Chào các bạn! Vì nhiều lý do từ nay Truyen2U chính thức đổi tên là Truyen247.Pro. Mong các bạn tiếp tục ủng hộ truy cập tên miền mới này nhé! Mãi yêu... ♥

প্রজাপতি মন


প্লাটফর্মে ঢুকেই মেজাজ খারাপ হলো সুমনের।নাহ আজও ট্রেন লেট আর ফার্স্ট ক্লাস টা মিস হলো।অগত‍্যা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। হঠাৎ একটা পরিচিত গলা পেলো যেটা ভিড়ের মধ্যে সুমনের নাম ধরে ডাকছে যা সুমনের সব চেয়ে রাগের। রিয়া , সুমনের বেষ্টি ।রিয়া এসেই সুমনের হাতে একটা চকলেট ধরিয়ে দেয় আর মূহুর্তে সুমনের সব রাগ হাপিস।

রিয়া হাঁপাতে  হাঁপাতেই বললো ,কি রে সুমো তুই আজকে ও জেনারেল কম্পার্টমেন্টে উঠবি। বেশ ভিড় হবে প্লিজ আজ উঠিস না বরং চল আজকে দুজনেই লেডিস কম্পার্টমেন্টে উঠবো।এরই মধ্যে দুই বার এ‍্যানাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে। সুমন জবাব দেবে কী , মুখে তো চকলেট ঠাসা। রিয়া কথার মাঝেই ট্রেনের হুইসেল শুনতে পেলো। সুমো চল বলেই দৌড় লাগালো লেডিস কম্পার্টমেন্ট এর দিকে। কিন্তু সুমনের একই জেদ কিছুতেই জেনারেল কম্পার্টমেন্ট ছাড়া উঠবে না।

ট্রেন লেট বলেই আজ বেশ কসরত করে সুমনকে উঠতে হলো ।উঠেই মোটামুটি একটা জায়গা করে নিলো নিজের।একটা স্টেশন পার করার পর থেকেই সুমন টের পেলো একটা হাত ওর শরীরের আপত্তিকর স্থানে ঘোরাঘুরি করছে।মনে মনে তৈরি হয়ে গেল আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে।বাধ সাধলো তখনই যখন ও বুঝতে পারল কয়েকজন মিলে ওকে ঘিরে রেখেছে আর দু'তিনটে হাত সমান তালে চলেছে ওর শরীরে।রাগের বদলে এবার অসহায়ত্ব ওর দু'চোখ ভরে জল এনে দিলো।অসহায় দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। হঠাৎ একটা শক্ত হাত সুমনের কোমর জড়িয়ে ধরে যেন ছো মেরে নিয়ে এলো। কিন্তু ততক্ষণে সুমন চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলো।

আপনি ঠিক আছেন ?এই যে ম‍্যাডাম আপনাকে বলছি শুনতে পাচ্ছেন? আপনি কোথায় নামবেন? একটু জল খাবেন?
হাতে আলতো ভাবে ছোঁয়া পেয়ে সুমন চোখে মেলে দেখলো একটা ছেলে ওকে আগলে রেখেছে। সুমনের মনে হলো ও যেন নতুন জীবন পেয়েছে।
নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বললো ‌, আমি রোজ এখানেই উঠি তবে আজকের মতো এমন কখনো হয়নি।

আমি খুবই লজ্জিত ।আসলে  কিছু কুরুচিপূর্ণ পুরুষের কারনে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয় মেয়েদের।এসব প্লিজ মনে রাখবেন না।তবে সাবধান থাকবেন। আপনি কি একটু জল খাবেন?

না না আমি ঠিক আছি ।আর আপনি কেন লজ্জিত হবেন। আপনি না থাকলে আজ আমি মরেই যেতাম।

আপনি কোথায় নামবেন ? ট্রেনটা অনেক সময় ধরে চলছে। আপনার স্টেশন মিস হলো না তো?

লাস্ট স্টপেজ নামবো ,আর আপনি?
 
আমিও।আমরা কথা বলছি অথচ আপনার নামটা জানা হয় নি।না মানে আপনাকে ম‍্যাডাম বলে বলতে হচ্ছে ,তাই আর কী ।

আমি সুমন । কাঙ্খিতা সেন সুমন। মেডিকেল ফার্স্ট ইয়ার । আপনি?

আমি শ্রাবন রায়। আপনার থেকে একটু উপরে আছি মানে পাশ করে প্রাকটিস করছি।

হঠাৎ সুমনের খেয়াল হলো শ্রাবনে র হালকা রঙের শার্টের বুকের কাছে চকলেট লেগেছে। বেশ অনেকটাই মাখামাখি  হয়েছে। অপ্রস্তুত ভাবে সুমন বলে উঠলো, সরি আমার হাতে চকলেট ছিল আর ওটা আপনার শার্টে লেগেছে।

আপনি ব‍্যস্ত হবেন না । তবে আপনার হাতে আমি কোন চকলেট দেখিনি ,যেটা লেগেছে ওটা  আপনার ঠোঁটে লেগেছিল। আমাদের ট্রেন টা কিন্তু অলরেডি পৌঁছে গেছে।

সুমন এতহ্মনে ভালো করে নিজেকে দেখলো।সেই শক্ত হাতটা এখনো ওকে একইরকমভাবে সাপোর্ট দিয়ে রেখেছে।আর শ্রাবন ওর দিকে শুধু তাকিয়েই নেই বরং রীতিমতো গিলছে।

কলেজ বিল্ডিং এর কাছাকাছি পৌঁছতেই সুমনের মোবাইল টা বাজতে লাগলো।সুমন ফোন রিসিভ করাতে রিয়া একটু সামনে এগিয়ে গেলো।কথা  শেষ করে সুমন দেখলো ক‍্যান্টিনের  ছেলেটা দৌড়ে এলো আর একটা খাম হাতে দিলো ।বললো ডাঃ শ্রাবন দিয়েছেন। সুমন কোন কিছু না বলে খামটা ব‍্যাগে ঢুকিয়ে নিলো। রিয়ার কাছে লুকিয়ে খামটা খুলতে বেশ একটু সময় লাগলো।খামের ভিতরে দুটো ক‍্যাটবেরি আর একটা কার্ড। কার্ডের পেছনে লেখা  মন চাইলে ফোন করো। কার্ড টা একটা নার্সিং হোমের । ফোন নাম্বার টা দেওয়া আছে।

সারাদিন কলেজের পর বই নিয়ে বসলেই ঘুম পায়,তাই একটু ঘুমিয়ে নিয়ে একবারে  পড়তে বসে।ব‍্যাগ থেকে নোটস গুলো বের করতে সকালের খামটা হাতে এলো। কার্ড টা হাতে নিয়ে ঠোঁট দুটো নড়ে উঠলো চারটি শব্দে-----মন চাইলে ফোন করো।
আকাশ পাতাল অনেক ভাবনার পর আর নিজেকে আটকাতে পারলোনা না সুমন। সত্যি তার মন চাইছে ফোন করতে। দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে নতুন চেনা সেই গলাটা ভেসে এলো
হ‍্যালো
হ‍্যালো ......
কে বলছেন.....
শ্রাবন একবার বা হাত উল্টে ঘড়িটা দেখে নিলো।রাত একটা বাজে প্রায়।এখন আননোন নাম্বার থেকে কে ফোন করতে পারে ভাবতেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো ------
কে ?    সুমন?
হ‍্যা আমি। আমি কি আপনাকে বিরক্ত করলাম? আপনি কি ব‍্যাস্ত?

না না আমি একটু ও বিরক্ত হই নি।আর এখনো আমি হসপিটালে আছি।এবার বলুন আপনি কি করছিলেন ?

না মানে -----পড়তে বসেছিলাম।তবে একটা কথা আপনি আমার সিনিয়র ,তাই যদি আমাকে তুমি করে বলেন-----কথাটা একটু থেমে থেমেই শেষ করলো সুমন।

My pleasure madam কথাটা সকালেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলা হয়নি অথবা বলতে পারিনি।

আপনার কি আজ নাইট ও ছিল ।দুটো কি একসাথে থাকে, ডে -নাইট।

না , দুটো একসাথে হলে আমরা বাঁচি কিভাবে।
আমার এক ইয়ার-মেট এর নাইট ছিল আজ। কিন্তু ওর ইমারজেন্সি কাজ থাকায় ওর ডিউটি টা আমি করে দিচ্ছি। কাল ডে করে তারপর বাড়ি ফিরবো।

ওহহ আচ্ছা , ঠিক আছে রাখছি।
সুমন----
হুম------
এই নাম্বারে তুমি আমাকে সব সময় নাও পেতে পারো।অন- ডিউটি থাকলে এটাতে পাবে । আমার পার্সোনাল একটা নাম্বার আছে ওটা তোমাকে ম‍্যাসেজ করে দিচ্ছি।ওটাতে আমাকে 24.7পাবে।ওকে ম‍্যাডাম তাহলে মন দিয়ে পড়ো ।বাই

হুম বাই

.................................

মা তুমি এতো টেনশন কেন নাও। তুমি নিজে এই প্রফেশনে আছো অথচ আমাকে নিয়ে শুধু টেনশন করো। আচ্ছা ঠিক আছে আমি আরও একবার খেয়ে নেবো। এবার তুমি আমার কথা শোন। কাল রাহুল এর মা বাবার বিবাহ বার্ষিকী।আমাকে খুব করে বলেছে আন্টি ,না গেলে খারাপ লাগবে। তুমি আমার বাইকটা পাঠিয়ে দেবে দেবুদাকে দিয়ে। love you maa bye.

শ্রাবন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।মা তার একদম গোয়েন্দা।আসলে সুমনের সাথে কথা বলার সময় ফোন করেছিল তাই ধরা হয়নি।তাই নিয়ে প্রশ্নের ফুলঝুরি। হঠাৎ কি মনে হলো ম‍্যাসেজ করলো সুমনকে .....
Hi
তুমি কি কাল কলেজ আসবে?
হ‍্যা আসবো সকালে ক্লাস আছে তবে তাড়াতাড়ি ছুটি।কেন?
তুমি যদি আমাকে একটু হেল্প করতে তাহলে খুব ভালো হতো
কি কাজ বলুন
মানে একটা গিফট কিনবো
ওকে ,কিন্তু আপনার ডিউটি আছে তো
একঘন্টা আগে বেরোবো
ওকে বাই
বাই
কাল আবার দেখা হবে,এটা ভাবতেই সুমন খুশিতে নাচতে লাগলো।মনে মনে ভাবছিল যদি কাল আবার দেখা হতো তাহলে ভালো করে মুখটা দেখবে।আসলে ছেলেটা বেশ লম্বা আর ওর মুখের দিকে তাকাতে গেলে একটু সময়ের দরকার।নাহলে তাড়াহুড়ো করে যদি ধরা পড়ে যায়।

পরদিন সকালে একটু বেশি ফিটফাট হয়ে বেরলো ঘর থেকে।মা দেখেই বললেন কিরে সুমো ,কোন প্রোগ্রাম আছে নাকি?
না মা কেন বলোতো
এত সাজুগুজু তো আমার মা করেনা কলেজে যাওয়ার সময়।
সবাই করে ।আর আজ একটু সময় পেলাম তাই।

আজকে বিকেলের কথা মনে আছে তো?
জানতাম তুই ভুলে যাবি ।আজ রিয়া দের বাড়িতে তোর নেমতন্ন আছে। কিন্তু একটা কান্ড করেছি আমি ওদের জন্য গিফট নিতে গিয়ে কন্ফিউজড ,
কি নেবো তাই ভেবে।তুই টাকাটা নিয়ে যা যেটা তোর পছন্দ তাই কিনিস।

ঠিক আছে দাও।

কলেজে ঢুকেই মনটা আনচান করছে কখন দেখা হবে। কিন্তু সে মহাশয় রাতের ম‍্যাসেজ শেষ করার পর থেকে নিখোঁজ। এখন কি একটা ম‍্যাসেজ করবো।না থাক , ক্লাস কমপ্লিট করে তারপর কল করবো।

ক্লাস শেষ হওয়ার আগেই একটা ম‍্যাসেজ এলো।
'ক্লাস শেষে ইমারজেন্সীর পেছনের গেটে আসবে, আমি অপেক্ষা করছি। তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।'তার মানে আমাকে ফলো করেছে।

সরি সরি ওয়েট করানোর জন্য।তবে তোমার আগে এসেছিলাম কিন্তু মনে পড়লো একটা হেলমেট তাই তোমার জন্য একটা ম‍্যানেজ করে নিলাম।

কাল কে আপনি ট্রেনে এলেন তাহলে বাইক কার?

এটা আমার বাইক । বাড়িতে বলে আনিয়ে নিয়েছি নাহলে খুব প্রবলেম হয় আমার। এবার আমরা যেতে পারি।
ওকে । কোথায় যাচ্ছি আমরা?

যেদিকে দুচোখ যায় হারিয়ে যাবো তোমাকে নিয়ে।যাবে তো আমার সাথে?মজা করলাম।ভয় পেওনা ,আর যাই করি তোমার কোন হ্মতি করবো না। এবার বলো খেয়েছ কিছু?

এতক্ষণে সুমনের টেনশন একটু কমলো ।বাইকে করে যাবে এটা ভাবেনি।তাই একটু টেনশনে পড়ে গেছিল।না, সকালে খেয়ে বেরিয়েছি। আমার খিদে নেই।

কিন্তু আমার তো খিদে পেয়েছে। প্রথমে একটা রেস্টুরেন্টে চলো কিছু খেয়ে নেবো তারপর একটা শপিং মলে ঢুকবো ।ওকে । সুমন এখানে দশ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে আছি। এবার কি আমরা যেতে পারি। একটু বিশ্বাস তো করে দেখো ঠকবে না।প্রমিজ।

রেস্টুরেন্টে গিয়ে সোজা মটন বিরিয়ানি অর্ডার করে বসলো শ্রাবন।নিজে পেট ভরে খেলো সাথে সুমনকে ও খেতে বাধ্য করলো। খাওয়ায় শেষে বললো সেই সকালে একটা স‍্যান্ডুইচ ছাড়া আর কিছু জোটেনি। সুমন তুমি কি আর কিছু নেবে।

না কিছু নেবো না।তবে একটু ওয়াশরুমে যাবো।
ওকে যাও
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সুমন অবাক , শ্রাবন ওয়াশরুমের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। আপনি এখানে ?
না মানে ,ওপাশে থাকলে তুমি যদি খুঁজে না পাও তাই এখানে দাঁড়ালাম।চলো এবার তাহলে শপিং মলে যাই।
হ‍্যা চলুন
সুমন ....
আমি তোমার থেকে খুব বেশি হলে ৪থেকে ৫বছরের বড়ো হবো ।তো আমাকে আপনি করে বলোনা প্লিজ। নিজেকে বুড়ো বুড়ো মনে হয়।

সুমন একটু হাসলো ,যেন এই কথাটা শোনার অপেক্ষায় ছিল। ঠিক আছে ।আর বলবো না।

শপিং মলে পৌঁছে দুজনেই কনফিউজড।শেষে ঠিক করলো একই গিফট আইটেম দুটো নেবে।তাহলে  প্রবলেম শেষ।যা ভাবা সেই কাজ। এতো ঘোরাঘুরির মধ্যে কখন যে শ্রাবন সুমনের হাতে হাত রেখেছে সেটা সুমন খেয়াল করেনি। শপিং মল থেকে বেরিয়ে বাইকে উঠার সময় শ্রাবন ওর হাত ছাড়লে তখন বুঝলো হাতটা এতক্ষণ শ্রাবনের দখলে ছিল। হঠাৎ একটা ভালো লাগা যেন সুমনকে ঘিরে ধরলো।

তুমি কি এখন ট্রেন ধরবে?

হ‍্যা,ওটাই সহজ আমার জন্য।

কিন্তু ট্রেনে তোমার দুইঘন্টা লাগবে। তারপর তুমি কখন যাবে নেমতন্ন বাড়ি ।তার চেয়ে তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি পৌঁছে দিই। খুব বেশি হলে একঘন্টা লাগবে।

এইবার সুমন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো কিন্তু এভাবে যাওয়া টা কি ঠিক হবে।

ওহহ , তাহলে বাড়ির কাছাকাছি নামিয়ে দেবো । বাকিটা তুমি হেঁটে চলে যাবে।

সুমন আর না করলো না। সত্যি দেরি হয়ে গেছে।বাড়ির থেকে বেশ অনেকটাই দুরে নামলো সুমন। যাওয়ার জন্য যেই পা বাড়িয়েছে তখন শ্রাবন পিছু ডাকলো
সুমন.....একটা কথা বলার ছিল।
হুম বলো
আমি আর দিন পনেরো এদেশে আছি, তারপর বাইরে যাবো।সব কমপ্লিট । দুই বছরের জন্য যাবো।

সুমন কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না।শুধু ভাবতে লাগলো কেন ওর সাথেই এমন হলো। কিছুই পেলো না আবার সব হারালো।

দিদি তুমি তো ভিজে গেছো , তাড়াতাড়ি চলো । বৃষ্টি পড়ছে অথচ তোমার খেয়াল নেই ।কি যে হয় তোমার এখানে এলে তাই বুঝি না। আজ স‍্যার  আবার আমার মাইনে কাটবে ।

কথা কম বলে দেখে গাড়ি চালাও। তোমাকে তো বলেছি যে কয়দিন মাইনে কম পাবে আমাকে বলবে আমি দিয়ে দেবো।আর আমি যে এখানে এসেছিলাম বাড়িতে বলো না যেনো। এখন আর বাড়িতে ঢুকবো না , রিয়া দের বাড়িতে যাবো।

ঠিক আছে দিদি।এই তোয়ালেটা নাও ,মাথাটা মুছে চুলগুলো ঠিক করো। গঙ্গার হাওয়াতে একদম এলোমেলো হয়ে গেছে। অনুষ্ঠান বাড়িতে ওতো লোকের মাঝে পাগলি বুড়ি লাগবে তোমাকে।

আর কথা বাড়ালো না সুমন। ফোনের ক‍্যামেরা অন করে বুঝলো প্রদীপ দা ঠিকই বলেছে।ঝটপট নিজেকে ঠিক করলো। প্রদীপ দা ,, সুমনের গাড়ীর ড্রাইভার। মেয়ের অসুবিধা হয় তাই গাড়ি কিনতে দুই বার ভাবেননি সুমনের বাবা।আর সাথে  দিয়েছেন এই প্রদীপ দা কে। খুব ভালো একজন মানুষ ।

এতসব কথার মাঝেই মনে পড়লো আজ আবার ঝলমল করছে রিয়া দের বাড়িটা। ছয় বছর আগের এই দিনে সুমন তার শরীর মনে বসন্তের ছোঁয়া পেয়েছিল। ভালোবাসার এই অধ‍্যায়ের সাথে পরিচয় করিয়েছিল শ্রাবন। শ্রাবনের জীবনেও সেদিন প্রথম নারী হয়ে এসেছিল সুমন।সেই আনাড়ি হাতের স্পর্শ আজও সদ‍্য গোলাপ হয়ে রয়ে গেছে সুমনের মনে। সেদিন রাতে মা শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন সুমনকে । ময়ূরকন্ঠি  রঙের শাড়িটা সেদিন খুব সুন্দর লাগছিল সুমনকে। সুমন দের বাড়ির চারটে বাড়ির পর রিয়াদের বাড়ি ,তাই সুমন একটু রাত করে ফিরবে বলে বাড়িতে বলে যায়। সবাই সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছিল তখনই ঘরে ঢুকলো শ্রাবন , হাতে গিফটের প‍্যাকেট। হঠাৎ এভাবে দেখা হয়ে যাবে কেউ ভাবেনি।সবার নজর বাচিয়ে যখন শ্রাবন বললো 'থ‍্যাঙ্কস এ লট  গড, এতো সুন্দর একটা সন্ধ্যা আমাকে দেওয়ার জন্য। রাত পৌনে দশটা ,সবাই খাওয়ার দিকে ব‍্যাস্ত তখন সুমন রিয়ার ঘরে ঢুকলো শাড়িটা ঠিক আছে কিনা দেখতে। আয়নায় যখন লিপস্টিক ঠিক করছিল তখন ব‍্যলকনি থেকে শ্রাবন বললো তোমাকে এমনিতেই ভালো লাগে । কথাটা শুনে সুমন এগিয়ে এসে বলল বসতে পারি।

হ‍্যা ,বসো। হাতের গ্লাসটা রেখে সুমনের হাতটা নিজের দখলে নিলো শ্রাবন। তখন বলোনি তো শাড়ি পরবে।

কোন প্লান ছিল না,মা পরিয়ে দিল।কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না,একই বাড়িতে একই গিফট নিয়ে এসেছি দুইজনে ।

কাউকে কিছু বলোনা তাহলে আর প্রবলেম হবে না। আচ্ছা শাড়ি পড়লে কী এতো ডীপ লিপস্টিক পরে। তোমাকে লিপস্টিক ছাড়াই ভালো লাগে।বলেই শ্রাবন হাসতে লাগলো।

হাসির কি হলো?

না না এমনিই । ঠিক আছে আর হাসবো না।

এবার সুমনের রাগ হলো ।আর হাসবো না বলে আবার হাসছিল শ্রাবন।চলে যাবার জন্য উঠতেই হাতে টান লাগলো, হাত ছাড়ো আমি যাবো।

শুনবে না হাসছিলাম কেন?

নাহ ,ছাড়ো।

শুনলে তুমি আরো রেগে যাবে তাই বলিনি। ঠিক আছে বলছি তবে রাগ করবে না কিন্তু। তোমার চকলেট মাখা ঠোঁট দুটো আমার বেশি পছন্দ।মাতাল করে দেয় আমাকে।সবাই প্রেমে পড়ে চোখ দেখে হাসি দেখে।আর আমি তোমার ঠোটের কাছে হারে গেছি।বলেই দুটো ক‍্যাটবেরি দিলো সুমনকে। সকালে কিনেছিলাম তোমাকে দেওয়া হয় নি।

একদম চুপ হয়ে গেলো সুমন।কি বলবে? এভাবে সরাসরি শ্রাবন বলবে এটা সুমন ভাবতে পারেনি। কোন উত্তর দিতে পারলো না। আরো কিছুক্ষন এভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো দুজন।নিরবতা ভেঙে শ্রাবন বললো অনেকক্ষন এখানে আছি এবার কেউ না কেউ খুঁজবে। তুমি আগে যাও আমি আসছি।

ব‍্যলকনি থেকে রুমে ঢুকে সুমন টিসু পেপার দিয়ে লিপস্টিক টা মুছলো ,কখন যে শ্রাবন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সুমন বুঝতে পারেনি। সুমনের হাতের টিসু নিয়ে ঠোঁটের কোণে হালকা লেগে থাকা লিপস্টিক টুকু ও মুছে দিলো শ্রাবন। সুমনের গোলাপী ঠোটের উপর আঙুল ছুঁইয়ে দিচ্ছিল শ্রাবন।এক অজানা অনুভূতি ছুঁয়ে দিচ্ছিল দুটো মন প্রাণ। শ্রাবন সুমনকে বুকের সাথে জাপটে ধরলো আর কপালে মুখে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দিলো। সুমন নিজেকে সামলাতে শ্রাবনের পিঠে খামচি দিয়ে ধরলো তখনই শ্রাবন নিজের তাল হারালো। সুমনের গোলাপী ঠোঁট দুটো ততহ্মনে শ্রাবনের দখলে। প্রথমে দমবন্ধ হয়ে আসছিল সুমনের তারপর নিজেই তাল মেলাতে লাগলো।কতটা সময় কেটে গেছে কারোরই হুশ রইলো না। তখনই দরজায় নক করলো রিয়া।সুমো তুই কি ভিতরে আছিস। একটু ভয় পেয়ে গেলো সুমন। শ্রাবনের দিকে তাকাতেই ইশারা করলো যে ওর কথা না বলতে।সুমন ও একটু ধাতস্থ হয়ে বললো হ‍্যা রে আছি শাড়ি ঠিক করছি।তুই যা আমি আসছি।ভাগ‍্যিস তখন দরজাটা লক করেছিল। রিয়া চলে যেতেই দুজনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। শ্রাবন এগিয়ে এসে সুমনের হাতটা ধরলো। একটুখানি পর শ্রাবন হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো  আমি আগে বেরিয়ে যাই তারপর তুমি বেরোবে। পিছনে ঘুরতেই এবার সুমন শ্রাবণের শার্ট টেনে ধরলো। শ্রাবন যেন একমুহূর্তে সুমনের মনের কথা বুঝতে পারলো। ভালোবাসা কোন অন‍্যায় না  আমরা তো ভালোবেসেছি আর ভালোবাসলে এটুকু হতেই পারে ।তাই বলছি ম‍্যাডাম এমন খরগোশের মতন ভীতু লুক দিয়ে না তাকিয়ে একটু স্বাভাবিক হয়ে এসো । আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।

দিদি ,ও দিদি কি এতো দেখছো বলোতো বাইরে এসে গেছি তো ।

ওহহ , এসে গেছি । প্রদীপ দা তুমি গাড়ি সাইডে রাখো আর খেয়ে যাবে। সুমন গিফটা হাতে নিয়ে ভিতরে চলে গেল। কোন রকম ভদ্রতা খাতিরে খাওয়া টা শেরেই বাড়ি ফিরলো।কারণ ঐ বাড়িতে যত বেশি সময় থাকবে ততই ওর দমবন্ধ হয়ে আসে। রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো ।শুতে যাবে তখন দরজায় টোকা পড়লো।

মা তুই কি ঘুমিয়ে গেছিস?

দরজা খোলা আছে পাপা ভেতরে এসো।বসো ।
এখনো জেগে আছো কেন?

একটা জরুরী বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আছে । এখন বলবো?

হ‍্যা বলো

একটা ছেলে আজকে সকালে আমার অফিসে আসে । ছেলেটা সরাসরি বলেছে সে তোকে দেখেছে আর তার ভালো লেগেছে ।যদি আমাদের আপত্তি না থাকে তাহলে তার বাবা মা কে নিয়ে আসবে বিয়ের কথা বলতে। ছেলেটা নিজের ব‍্যাপারে সব বললো আর ঠিকানা ফোন নাম্বার ও দিয়েছে । আমি ও খোঁজ নিয়ে দেখলাম সে সত্যি কথা বলেছে। কিছুই লুকোয়নি। পেশায় ডাক্তার বিদেশে ছিল এতদিন আর ওখানেই প্রাকটিস করেছে। আরো অনেক আগেই ফিরে আসার কথা ছিল কিন্তু একটু আইনি ঝামেলার কারণে ফিরতে পারেনি।

পাপা আমি আগেই বলেছি , আমি এখনো রেডি নই।আর বিয়ে করার কোন ইচ্ছেও নেই। প্লিজ এসবের মধ্যে আমাকে জড়িয়ো না।

ওহহ তাহলে এটাই তোমার কথা।আর আমার ইচ্ছের কোন দাম নেই। তোমাকে তো আমি জোর করতে পারি না কিন্তু একটা কথাই বলবো ছেলেটাকে আমার ভালো লেগেছে আর আমার জীবনের শেষ ইচ্ছে তুমি তাকে বিয়ে করো। ঠিক আছে রেষ্ট করো।

সুমন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, এটা ওর পাপা নাকি অন্য কেউ?এর আগে তো এভাবে বলেনি। কে সেই ছেলে ?যাকে সকালে দেখেই বিকেলে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে........

.

.

.

আজ অনেক দিন পর একসাথে ফিরছি। প্রদীপ দা একটু ফাঁকা রেষ্টুরেন্ট দেখলে দাঁড়াবে।খিদে পেয়েছে। রিয়া কথাগুলো বলে ফোনে মনোযোগ দিলো। আসলে আজ সুমনের জন্য রিয়া এইবেলা ছুটি করলো। কিছু বিষয় নিয়ে সুমন খুব ডিস্টার্ব হয়ে আছে। বাড়িতে বসে এগুলো নিয়ে কথা বলার কোন উপায় নেই। বেশি দুরে যেতে হলো না কাছেই একটা রেস্টুরেন্ট পেয়ে গেল ওরা।খাবার অর্ডার করে দিলো রিয়া। এবার বল কি নিয়ে এতো ভাবছিস।

রিয়া আমি বাড়িতে ঢুকলে মা পাপা এমন ভাবে কথা বলে যেন আমি কোন মারাত্মক অন‍্যায় করেছি। আচ্ছা বিয়ে করাটাই কি জীবনে সব।জন্ম থেকে এই পর্যন্ত আমাকে কখনো যারা চোখের আড়াল করেনি তারা আজ আমাকে তাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কতো মানুষ আছে যারা বিয়ে না করে ও দিব‍্যি আছে। আমি এর সমাধান চাই তবে কোন কিছুর বিনিময়ে বিয়ে করবো না।এটাই আমার শেষ কথা।

কার জন্য ? যে কথা দিয়ে কথা রাখে না তার জন্য? দুইবছর বলে যে ছয়টা বছর কোন যোগাযোগ রাখিনি তার জন্য? যার কথা ভেবে তুই বেঁচে থাকার অভিনয় করিস ভালো থাকার অভিনয় করিস তার জন্য?কি পেয়েছিস তুই তার থেকে এতো গুলো বছরে ,কষ্ট ছাড়া আর কি দিয়েছে তোকে? সামান্য কয়টা কিস করেছিস তাছাড়া সেক্সচুয়াল রিলেশন ও ছিল না তোদের তাহলে কেন অপেক্ষা করবি সেটা আমার মাথায় ঢোকে না। এতোদিনে বিয়ে করে দুই বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে আর তুই চিরকুমারী হয়ে কাকু কাকিমার মনে কষ্ট দিয়ে যা।তোর কাছে এটাই এখন তাদের প্রাপ‍্য।

সুমন কোন কথার উত্তর দিতে পারলো না।কি বলবে? রিয়ার কথাগুলো শতভাগ সত্যি । কিন্তু জীবনের প্রথম কোন পুরুষের ছোঁয়া মানে শ্রাবন । সুমনের দম বন্ধ হয়ে আসে , শ্রাবন ছাড়া অন্য কোন পুরুষ কে ওর জীবনে ভাবতে পারে না।

সুমো তুই কাঁদবি না। আমার কথা যদি শুনিস তাহলে বলবো ,কাকু যে ছেলেটার কথা বলেছে তাকে বিয়ে করতে হবে না কিন্তু তার সাথে দেখা কর কথা বল  কিছু টা সময় দে নিজেকে । সপ্তাহ খানেক ছুটি নে। দরকার হলে একটা ফ‍্যামিলি ট‍্যুর কর দেখবি একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবি।কফিটা ঠান্ডা হচ্ছে খেয়ে নে।

ঠিক আছে তাহলে তোদের সবার কথাই রাখলাম। কিন্তু রিয়া বিশ্বাস কর আমি চোখ বন্ধ করে এখনো শ্রাবণের মুখটাই দেখতে পাই। তবে আমার ব‍্যাপারে সবকিছু জানিয়ে দেবো। কোন কিছু গোপন করে নতুন জীবন শুরু করতে পারবো না।

কফিটা শেষ করে রিয়া বিল পে করলো । হুম বুঝলাম ,তোর কথা ঠিক । কিন্তু কি বলবি শ্রাবনদার ব‍্যাপারে। যখন ছেলেটা জানতে চাইবে কত দিনের রিলেশন ছিল আর কতটা ক্লোজ রিলেশন ছিল ,কি বলবি?

সবটাই বলবো

হুম এভাবে বলিস ,মোট দেখা হয়েছে ১৮দিন । তারমধ্যে দুইদিন কিস করেছিস আর বাকি সবদিন হাত ধরে ঘুরে বেড়িয়েছিস। তারপর সে চলে গেল আর তুই ছয় বছর অপেক্ষা করছিস।

রিয়ার কথা শুনে সুমন না হেসে পারলো না। এভাবে বলিস না প্লীজ দেখবি শ্রাবন একদিন আসবে।ও কথা রাখবে।

জানিস সুমন আমি দাদাকে জিঙ্গাসা করেছিলাম শ্রাবন দার কোন খোঁজ দিতে পারবে কি না।ও অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেনি আর ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ জানে না যে শ্রাবনদা এখন কোথায় আছে। বিশ্বাস কর একবার যদি জানতাম কোথায় আছে তাহলে আমি তোকে নিয়ে যেতাম আর একটা ফয়সালা করতাম ।তোকে এতো কষ্ট পেতে দিতাম না।চল অনেক দেরি হয়ে গেছে।

সুমন স্নান করে চুল শুকাচ্ছিল এমন সময় সুমনের মা একটা প‍্যাকেট হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।এটা পরবে আজ তুমি ,শাড়ি আছে , একা পারবি নাকি হেল্প করবো।

মা শাড়ি কেন? আমি একটা চুড়িদার পরবো ।আর এটাই ফাইনাল।

কেন পরবি না ?শাড়িতে দেখলে সে তোর প্রেমে পড়বে তাই ভয় পাচ্ছিস।রিয়াকে দেখে সুমন মিষ্টি করে একটু হাসলো। সুমনের মা রিয়ার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে হালকা করে সাজিয়ে সুমনের সাথেই গেল রিয়া। ডিসিশন হলো রিয়া প্রদীপ দার সাথে গাড়িতে অপেক্ষা করবে। প্রদীপ দাকে ঠিকানা দেওয়া আছে সে নিয়ে যাবে।

সুমনের বাবা প্রদীপের হাতে একটা ছবি দিলেন আর বললেন এই সেই ছেলে যার সাথে আজ সুমন দেখা করবে। ছবি আর ঠিকানা নিয়ে প্রদীপ হা করে দাঁড়িয়ে রইল।

কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও

স‍্যার একটা কথা কি বিশ্বাস করবেন ।

তাড়াতাড়ি বলো ,দেরি হচ্ছে ওদের

আমি এই ছবিটা সুমন দিদির মোবাইলে দেখেছি আর এই ঠিকানায় দিদি সময় পেলেই যেত ।আর ওখানে গেলেই দিদির খুব কষ্ট হয় । মাঝে মাঝে কাঁদতে ও দেখেছি।

হ‍্যা স‍্যার আমি ঠিক বলেছি। দিদি গতকাল ও ওখানে গিয়ে ছিল।আর খুব কেঁদেছে।

এসব কথা সুমনকে বলার দরকার নেই । তুমি যাও। কোন অসুবিধা হলে আমাকে ফোন করো।

...........................
প্রদীপ দা এখানে কেন আনলে?
স‍্যার আমাকে এই ঠিকানা দিয়েছেন দিদি।
তোমাকে গঙ্গার ধারে বসতে বলেছে। টাইম মতো ছেলেটা চলে আসবে।

সুমন আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ বসে পড়লো বেঞ্চটাতে।এই জায়গাটা শ্রাবণের প্রিয়, বাইরে যাওয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় ফোন করে সুমনকে ডেকেছিল। শ্রাবন কে সেদিন না বলতে পারেনি। বাড়িতে মাকে মিথ‍্যে বলে রিয়াকে নিয়ে বেরিয়েছিল। শ্রাবন সেদিন শেষ বারের মত সুমনকে বুকের জড়িয়ে নিয়েছিল আর কথা দিয়েছিল যে 'শ্রাবন ফিরে আসবে তার সুমনের কাছেই ফিরে আসবে শুধু সুমন যেন একটু অপেক্ষা করে।'এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে কেঁদে চলেছে সুমন।  তখনই কারো গলার আওয়াজ পেলো ঠিক যেন শ্রাবন কথা বলছে।

আমাকে হ্মমা করো সুমন ,কথা দিয়ে আমি কথা রাখতে পারি নি। তোমাকে কতো কষ্ট দিয়েছি।

নির্বাক চোখে সুমন তাকিয়ে থাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে ।ও কি সত্যি দেখছে এটা শ্রাবন। যার জন্য দিনরাত প্রার্থনা করেছে যেন সে ভালো থাকে সুস্থ্য থাকে।

আমি ফিরে এসেছি সুমন তোমার কাছে ফিরে এসেছি ।হ্মমা করবে না আমাকে। একটাবার সুযোগ দেবে না তোমার চোখের জল মুছিয়ে দেবার। প্লীজ..... সুমন আজও ফেরাতে পারলো না শ্রাবনকে । বুকে জড়িয়ে নিলো শ্রাবন কে।

এতোদিন কোথায় ছিলে শ্রাবন দা ।আর আজ হঠাৎ করে কোথায় থেকে এলে।

সে অনেক কথা , একটু বসে বলি.....

শ্রাবন বলতে শুরু করল ...... ওখানে যেয়ে একটা ছেলের সাথে খুব তাড়াতাড়ি বন্ধুত্ব হয়ে যায়। খুব ভালো ভাবে সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছিলাম আমরা ।কিন্তু সেই ছেলেটি ছিল প্রতিবাদী । কলেজের র‍্যাগিঙের শিকার হয় ছেলেটা আর অপমানে সুইসাইড করে। আর সেই দল যখন পুলিশের কাছে ধরা পড়ে তখন ওরা আমার নাম বলে যে আমিই নাকি ওদের বলেছি এভাবে র‍্যাগিঙ করতে। সাথে সাথে আমাকে ও পুলিশ নিয়ে যায় আর কলেজ থেকে ভর্তি বাতিল করা হয় । দুইমাস জেল খেটেছি। তারপর কোর্ট থেকে একজন উকিল দেয় কেসটা লড়ার জন্য। ততদিনে আমার মা বাবা পাগল হয়ে যায় আমার কোন খোঁজ না পেয়ে। তারপর সেই কেস কমপ্লিট হয় মাত্র দুই মাস আগে। নতুন করে পাসপোর্ট ভিসা ওরাই রেডি করে দেয়। আমি কোর্ট এ আবেদন করি যেন আমাকে পড়তে দেওয়া হয় তাই আমার পড়াশোনা বন্ধ হয় নি। ওখানে পাশ করার পর জেলের একটা হসপিটালে আমি প্রাকটিস করতাম। ভিসা হাতে পেয়ে টিকিট করতে যতটা সময় আর আমি একটুও সময় নষ্ট করিনি সুমন। ফ্লাইট থেকে নেমে সোজা তোমার বাবার অফিসে যাই আর আমাদের সবকথা তাকে খুলে বলি । তারপর অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য।

সরি শ্রাবন দা । অনেক ভুল বুঝেছি তোমাকে । সত্যি বলছি সুমন সারাজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করতো।

হঠাৎ করে প্রদীপ দা এসে একটা সেলফি তুললো আর সেন্ড করলো ।ব‍্যাস একটা কাজ হলো এবার রিয়া দিদি তুমি চলো বাড়ি যেতে হবে।এই দুটো কাজ না করলে আমার চাকরি থাকবে না।

রিয়া চলে যাওয়ার পর শ্রাবন সুমন কে একটা চকলেট দিলো। চকলেট দেখেই সুমন লজ্জা পেয়ে গেল। সুমন শ্রাবন এর বুকে মাথা রেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলো।

সমাপ্ত

                            

Writer - lukochuri

Bạn đang đọc truyện trên: Truyen247.Pro