সুমন : না আমি কোথাও যেতে পারব না। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
শ্রাবণ সুমোকে কোলে তুলে নিল।
সুমন : আরে আরে কি করছো?
শ্রাবণ : বারে তুই তো বললি তোর ঘুম আসছে। কোথাও যেতে পারবি না। এবার ঘুমা আমি তোকে আমাদের ঘরে নিয়ে যাচ্ছি।
শ্রাবণ সুমোকে নিয়ে যেয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ল। শ্রাবণ সুমোর মাথাটা বালিশে রাখলেও সুমো বালিশ ছেড়ে শ্রাবণের বুকে মাথা রাখল। শ্রাবণের বুকে মাথা না রাখলে ওর নাকি ঘুমের তৃপ্তি হয় না।
সমাপ্ত
writer.....
Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro